বুধবার, ২৪ জুন, ২০১৫

৩য় পর্ব : তারাবীহ নামায ২০ রাকআত**নবী সাহাবীদের এই মতবাদ** ৮ এর প্রথা ভ্রান্তি**নেই এতে শান্তি

৩য় পর্ব : তারাবীহ নামায ২০ রাকআত**নবী সাহাবীদের এই মতবাদ**
৮ এর প্রথা ভ্রান্তি**নেই এতে শান্তি
❖ এ পর্বে আলোচ্য বিষয় :  তারাবীহ নামায ২০রাকআত এর শুরু লগ্নের ইতিহাস ও উত্থাপিত আপত্তির জবাব।

তারাবীহ এর শুরু লগ্নের ইতিহাস সহীহ কিতাবগুলো থেকে বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। নিন্মে তা আলোচনা করা হলো।

✏ ০১. (নবীর যুগে তারাবীহ) হযরত আয়েশা (রা.) এর হাদীস-
صحيح مسلم (1/ 524)
177 - (761) حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى فِي الْمَسْجِدِ ذَاتَ لَيْلَةٍ، فَصَلَّى بِصَلَاتِهِ نَاسٌ، ثُمَّ صَلَّى مِنَ الْقَابِلَةِ، فَكَثُرَ النَّاسُ، ثُمَّ اجْتَمَعُوا مِنَ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ، أَوِ الرَّابِعَةِ فَلَمْ يَخْرُجْ إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا أَصْبَحَ، قَالَ: «قَدْ رَأَيْتُ الَّذِي صَنَعْتُمْ، فَلَمْ يَمْنَعْنِي مِنَ الْخُرُوجِ إِلَيْكُمْ إِلَّا أَنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ»، قَالَ: وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) এক রাতে মসজিদে তারাবীহ পড়লেন। সাহাবীগণও তার সঙ্গে নামাযে শামিল হলেন। দ্বিতীয় রাতে মুকতাদী সংখ্যা আরও বেড়ে গেল। এরপর তৃতীয় বা চুতুর্থ রাতে নবী (সা.) তারাবীর জন্য মসজিদে আসলেন না। সকালে সবাইকে লক্ষ করে বললেন, আমি তোমাদের আগ্রহ ও উপস্থিতি লক্ষ করছি, কিন্তু এ নামায তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবে এই আশষ্কায় আমি তোমাদের কাছে আসিনি। (সহীহ মুসলিম-১/৫২৪, হাদীস-১৭৭।



✏ ০২. হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) এর হাদীস-
صحيح مسلم (1/ 523)
174 - (759) وحَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرَغِّبُ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَأْمُرَهُمْ فِيهِ بِعَزِيمَةٍ، فَيَقُولُ: «مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»، فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ ثُمَّ كَانَ الْأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ فِي خِلَافَةِ أَبِي بَكْرٍ، وَصَدْرًا مِنْ خِلَافَةِ عُمَرَ عَلَى ذَلِكَ
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) নবী করীম (সা.) এর কিয়ামে রমযানের প্রতি উৎসাহিত করতেন, তবে তিনি তা অপরিহার্য করেননি। তিনি বলতেন, যে রমযানের রাতে ঈমানের সঙ্গে ছওয়াবের আশায় দণ্ডায়মান হয় তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। নবী-যুগে, আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এর খিলাফতকালে এবং উমর (রা.) এর খিলাফাতের প্রথম দিকে এই অবস্থাই বিদ্যমান ছিল। (সহীহ মুসলিম-১/৫২৩, হাদীস-১৭৪।

✏ ০৩. হযরত ওমর (রা.) এর যুগে- হযরত আব্দুর রহমান আলকারী (রহ.) এর বর্ণনা-
موطأ مالك رواية أبي مصعب الزهري (1/ 109)
(18) باب ماجاء في قيام رمضان
279 - حدثنا أَبُو مُصْعَبٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدٍ الْقَارِيِّ، أَنَّهُ قَالَ: خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ليلة فِي رَمَضَانَ إِلَى الْمَسْجِدِ، فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ، يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ، وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلاَتِهِ الرَّهْطُ، فَقَالَ عُمَرُ بْنِ الْخَطَّابِ: إِنِّي أرَانِي لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلاَءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ كَانَ أَمْثَلَ، ثم عزم فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ , قَالَ: ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى، وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلاَةِ قَارِئِهِمْ، فَقَالَ عُمَرُ: نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هَذِهِ، وَالَّتِي تَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنِ الَّتِي يقُومُونَ , يَريد آخِرَ اللَّيْلِ , وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ.
হযরত আব্দুর রহমান আলকারী (রহ.) বলেন, আমি রমযান মাসে উমর (রা.) এর সঙ্গে মসজিদে গেলাম। দেখলাম, লোকেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে তারাবী পড়ছেন। কেউ একা পড়ছেন, আবার কেউ দু’ চারজন সঙ্গে নিয়ে পড়ছেন। তখন উমর (রা.) বললেন, ‘এদের সকলকে যদি এক ইমামের পিছনে জামাতবদ্ধ করে দেই তাহলে মনে হচ্ছে উত্তম হয়।’ এরপর তিনি তাদেরকে উবাই ইবনে কাব (রা.) এর পিছনে জামাতবদ্ধ করে দিলেন।
   আব্দুর রহমান বলেন, আরেক রাতে আমরা বের হলাম। লোকেরা এক ইমামের পিছনে তারাবীর নামায পড়ছিল। উমর (রা.) বললেন, فَقَالَ عُمَرُ: نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هَذِهِ এই নতুন নিয়ম কত ভালো। তবে রাতের যে অংশে তোমরা নামাযে দণ্ডায়মান হও তা থেকে ওই অংশ উত্তম যে অংশে তোমরা ঘুমিয়ে থাক। অর্থাৎ শেষ রাত।’ বর্ণনাকারী বলেন, তখন প্রথম রাতেই নামায পড়া হত। (মুয়াত্তা মালিক-১/১০৯, হাদীস-২৭৯)।

❁ একটি মুর্খের ন্যায় আপত্তি : উক্ত বর্ণনার মাঝে রয়েছে যে,  فَقَالَ عُمَرُ: نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هَذِهِ হযরত ‍উমর (রা.) বলেছেন, এই নতুন بِدْعَةُ বেদআত (নবআবিষ্কৃত) নিয়ম কতই না সুন্দর!!
অতএব হযরত ওমর যেটা (বিশ রাকআতের পন্থা) কে بِدْعَةُ বেদআত বলেছে তা কি করে সঠিক হতে পারে?

❁  জবাব  : হযরত ওমর (রা.) মসজিদে প্রবেশ করে, সকলকে এক ইমামের পিছনে তারাবীহ পড়তে দেখেন নি। তাই, হযরত ওমর (রা.) প্রথম দিন সবাইকে একসাথ করে, এক ইমামের পিছনে নামাযের ব্যবস্থা করেছেন, পরবর্তিতে তিনি তা দেখে বলেছেন যে, এই بِدْعَةُ নবআবিষ্কৃত পন্থা কতই না ভালো। অতএব এখানে الْبِدْعَةُ শব্দটির শাব্দিক অর্থ উদ্দেশ্য। পারিভাষিক অর্থ নয়। যেমন মহান আল্লাহ কোরআনুল কারীমের বলেন-
{قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنَ الرُّسُلِ وَمَا أَدْرِي مَا يُفْعَلُ بِي وَلَا بِكُمْ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ وَمَا أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ مُبِينٌ } [الأحقاف: 9]

অর্থ : বলুন আমিতো কোন بِدْعًا নতুন রাসূল নয়। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি ওহি করা হয়, আমি স্পষ্ট সর্তকাকারী ব্যতীত আর কিছুই নয়। সূরা আহকাফ-০৯।

✏  প্রিয় পাঠক! উক্ত আয়াতেও রাসূলের ক্ষেত্রে بِدْعًا (বেদআত) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, তাই বলে কি তার এই উদ্দেশ্য হবে যে, তিনি বেদআতী রাসূল!? নাউযুবিল্লাহ (বরং তার অর্থ হলো  আমি কোন নতুন রাসূল নয়)। তাই ফেৎনা না করে আমরা সঠিক ব্যাখ্যা জানার চেষ্টা করি।

❁  এছাড়াও সহীহ মুসলিম এর বিখ্যাত ব্যাখ্যাবিদ ইমাম নববী (রহ.) বলেন-
المجموع شرح المهذب للنووى (4/ 519) الناشر: دار الفكرت عدد الاجزاء : 20
" كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ " هَذَا مِنْ الْعَامِّ الْمَخْصُوصِ لِأَنَّ الْبِدْعَةَ كُلُّ مَا عُمِلَ عَلَى غَيْرِ مِثَالٍ سَبَقَ قَالَ الْعُلَمَاءُ وَهِيَ خَمْسَةُ أَقْسَامٍ وَاجِبَةٌ وَمَنْدُوبَةٌ وَمُحَرَّمَةٌ وَمَكْرُوهَةٌ وَمُبَاحَةٌ وَقَدْ ذَكَرْت أَمْثِلَتَهَا وَاضِحَةً فِي تَهْذِيبِ الْأَسْمَاءِ وَاللُّغَاتِ 
প্রত্যেক বেদআতই ভ্রান্ত। .......কিন্তু ওলামায়ে কেরাম তার থেকে কিছু বিষয়কে আলাদা করেছেন....আর বলেছেন বেদআত পাঁচ প্রকার (১) ওয়াযিব (২) মুস্তাহাব (৩) হারাম (৪) মাকরুহ (৫) মুবাহ আমি সবগুলো প্রকারের দৃষ্টান্ত আমার রচিত কিতাব ‘তাহযীবুল আসমায়ে ওয়াল লোগা’’ এর মাঝে উল্লেখ করেছি..। আল মাজমু-৪/৫১৯।

  প্রিয় পাঠক! উক্ত আলোচনা থেকেও স্পষ্ট যে শুধু بِدْعَةُ শব্দ ব্যবহার করলে ঢালাও ভাবে পারিভাষিক অর্থে বেদআত বলে আক্ষা দেয়া সম্পূর্ণ ভুল।

❁❀হযরত ওমর (রা.) এর মর্যাদা নিয়ে কিছু কথা❁❀

✏ ০১. হযরত ওকবা ইবনে আমের (রা.) এর বর্ণনা-
مسند أحمد ط الرسالة (28/ 624)
17405 - حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ، حَدَّثَنَا حَيْوَةُ، حَدَّثَنَا بَكْرُ بْنُ عَمْرٍو، أَنَّ مِشْرَحَ بْنَ هَاعَانَ، أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ عُقْبَةَ بْنَ عَامِرٍ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " لَوْ كَانَ مِنْ بَعْدِي نَبِيٌّ، لَكَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ " (1)

(1) إسناده حسن. أبو عبد الرحمن: هو عبد الله بن يزيد المقرئ، وحيوة: هو ابن شريح الحضرمي، وهما ثقتان، وبكر بن عمرو- وهو المعافري- ومشرح بن هاعان، كلاهما حسن الحديث.
وأخرجه يعقوب بن سفيان في "المعرفة والتاريخ" 1/462 و2/500، والترمذي (3686) ، وأبو بكر القطيعي في زياداته على "فضائل الصحابة" لأحمد (519) ، والطبراني في "الكبير" 17/ (822) ، والحاكم 3/85، واللالكائي في "شرح أصول الاعتقاد" (2491) ، والخطيب في "موضح أوهام الجمع والتفريق" 2/478 من طريق أبي عبد الرحمن عبد الله بن يزيد المقرئ، بهذا الإسناد. وقال الترمذي: حديث حسن غريب. وقال الحاكم: صحيح الإسناد، ووافقه الذهبي!
হযরত ওকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, যদি আমার পরে কোন নবী হতো তাহলে উমর নবী হতো। মুসনাদে আহমদ-২৮/৬২৪, হাদীস-১৭৪০৫। উক্ত হাদীসটি হাসান তথা প্রমাণযোগ্য, যার তাহকীক আরবীতে আমি বিস্তারিত উল্লেখ করেছি।

✏ ০২. মুহাম্মাদ ইবনে সাদ এর তার পিতা থেকে বর্ণনা -
صحيح البخاري (8/ 23)
6085 - حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ، عَنْ صَالِحِ بْنِ كَيْسَانَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَبْدِ الحَمِيدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زَيْدِ بْنِ الخَطَّابِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: اسْتَأْذَنَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَعِنْدَهُ نِسْوَةٌ مِنْ قُرَيْشٍ يَسْأَلْنَهُ وَيَسْتَكْثِرْنَهُ، عَالِيَةً أَصْوَاتُهُنَّ عَلَى صَوْتِهِ، فَلَمَّا اسْتَأْذَنَ عُمَرُ تَبَادَرْنَ الحِجَابَ، فَأَذِنَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَخَلَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَضْحَكُ، فَقَالَ: أَضْحَكَ اللَّهُ سِنَّكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي؟ فَقَالَ: «عَجِبْتُ مِنْ هَؤُلاَءِ اللَّاتِي كُنَّ عِنْدِي، لَمَّا سَمِعْنَ صَوْتَكَ تَبَادَرْنَ الحِجَابَ» فَقَالَ: أَنْتَ أَحَقُّ أَنْ يَهَبْنَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْهِنَّ، فَقَالَ: يَا عَدُوَّاتِ أَنْفُسِهِنَّ، أَتَهَبْنَنِي وَلَمْ تَهَبْنَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقُلْنَ: إِنَّكَ أَفَظُّ وَأَغْلَظُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِيهٍ يَا ابْنَ الخَطَّابِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، مَا لَقِيَكَ الشَّيْطَانُ سَالِكًا فَجًّا إِلَّا سَلَكَ فَجًّا غَيْرَ فَجِّكَ»'
অর্থ : হযরত সা’দ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট (প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। তখন তার নিকট কুরাইশের কয়েকজন মহিলা প্রশ্নাদি করছিলেন এবং তাদের আওয়ায তার আওয়াযের ‍উপর চড়া ছিল। যখন ‍উমর (রা.) অনুমতি চাইলেন। তখন তারা তাড়াতাড়ি পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। নবী (সা.) তাকে অনুমতি দেওয়ার পর যখন তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন, তখন নবী (সা.) হাঁসছিলেন। উমর (রা.) বললেন : আল্লাহ আপনাকে হাসি মুখে রাখুন; ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখনই নবী (সা.) বললেন : আমার নিকট যে সব মহিলা ছিলেন, তাদের প্রতি আমি আশ্চার্যানিম্বত যে, তারা তোমার আওয়ায শোনা মাত্রই তাড়াতাড়ি পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। উমর (রা.) বললেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ! এদের ভয় করার জন্য আপনিই অধিক যোগ্য ছিলেন। এরপর তিনি মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন : হে নিজের জনের দুশমনরা! তোমরা কি আমাকে ভয় কর, আর রাসূলুল্লাহ (সা.) কে ভয় কর না? তারা জবাব দিলেন : আপনি রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে অনেক বেশী কঠিন ও কঠোর ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে ইবনে খাত্তাব শোনো! সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন; যখনই শয়তান পথ চলতে তোমার সম্মুখীন হয়, তখনই সে তোমার পথ ছেড়ে অন্য পথ ধরে। সহীহ বুখারী-৮/২৩, হাদীস-৬০৮৫, মুসলিম-৪/১৮৬৩, হাদীস-২৩৯৬।

✿ প্রচলিত ভুল : আমাদের সমাজে অনেকেই এখানে এভাবে বলেন যে, ‘‘হযরত ওমর (রা.) যে পথ দিয়ে চলেন শয়তান ঐ পথে দিয়ে চল্লিশ দিন চলে না’’ একথাটি ভিত্তি কোথাও পাওয়া যায় না। আর এর দ্বারা হযরত উমর (রা.) এর সম্মান বৃদ্ধি পায় না বরং ক্ষুণ্য হয়। কেননা রাসূল (সা.) হযরত উমর (রা.) এর চলিত পথে শয়তান চলে না, এটি অনির্দিষ্ট কালেন জন্য বলেছে। আর আপনি যখন চল্লিশ দিন বলবেন তখনতো আপনি একটি কোটায় নিয়ে আসলেন যা তার সম্মান ক্ষুন্য হচ্ছে এবং এটি হাদীস এর উপর বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন।

❏❁ উক্ত দুটি হাদীস দ্বারাও হযরত উমর (রা.) এর ফযিলত স্পষ্ট। কিন্তু কথিত আহলে হাদীসগণ বলেন, তারাবীহ বিশ রাকআত হযরত ওমর (রা.) এর রচিত বিদআত!! নাউযুবিল্লাহ

✔ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন

✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ                   চলবেই ইনশাআল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন