রবিবার, ৫ জুলাই, ২০১৫

হাদীসে শব্দ পরিবর্তন ও নিজ থেকে সমার্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা সকলের জন্য বৈধ নয়

হাদীসে শব্দ পরিবর্তন ও নিজ থেকে সমার্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা সকলের জন্য বৈধ নয়

 আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) তার রচিত কিতাব ‘নুখবাতুল ফিকার’’এ বলেন-
نخبة الفكر في مصطلح أهل الأثر (4/ 723)
وَلَا يَجُوزُ تَعَمُّدُ تَغْيِيرِ الْمَتْنِ بِالنَّقْصِ وَالْمُرَادِفِ إِلَّا لِعَالِمٍ بِمَا يُحِيلُ الْمَعَانِي [ومن ثم] فَإِنْ خَفِيَ الْمَعْنَى احْتِيجَ إِلَى شَرْحِ الْغَرِيبِ وَبَيَانِ الْمُشْكِلِ.
অর্থ : আর ইচ্চাকৃতভাবে হাদীসের ইবারতকে অসর্ম্পূণ বা সমার্থবোধক শব্দ দিয়ে পরিবর্তন করা বৈধ নয়। একমাত্র হাদীসের অর্থ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখে, এমন আলেমের জন্য বৈধ। এধরনের পরিবর্তনের কারণে হাদীসের মাঝে দূর্লভ ও কঠিন শব্দের ব্যাখ্যার দিকে মুখাপেক্ষী হতে হয়। নুখবাতুল ফিকার-৪/৭২৩।



✏ উল্লেখ্য যে, হাদীসের মাঝে েএসব ‘‘গারীব’’ তথা দূর্লভ শব্দের অর্থ জানার জন্যেও যুগেযুগে মুহাদ্দীসগণ অনেক কিতাব রচনা করেছেন। তার মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য তিনটি কিতাব-
০১. ‘‘আল ফায়েক ফী গারীবিল হাদীস’’ -জারুল্লাহ যমখশরী মৃত-৫৩৮
০২. ‘‘আন নেহায়া ফী গারীবিল হাদীসি ওয়াল আসরি’’ ে-ইবনুল আসীর মৃত-৫৪৪ 
০৩. ‘‘মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার ফী গারায়িবিত তানযীল ও লাতায়েফুল আখবার’’ মুহাম্মাদ তাহের ফাটনী মৃত-৯৮৬ 
আর হাদীসের মাঝে ‘‘মুশকিল’’ বা কঠিন শব্দ সমাধানের জন্যও মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন কিতাব রচনা করেছেন। যেমন :- ইমাম ত্বহাবী (রহ.-৩২১) এর ‘‘শারহু মুশকিলিল আসার’’ ও খাত্তবি (রহ.-৩৮৮) এর ‘‘মুয়ালিমুস সুনান’’ (যা সুনানে আবূ দাউদের ব্যাখ্যা) বিখ্যাত। এছাড়াও হাদীসের ব্যাখ্যায় রচিত কিতাবগুলোও উল্লেখযোগ্য।

 এখন দেখুন ইবনে হাজার (রহ.) এর এই নিয়মের আঙ্গিকে দলীল স্বরুপ সহীহ বুখারী শরীফের একটি বর্ণনা-
صحيح البخاري (1/ 58)
247 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ، قَالَ: أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، قَالَ: أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَيْدَةَ، عَنِ البَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ، فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلاَةِ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيْمَنِ، ثُمَّ قُلْ: اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، اللَّهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ، فَإِنْ مُتَّ مِنْ لَيْلَتِكَ، فَأَنْتَ عَلَى  الفِطْرَةِ، وَاجْعَلْهُنَّ آخِرَ مَا تَتَكَلَّمُ بِهِ ". قَالَ: فَرَدَّدْتُهَا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا بَلَغْتُ: اللَّهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، قُلْتُ: وَرَسُولِكَ، قَالَ: «لاَ، وَنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ»
অর্থ : হযরত বারা ইবেন আযেব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) আমাকে বলেছেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন নামাযের ন্যায় ওযু কর। অতঃপর ডান পার্শ্বে শয়ন করে (নিন্ম দোয়াটি) বলবে-
 اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، اللَّهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ
‘‘হে আল্লাহ! আমার জীবন আপনার কাছে সমর্পন করলাম। আমার সকল কাজ আপনার কাছে সোপর্দ করলাম এবং আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করলাম, আপনরার প্রতি আগ্রহ ও ভয় নিয়ে। আপনি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল ও নাজাতের স্থান নেই। হে আল্লাহ! আমি ঈমান আনলাম আপনার নাযিলকৃত কিতাবের উপর এবং আপনার প্রেরিত নবীর উপর।’’
তারপর যদি সে রাতেই তোমার মৃত্যু হয়, তবে ‘‘ফিতরাতে ইসলামের’’ উপর তোমার মৃত্যু হবে। এ কথাগুলি তোমার শেষ কথা বানিয়ে নাও।
তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) কে এ কথাগুলি পুনরায় শুনালাম। যখন  اللَّهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ  পর্যন্ত পৌঁছে  وَرَسُولِكَ  বললাম, তখন তিনি বললেন : না; বরং  « وَنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ»  বল। সহীহ বুখারী-১/৫৮, হাদীস-২৪৭।

 ব্যাখ্যা : দেখুন! রাসূল (সা.) এর সামনে হযরত বারা ইবনে আযেব (রা.) যখন হাদীসটি পুনরাবৃত্তি করছিলেন, তখন তিনি  وَنَبِيِّكَ  (ওয়া নাবিয়্যিকা) শব্দটিকে তার চেয়ে উত্তম শব্দ তথা  وَرَسُولِكَ  (ওয়া রাসূলিকা) দ্বারা পরিবর্তন করা মাত্রই রাসূল (সা.) তাকে সংশোধন করার লক্ষে বললেন যে, তুমি ‘‘ওয়া রাসূলিকা’’ না বলে হাদীসের হুবহু শব্দ ‘‘ওয়া নাবিয়্যিকাই’’ বল।

 প্রিয় পাঠক! তাহলে আমরা কি করে হাদীসের শব্দকে পরিবর্তন ও সমর্থক শব্দ ব্যবহার করে  থাকি? একটু চিন্তা করে দেখুন....!!!!

 মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হাদীসের মাঝে এই সব অবৈধ পরিবর্তন থেকে হেফাযত করুন এবং প্রত্যেকটি বিষয় দলীলসহ জানার তাওফীক দান করুন।   আমীন

 ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন