কোরআন সুন্নাহর আলোকে রেফারেন্স এর আবশ্যকতা
(একটি দুর্লভ গবেষনা)
❀ সন্মানিত পাঠক বৃন্দু বর্তমান আমাদের সমাজে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় মুফতীর অভাব
নেই, অর্থাত সাধারন জনতা ও ফতোয়া দেয়ার জন্য খুব আগ্রহী, এ বিষয়ে কোন জ্ঞান থাক বা না থাক। আসলে আমরা যদি আমাদের
জীবনে এই নীতি গ্রহণ করী যে, মাসয়ালা বলতে হলে
রেফারেন্স দিতে হবে তাহলে বর্তমানে যারা ইলম না থাকা সত্ত্বেও ইলম এর বাজার দখল
করে আছে,
তারা হুমড়ী খেয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হবে। আবার অনেকের মুখে শুনা যায় যে রেফারেন্স এর কি প্রয়োজন, যেমন আমি আমার লিখার মাঝে সবসময় অনেক রেফারেন্স দিতে ভালো লাগে, তাই অনেক ভাই আমাকে বিরক্ত হয়ে বলে ভাই এত রেফারেন্স এর কি প্রয়োজন? আমার মনে
হয় অনেকে এগুলো কে বিদআত তথা নবআবিষ্কৃত মনে করে!! না না এই ধরনের রেফারেন্স দেয়ার অভ্যাস
রাসূল (সা.)
এর মাঝেও ছিল- যেমন
❐(1) নং দলীল, রাসূল সা. যখন কোরআনের নিম্ন আয়াত টি তেলাওয়াত করেন-
{الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ (82)} [الأنعام: 82]
অর্থাত যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমান কে জুলুম এর সাথে মিশ্রন করে
নি, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপদ প্রাপ্ত ও হেদায়েত প্রাপ্ত। ( সূরা আনআম,
আয়াত-82)
❁ তখন সাহাবায়ে কেরাম (রা.)রাসূল (স্.) কে জিজ্ঞাসা করলেন-
❐صحيح البخاري (4/ 141)
3360 - حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ،
حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، قَالَ: حَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ، عَنْ
عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ
{الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا} [الأنعام: 82] إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ،
قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّنَا لاَ يَظْلِمُ نَفْسَهُ؟ قَالَ: "
لَيْسَ كَمَا تَقُولُونَ {لَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ} [الأنعام: 82]
بِشِرْكٍ، أَوَلَمْ تَسْمَعُوا إِلَى قَوْلِ لُقْمَانَ لِابْنِهِ يَا بُنَيَّ لاَ
تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ "
হে আল্লাহর রাসূল আমাদের মাঝে এমন কে আছে যে, নিজ আত্মার প্রতি জুলুম করে না? তখন রাসূল (সা.)
বললেন, নিজ ঈমানকে জুলুমের সহীত
মিলানোর অর্থ শিরক না করা,
(অতপর রাসূল (সা.) আল্ আমিন তথা সেরা বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও হযরত লোকমান (আ.) এর রেফারেন্স দিয়ে বলেন) তোমরা কি শুনো নি হযরত
লোকমান তার ছেলে কে কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, হে আমার ছেলে তুমি আল্লাহর সাথে শিরক করোনা কেননা শিরক অনেক পড় জুলুম।( অর্থাত এখানে জুলুম থেকে শিরক উদ্দেশ্য) সহীহ বুখারী-4/141 হাদীস-3360
✏ উক্ত হাদীসের মাঝে রাসূল (সা.) হযরত লোকমান (আ.) এর রেফারেন্স দিয়ে জুলুম বা শিরক এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
(2) নং দলীল সহীহ বুখারীর বর্ণনা-
❐صحيح البخاري (6/ 126)
4811 - حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا شَيْبَانُ، عَنْ
مَنْصُورٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَبِيدَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ
اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: جَاءَ حَبْرٌ مِنَ الأَحْبَارِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّا نَجِدُ: أَنَّ
اللَّهَ يَجْعَلُ السَّمَوَاتِ عَلَى إِصْبَعٍ وَالأَرَضِينَ عَلَى إِصْبَعٍ،
وَالشَّجَرَ عَلَى إِصْبَعٍ، وَالمَاءَ وَالثَّرَى عَلَى إِصْبَعٍ، وَسَائِرَ
الخَلاَئِقِ عَلَى إِصْبَعٍ، فَيَقُولُ أَنَا المَلِكُ، فَضَحِكَ النَّبِيُّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ تَصْدِيقًا لِقَوْلِ
الحَبْرِ، ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: {وَمَا
قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ، وَالأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ
القِيَامَةِ، وَالسَّمَوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ، سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى
عَمَّا يُشْرِكُونَ}
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
একদা এক ইয়াহুদীর পাদ্রী রাসূল (সা.)
এর দরবারে আসেন অতপর বলেন, হে মুহাম্মদ আমরা
আসমানী কিতাবে পেয়েছি যে,
আল্লাহ তায়ালা না কি আসমানকে তার এক আঙ্গুলের উপর, এবং
যমীনকেও এক আঙ্গুলে,
আর গাছ পালাকেও এক আঙ্গুলে, আর পানি ও নদ নদীকেও এক আঙ্গুলে, আর সমস্তু
মাখলুকাতকে এক আঙ্গুলে রাখবেন, অতপর বলবেন, আমি হলাম মহান বাদশা। অতপর রাসূল (সা.) সেই পাদ্রীর কথার সত্যায়নে হেসে দিলেন এবং তার সামনের দাঁতগুলোও দেখা
গেলো, । অতপর রাসূল (সা.)কোরআনের {وَمَا
قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ، وَالأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ
القِيَامَةِ، وَالسَّمَوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ، سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى
عَمَّا يُشْرِكُونَ} আয়াতটি পাঠ করেন। অর্থাৎ- মহান আল্লাহ তায়ালা সব কিছু কে পরিমান অনুসারে তৈরী করেছেন, আর সমস্ত যমীন কিয়ামতের দিন তার হাতের মুষ্টির মাঝে থাকবে, আর আসমানও তার হাতের মুষ্টির মাঝে থাকবে, নিশ্চয় তোমরা তার
সাথে যা কিছু শরীক কর তিনি তা থেকে পবিত্র। (বুখারী-6/126
হাদীস4811))অন্য একটি আয়াতেও
উক্ত আয়াতের সমার্থক অর্থ রয়েছে, আর তা হলো-
❐{ يَوْمَ نَطْوِي السَّمَاءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ (104)} [الأنبياء: 104]
সূরা আম্বিয়া আয়াত নং-104
✏ সারকথা হলো : উক্ত
হাদীসের মাঝে রাসূল (সা.) একজন ইহুদীর পাদ্রী হওয়া সত্ত্বেও তাকে আল কোরআনের
রেফারেন্স দিয়ে বুঝিয়েছেন, কিন্তু রাসূল (সা.)শুধু হ্যাঁ বলে তার প্রশ্নের উত্তর
দিলেও চলতো। আসলে এ ধরনের রেফারেন্স এর মাধ্যমে উত্তর দেয়া দ্বারা উম্মতকে শিক্ষা
দেয়া ছাড়া আর কি হতে পারে?
(3) নং দলীল সহীহ
বুখারীর বর্ণনা-
❐صحيح البخاري (4/ 147)
3371 - حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ،
حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنِ المِنْهَالِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ
جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَوِّذُ الحَسَنَ وَالحُسَيْنَ، وَيَقُولُ:
" إِنَّ أَبَاكُمَا كَانَ يُعَوِّذُ بِهَا إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ: أَعُوذُ
بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ
عَيْنٍ لاَمَّةٍ "
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.)
হযরত হাসান আর হোসাইন (রা.) কে :
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ،
وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ "
এই দোয়া পড়ে ঝাড় ফুঁক করতেন, আর (রেফারেন্স সরূপ বলতেন)এই ভাবে হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তার ছেলে ইসমাঈল ও ইসহাককে ঝাড় ফুঁক করতেন। বুখারী-4/147 হাদীস-3371
✏ উক্ত হাদীসের মাঝে রাসূল (সা.) হযরত উব্রাহীম (আ.) এর রেফারেন্স দিয়েছেন, অথচা তিনি সর্ব নবীর সেরা নবী, তারপরও এর মাঝে রয়েছে উম্মতের শিক্ষা।
(4) নং দলীল, সহীহ
বুখারীর বণনা-
❐حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ كَرَامَةَ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَهُودِيٍّ وَيَهُودِيَّةٍ قَدْ أَحْدَثَا جَمِيعًا، فَقَالَ لَهُمْ: مَا تَجِدُونَ فِي كِتَابِكُمْ قَالُوا: إِنَّ: أَحْبَارَنَا أَحْدَثُوا تَحْمِيمَ الوَجْهِ وَالتَّجْبِيهَ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ: ادْعُهُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِالتَّوْرَاةِ، فَأُتِيَ بِهَا، فَوَضَعَ أَحَدُهُمْ يَدَهُ عَلَى آيَةِ الرَّجْمِ، وَجَعَلَ يَقْرَأُ مَا قَبْلَهَا وَمَا بَعْدَهَا، فَقَالَ لَهُ ابْنُ سَلاَمٍ: ارْفَعْ يَدَكَ، فَإِذَا آيَةُ الرَّجْمِ تَحْتَ يَدِهِ، فَأَمَرَ بِهِمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرُجِمَا قَالَ ابْنُ عُمَرَ: فَرُجِمَا عِنْدَ البَلاَطِ، فَرَأَيْتُ اليَهُودِيَّ أَجْنَأَ عَلَيْهَا
হাদীস-১৫ : হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এক ইহুদী পুরুষ ও এক ইহুদী নারীকে
হাজির করা হল। তারা
উভয়েই যিনা করেছে। তিনি তাদেরকে (রেফারেন্স জানার লক্ষে) জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যাপারে তোমরা তোমাদের কিতাবে কি পাচ্ছ? তারা বলল, আমাদের পাদ্রীরা চেহারা কালো করার ও উভয়কে গাধার পিঠে বিপরীতমুখী বসিয়ে
প্রদক্ষিণ করানোর নীতি চালু করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)(রেফারেন্স এর লক্ষে ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)। তাদেরকে তাওরাত নিয়ে আসতে বলুন। এরপর
তা নিয়ে আসা হল। তাদের একজন রজমের আয়াতের উপর নিজের হাত রেখে দিল এবং এর অগ্র-পশ্চাৎ
পড়তে লাগল। তখন ইবনে সালাম (রা.) তাকে বললেন, তোমার হাত উঠাও। (হাত উঠাতে দেখা গেল) তার হাতের নিচে রয়েছে
রজমের আয়াত। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের উভয়ের সম্বন্ধে নির্দেশ দিলেন, উভয়কে রজম করা হল। ইবনে উমর বলেন, তাদের উভয়কে সমতল স্থানে রজম করা হয়েছে। তখন ইহুদী পুরুষটাকে দেখেছি
ইহুদী নারীটির উপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে।
✏ উল্লেখিত হাদীসটির মাঝেও রাসূল (সা.) এর জানা ছিল তাওরাতের বিধান কি, কিন্তু তারপরও তিনি তাদের কাছে রেফারেন্স স্বরূপ তাওরাত নিয়ে আসতে বললেন, প্রিয় পাঠক আসলে এর মাঝে রয়েছে এই উম্মতের মহা শিক্ষা।
❐সন্মানীত পাঠক বৃন্দু তাহলে আমরা উপরে আলোচনা থেকে স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারলাম যে, রাসূল (সা.) যিনি সব চেষ্টা নবী ও আল আমীন তথা মহা বিশ্বাসী হওয়া সত্তেও নিজ জীবনের অসংখ্য স্থানে নিজ কথা বা কাজ কে রেফারেন্স দিয়ে সুসজ্জিত করেছেন, তাহলে আমরা কি করা উচিত নয়?!! প্রিয় পাঠক আপনিও ভাবুন!!!!!!
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন। (আরো অনেক প্রমান রয়েছে সময় সংক্ষিপ্ততার কারনে লিখা সম্ভব হয় নি। বুঝার জন্য
এতটুকু আলোচনাঐ যথেষ্ট)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন