প্রস্রাবের পর হাঁটাহাঁটি করার কোন ভিত্তি ইসলামে আছে কি?
প্রশ্ন
: হযরত ! দেশের শীর্ষস্থানীয় এক দারুল ইফতা থেকে ফারেগ এক মুফতী সাহেব বলেছেন, প্রস্রাবের পর কিছুক্ষণ বসে থাকবে। প্রয়োজনে
কয়েকবার পুরুষাঙ্গ ঝাড়া দিবে। এতমিনান হলে পানি ব্যবহার করবে। তিনি এটাও বলেছেন, হাঁটাহাঁটির
কোনো ভিত্তি হাদীসে
তিনি পাননি। এটা কি ঠিক? এজন্য জানতে চাচ্ছি যে, অনেকে এটা সুন্নাত ভাবে।
এবং ব্যাপকভাবে প্রচলিত। তো যদি উক্ত
প্রথাটি ভুল হয় তবে তা সংশোধনের প্রয়োজন আছে।
উত্তর : রাসুলুল্লাহ (সা.)
হাদীসের মাঝে শুধু প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করার কথা বলেছেন,
তাতে কোন পন্থা নির্ধারণ করে দেননি । যেমন ভাবে রাসূল (সা.) বিভিন্ন হাদীসের মাঝে বিভিন্ন গাছ, পদার্থ ইত্যাদি দিয়ে ঔষধ এর কথা বলেছেন, কিন্তু কোন
পদ্ধতিতে? তা নিধারণ করে বলেন নি । বর্তমান ডাক্তারগণ যেভাবে তৈরী করেন আমরা তা সেবন করি । তাতে কেউ কোন সহীহ হাদীস তালাস বা খোঁজ করেন না । তেমনি ভাবে প্রস্রাবের বিষয়টিতেও বিভিন্ন মহামনিষিগণ
বিভিন্ন পন্থা উল্লেখ করেছেন ।
যেমন ভাবে ফতোয়ায়ে শামী সহ কয়েক ডজন কিতাবে বলা হয়েছে-
يلزم
الرجل الاستبراء حتى يزول أثر البول ويطمئن قلبه على حسب عادته إما بالمشي أو
التنحنح أو الاضطجاع أو غيره
অথাৎ : পুরুষের জন্য প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন
করা আবশ্যক, যতক্ষন না প্রস্রাবের কোন চিহ্ন বাকি না থাকে
অখাৎ তার অন্তর এতমিনান হয় । আর তা প্রত্যকের
স্বভাব অনুসারে হতে পারে যেমন হাঁটাহাঁটি করা, গলাখাঁকার
দেয়া, উঠাবসা করা ও অন্যে আরো পন্থায় হতে পারে।
ফতোওয়ায়ে শামি 1/344, মারাকীল ফালাহ 1/23, দুরারুল হুক্কাম 1/49, ইত্যাদি।
ভুলে ভরা ফতোয়া নিন্মে তার নমূনা
1। কথিত মুফতী সাহেব, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদীস দ্বারা
প্রমাণিত অসংখ্য পদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও মাত্র একটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন ।
2। এরপরেও ঐ পদ্ধতির পক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করতে পারেননি।
3। আমি তার কথার প্রমাণ বের করে হাদীসটি উল্লেখ করেছি কিন্তু হাদীসটি যয়ীফ যা এ
ক্ষেত্রে প্রমানযোগ্য নয় ।
4। তিনি বলেছেন হাঁটাহাটির কোন পদ্ধতি হাদীসে পাননি । এটিও একটি মুর্খতা । কারণ সব কিছু হাদীসে থাকা আবশ্যক নয়। কেননা হাদীস ছাড়াও ইজমায়ে উম্মত ও কিয়াস ইত্যাদি রয়েছে ।
5। তিনি বলেছেন, পুরুষাঙ্গ কয়েক বার ঝাঁড়া দিবে কিন্তু
কতবার তা তিনি উল্লেখ করেন নি । অথচ যয়ীফ হাদীসটির মাঝে
তিন বার উল্লেখ রয়েছে । যা দ্বারা বুঝা গেলো কোন জ্ঞান
ব্যতিত তিনি তার মনগড়া একটি কথা বলে দিলেন । অতএব আপনারাই বিবেচনা
করুন।
হাঁটাহাঁটিসহ প্রবিত্রতার যে কোন প্রন্থা অবলম্বনের প্রমাণ
صحيح مسلم (1/ 240)
(292) وَحَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ
الْأَشَجُّ، وَأَبُو كُرَيْبٍ مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، وَإِسْحَاقُ بْنُ
إِبْرَاهِيمَ، - قَالَ إِسْحَاقُ: أَخْبَرَنَا وَقَالَ الْآخَرَانِ - حَدَّثَنَا
وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ، قَالَ: سَمِعْتُ مُجَاهِدًا، يُحَدِّثُ عَنْ
طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: مَرَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ عَلَى قَبْرَيْنِ فَقَالَ: «أَمَا إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا
يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ،
وَأَمَّا الْآخَرُ فَكَانَ لَا يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ»،
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, একদা রাসূল
(সা.)
দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন । অতঃপর তিনি বললেন,
এই দুটি কবর বাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে । তা বড় কোন পাপের কারণে নয় ।(পাপগুলো হল)
তাদের একজন পরনিন্দা/চুগলির কারণে । আর দ্বিতীয়জন প্রস্রাব থেকে ভাল ভাবে পবিত্রতা অর্জন করত না
।
ব্যাখ্যা : দেখুন উক্ত হাদীসের মাঝেও রাসূল (সা.) শুধু পবিত্রতার কথা বলেছেন, কোন একটি পদ্ধতিকে নির্ধারন করে বলেন নি, যেমন কথিত মুফতী সাহেব
বলেছেন। যার দ্বারা পবিত্র তার যে
কোন পন্থা অবলম্বন করা স্পষ্ট ভাবে বুঝা যাচ্ছে।
হাদীসটি অসংখ্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে । যেমন বুখারী হা:
218, মুসলিম 292, আবু দাউদ 20, তিরমিযি
70, বায়হাকী 4140, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক 6753, ইবনে আবি শায়বা 12038,।
প্রকাশ থাকে যে, হাদীসটি সহীহ এ ব্যপারে কোন মতানৈক্য নেই কেননা এটি বুখারী মুসলিম ইত্যাদির
বর্ণনা।
এখন দেখুন অন্য একটি
সহীহ হাদীস-
الترغيب
والترهيب للمنذري (1/ 84)
257 - وَعَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عَامَّة عَذَاب الْقَبْر فِي الْبَوْل فاستنزهوا من الْبَوْل
رَوَاهُ الْبَزَّار وَالطَّبَرَانِيّ فِي الْكَبِير وَالْحَاكِم وَالدَّارَقُطْنِيّ كلهم من رِوَايَة أبي يحيى القَتَّات عَن مُجَاهِد عَنهُ وَقَالَ الدَّارَقُطْنِيّ إِسْنَاده لَا بَأْس بِهِ
257 - وَعَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عَامَّة عَذَاب الْقَبْر فِي الْبَوْل فاستنزهوا من الْبَوْل
رَوَاهُ الْبَزَّار وَالطَّبَرَانِيّ فِي الْكَبِير وَالْحَاكِم وَالدَّارَقُطْنِيّ كلهم من رِوَايَة أبي يحيى القَتَّات عَن مُجَاهِد عَنهُ وَقَالَ الدَّارَقُطْنِيّ إِسْنَاده لَا بَأْس بِهِ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, সাধারন ভাবে কবরের আযাব প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা না হওয়ার কারণে হয়ে
থাকে, অতএব তোমরা প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন কর।
আত তারগীব ওয়াত
তারহীব লিল মুনজেরী-1/84, হাদীস-257, আত
তালখীসুল হাবীর লি ইবনে হাজার আসকালানী(রহ.) -1/158, নাইলুল আওতার লিশ শাওকানী-01/114, সহীহুত তারগীব লিল আলবানী-159, তালবিসুল জাহমীয়া লি ইবনে তাইমিয়া-5/84, উক্ত কিতাবগুলোতে ইমামগণ হাদীসটিকে উল্লেখ করার পর সহীহ এবং হাসান বলে মন্তব্য করেছেন। এছাড়াও আরো একাধিক ইমামগণ হাদীসটিকে সহীহ এবং হাসান বলে
মন্তব্য করেছেন। এক কথায় হাদীসটি প্রমাণযোগ্য।
ব্যাখ্যা : উক্ত হাদীসটির মাঝে রাসূল (সা.) فاستنزهوا
শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যা আরবী ব্যাকরণ অনুসারে ইসতিফআলের গ্রুপ
থেকে অর্থাৎ যা খোঁজ করার অর্থ বুঝায়। অথএব এই শব্দের অর্থ হবে তোমরা প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের পন্থা খোঁজ কর।
প্রিয় পাঠক তাহলে আমরা উক্ত হাদীস দ্বারাও স্পষ্ট
ভাবে বুঝতে পারলাম যে রাসূল (সা.) পবিত্রতার কোন একটি পন্থা নির্ধারণ করে যান
নি বরং বিভিন্ন পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব পবিত্রতার জন্য হাঁটাহাঁটিসহ অন্য অন্য পন্থাও গ্রহণ করার মাঝে সমস্যা নেই।
দেখুন মুফতী সাহেবের দাবীর পক্ষে যয়ীফ হাদীস।
سنن ابن ماجه (1/ 118
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ قَالَ:
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، ح، وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى قَالَ: حَدَّثَنَا
أَبُو نُعَيْمٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا زَمْعَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ عِيسَى بْنِ
يَزْدَادَ الْيَمَانِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلْيَنْتُرْ ذَكَرَهُ ثَلَاثَ
مَرَّاتٍ»
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউও যখন প্রস্রাব করে সে যেন তার পুরুষাঙ্গকে তিন বার ঝেড়ে নেয় ।
ইবনে মাযা হাদীস নং : 326, মুসনাদে আহমদ হাদীস নং : 1905
আল কামেল 5/1894, আসাদুল গাবা 5/474, আজ যুআফা লিল উকাইলি 3/381, মুজাম লি ইবনে কানে
3/338,আস সুনান লিল বায়হাকী 1/113। ইত্যাদি কিতাবে রয়েছে যারা সকলই হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন।
প্রকাশ থাকে যে, ইমাম বুখারী (রহ.) নিজেই উক্ত হাদীসটিকে তার লিখিত কিতাব আয যুআফাউল কাবীর এর 3/382 এর মাঝে উল্লেখ করে বলেন হাদীসটি শুদ্ধ নয়। এছাড়াও আরো একাধিক ইমামগণ উক্ত হাদীসটি যয়ীফ ও শুদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন, কেননা উক্ত হাদীসের বর্ণনা কারীদের মধ্যে ‘ইযদাদ’ এবং ‘যামআ’ দূর্বল বর্ণনা কারী ।
বি. দ্র. : আপনারা এই ব্লগ এর প্রতি দৃষ্টি রাখুন, এই মাসয়ালা আরো বিস্তারিত ভাবে লিপিবদ্ধ করা হবে ইনশাআল্লাহ
আল্লাহ তা‘য়ালা আমাদেরকে সহীহ দ্বীন বুঝার তাওফিক দান
করুক। আমিন!
ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন