শুক্রবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

যে দোয়া পাঠে 70 জন ফেরেশতা 1000 হাজার দিন পর্যন্ত সাওয়াব লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, দোয়াটির ‍উপর আমল করা যাবে কি??

যে দোয়া পাঠে 70 জন ফেরেশতা 1000 হাজার দিন পর্যন্ত সাওয়াব লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, দোয়াটির উপর আমল করা যাবে কি??

হাদীসটি সনদসহ দেখুন-

المعجم الأوسط (1/ 82)
235 - حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ رِشْدِينَ قَالَ: نا هَانِئُ بْنُ الْمُتَوَكِّلِ قَالَ: نا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ: جَزَى اللَّهُ عَنَّا مُحَمَّدًا مَا هُوَ أَهْلُهُ، أَتْعَبَ سَبْعِينَ كَاتِبًا أَلْفَ صَبَاحٍ»

 

অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নিশ্চয় রাসূল (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি  جَزَى اللَّهُ عَنَّا مُحَمَّدًا مَا هُوَ أَهْلُهُ এই দোয়াটি পড়ে, 70 জন ফেরেশতা 1000 সকাল পর্যন্ত তার জন্য সাওয়াব লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে যায়।

 

প্রমাণ সূত্র : আল মুজামুল আওসাত-1/82, হাদীস-235, আল মুজামুল কাবীর-11/206, হাদীস-11509, আত তারগীব ওয়াত তারহীব লিল মুনজেরী-2/329, হাদীস-2585, মাজমাওজ যাওয়ায়েদ-10/163, হাদীস-17305, মিজানুল ইতেদাল-4/291, জীবনি-9198, লিসানুল মিজান-6/186, জীবনি-664,আল মুত্তাজিরুর রাবে লিদদীমইয়াতি-247,আখবারে আসবাহান-2/230,হিলয়া লি আবূ নোয়াইম-3/206,আত তারগীব ওয়াত তারহীব লি ইবনে শাহীন-1/260,

 

প্রথমে দেখুন হাদীসটি নিয়ে আহলে হাদীসদের মহা গুরু আলবানী সাহেবের তাহকীক

আসলে হাদীসের জগতে দেখা যায় সহীহ হাদীসের বাহিরে কোন হাদীস আসলেই আলবানী সাহেব অস্থির হয়ে পড়ে হাদীসটিকে যয়ীফ বলবেন না মুনকার বলবেন না মাওজু তথা জাল হাদীস বলবেন, যার প্রমাণ হলো উল্লেখিত হাদীসটি। দেখুন তিনি তার কিতাব সিলসিলাহে যয়ীফা এর দুইটি স্থানে হাদীসটি উল্লেখ করে দু’ধরনের মন্তব্য পেশ করেছেন, এখন উম্মাত কোনটি গ্রহণ করবে? তার সমাধান তিনি নিজেই দিয়ে যান নি । দেখুন হাদীসটি প্রথম উল্লেখ করেছেন ‘সিলসিলাতু আহাদীসিস যয়ীফ..’এর 3/192 হাদীস নং-1077 তিনি হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেন-ضعيف جدا.অর্থাৎ হাদীসটি অধিক যয়ীফ আর একি কথা ‘যয়ীফুত তারগীব’ এর 1036 এর মাঝেও বলেছেন। পুনরায়‘সিলসিলাতু আহাদীসিস যয়ীফ..’11/188 হাদীস নং-5109 এর মাঝে উল্লেখ করে বলেন হাদীসটি منكر মুনকার, তাহলে বলুন মানুষ তার কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে? তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত হিনতায় ভোগছেন । এখন আসুন আমারা অন্য অন্য মুহাদ্দীসগণের মতামত দেখি-

 

উল্লেখিত হাদীস সম্পর্কে অন্য অন্য মুহাদ্দীসগণের মন্তব্য

 

ইমাম তাবরানী (রহ.) উল্লেখিত হাদীসটিকে তার দুটি কিতাবের মাঝে উল্লেখ করার পর হাদীসটি সহীহ বা যয়ীফ এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেন নি। শুধু বলেছেন উল্লেখিত হাদীসের সূত্রে থাকা ‘হানী ইবনে মুতাওয়াক্কেল আল ইসকেনদারী’তাফার্রুধ বা একাকি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আল মুজামুল আওসাত-1/82, হাদীস-235, আল মুজামুল কাবীর-11/206, হাদীস-11509

আল্লামা মুনজেরী (রহ.) ও হাদীসটি উল্লেখ করার পর কোন মন্তব্য করেন নি। আত তারগীব ওয়াত তারহীব লিল মুনজেরী-2/329, হাদীস-2585,

আল্লামা হায়সামী (রহ.) হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেন ‘হানী ইবনে মুতাওয়াক্কেল আল ইসকেনদারী’যয়ীফ বর্ণনাকারী। মাজমাওজ যাওয়ায়েদ-10/163, হাদীস-17305,

আল্লামা দিমইয়াতী (রহ.) হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেন হাদীসটির সনদ দূর্বল। আল মুত্তাজিরুর রাবে লিদদীমইয়াতি-247,

ইমাম আবূ নুয়াইম তার দুটি কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেন হাদীসটি গরীব বা এর কোন সাদৃশ্য পাওয়া যায় না। আখবারে আসবাহান-2/230,হিলয়া লি আবূ নোয়াইম-3/206,

আল্লামা ইবনে সাহীন (রহ.) হাদীসটি উল্লেখ করার পর কোন মন্তব্য করেন নি। আত তারগীব ওয়াত তারহীব লি ইবনে শাহীন-1/260,

হাফেজ জাহাবী (রহ.) উল্লেখিত হাদীসটি সম্পর্কে কোন মন্তব্য না করে উল্লেখিত হাদীসের সূত্রে থাকা বর্ণনাকারী হানী ইবনে মুতাওয়াক্কেল আল ইসকেনদারী’কে নিয় মন্তব্য করে বলেন যে,ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) বলেছেন হানী ইবনে মুতাওয়াক্কেল আল ইসকেনদারী’অনেক সময় মুনকার হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। মিজানুল ইতেদাল-4/291, জীবনি-9198, 

আল্লামা ইবন হাজার আসকালানী (রহ.) ও উল্লেখিত হাদীসটি উল্লেখ করার পর কোন মন্তব্য করেন নি, তিনি শুধু বলেছেন যে, হাদীস ও জারাহ তাদিলের বিখ্যাত ইমাম আবূ হাতেম রাজি (রহ.) বলেন আমি হানী ইবনে মুতাওয়াক্কেল আল ইসকেনদারী’কে  পেয়েছিলাম কিন্তু তার থেকে কোন হাদীস লিপিবদ্ধ করিনি, এবং ইমাম ইবনে কুত্তান বলেন তার পরিপূর্ণ অবস্থা জানা যায় না। লিসানুল মিজান-6/186, জীবনি-664,

 

শেষ সমাধান

 

উল্লেখিত হাদীসটি যয়ীফ। কেননা হাদীসের সূত্রে বর্ণিত  বর্ণনাকারীদের থেকে হানী ইবনে মুতাওয়াক্কেল আল ইসকেনদারী’এই বর্ণনাকারী য়য়ীফ বা দূর্বল । আর যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করা যায় অতএব এই দোয়া অনুসারে আমল করলে অথবা অন্যকে এই হাদীস বর্ণনা করে আমলের প্রতি উৎসাহ দেয়া যাবে তাতে কোন ধরনের কোন সমস্যা নেই কারণ হাদীসটি কোন ভাবেই মাওজু বা জাল হাদীস নয়। 


                                                            সর্তক

 

ফেজবুকসহ বিভিন্ন মহলে দেখা যায় অনেক জন বলেন,  এই দোয়া তিন বার পড়তে হবে বা পাঁচ বার ইত্যাদি ভিবিন্ন সংখ্যা বলে থাকেন, আসলে আমার জানা মত হাদীসের মাঝে এ ধরনের কোন সংখ্যা উল্লেখ নেই। তাই দলীল বিহিন এধরনের মতামত প্রত্যাখান করা উচিত। 

 

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তাহকীক এর সহিত আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন

 

ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন