বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০১৫

তারাবীহ এর চার রাকআত নামায পড়ার পর কি করবেন? কোন দোয়া পড়বেন না কি বসে থাকবেন?

তারাবীহ এর চার রাকআত নামায পড়ার পর কি করবেন? কোন দোয়া পড়বেন না কি বসে থাকবেন?
❖ تراويح (তারাবীহ) এটি আরবী শব্দ। তার ব্যাখ্যায় সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ব্যাখ্যাবিদ আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন-
فتح الباري لابن حجر (4/ 250)
وَالتَّرَاوِيحُ جَمْعُ تَرْوِيحَةٍ وَهِيَ الْمَرَّةُ الْوَاحِدَةُ مِنَ الرَّاحَةِ كَتَسْلِيمَةٍ مِنَ السَّلَامِ سُمِّيَتِ الصَّلَاةُ فِي الْجَمَاعَةِ فِي لَيَالِي رَمَضَانَ التَّرَاوِيحَ لِأَنَّهُمْ أَوَّلَ مَا اجْتَمَعُوا عَلَيْهَا كَانُوا يَسْتَرِيحُونَ بَيْنَ كُلِّ تَسْلِيمَتَيْنِ
تَّرَاوِيحُ শব্দটি تَرْوِيحَةٌ এর বহুবচন। (تَرْوِيحَةٌ) অর্থ একবার বিশ্রাম গ্রহণ করা। যেমন (تسليمة) অর্থ একবার সালাম দেওয়া। মাহে রমযানের বরকময় রজনীতে জামাতের সঙ্গে যে নামায পড়া হয় তাকে تَّرَاوِيحُ  (তারাবীহ) বলে। এই নামকরণের কারণ হচ্ছে, যখন থেকে সাহাবায়ে কেরাম এ নামায সম্মিলিত ভাবে আদায় আরম্ভ করেন তখন থেকেই তারা প্রতি দু’ সালামের পর (অর্থাৎ চার রাকআতের পর) বিশ্রাম নিতেন। (ফাতহুল বারী-৪/২৫০)।


     ❏ লক্ষ করার বিষয় এই যে, تَّرَاوِيحُ  শব্দই বুঝাচ্ছে, এ নামাযের রাকাআত সংখ্যা আট নয়, আটের অধিক। কেননা, تَّرَاوِيحُ  হল বহুবচন। আরবী ভাষায় একবচন, দ্বিবচন, এরপর বহুবচন। এজন্য তিন বা ততোধিক বোঝাতে বহুবচন ব্যবহৃত হয়। তাহলে অন্তত তিন (تَرْوِيحَةٌ ) হলে ভাষাগত দিক থেকে এক (تَّرَاوِيحُ  ) বলা যায়। তাহলে চার রাকআত=এক (تَرْوِيحَةٌ ), ৮ রাকআত=২ (تَرْوِيحَةٌ ), ১২ বা ততোধিক রাকাআত=৩ (تَرْوِيحَةٌ ) বা তারাবীহ)।

✏ আরবী সাহিত্য ভালো ভাবে না বুঝার কারণে আমাদের আহলে হাদীস ভাইগণ তারাবীহ আট রাকআত বলে ১২৮৪হি. থেকে উম্মাহের মাঝে ফেৎনা সৃষ্টি করছে।

✏ যাই হোক এই চার রাকআত পর পর নামাযী ব্যক্তি কি করবে? দেখুন এ বিষয়ে যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাক্কেক আল্লামা ইবনে আবীদিন (রহ.) এর কিতাব থেকে-
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (2/ 46)
(يَجْلِسُ) نَدْبًا (بَيْنَ كُلِّ أَرْبَعَةٍ بِقَدْرِهَا وَكَذَا بَيْنَ الْخَامِسَةِ وَالْوِتْرِ) وَيُخَيَّرُونَ بَيْنَ تَسْبِيحٍ وَقِرَاءَةٍ وَسُكُوتٍ وَصَلَاةٍ فُرَادَى
তারাবীহ এর চার রাকআত পর পর বিশ্রামের বৈঠকটুকুতে চার রাকআত নামায আদায় পরিমাণ সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা মুস্তাহাব। (যদি মুসল্লীদের ওপর কষ্টকর মনে না হয়। নতুবা এতটুকু পরিমাণ বসবে, যতটুকু বসাটা তারা পছন্দ করেন।
তদ্রুপ বিশ রাকআত নামায সমাপ্ত হলে বিতরের পূর্বেও বিশ্রামের বৈঠক করা মুস্তাহাব। 

❏ বিশ্রামের বৈঠকে কোন বাধ্যবাধকতা নেই, চাই চুপ করে থাকুক কিংবা তাসবীহ পড়ুক, কিংবা দুরুদ শরীফ বা কুরআন তিলাওয়াত করুক। নতুবা নফল নামায পড়ুক। এতে «سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ، سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ، لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ نَسْتَغْفِرُ اللَّهَ، نَسْأَلُك الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِك مِنْ النَّارِ» (সুবহানা যিল মুলকি ওয়ালা মালাকুতি) শেষ পর্যন্ত পড়ার প্রমাণও আছে। নিন্মে দেখুন-
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (2/ 46)
(قَوْلُهُ بَيْنَ تَسْبِيحٍ) قَالَ الْقُهُسْتَانِيُّ: فَيُقَالُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ «سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ، سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ، لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ نَسْتَغْفِرُ اللَّهَ، نَسْأَلُك الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِك مِنْ النَّارِ» كَمَا فِي مَنْهَجِ الْعِبَادِ. اهـ.
(আদদুররুল মুখতার-২/৪৬, সিরাজিয়া-২০, আলমগীরি, মানহাজিল ইবাদ)।

✿ উল্লেখ্য যে, উক্ত দোয়াটি যে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তা হাদীসে ‘‘সুর’’ বা শিঙ্গার হাদীস বলে প্রশিদ্ধ। আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) উক্ত হাদীসকে ‘‘মাশহুর’’ হাদীস বলে তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন-
تفسير ابن كثير ت (1/ 567)
وَقَدْ ذَكَرَ الْإِمَامُ أَبُو جَعْفَرِ بْنُ جَرِيرٍ هَاهُنَا حَدِيثَ الصُّورِ بِطُولِهِ مِنْ أَوَّلِهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَهُوَ حَدِيثٌ مَشْهُورٌ سَاقَهُ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَصْحَابِ الْمَسَانِيدِ وَغَيْرِهِمْ، وَفِيهِ: ........ يَقُولُونَ: سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ رَبِّ الْعَرْشِ ذِي الْجَبَرُوتِ سُبْحَانَ الْحَيِّ الذِي لَا يَمُوتُ، سُبْحَانَ الذِي يُمِيتُ الْخَلَائِقَ وَلَا يَمُوتُ، سُبّوح قُدُّوسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ، قُدُّوسٌ قُدُّوسٌ، سُبْحَانَ رَبِّنَا الْأَعْلَى، سُبْحَانَ ذِي السُّلْطَانِ وَالْعَظْمَةِ، سُبْحَانَهُ أَبَدًا أَبَدًا
ইবনে কাসীর-১/৫৬৭। উক্ত হাদীসটি আরো অসংখ্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে প্রশিদ্ধতার কারণে অন্য কোন কিতাবের রেফারেন্স উল্লেখ করলাম না।


 মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন

✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন