বুধবার, ২৪ জুন, ২০১৫

১ম পর্ব : তারাবীহ নামায ২০ রাকআত**নবী সাহাবীদের এই মতবাদ** ৮ এর প্রথা ভ্রান্তি**নেই এতে শান্তি

১ম পর্ব : তারাবীহ নামায ২০ রাকআত**নবী সাহাবীদের এই মতবাদ**
৮ এর প্রথা ভ্রান্তি**নেই এতে শান্তি

❖  এ পর্বের আলোচ্য বিষয় :  কথিক আহলে হাদীসদেরকে দেখা যায়, শিয়াদের ন্যায় নামাযের সংখ্যা কমানো ও নামায থেকে মানুষকে কী করে বিরত রাখা যায়, তার প্রতিযোগিতায় মগ্ন। 
দৃষ্টান্ত স্বরূপ মাত্র তিনটি নমুনা নিচে আলোচনা করা হবে। তাই এই পর্বের নাম ‘‘শিয়া সালাফী ভাই ভাই’’ বলা যেতে পারে।

❏ আসুন তাহলে প্রথমত জেনে নেই, যারা আল্লাহর বান্দাদেরকে ইসলামের অকাট্য প্রমাণ দ্বারা প্রামাণিত নামাযগুলো ও তার পরিপূর্ণ সংখ্যা আদায় করতে বাধা সৃষ্টি করে; তাদের সম্পর্কে কোরআন ও সুন্নাহ কি বলে?


❀ মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন-
{أَرَأَيْتَ الَّذِي يَنْهَى (9) عَبْدًا إِذَا صَلَّى} [العلق: 9، 10]
আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে নিষেধ করে? এক বান্দাকে যখন যে নামায পড়ে। সূরা আলাক-৯-১০।

❀ মহান আল্লাহ  আরো বলেন-
{وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ } [البقرة: 45]
নিশ্চয় নামায মহা ভারী। কিন্তু এক মাত্র ঐ সব ব্যক্তির উপর ভারী নয়, যারা আল্লাহকে ভয় করে। সূরা বাকারা-৪৫।

❀  সহীহ হাদীসে রাসূল (সা.) বলেন-
صحيح مسلم (1/ 88)
134 - (82) حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى التَّمِيمِيُّ، وَعُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، كِلَاهُمَا عَنْ جَرِيرٍ، قَالَ يَحْيَى: أَخْبَرَنَا جَرِيرٌ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي سُفْيَانَ، قَالَ: سَمِعْتُ جَابِرًا، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ»
হযরত আবূ সুফিয়ান (রহ.) বলেন, আমি জাবের (রা.) থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই মানুষ ও কুফুর-শিরক এর মাঝে একমাত্র পার্থক্য হলো নামায। মুসলিম-১/৮৮, হাদীস-১৩৪।

✏ প্রিয় পাঠক! ‍উক্ত কোরআন-সুন্নাত দ্বারা কি ঐ সব ব্যক্তির প্রতি নিন্দা করা হয়নি? যারা আল্লাহর বান্ধাদেরকে নামায পড়া থেকে বাঁধা সৃষ্টি করে??? মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। 

✿ তাহলে আসুন আমরা এখন আলোচনা করবো, কথিত আহলে হাদীসগণ যে সব স্থানে, মুসলিম উম্মাহকে সহীহ হাদীস এর শ্লোগান দিয়ে, নামায পড়া থেকে বিরত রাখতে চায়। সেগুলো নিয়ে.......। নিন্মে দেখুন-

✿✏ ০১. কথিত আহলে হাদীসগণ বলেন, জুমার পূর্বে চার রাকআত সুন্নাত পড়া লাগবে না !! কেননা ইসলামে তার কোন দলীল নেই।
আমি আশ্চর্য হয়ে যাই, তারা কি করে এধরনের কথা বলে? অথচ রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত-

المعجم الأوسط (2/ 172) الناشر: دار الحرمين - القاهرة عدد الأجزاء: 10
1617 - حَدَّثَنَا أَحْمَدُ قَالَ: نا شَبَابٌ الْعُصْفُرِيُّ قَالَ: نا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ السَّهْمِيُّ قَالَ: نا حُصَيْنُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ السَّلَمِيُّ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ، عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا، وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا، يَجْعَلُ التَّسْلِيمَ فِي آخِرِهِنَّ رَكْعَةً»
হযরত আসেম ইবনে আবি জামরা (রহ.) হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন নিশ্চয় রাসূল (সা.) জুমার পূর্বে চার রাকআত ও জুমার পরে চার রাকআত (সুন্নাত) পড়তেন, শেষ রাকআতে সালাম ফিরাতেরন। আল মুজামুল আওসাত-২/১৭২, হাদীস-১৬১৭।

হাদীসটির মান : 
‘‘বিখ্যাত মুহাদ্দেস আবূ যুরআ আল ইরাকী (রহ.) ‘‘তারহুত তাসরীব ফি শারহিত তাকরীব’’ এর ৩/৩৬ এর মাঝে উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করে বলেনرواه ابو الحسن فى فوائده باسناد جيد ـ উক্ত হাদীসটিকে আবূল হাসান (রহ.) তার রচিত ‘‘ফাওয়ায়েদ’’ নামক গ্রন্থে উত্তম (সহীহ) সনদে উল্লেখ করেছেন। 
কিন্তু এ বিষয়ে ‘‘ইবনে মাজাহ’’  এর মাঝে একটি বর্ণনা রয়েছে তা যয়ীফ।’’
(উল্লেখ্য যে, তারা উক্ত সহীহ হাদীসটি না বলে, সাধারণ মানুষের সাথে আলোচনার সময়  ‘‘ইবনে মাজাহ’’ এর যয়ীফ বর্ণনাটি পেশ করে নামায থেকে বিরত রাখতে চায়)। হায় আফসোস!!

✏ প্রিয় পাঠক! উক্ত আলোচনা থেকে হাদীসটি সহীহ বলে প্রমাণিত। তাহলে কেন আহলে হাদীসগণ শিয়াদের ন্যায় মুসলিক উম্মাহকে জুমার পূর্বে সুন্নাত পড়া থেকে বিরত রাখবে?

✿✏ ০২. কথিত আহলে হাদীসগণ বলেন, বিতর নামায এক রাকআত পড়তে হবে, তিন রাকআত পড়া যাবে না। আমি আশ্চর্য হই তাদের এ সব কথা দ্বারা; কেননা আজকের আলোচিত বিষয় নিয়ে তাদেরকে বলা হয়, তোমরা বলো! তারাবীহ আট রাকআত, তার দলীল কি ? তারা জবাবে নিন্ম বর্ণনা পেশ করবে (যার মাঝে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে যে বিতর নামায তিন রাকআত) -
صحيح البخاري (4/ 191)
3569 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ سَعِيدٍ المَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ؟ قَالَتْ: مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ تَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ؟ قَالَ: «تَنَامُ عَيْنِي وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي»
হযরত আবূ সালামা (রা.) হযরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, রমযানে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নামায কিরূপ হতো? তিনি বললেন, রমযান ও অন্য সময় (সারা বৎসর) তিনি এগারো রাকাতের বেশী পড়তেন না। তিনি চার রাকাত করে পড়তেন। এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে তুমি জিজ্ঞেস করো না। এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি যে বিতর পড়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়েন?  তিনি বললেন, আয়েশা! আমার চোখ ঘুমায় বটে, তবে আমার কলব (অন্তর) জাগ্রত থাকে। বুখারী-৪/১১৯, হাদীস-৩৫৬৯। 

✏ প্রিয় পাঠক! উক্ত হাদীসের মাঝে স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, বিতর তিন রাকআত পড়তেন। তাহলে কেন তারা উম্মতের মাঝে এক রাকআত বলে ফেৎনা সৃষ্টি করে??? (তাদের দলীলে তারাই ফেঁসে গেলো)।
আরো মজার বিষয় হলো উক্ত হাদীস নিয়ে তারাবীহ এর নামায আট রাকআত বলে ফেৎনা সৃষ্টি করে অথচ এটি তাহাজ্জুদ এর বিষয়ে যা নিয়ে আমি অন্য পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ইনশাল্লাহ

✿✏ (৩) ‘‘কথিত আহলে হাদীসগণ বলেন, (আমাদের আলোচিত বিষয়) তথা তারাবীহ আট রাকআত পড়তে হবে। বিশ রাকআত পড়া বেদআত।’’ 
এটিতো আরো আশ্চর্যের বিষয়!! কেননা যে বিষয়ে সহীহ বর্ণনা ও (تلقى بالقبول) এর মাধ্যমেও সহীহ হাদীস রয়েছে, আর ইজমায়ে সাহাবাতো আছেই (যা শরীয়তের এক অকাট্য প্রমাণ)। তাহলে কি করে তারা এই সব নব মতবাদ উত্থাপিত করে? এ মাসয়ালাটির দলীল এই পর্বে উল্লেখ করছি না। কেননা পরবর্তী পর্বগুলোর মাঝে এর অসংখ্য প্রমাণ আসবে। ইনশা আল্লাহ

❏ সর্বপরি আমরা গভীর দৃষ্টিতে তাকালে ও চিন্তা করলে দেখতে পাই, তারা প্রকৃত পক্ষে ইহুদী খৃষ্টান ও শিয়াদের ন্যায় ইসলাম, মুসলিমদের ঈমান ও নামায নিয়ে খেলা করছে এবং সহীহ হাদীসের দোহাই দিয়ে, উম্মাহকে নামায ও ঈমান থেকে সরানোর  অভ্যন্তরিনভাবে সর্বোচ্চ চিরুনী অভিযান চালাচ্ছে। যা উক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট।

✔ মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাদের নামায ও ঈমান হনন নিয়ে এই খৃষ্টান ও শিয়া মার্কা চিরুনী অভিযান থেকে রক্ষা করুন। আমীন

✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ                                          চলবেই ইনশাআল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন