বুধবার, ২৪ জুন, ২০১৫

২য় পর্ব : তারাবীহ নামায ২০ রাকআত**নবী সাহাবীদের এই মতবাদ** ৮ এর প্রথা ভ্রান্তি**নেই এতে শান্তি

২য় পর্ব : তারাবীহ নামায ২০ রাকআত**নবী সাহাবীদের এই মতবাদ**
৮ এর প্রথা ভ্রান্তি**নেই এতে শান্তি

❖  এ পর্বে আলোচ্য বিষয় :  আট রাকআতের ইতিহাস, যা বেদআত (নবআবিষ্কৃত) হওয়ার প্রমাণ।

❁ তারাবীহর নামায সুন্নাত। সমগ্র পৃথীবিতে রাসূল (সা.) সাহাবাদের স্বর্ণযুগ থেকে চলে আসছে এই নীতি ।সব জায়গায় সর্ব যুগে সকল মসজিদে তারাবীহ ২০ রাকাত পড়া হচ্ছে ও বিতর তিন রাকআত। 
কিন্তু পৃথীবির ইতিহাসে সর্বপ্রথম ১২৮৪ হিজরী সালে ভারতের আকবরাবাদ থেকে কথিত আহলে হাদীসদের একজন আট রাকাত তারাবীর ফতোয়া দেন। তীব্র প্রতিবাদের মুখে সেই ফতোয়া টিকতে পারেনি এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী নামে কথিত আহলে হাদীসদের আরেক জন ফতোয়া দেন যে, আট রাকাত তারাবী পড়া সুন্নত। বিশ রাকাত পড়া বেদাত। 
তার ফতোয়ারও তীব্র বিরোধিতা হয়। এমনকি কথিত আহলে হাদীসদের একজন বিখ্যাত আলেম মাওলানা গোলাম রাসূল নিজেই ঐ ফতোয়ার খন্ডনে ‘রিসালা তারাবী’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন। ১২৯০ সালে সেটি প্রকাশিত হয়। (দ্র. রাসায়েলে আহলে হাদীস,২খ, ২৮পৃ)। 


কিন্তু এতেও আটের ফতোয়া বন্ধ হয়নি। পরবর্তীতে কথিত আহলে হাদীসদের গুরুমহাজন হাফেজ আব্দুল্লাহ সাহেব ও মাওলানা আব্দুর রহমান মোবারকপুরীসহ এদের আরো কিছু আলেম জোড়ালোভাবে ঐ ফতোয়া প্রচার করতে থাকেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পক্ষ থেকে মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহ.) ও মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহ.) ও পরবর্তীতে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস মাওলানা হাবীবুর রহমান আজমী (রহ.) ركعات التراويح সহ ভিবিন্ন পুস্তিকা লিখে তাদের ফতোয়া খন্ডন করেন। 

ভারতবর্ষের পরে আরবেও দু’একজন আটের ফতোয়া দিতে শুরু করেন। হারামাইন শরীফাইন তথা বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবী অব্যাহত থাকলেও সর্বপ্রথম সেখানে ‘‘শায়খ নসীব রেফায়ী’’ একটি পুস্তিকা লিখে আট রাকাতের ফতোয়াকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। বর্তমান যুগের কথিত আহলে হাদীসদের মহাগুরু শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানীও তার সমর্থন করেন। এর খন্ডনে আরব জাহানের বেশ কয়েকজন আলেম কলম ধরেন। যেমন একাধিক আলেমের রচনার সমষ্টি الإصابة في الانتصار للخلفاء الراشدين والصحابة  নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। সেখানে তাঁরা লিখেছেন, ولم يشذ أحدهم عنها غير هذه الشرذمة القليلة التى ظهرت فى زماننا كالشيخ ناصر الدين وإخوانه ـ  অর্থাৎ আমাদের যুগে আত্মপ্রকাশকারী নাসিরুদ্দীন আলবানী ও তার সমর্থকদের ক্ষুদ্র একটি অংশ ছাড়া কেউই অনুরূপ ফতোয়া  (আট রাক্আত তারাবীহ) এর ফতোয়া দিয়ে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করেননি। (দ্র, পৃ, ৬১)

এ পুস্তিকাটির খন্ডনে আলবানী সাহেব ‘ تسديد الاصابة ’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করে ১৩৭৭ হি. সালে প্রকাশ করেন। পুস্তিকাটিতে আলবানী সাহেবের উসূলে হাদীস (হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি), উসূলে ফিকাহ (ফিকাহ শাস্ত্রের মূলনীতি), রিজাল শাস্ত্র (হাদীস বর্ণনাকারীদের জীবনীমূলক গ্রন্থ) ও জারাহ-তাদীল (বর্ণনাকারিদের সমালোচনা) সম্পর্কিত মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞানের অপরিপক্কতা ও দৈন্যতা সুস্পষ্প রুপে ফুটে উঠেছে। তদুপরি তিনি সাহাবী তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীগণের কোন একজনকেও দেখাতে পারেননি যে, যিনি আট রাকত তারাবীর কথা বলেছেন। এমনিভাবে এমন কোন ঐতিহাসিক মসজিদের নজিরও দেখাতে পারেননি যেখানে আট  রাকাত তারাবী হতো।

এতদ্বসত্তেও আমাদের লা মাযহাবী বন্ধুরা আলবানী  সাহেবের গবেষণা কেই চুড়ান্ত জ্ঞান  মরে করে তারই অন্ধ অনুসরণ শুরু করেছে আর উম্মতের মাঝে ফেৎনার বাজার গরম করে রাখছে। অধিকন্তু শায়খ আলবানী সাহেব যা করতে পারেননি অর্থাৎ বর্ণনাকারীদের নাম বিকৃত করা, বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীকে অবিশ্বস্ত আখ্যা দেওয়া, ভুল উদ্ধৃতি দেওয়া ও কোন গ্রন্থের নাম ভুল উচ্চারণ করা ইত্যাদি কাজেরও লজ্জাস্কর নজির স্থাপন করেছেন তাদেরই অনুদিত বুখারী শরীফের টীকায়। কবিগুরু সুন্দর বলেছেন, বাবু যত বলে পরিষদ দলে বলে তার শতগুণ। 
যাই হোক পরবর্তীতে আলবানী সাহেবের (আট রাকআতের পক্ষে রচিত) পুস্তিকাটির দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় দারুল ইফতার সাবেক গবেষক ও মুহাদ্দীস শায়খ ইসমাঈল আনসারী। তার কিতাবটির নাম- ‘ تصحيح حديث صلوة التراويح عشرين ركعة والرد على الالبانى فى تضعيفه (অর্থাৎ বিশ রাকআত তারাবীহ এর হাদীসগুলো সহীহ এবং আলবানীর (আত রাকআতের মতবাদ) ভ্রান্ত/প্রত্যাখিত ও যয়ীফ হাদীস এর আশ্রয় গ্রহণকৃত)।
 একইভাবে সৌদি আরবের বিখ্যাত আলেম, মসজিদে নববীর প্রসিদ্ধ মুদাররিস ও মদীনা শরীফের সাবেক কাযী, ‘‘শায়খ আতিয়্যা সালিম’’ التراويح أكثر من ألف عام في المسجد النبوي ’ (অর্থাৎ এক হাজার বছরের অধিক সময় ধরে মসজিদের নববীতে তারাবীহ এর ইতিহাস) নামে একটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি পূর্ণ পুস্তিকাটিতে এই কথাই সাব্যস্ত করেছেন যে, হাজার বছরের অধিক সময় ধরে মসজিদের নববীতে তারাবীহ বিশ রাকআতই চলে আসছে।  

❏ সৌদির আরেকজন বিখ্যাত আলেম, বহুগ্রন্থ প্রনেতা ‘‘শায়খ মুহাম্মদ আলী সাবূনী’’ সাহেবও এ বিষয়ে التراويح عشرون ركعة’ (তারাবীহ বিশ রাকআত) নামে আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন। 

যাই হোক আমাদের লা মাযহাবী বন্ধুগণ আজও পর্যন্ত এগুলোর কোন জবাব দিতে পারেন নি। বিশেষ করে লা মাযহাবী আলেম মোবারকপুরী সাহেবের খণ্ডণে কলম ধরেছেন বিগত শতকের সেরা মুহাদ্দীস মাওলানা হাবীবুর রহমান আজমী (রহ.) মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক সুনানে সাঈদ ইবনে মানসুর, মুসনাদে হুমাইদিসহ বহু হাদীসগ্রন্থ সম্পাদনা পূর্বক যিনি পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছেন এবং আরব বিশ্বের বড় বড় আলেম যেমন শায়খ মুস্তফা যারকা, শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায, শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ, নাসীর উদ্দীন আলবানী প্রমুখ যার কাছ থেকে হাদীসের ইজাযত হাসীল করেছেন। ركعات التراويح নামে উদ্দূ ভাষায় তিনি অন্ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুস্তিকা সংকলন করেন, এটি সর্ব প্রথম ১৩৭৬ হি. সনে প্রকাশিত হয়। যার জবাব তারা আজও পর্যন্ত দিতে সক্ষম হয় নি।

তাই লা-মাযহাবী বন্ধুরা ভেবে দেখুন! আপনারা কার অনুসরণে আজ মুসলিম উম্মার মাঝে এ নিয়ে ফিৎনা সৃষ্টি করছেন। উম্মতের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করা কার উকালতি?

✏ উল্লেখ্য যে, উক্ত ইতিহাস দেখলেই একজন জ্ঞানি ব্যক্তি তার জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে বাধ্য হবেন। কেননা আট রাকআতের মতবাদ ১২৮৪হিজরীতে জন্ম হয়েছে, তাহলে এটি কি করে সঠিক হতে পারে?

✔ মহান আল্লাহ আমাদেরকে ১২৮৪হিজরীতে উত্থাপিত এই আট রাকআতের মতবাদ থেকে রক্ষা করুন এবং নবী সাহাবীদের সুন্নাত অনুসারে বিশ রাকআত পড়ার তাওফীক দান করুন। আমীন

ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ                                               চলবেই ইনশাআল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন