বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আম্মাজান আয়েশা (রা.) রাগ করলে, রাসূল (সা.) যেভাবে বুঝতেন...

আম্মাজান আয়েশা (রা.) রাগ করলে, রাসূল (সা.) যেভাবে বুঝতেন...
কিছু দিন পূর্বে এক জায়গায় যাচ্ছিলাম, পথের মাঝেই শুরু হয়ে গেলে রাগ বশতঃ স্বামী স্ত্রীর মারামারি, আমি দেখে অবাক হলাম! আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম যে, প্রকৃত ইসলামের বিধান জানা থাকলে আজ এমন হতো না। আর এধরনের রাগের কারণেই অনেক সময় ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় । তাই এ বিষয়ে কিছু কথা...
মানুষ রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক, তাই বলে কি এমন অস্বাভাবিক আচরণ! দেখুন আম্মাজান আয়েশা (রা.)ও রাগ করতো, কিন্তু রাসূল (সা.) কী বলতেন-
صحيح مسلم (4/ 1890)
80 - (2439) حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، قَالَ وَجَدْتُ فِي كِتَابِي عَنْ أَبِي أُسَامَةَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، ح وَحَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَأَعْلَمُ إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً، وَإِذَا كُنْتِ عَلَيَّ غَضْبَى» قَالَتْ فَقُلْتُ: وَمِنْ أَيْنَ تَعْرِفُ ذَلِكَ؟ قَالَ: " أَمَّا إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً، فَإِنَّكِ تَقُولِينَ: لَا وَرَبِّ مُحَمَّدٍ وَإِذَا كُنْتِ غَضْبَى، قُلْتِ: لَا، وَرَبِّ إِبْرَاهِيمَ " قَالَتْ قُلْتُ: أَجَلْ، وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ مَا أَهْجُرُ إِلَّا اسْمَكَ.
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, হে আয়েশা! আমি অবশ্যই জানি কখন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক আর কখন নারাজ (রাগ) হও। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তা আপনি কিভাবে জানেন? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যখন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক, তখন তুমি এরূপ বল, ‘মুহাম্মাদের প্রভুর কসম, আর যখন তুমি অসন্তুষ্ট হও তখন বল, ‘ইবরাহীমের প্রভুর কসম’! আমি বললাম, জী হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। খোদার শপথ! (রাগের সময়) আমি কেবল আপনার নামটাই বাদ দেই। সহীহ মুসলিম-৪/১৮৯০, হাদীস-২৪৩৯।
প্রিয় পাঠক! উক্ত হাদীসটি পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, রাসূল (সা.) আম্মাজান আয়েশা (রা.) এর রাগকে এমন ভাবে উপস্থাপনা করেছেন, যার প্রতিবাদ হেঁসে উড়ানো ব্যতীত আর কিছুই করার নেই...। 
আর রাসূল (সা.) এর চরিত্র বুঝার জন্য একটি হাদীস পেশ করছি, যা পড়া মাত্রই আপনি বুঝতে পারবেন যে, রাসূল (সা.) কি রাগের সময় কাউকে প্রহার করতেন? আমরা যে ভাবে করে থাকি...
صحيح مسلم (4/ 1804)
51 - (2309) حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، وَأَبُو الرَّبِيعِ، قَالَا: حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: " خَدَمْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ سِنِينَ، وَاللهِ مَا قَالَ لِي: أُفًّا قَطُّ، وَلَا قَالَ لِي لِشَيْءٍ: لِمَ فَعَلْتَ كَذَا؟ وَهَلَّا فَعَلْتَ كَذَا؟ "
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দশ বছর রাসূল (সা.) এর খেদমত করেছি। আল্লাহর কসম তিনি কখনো (কষ্ট বশতঃ) আমাকে উফ শব্দটিও বলেন নি এবং কোন বিষয়ের প্রেক্ষিতে আমাকে এটি বলেন নি যে, তুমি এটি কেন করেছো? কি কারণে করছো? সহীহ মুসলিম-৪/১৮০৪, হাদীস-২৩০৯।

প্রিয় পাঠক! একজন খাদেমকে মানুষ যে কোন বৈধ অজুহাতে প্রহার করার অধিকার রাখে, কিন্তু রাসূল (সা.) তাও করতেন না। তাহলে স্ত্রীদের সাথে কেমন আচরণ করতেন তা আর কারো বুঝার বাকি নেই...

এখন জানার বিষয় হলো, যদি আমাদের কারো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মতবিরোধ বা রাগাবাগি হয়, তাহলে আমরা কী করবো? এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন-
{الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا (34) وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِنْ أَهْلِهَا إِنْ يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا } [النساء: 34، 35]
অর্থ : পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। এ জন্য যে,  আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশষ্কা কর (১) তাদের সদুপদেশ দাও, (২) তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং (৩) প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশষ্কা কর, (৪) তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ সবকিছু অবহিত। সূরা নিসা-৩৪-৩৫।
আরো একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়, উক্ত আয়াতে একটি পর্যায়ে গিয়ে আল্লাহ প্রহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এর ক্ষেত্রেও একটি বিষয় লক্ষনীয় হলো মুখে প্রহার করা যাবে না-
صحيح مسلم (3/ 1673)
106 - (2116) حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: «نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنِ الضَّرْبِ فِي الْوَجْهِ، وَعَنِ الْوَسْمِ فِي الْوَجْهِ»
হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) মুখে প্রহার করতে নিষেধ করেছেন এবং চেহারায় দাগ দিতেও নিষেধ করেছেন। মুসলিম-৩/১৬৭৩, হাদীস-২১১৬।

প্রিয় পাঠক! রাগারাগি বা অবাধ্যতার কারণে প্রহার করতে হলে, তার পূর্বে আরো দুটি ধাপ (তথা সদুপদেশ ও  শয্যা ত্যাগ করতে হবে, আর এ দুটিরও কোন নির্ধারিত সময় বলে দেয়া হয়নি) রয়েছে, আর তালাক দিতে হলে, তার পূর্বে আরো চারটি ধাপ রয়েছে, এগুলোর পর হলো তালাকের অনুমতি, তাও এক সাথে তিন তালাকের নয়। কিন্তু আমরা আজ কোরআন ও সুন্নাহ থেকে কতই না দূরে সরে গেলাম। হায় আফসোস..

অতএব মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহীহ কোরআন সুন্নাহ ও রাসূল (সা.) এর আদর্শে আদর্শিত হওয়ার তাওকীক দান করুন। আমীন

ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
প্রধান মুফতী ও গবেষক
মারকাযুল ইসলাহ, বাংলাদেশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন