রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৫

الجنَّةُ تحتَ أقدامِ الأمَّهاتِ ‘‘মায়ের পায়ের নিচে (সন্তানের) বেহেশত’’ উক্ত বাক্যে হাদীসটি কি সহীহ?

الجنَّةُ تحتَ أقدامِ الأمَّهاتِ
‘‘মায়ের পায়ের নিচে (সন্তানের) বেহেশত’’ উক্ত বাক্যে হাদীসটি কি সহীহ?
বেশ কিছু ভাই প্রশ্ন করেছেন, উক্ত শব্দে হাদীসটি সহীহ কি না? এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। যদি উক্ত হাদীস সহীহ না হয়, তাহলে উক্ত মর্মে অন্য কোন হাদীস রয়েছে কি? নিম্মে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো....

উক্ত শব্দে হাদীসটি সহীহ না বরং এটি যয়ীফ ও মুনকার। নিম্মে হাদীসটি সনদসহ দেখুন-
الكامل في ضعفاء الرجال (8/ 64)
قَالَ الشَّيْخُ: وَهَذَا حَدِيثٌ مُنْكَرٌ بِهَذَا الإِسْنَادِ يرويه، عَن أَبِي المليح مُوسَى بْن مُحَمد، وأَبُو المليح لا بأس به.
حَدَّثَنَا عُمَر بْنُ سِنَانٍ، حَدَّثَنا عباس بن الوليد الخلال، حَدَّثَنا مُوسَى بْنُ مُحَمد بْنِ عطاء، حَدَّثَنا أَبُو الْمُلَيْحِ عَنْ مَيْمُونَ بْنِ مَهْرَانَ، عنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَال: قَال رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْجَنَّةُ تَحْتَ أَقْدَامِ الأمهات من شئن أدخلن، ومَنْ شئن أخرجن
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মায়ের পায়ের নিচে (সন্তানের) বেহেস্ত। যে চায়, সে যেন তাতে প্রবেশ করে আর না চাইলে যেন বের হয়ে যায়। আল কামেল লি ইবনে আদী-৮/৬৪।
হাদীসটির মান :
‘‘আল্লামা ইবনু আদী (রহ.) উক্ত হাদীসটিকে উল্লেখ করে বলেন-وَهَذَا حَدِيثٌ مُنْكَرٌ উক্ত হাদীসটি মুনকার তথা অস্বীকৃত।’’ আল কামেল লি ইবনে আদী-৮/৬৪।

হাদীসটি যয়ীফ হওয়ার কারণ হলো, উক্ত হাদীস এর  একজন বর্ণনাকারী হলেন ‘‘মুসা ইবনে মুহাম্মদ’’ তিনি অধিক দুর্বল বর্ণনাকারী। 

তার সম্পর্কে হাফেস যাহাবী (রহ.) বলেন-
ميزان الاعتدال (4/ 219)
8915 - موسى بن محمد بن عطاء الدمياطي البلقاوى المقدسي الواعظ، أبو طاهر، أحد التلفى.
روى عن مالك، وشريك، وأبي المليح.
وعنه الربيع بن محمد اللاذقى، وعثمان بن سعيد الدارمي، وبكر بن سهل الدمياطي، وأبو الاخوص العكبري.
كذبه أبو زرعة، وأبو حاتم.
وقال النسائي: ليس بثقة.
وقال الدارقطني وغيره: متروك.
....জারাহ ও তাদীলের বিখ্যাত ইমাম আবূ জুরাআ (রহ.) ও আবূ হাতেম (রহ.) তাকে মিথ্যুক বলেছেন এবং ইমাম নাসায়ী (রহ.) বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইমাম দারা কুতনীসহ অন্যান্য ইমামগণ বলেন, তিনি পরিত্যাক্ত। মিযানুল ইতেদাল-৪/২১৯, জীবনী নং-৮৯১৫।

এছাড়াও ইমাম ইবনে হেব্বান ও ইবনে আদী (রহ.) তার সম্পর্কে আরো বলেন-
ميزان الاعتدال (4/ 219)
وقال ابن حبان: لا تحل الرواية عنه، كان يضع الحديث.
وقال ابن عدي: كان يسرق الحديث.
তার থেকে বর্ণনা করা বৈধ নয়, সে হাদীস জাল করে থাকে। ইবনে হেব্বান (রহ.)
তিনি হাদীসের মাঝে কারচুপি করেন। ইমাম ইবনু আদী (রহ.)। মিযানুল ইতেদাল-৪/২১৯।

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন-
لسان الميزان ت أبي غدة (8/ 218)
ولما ذكره العقيلي في الضعفاء قال: يحدث عن الثقات بالبواطيل والموضوعات وقال: منكر الحديث. وأخرج حديثي ابن عباس وقال في كل منهما: منكر وأخرج له غيرهما.
وقال ابن يونس: روى عن مالك موضوعات وهو متروك الحديث.
وقال عبد الغني بن سعيد: ضعيف.
وقال أبو نعيم الأصبهاني: لا شيء.
وقال منصور بن إسماعيل بن أبي قرة: كان يضع الحديث على مالك والموقري.
লিসানুল মিযান, লি ইবনে হাজার-৮/২১৪, জীবনি নং-৮০৩০।

ইমাম ইবনে হেব্বান আরো বলেন-
المجروحين لابن حبان (2/ 242)
919 - مُوسَى بن مُحَمَّد أَبُو طَاهِر الدمياطي الْبُلْقَاوِيُّ يروي عَن مَالك والموقري وذويهما روى عَنهُ أهل الشَّام والعراقيون أَصله من الْمَدِينَة سكن نَاحيَة من الشَّام يُقَال لَهَا بلقاء وَكَانَ يَدُور بِالشَّام وَيَضَع الحَدِيث على الثِّقَات ويروي مَا لَا أصل لَهُ عَن الْأَثْبَات لَا تحل الرِّوَايَة عَنْهُ وَلَا كِتَابَة حَدِيثه إِلَّا عَلَى سَبِيل الِاعْتِبَار للخواص
.....তিনি শাম দেশে ঘুরাফেরা করতেন এবং নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের নামে জাল হাদীস রচনা করতেন। তিনি এমন হাদীস বর্ণনা করেন, যার প্রকৃত পক্ষে কোন ভিত্তি নেই। তার থেকে বর্ণনা করাও হালাল নয় এবং তার হাদীস লিখাও উচিৎ নয়.....। আল মাজরুহীন লি ইবনে হেব্বান-২/২৪২, জীবনি-৯১৯।

উক্ত হাদীসের সনদে এমন দুর্বল বর্ণনাকারী থাকা সত্তেও আমরা কেন উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করবো? 
এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কি উক্ত কথাটি ভুল তথা ভিত্তিহীন...??

আমি বলবো না!
কোরআন ও সহীহ হাদীসের মাঝে পিতা-মাতার ফযীলত এর ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। নিম্মে যা  উল্লেখ করা আবশ্যক মনে করছি, তাহলো উক্ত যয়ীফ হাদীসটির কাছাকাছি অর্থ অন্য একটি সহীহ হাদীসের মাঝেও পাওয়া যায়। আর তা হলো-
سنن النسائي (6/ 11)
3104 - أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَبْدِ الْحَكَمِ الْوَرَّاقُ، قَالَ: حَدَّثَنَا حَجَّاجٌ، عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ طَلْحَةَ وَهُوَ ابْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِيهِ طَلْحَةَ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ جَاهِمَةَ السَّلَمِيِّ، أَنَّ جَاهِمَةَ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَرَدْتُ أَنْ أَغْزُوَ وَقَدْ جِئْتُ أَسْتَشِيرُكَ، فَقَالَ: «هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ؟» قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «فَالْزَمْهَا، فَإِنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ رِجْلَيْهَا»
হযরত মুআবীয়া ইবনে জাহিমা সালামী (রা.) বলেন, আমার পিতা জাহিমা একদা রাসূল (সা.) এর খেদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছে করেছি। তাই আপনার নিকট পরামর্শ করতে এসেছি। রাসূল (সা.) বললেন, তোমার মা (জীবিত) আছেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূল (সা.) বললেন «فَالْزَمْهَا، فَإِنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ رِجْلَيْهَا» তার খেদমতে লেগে থাকো। কেননা জান্নাত তার দু’পায়ের নিচে। নাসায়ী-৬/১১, হাদীস-৩১০৪, মুসতাদরাকে হাকেম-২/১১৪, হাদীস-২৫০২, মুসনাদে আহমদ-২৪/ ২৯৯, হাদীস-১৫৫৩৮। অসংখ্য ইমামগণ হাদীসটিকে  সহীহ তথা  প্রমাণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন।

হাদীসটির মান :

ইমাম হাকেম ও হাফেজ যাহাবী (রহ.) বলেন-
المستدرك على الصحيحين للحاكم (2/ 114)
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ "
[التعليق - من تلخيص الذهبي] 2502 - صحيح
হাদীসটি সহীহ। যদিও সহীহ বুখারী ও মুসলিম এর মাঝে সংকলন করা হয় নি। ইমাম হাকেম
হাদীসটি সহীহ। হাফেয যাহাবী। মুসতাদরাকে হাকেম-২/১১৪, হাদীস-২৫০২।

কথিত আহলে হাদীস ভাইদরে মহাগুরু শায়খ নাসীর উদ্দীন আলবানীও উক্ত হাদীসটিকে সাহান সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন-
إرواء الغليل في تخريج أحاديث منار السبيل (5/ 21)
أما حديث معاوية , فيرويه ابن جريج , قال: أخبرنى محمد بن طلحة وهو ابن عبد الله بن عبد الرحمن عن أبيه طلحة عنه بلفظ: " أن جاهمة جاء إلى النبى صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله أردت أن أغزو , وقد جئت أستشيرك؟ فقال: هل لك من أم؟ قال: نعم , قال: فالزمها , فإن الجنة تحت رجليها ".
أخرجه النسائى والحاكم (2/104 و4/151) وأحمد (3/429) وابن أبى شيبة أيضا فى " مسنده " (2/7/2) .
وقال الحاكم: " صحيح الإسناد ".
ووافقه الذهبى.
قلت: كذا قالا , وطلحة بن عبد الله لم يوثقه غير ابن حبان , لكن روى عنه جماعة , فهو حسن الحديث إن شاء الله وفى " التقريب ": " مقبول ".......
 ইরওয়াউল গালীল-৫/২১। (তাহলে উক্ত হাদীস নিয়ে তাদেরও ফেৎনা করার সুযোগ কোথায়?)

মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে হাদীস বর্ণনা করার তাওফীক দান করুন। আমীন

ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
প্রধান মুফতী ও গবেষক
মারকাযুল ইসলাহ, বাংলাদেশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন