মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫

মানুষের সম্মান নিয়ে ইসলামের নিরব ভূমিকা আপনি কি অন্যের বায়ূ নির্গত হওয়াতে হাঁসছেন?

মানুষের সম্মান নিয়ে ইসলামের নিরব ভূমিকা,
আপনি কি অন্যের বায়ূ নির্গত হওয়াতে হাঁসছেন?
❀ মন চাইলো আজ এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখতে, যা আমাদের সমাজে অনেকেরই অজানা। কেননা বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় অনেক মুরুব্বী মানুষ অধিক বয়সের কারণে নিজকে কন্ট্রোল রাখতে না পেরে, বায়ূ ছেড়ে বসে। আর আমরা যারা আশপাশে আছি তারা হাঁসাহাঁসি শুরু করে দেই। শুধু মুরুব্বী মানুষ নয় বরং অনেক সময় যুবক-যুবতী ও শিশুদেরকেও এই কাজে ভূমিকা রাখতে দেখা যায়।

✿ এখন আলোচনার বিষয় হলো ‘‘অন্যের বায়ূ নির্গত হওয়াতে আপনার জন্য হাঁসাহাঁসি করা ইসলামে বৈধ কি?’’ অনেকেই বলবেন আরে! ইসলাম বুঝি এ বিষয় নিয়েও কোন বিধান রেখেছে? আমি বলবো হ্যাঁ। ইসলাম এ বিষয়েও বিধান রেখেছে। নিন্মে তা বিস্তারিত দেখুন, আর নিজেকে গড়ে তুলুন একজন কোরআন ও সুন্নাহ প্রতি সহীহ আমলকারী।

✏ সহীহ বুখারীর বর্ণনা-
صحيح البخاري (8/ 15)
6042 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَمْعَةَ، قَالَ: نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَضْحَكَ الرَّجُلُ مِمَّا يَخْرُجُ مِنَ الأَنْفُسِ،،
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাময়া (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল (সা.) মানুষের বায়ূ নির্গত/বের হওয়ায় হাসতে নিষেধ করেছেন। সহীহ আল বুখারী-৮/১৫, হাদীস নং-৬০৪২। (সুবহানাল্লাহ)

✔ সন্মানিত পাঠক বৃন্দ, দেখুন ইসলাম কত শান্তির ধর্ম, সাধারণ একটি বিষয় নিয়েও ইসলামে রয়েছে বিধান, আর এই বিধান থাকার কারণও রয়েছে, যা নিন্মে উল্লেখ করছি।

✍ সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ব্যাখ্যাবিদ আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ফাতহুল বারীর-১০/৪৬৪ এর মাঝে এই হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেন- ‘‘যদি কোন মানুষের বায়ূ নির্গত হয়, আর তার আশপাশের মানুষ হাঁসাহাঁসি করে তাহলে লোকটির মান ও সন্মান এর প্রতি আঘাত করা হয়। আর ইসলাম মানুষের মান সন্মানের প্রতি অনেক যত্নবান ও প্রচুর ভূমিকা রেখেছে।’’ যেমন-

✏ সহীহ মুসলিম এর হাদীস-
صحيح مسلم (4/ 1986)
32 - (2564) حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ بْنِ قَعْنَبٍ، حَدَّثَنَا دَاوُدُ يَعْنِي ابْنَ قَيْسٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، مَوْلَى عَامِرِ بْنِ كُرَيْزٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَحَاسَدُوا، وَلَا تَنَاجَشُوا، وَلَا تَبَاغَضُوا، وَلَا تَدَابَرُوا، وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ التَّقْوَى هَاهُنَا» وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ «بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ، دَمُهُ، وَمَالُهُ، وَعِرْضُهُ»
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন-«بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ، دَمُهُ، وَمَالُهُ، وَعِرْضُهُ তোমাদের কোন ভাই যাতে করে অন্য মুসলিম ভাইকে ছোট না করে অর্থাৎ তার মান ও সন্মান ক্ষুন্ন না করে। কেননা প্রত্যেক মুসলিম এর প্রতি অন্য ভাই এর রক্ত, মাল ও সন্মানকে ক্ষুন্ন করা হারাম করা হয়েছে। (রক্ত দ্বারা উদ্দেশ্য হত্যা করা।) সহীহ মুসলিম-৪/১৯৮৬, হাদীস-২৫৬৪।

❖ আর রাসূল (সা.) এর বিদায় হজ্ব বা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পূর্বে উম্মতের জন্য যে সব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন, তার মধ্য থেকে একটি হলো মানুষের সন্মান ক্ষুন্ন না করা। দেখুন সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনা, যাতে বিদায় হজ্বের ভাষন তুলে ধরা হয়েছে-
صحيح البخاري (1/ 24)
67 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا بِشْرٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ عَوْنٍ، عَنِ ابْنِ سِيرِينَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِيهِ، ذَكَرَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَعَدَ عَلَى بَعِيرِهِ، وَأَمْسَكَ إِنْسَانٌ بِخِطَامِهِ - أَوْ بِزِمَامِهِ - قَالَ: «أَيُّ يَوْمٍ هَذَا»، فَسَكَتْنَا حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ سِوَى اسْمِهِ، قَالَ: «أَلَيْسَ يَوْمَ النَّحْرِ» قُلْنَا: بَلَى، قَالَ: «فَأَيُّ شَهْرٍ هَذَا» فَسَكَتْنَا حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ، فَقَالَ: «أَلَيْسَ بِذِي الحِجَّةِ» قُلْنَا: بَلَى، قَالَ: «فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ، وَأَمْوَالَكُمْ، وَأَعْرَاضَكُمْ، بَيْنَكُمْ حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِي شَهْرِكُمْ هَذَا، فِي بَلَدِكُمْ هَذَا، لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الغَائِبَ، فَإِنَّ الشَّاهِدَ عَسَى أَنْ يُبَلِّغَ مَنْ هُوَ أَوْعَى لَهُ مِنْهُ»
অর্থ : হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবি বকরা (রা.) তার পিতা থেকে বর্ননা করেন................. রাসূল (সা.) বলেছেন-قَالَ: «فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ، وَأَمْوَالَكُمْ، وَأَعْرَاضَكُمْ، بَيْنَكُمْ حَرَامٌ নিশ্চয় তোমাদের পরস্পর রক্ত, মাল ও সন্মান ক্ষুন্ন করা হারাম করা হয়েছে। সহীহ বুখারী-১/২৪ হাদীস-৬৭।

❀ অতএব মহান রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে অন্যের বায়ূ নির্গত হওয়ার পর, একটি নিষিদ্ধ আচরণ তথা হাঁসাহাঁসি করা থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন

ইতি : মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন