বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫

বিবাহ সংত্রুান্ত হাদীসে একটি ভুল সংশোধনের জন্য, ৮০হাজার দেরহাম পুরুস্কার!!!

বিবাহ সংত্রুান্ত হাদীসে একটি ভুল সংশোধনের জন্য, ৮০হাজার দেরহাম পুরুস্কার!!!
আল্লামা ইবনে খাল্লেকান তার রচিত কিতাব ‘‘ওফায়াতুল আ’য়ান’’ এর ৫/৩৯৭ নং পৃষ্ঠায় ৭৬৪নং জীবনী دار صادر - بيروت থেকে প্রকাশিত ‘‘নযর বিন শুমাইলের’’ জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে খুব সুন্দর একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন।
❖  যার সারসংক্ষেপ হলো এই যে, একদা নযর বিন শুমাইল, মামুনুর রশিদের দরবারে আগমন করেন। তারা উভয়েই হাদীস এর ব্যাপারে আলোচনা করতে থাকেন।
মামুনুর রশিদ হুসাইমের সূত্রে একটি হাদীস আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করে বলেন-
الفتح الكبير في ضم الزيادة إلى الجامع الصغير (1/ 88)
(852) ((إِذا تَزَوَّج الرَّجُلُ المَرْأةَ لِدينِها وَجَمالِها كانَ فِيهَا سَدَادٌ مِنْ عَوَزٍ)) (الشِّيرَازِيّ فِي الألقاب) عَن ابْن عَبَّاس وَعَن عَليّ.
ضعيف
رواه الديلمي (1/1/156) من طريق الطبراني عن النضر بن شميل: حدثنا الأموي: حدثنا هشيم عن مجالد عن الشعبي عن ابن عباس مرفوعا. قلت: وهذا إسناد ضعيف. مجالد - وهو ابن سعيد - ليس بالقوي. والأموي، لم أعرفه، وهم جماعة ينسبون هذه النسبة فمن هو منهم؟ والحديث عزاه السيوطي للشيرازي في " الألقاب " عن ابن عباس وعلي، وقال المناوي: " وفيه هشيم بن بشير؛ أورده الذهبي في " الضعفاء "، وقال: حجة حافظ يدلس، وهو في الزهري لين، وحكم ابن الجوزي بوضعه ".

অর্থ : রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, মানুষ যখন কোন নারীর দ্বীন এবং রূপ লাবন্যের কারণে বিবাহ করে, তখন সে দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পায়।
বর্ণনাটি শুনে নজর বিন শুমাইল বলেন, হুসাইম সত্য বর্ণনা করেছন। আমার কাছে অমুক থেকে অমুকের বর্ণনা,  আলী ইবনে আবূ তালেব (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-
 ((إِذا تَزَوَّج الرَّجُلُ المَرْأةَ لِدينِها وَجَمالِها كانَ فِيهَا سِدَادٌ مِنْ عَوَزٍ))
 মানুষ যখন কোন নারীর দ্বীন এবং রূপ লাবন্যের কারণে বিবাহ করে তখন সে দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পায়।
নযর বিন শুমাইল বলেন, একথা শুনে মামুনুর রশিদ সোজা হয়ে বসে গেলেন। অথচ তিনি বালিশে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। অতঃপর তিনি বলেন, নযর তুমি سِدَادٌ (ছীন অক্ষরে যের) বললে কেন? আমি জবাব দিলাম, এখানে سَدَادٌ (ছীন অক্ষরে যবর) পড়া ভুল। মামুন বললেন, তুমি আমার এরাবের/উচ্চারনের ভুল শুধরাচ্ছ? আমি বললাম, হুসাইম এরাবের/উচ্চারণে ভুল করেছেন। তাই আমিরুল মু’মিনিনের কথাইমানা হল। অতঃপর তিনি পুনরায় বলেন, আচ্ছা سداد  ছীন অক্ষরে যের অথবা যবর পড়াতে পার্থক্য কি? আমি বললাম, سَدَادٌ (ছীন অক্ষরে যবর) দ্বীনের সততা ও সঠিক রাস্তায় চলাকে বলে। আর سِدَادٌ (ছীন অক্ষরে যের) প্রয়োজন এবং দারিদ্রতা কে বলে। 
মামুনুর রশিদ বললেন, আপনি যা শুধরাচ্ছেন এ ব্যাপারে আরবদের কোন কবিতা আছে কি? আমি বললাম, জি জনাব আছে। 
বিখ্যাত কবি আরযী বলেন :-
أضاعوني وأي فتىً أضاعوا ... ليوم كريهة وسداد ثغر
লোকেরা আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, আমাকে ব্যতীত কোন সে যুবক যুদ্ধের ময়দানে এবং সীমান্তে ধ্বংস হয়েছে? (উক্ত কবিতাটি عبد الله بن عمرو بن عثمان بن عفان الأموي العرجي الشاعر المشهور এর)।
একথা শুনে মামুনুর রশীদ একটি কাগজ নিয়ে, কি যেন লিখলেন। অতঃপর তার খাদেমের সাথে আমাকে ফজল বিন সুহাইলের কাছে চলে পাঠিয়ে দিলেন। ফজল  বিন সুহাইল যখন কাগজটি খুলে পাঠ করলেন, তখন বলেন, ওহে নযর! আমিরুল মু’মিনীন তোমাকে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) দেরহাম দেয়ার ঘোষণা করেছেন। এর কারণ কি? আমাকে বলতো? আমি উক্ত ঘটনার বর্ণনা দিলাম।
অতঃপর ফজল বিন সুহাইল আমাকে আরো ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) দেরহাম পুরুস্কার প্রদান করেন। সুতরাং এক অক্ষরের বিনিময়ে আমি ৮০,০০০/- (আশি হাজার) দেরহাম নিয়ে চলে এলাম। (নজর বিন শুমাইল ‘‘ছাখ’’ অথবা ‘‘মরো’’ নামক স্থানে ২০৪ অথবা ২০৩হি. ইন্তেকাল করেন।)
বি. দ্র. উক্ত হাদীসের মাঝে কিছু দূর্বল বর্ণনাকারী রয়েছে, তাই হাদীসটি যয়ীফ। (যার বিস্তারিত কারণ, আমি আহলে ইলমদের জন্য আরবীতে উল্লেখ করেছি)। কিন্তু  এখানে আমার উদ্দেশ্য হলো, একটি ভুল সংশোধনের জন্য আশি হাজার দেরহাম পেয়েছেন, তাই বুঝানো মাত্র।
প্রিয় পাঠক! ‍উক্ত ঘটনার প্রতি লক্ষ করে, আমরাও আমাদের জীবনকে এধরনের ভুল থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি, যা রাসূল (সা.) এর হাদীসের মাঝে মহা পরিবর্তন নিয়ে আসে।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে ও সকলকে, এধরনের ভুল থেকে বাঁচার তাওফীক দান করুন। আমীন

ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
প্রধান মুফতী ও গবেষক
মারকাযুল ইসলাহ, বাংলাদেশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন