কিয়াস বা ইজতিহাদ নিয়ে আহলে হাদীসদের প্রতি চ্যালেঞ্জ
❖ কিয়াস
বা ইজতিহাদও শরীয়তের প্রমাণ হয়
এটি অস্বিকার করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়! (মুফতী ছানা উল্লাহ)
✪ অস্বীকারকারীগণ, মাত্র একটি আয়াত আর একটি হাদীস কিয়াস বা ইজতিহাদ বিহীন বুঝিয়ে দিন..
❑ সাম্প্রতিক
কালে আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশে জন্ম হয়েছে, এক শ্রেণীর কিছু লোক, যারা নিজেকে আহলে
হাদীস দাবী করে কোরআন, হাদীস ও ইজমায়ে উম্মত এর পরে যার স্থান তথা কিয়াস/ইজতিহাদকে অস্বিকার
করে বসেছে, অথচ শরীয়তের মুল প্রমাণ এই চারটি জিনিসই যা মহান আল্লাহ পবিত্র
কোরআনেও বর্ণনা করেছেন। দেখুন মহান আল্লাহর বাণী-
❁ {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ
فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا} [النساء: 59]
অথাৎ
: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে
যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ
ও তার রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে
থাক। (সূরা আন-নিসা, আয়াত : 59)।
✏ উক্ত
আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিখ্যাত মুফাসসীর আল্লাম ফখরুদদীন রাজি (রহ.) মৃত :606 বলেন-
❐ উক্ত আয়াতে أَطِيعُوا اللَّهَ এর
দ্বারা পবিত্র কোরআন শরীয়তের প্রথম দলীল তা বুঝানো হয়েছে।
❐ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ এর
দ্বারা কোরআনের পর শরীয়তের দ্বিয়ীত দলীল হলো হাদীস, তা বুঝানো হয়েছে।
❐ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ এর
দ্বারা শরীয়তের তৃতীয় দলীল ইজমায়ে উম্মাত বা উম্মতের ঐক্য তা বুঝানো হয়েছে।
❐ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ
فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ এর
দ্বারা শরীয়তের চতুর্থ দলীল কিয়াস/ইজতিহাদ, তা বুঝানো হয়েছে। (অতএব এ চারটি বিষয় মহান আল্লাহর বাণী দিয়ে প্রমাণিত।)
✍ উক্ত আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্ট যে, যারা কিয়াস বা ইজতিহাদ বিরুধী, আসলে তারা কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী। আর তাছাড়াও কিয়াস/ইজতিহাদ ব্যতিত কোরআন সুন্নাহ এর প্রত্যেকটি বিষয় বুঝা, কখনো সম্ভব হবে না। যার দৃষ্টান্ত স্বরূপ আজ আমি কোরআন সুন্নাহ এর হাজারো প্রমাণ থেকে মাত্র দুটি পেশ করবো, যাতে করে আমাদের যে সব ভাই আজও মুর্খতার দেশে বসবাস করছে তারা সঠিক রাস্তা নির্ণয় করতে পারেন।
(❶)
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের মাঝে বলেন-
❁ {وَمَنْ كَانَ فِي هَذِهِ أَعْمَى
فَهُوَ فِي الْآخِرَةِ أَعْمَى وَأَضَلُّ سَبِيلًا} [الإسراء: 72]
অর্থ : যে ব্যক্তি ইহকালে অন্ধ ছিল সে পরকালেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রান্ত। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : 72)
✿ কিয়াস/ইজতিহাদ বিরুধীদের জন্য সঠিক দিশা : উক্ত আয়তের মাঝে যদি কিয়াস/ইজতিহাদ না করা হয়, তাহলে আল কোরআনের এ আয়াতের সঠিক ব্যাখ্য বুঝা কখনো সম্ভব হবে না। কেননা উক্ত আয়াত দ্বারা বাহ্যিক ভাবে বুঝা যাচ্ছে, যারা দুনিয়াতে অন্ধ হবে যেমন সৌদি আরবের প্রধান মুফতী বা এধরনের ব্যক্তিবর্গগণ তারা আখেরাতেও অন্ধ হবে। নাউযুবিল্লাহ! এটি পবিত্র কোরআনের সম্পূর্ণ অপব্যাখ্যা।
দেখুন উক্ত আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা-
❁ تفسير ابن كثير (5/ 100)
وَقَوْلُهُ: {وَمَنْ كَانَ فِي هَذِهِ أَعْمَى فَهُوَ فِي الآخِرَةِ أَعْمَى وَأَضَلُّ سَبِيلا} قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ، وَمُجَاهِدٌ، وَقَتَادَةُ، وَابْنُ زَيْدٍ: {وَمَنْ كَانَ فِي هَذِهِ} أَيْ: فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا {أَعْمَى} عَنْ حُجَجِ اللَّهِ وَآيَاتِهِ وَبَيِّنَاتِهِ {فَهُوَ فِي الآخِرَةِ أَعْمَى} أَيْ: كَذَلِكَ يَكُونُ {وَأَضَلُّ سَبِيلا} أَيْ: وَأَضَلُّ مِنْهُ كَمَا كَانَ فِي الدُّنْيَا، عِيَاذًا بِاللَّهِ مِنْ ذَلِكَ.
✔ সঠিক ব্যাখ্যা : যা রায়িসুল মুফাসসীর (সমস্ত মুফাসসীরদের সরদার) বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও বিখ্যাত তাবেয়ী, মুজাহেদ কাতাদাহ ও ইবনে যায়েদ (রহ.) প্রমুখ থেকে বর্ণিত : তারা সকলেই বলেন, এই আয়াতের মুল ব্যাখ্যা হলো- যারা এই দুনিয়াতে মহান সত্তার নিদর্শন কুদরত ইত্যাদি দেখার পরও ঈমান না এনে গোমরাহির মাঝে থাকে, তারা আখেরাতেও দুনিয়ার ন্যায় পথভ্রষ্ট হয়ে থাকবে (অর্থাৎ জাহান্নামী হবে)। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে মুক্ত করুন। তাফসীরে ইবনে কাসীর-5/100 ।
সারকথা : উক্ত আয়াতে অন্ধ এর দ্বারা সাধারণ অন্ধ উর্দ্দেশ্য নেয়া যাবে না বরং কিয়াস/ইজতিহাদ এর মাধ্যমে যারা হেদায়াত থেকে অন্ধ তথা পথভ্রষ্ট তাদেরকেই উদ্দেশ্য নিতে হবে এবং এটিই মহান সত্তা বুঝিয়েছেন।
✔ সন্মানিত পাঠক বৃন্দ! উক্ত আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্ট যে, কিয়াস বিহীন আল্লাহর কোরআন বুঝাও সম্ভব নয় ! অতএব কিয়াস বা ইজতিহাদ বিরুধী ভাইদের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ করা হলো উক্ত আয়াতকে কিয়াস করা ব্যতীত আমাদেরকে বুঝিয়ে দিন।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথ অবলম্ভন করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
আসুন এখন আমরা রাসূল (সা.) এর অগণিত হাদীস থেকে একটি হাদীস পেশ করবে, যার দ্বারাও একথা স্পষ্ট যে, কিয়াস/ইজতিহাদ বিহিন সমস্ত হাদীস বুঝা ও তার সঠিক ব্যাখ্যা দেয়াও সম্ভব নয়। এক কথায় যারা কিয়াস/ইজতিহাদ বিরুধী তারা কোরআন সুন্নাহ বিরুধী। দেখুন রাসূল (সা.) এর হাদীস-
(❷)
রাসূল (সা.) হাদীসের মাঝে বলেন-
❁ سنن ابن ماجه (2/
817)
2443 - حَدَّثَنَا الْعَبَّاسُ
بْنُ الْوَلِيدِ الدِّمَشْقِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ عَطِيَّةَ
السُّلَمِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ
أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْطُوا الْأَجِيرَ أَجْرَهُ، قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ»
_________
[تعليق محمد فؤاد عبد الباقي]
في الزوائد أصله في صحيح
البخاري وغيره من حديث أبي هريرة.
[حكم الألباني]
صحيح
অর্থাৎ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা শ্রমিকদেরকে তাদের ঘাম শুকানোর পূর্বে তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও। ইবনে মাজা-2/817, হাদীস-2443, শারহু মুশকিলিল আসার-8/13, হাদীস-3014, সুনানুস সোগরা লিল বায়হাকী-2/320, হাদীস-2158, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী-6/199, হাদীস-11654, মুসনাদে আবী ইয়ালা-12/34, হাদীস-6682, আল কামেল-5/294, মুসনাদুস সিহাব-1/433, হাদীস-744, আল আমওয়াল-3/1126, হাদীস-2091, তারিখে আসফাহান-1/265, আল মাতালিবুল আলিয়া-7/429, হাদীস-1485, হিলয়াতুল আওলীয়া-7/142, ফাওয়েদে তামাম-2/157, হাদীস-1412, ইত্যাদিসহ কয়েক ডজন কিতাবে হাদীসটি রয়েছে।
❏ উক্ত হাদীসটিকে আহলে হাদীসদের মহাগুরু শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী নিজেই সহীহ বলেছেন। (আমি তার সহীহ বলে মন্তব্য করা উক্তিসহ হাদীসটিকে উল্লেখ করেছি, তাহলে হাদীস যয়ীফ ইত্যাদি বলে পালানোর সুযোগ কোথায়?)।
✿ কিয়াস/ইজতিহাদ বিরুধীদের জন্য সঠিক দিশা : উক্ত হাদীসের মাঝে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘‘তোমরা শ্রমিকদেরকে তাদের ঘাম শুকানোর পূর্বে তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও ‘’ তাহলে যারা কিয়াস/ইজতিহাদ বিরোধী তারা ঐ সব ভাইদের পারিশ্রমিক এর ব্যাপারে কি বলবেন, যারা এসির নিচে বসে কাজ করে থাকে অথবা যে কাজ করতে ঘাম বের হয় না ইত্যাদি?
নিশ্চয় বলতে হবে তারা পারিশ্রমিক পাবে না, কারণ তাদের ঘাম নির্গত বা বাহির হয় নি, যা রাসূল (সা.) এর হাদীসের সম্পূর্ণ অপব্যাখ্যা।
আসুন তাহলে আমরা সঠিক ব্যাখ্যাটি দেখি-
حاشية السندي على سنن ابن ماجه (2/ 84)
2443 - حَدَّثَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ الْوَلِيدِ الدِّمَشْقِيُّ حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ عَطِيَّةَ السَّلَمِيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ «قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْطُوا الْأَجِيرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ»
ـــــــــــــــــــــــــــــ
قَوْلُهُ: (أَعْطُوا الْأَجِيرَ) أَيْ: يَنْبَغِي الْمُبَادَرَةُ فِي إِعْطَاءِ حَقِّهِ بَعْدَ الْفَرَاغِ مِنَ الْحَاجَةِ قَوْلُهُ: (قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ) الْحَاصِلُ بِالِاشْتِغَالِ بِالْحَاجَةِ، - وَاللَّهُ أَعْلَمُ -.
✔ সঠিক ব্যাখ্যা : বিখ্যাত মুহাদ্দীস আল্লামা সিন্দী (রহ.) উক্ত হাদীস এর ব্যাখ্যায় লিখেন, কোন শ্রমিক যখন তার কাজে লিপ্ত হয়, তখন সে তার কাজ শেষ করা পূর্বেই তুমি তার পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য দ্রুত অগ্রসর হও।
(অতএব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস এর মাঝে ‘‘ঘাম শুকানোর পূর্বে পারিশ্রমিক দেয়া’’ এ কথাটিকে কিয়াস/ইজতিহাদ এর মাধ্যমে ‘‘দ্রুত পারিশ্রমিক আদায়ের প্রতি ইংঙ্গিত করা হয়েছে বলে’’ ব্যাখ্যা করা হবে। যার দ্বারা প্রত্যেক ঘাম নির্গত হয়েছে ও এসির নিচে বসে কাজ করেছে তথা ঘাম নির্গত হয় নি, এমন শ্রমিক সকলকেই বুঝানো হয়েছে, এবং সকলেরই পারিশ্রমিক দেয়ার প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে) এই হলো কিয়াস বা ইজতিহাদের সঠিক ফলাফল ও হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা। (হাশিয়াতুস সিন্দী আলা সুনানে ইবনে মাজা-2/84)।
✔ সন্মানিত পাঠক বৃন্দ! উক্ত আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্ট যে, কিয়াস/ইজতিহাদ বিহিন রাসূল (সা.) এর হাদীস বুঝাও সম্ভব নয় ! অতএব কিয়াস বা ইজতিহাদ বিরুধী ভাইদের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত চেলেঞ্জ করা হলো উক্ত হাদীসটিকে কিয়াস করা ব্যতিত আমাদেরকে বুঝিয়ে দিন।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথ অবলম্ভন করার তাওফীক দান করুন। আমীন
✏ বি. দ্র. : কিয়াস বা ইজতিহাদ শরীয়তের প্রমাণ কি না ? এ সংক্রান্তে বিখ্যাত সাহাবী হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) এর হাদীস ও তার তাহকীক দেখতে নিন্ম লিংকে ক্লিক করুন-
http://m-islah.blogspot.com/2015/02/blog-post_25.html
✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন