বুধবার, ২৪ জুন, ২০১৫

৪য় পর্ব : তারাবীহ নামায ২০ রাকআত**নবী সাহাবীদের এই মতবাদ** ৮ এর প্রথা ভ্রান্তি**নেই এতে শান্তি

৪য় পর্ব : তারাবীহ নামায ২০ রাকআত**নবী সাহাবীদের এই মতবাদ**
৮ এর প্রথা ভ্রান্তি**নেই এতে শান্তি
এ পর্বে আলোচ্য বিষয় : তারাবীহ নামায ২০রাকআত বিষয়ে রয়েছে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর অধিক আসার ও আমল। আর কথিত আহলে হাদীসরা সাহাবায়ে কেরামের শানে অনেক কু-মন্তব্য করে থাকেন ও তাদের আসারকে মানতে চায় না। তাই এই পর্বে আলোচনা হবে সাহাবীগণ ও তাদের আসার শরীয়তের প্রমাণ কি না?

❁❀ শুরুতেই তাদের প্রতি তিনটি প্রশ্ন : ❁❀
আপনারা বলে থাকেন সাবাহীগণ শরীয়তের প্রমাণ নয়? তাহলে নিন্ম ক্ষেত্রে তাদের আমল দিয়ে দলীল পেশ করেন কেন? সার্থের সাথে মিলেছে তাই?

✏ ০১. তারা এক হাতে মুসাফাহা করে, জিজ্ঞাস করলে ভাই! এক হাতে মুসাফাহা করলেন কেন? জবাবে তারা বলে-
صحيح البخاري (8/ 59)
وَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: «عَلَّمَنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التَّشَهُّدَ، وَكَفِّي بَيْنَ كَفَّيْهِ»
বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আল্লাহর রাসূলের সাথে এক হাতে মুসাফাহা করেছেন।

✏ প্রিয় পাঠক! আমি এই হাদীসের ব্যাখ্যা নিয়ে এখানে আলোচনা করবো না। আমার উদ্দেশ্য হলো এটি দেখানো যে, এখানে কেন তারা বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) কে দিয়ে প্রমাণ দিচ্ছে?

✏ ০২. তারা দিন পাঁচবার নামাযের জন্য আযান দিয়ে থাকে। আমার প্রশ্ন হলো আপনারা কি আযানের  ইতিহাস জানেন?.... দেখুন-
سنن الترمذي ت بشار (1/ 260)
189 - حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ الأُمَوِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبِي، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: لَمَّا أَصْبَحْنَا أَتَيْنَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ بِالرُّؤْيَا، فَقَالَ: إِنَّ هَذِهِ لَرُؤْيَا حَقٍّ، فَقُمْ مَعَ بِلاَلٍ فَإِنَّهُ أَنْدَى وَأَمَدُّ صَوْتًا مِنْكَ، فَأَلْقِ عَلَيْهِ مَا قِيلَ لَكَ، وَلْيُنَادِ بِذَلِكَ، قَالَ: فَلَمَّا سَمِعَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ نِدَاءَ بِلاَلٍ بِالصَّلاَةِ خَرَجَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ يَجُرُّ إِزَارَهُ، وَهُوَ يَقُولُ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ، لَقَدْ رَأَيْتُ مِثْلَ الَّذِي قَالَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَلِلَّهِ الحَمْدُ، فَذَلِكَ أَثْبَتُ.
.....বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) স্বপ্নের মাধ্যমে এই আযান শিখেছেন। তাহলে সাহাবায়ে কেরাম শরীয়তের প্রমাণ না হলে আপনারা আপনাদের মসজিদগুলোতে আযান দেয়া বন্ধ করে দিন। অন্যথায় বলুন যে, সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর আসার ও আমল প্রমাণযোগ্য।

✏ ০৩. তারাবীহ নামায আট রাকআতের দলীল দেয়ার প্রয়োজন হলেও চলে আসে সাহাবায়ে কেরামের এর আমলেলর মাঝে। যেমন দেখুন-
المعجم الأوسط (4/ 108)
3731 - حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ الطَّلْحِيُّ قَالَ: نا جَعْفَرُ بْنُ حُمَيْدٍ قَالَ: نا يَعْقُوبُ الْقُمِّيُّ، عَنْ عِيسَى بْنِ جَارِيَةَ، عَنْ جَابِرٍ قَالَ: جَاءَ أُبَيُّ فَقَالَ: «يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَانَ مِنِّي اللَّيْلَةَ شَيْءٌ إِنَّ نِسَاءً اجْتَمَعْنَ فِي دَارِي لَا يَقْرَأْنَ، فَصَلَّيْتُ بِهِنَّ ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ، ثُمَّ أَوْتَرْتُ فَسَكَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكَانَ شِبْهَ الرِّضَا»
উক্ত হাদীসে তারা আট রাকআত তারাবীহ এর পক্ষে বিখ্যাত সাহাবী ‘‘উবাইয়া ইবনে কাব (রা.)’’ কে দিয়ে দলীল দেয়ার চেষ্টা করে। এই দলীল নিয়ে আমি অন্য পর্বে আলোচনা করবো। এখানে আমার উদ্দেশ্য হলো, তারা নিজ সার্থের ক্ষেত্রে সাহাবীদের আমল ও বাণী দিয়ে প্রমাণ দিবে কেন?

❁❀ সাহাবাগণ আমাদের অনুসরণীয় কেন?❁❀ 
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর অনুসৃত আদর্শ এবং তাদের উক্তি ও আমল ইলমে হাদীসের কিছু নিয়মনীতি ও শর্তসাপেক্ষে সমস্ত জমহুরে উম্মত, চার মাযহাবের ইমাম ও বিশেষজ্ঞ মুজতাহিদ ইমামগণের নিকট অনুসরণীয়, শরীয়তের যাবতীয় ক্ষেত্রে প্রমাণযোগ্য। মু‘জামু মুসতালাহুল হাদীস, ড. মুহাম্মদ জিয়া আযমী-৫০৭। যফরুল আমানী-৩৩২। আল আজবীব-২২৫।

এ ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো, সাহাবাগণের উক্তি ও আমলগুলো পবিত্র কুরআন ও রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হওয়া। সাহাবাগণের এমন উক্তি ও আমলগুলো শরীয়তের দলীল হিসেবে গ্রহণ করার পক্ষে পবিত্র কুরআন ও রাসূল (সা.) এর হাদীসে অসংখ্য দলীল প্রমাণ রয়েছে।

░▒▓█►নিন্মে অতি সংক্ষেপে মাত্র কয়েকটি উপস্থাপন করা হলো :

আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন : 
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
‘‘আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মাঝে পুরাতন, এবং তাদের যারা অনুসরণ করবে আল্লাহ পাক সে সব লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। এবং তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন বেহেশত, যার নীচ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরদিন। এটাই হলো মহান সফলতা। সূরা তাওবা-১০০।
(ক) সাহাবগণের প্রতি আল্লাহপাক সন্তুষ্ট হয়েছেন। তাই তাদের ব্যাপারে যারা নাক গলায় তাদের শিক্ষা দেয়া উচিত।
(খ) যারা সাহাবাগণকে অনুসরণ করছে তাদের প্রতিও আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করেছেন। 
তাই স্বভাবিকভাবেই বুঝা যায় যে, সাহাবাগণকে অনুসরণ করা ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ বৈধ। এমনকি তা হবে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টিযোগ্য নেক আমল।
এ ধরনের অসংখ্য আয়াত রয়েছে। পরিসর সংকীর্ণ হওয়ার কারণে একটিমাত্র আয়াত উদাহরণ স্বরূপ পেশ করা হলো।

 এ ভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : 
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ 
‘‘তোমাদের উপর আমার সুন্নাত (তরীকা-হাদীস) এবং সত্যের আলোকবর্তিকা হিদায়াতপ্রাপ্ত আমার সাহাবীগণের সুন্নাত আঁকড়ে ধরা ওয়াজিব। তিরমিযী শরীফ, কিতাবুল ইলম-৫/৪৩, হাদীস-২৬৭৬।

অপর হাদীসে তিনি বলেন : 
وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلَّا مِلَّةً وَاحِدَةً»، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي»
‘‘আমার উম্মত ৭৩টি দলে বিভক্ত হবে, কেবল একটি দল ব্যতীত অপরাপর সবাই দোযখী হবে। (এতদ শ্রবণে) সাহাবাগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! মুক্তি প্রাপ্ত এই দলটির পরিচয় কি? তদুত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যারা আমার এবং আমার সাহাবাদের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তিরমিযী-৫/৪৩, হাদীস-২৬৪১।

উল্লেখ্য যে, প্রথমোক্ত হাদীসটিতে নবীজী (সা.) তার তরীক্বা বা আদর্শের সাথে সাথে সাহাবাদের তরীক্বাকেও আঁকড়ে ধরতে নির্দেশ করেছেন। এ ভাবে দ্বিতীয় হাদীসে তিনি তার তরীক্বায় প্রতিষ্ঠিতদেরকে যেভাবে মুক্তিপ্রাপ্ত দলে গণ্য করেছেন, সাহাবাদের তরীকা বা আদর্শে প্রতিষ্ঠিতদেরকেও মুক্তিপ্রাপ্ত দল হিসেবে গণ্য করেছেন।
তাই উল্লেখিত হাদীস দু’টি এবং এ ধরণের আরো অসংখ্য হাদীসের আলোকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, সাহাবাগণের তরীকা বা আদর্শ তথা তাদরে উক্তি ও আমল আমাদের জন্য অবশ্যই অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়।

❁❀এখন দেখুন সাহবায়ে কিরাম (রা.) সম্বন্ধে কথিত আহলে হাদীসদের আক্বীদা❁❀
উপরোল্লিখিত সংক্ষিপ্ত আলোচনার আলোকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, রাসূল (সা.) এর সম্মানিত সাহাবীগণের মূল্যবান বাণী ও তাদের অনুসৃত আদর্শ আমাদের জন্য পাথেয় এবং অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। আর এটিই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সর্বসম্মত আক্বীদা। পক্ষান্তরে লা-মাযহাবী বা সালাফীদের আক্বীদা হলো যে, সাহাবাদের কোনো বাণী তাদের অনুসৃত আদর্শ অনুসরণযোগ্য এবং অনুকরণ করা ধর্মহীনতা ও অন্ধ বিশ্বাসের নামান্তর।

তাদের উক্ত আক্বীদার প্রমাণ স্বরূপ ভারতবর্ষে লা-মাযহাবীদের প্রধান মুখপাত্র নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খানের নিজ গ্রন্থ থেকে কয়েকটি উক্তি নিন্মে প্রদত্ত হল-
قول الصحابى لاتقوم به حجة وفهم الصحابى ليس بحجة ـ 
‘‘সাহাবাগণের (রা.) কথা দলীল স্বরূপ পেশ করা যাবে না এবং তাদের বুঝ নির্ভরযোগ্য নয়।’’ আর রওজাতুন নাদীয়াহ-১/১৪১, ১/১৫৪।

অন্য গ্রন্থে আরও লিখেন-
وفعل الصحابى لايصلح حجة ـ 
এবং সাহাবাগণের আমল দলীল হওয়ার উপযোগী নয়। আততাজ আল-মুক্বাল্লিদ-১৯২।

লা-মাযহাবীদের সর্বাধিনায়ক সাইয়্যেদ নযীর হুসাইন বলেন-
زیر کہ قول صحابی حجت نیست ۔
সাহাবীদের কথা প্রমাণযোগ্য নয়। ফাতাওয়ায়ে নজীরিয়া-১/১৪০।

লা-মাযহাবীদের আক্বীদা সাহাবায়ে কেরামের (রা.) আদর্শ অনুসরণের ব্যাপারে অনীহার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের কতিপয় আলেম ভ্রষ্ট শিয়াদের পদাষ্ক অনুসরণ করে সাহাবাদেরকে ফাসেক্বও বলেছে। লা-মাযহাবীদের বিশেষ মুখপাত্র নবাব ওয়াহিদুযযামান তার রচিত গ্রন্থে লিখেন-
إن من الصحابة من هو فاسق كالوليد ومثله يقال فى حق معاوية وعمر ومغيرة وسمرة ـ
সাহাবাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক ফাসেক্বও ছিল, যেমন-ওয়ালিদ, তেমনি ভাবে মুয়াবিয়া, উমর, মুগীরা ও সামুরা (রা.) প্রমুখ সম্বন্ধেও অনুরূপ বলা যেতে পারে। (!)। নুযুলুল আবরার-২/৯৪।

❏ প্রিয় পাঠক : এখন আপনি নিজেই তাদের বিষয়ে ভেবে দেখুন যে তারা কেমন সহীহ হাদীসের অনুস্বারী ও ঈমান ওয়ালা? আর কত বড় সার্থ্যপর!

✔ মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকটি বিষয়ে আমাদেরকে ‘‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের’’ আকিদা মেনে আমল করার  তাওফীক দান করুন। আমীন

✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ                          চলবেই ইনশাআল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন