রবিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সত্তর হাজার বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়লে......

সত্তর হাজার বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়লে কি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়??

**সালাফীদরে বিভ্রান্তির কবলে ইসলাম-
ফাযায়েলে আমল ও আল্লামা যাকারীয়া সাহেব (রহ.) কে  ফাঁসাতে গিয়ে সালাফীগণ নিজেরাই ফেঁসে গেলেন।
 

প্রথমে  সালাফী ভাইদের আপত্তিগুলো নিন্মে দেয়া হলো-

ইলিয়াসি তাবলিগের পোষ্টমর্টাম। (পর্ব ১)
জনৈক যুবকের কাশফের বয়ান ও সত্তর হাজার বার কালেমা পড়ার ফযিলত।
 
শায়েখ আবু কুররতবী (রা:) বলেন, আমি শুনিয়াছি যে ব্যাক্তি সত্তর হাজার বার কালেমা পড়িবে সে দোযখ হইতে নাজাত পাইবে। ইহা শুনিয়া আমি নিজের জন্য সত্তর হাজার বার ও আমার স্ত্রীর জন্য সত্তর হাজার বার এবং এই রুপে এই কালেমা কয়েক নেছাব আদায় করিয়া পরকালের ধন সংগ্রহ করি।
আমাদের নিকটেই একজন যুবক কাশফওয়ালা বলিয়া খ্যাত লাভ করিয়াছে। সে নাকি বেহেস্ত দোযখ দেখিতে পাইতো আমি ওহাকে সন্দেহ করিলাম।এক সময় ঐ যুবক আমার সহিত আহার করিতে বসিয়া হঠাৎ চিৎকার মারিয়া উঠিল ও বলিল আমার মা দোযখে জ্বলিতেছে। তাহার অবস্থা আমি দেখিতে পাইতেছি। যুবকের অস্থিরতা দেখিয়া কুরতবী (রা:) বলেন আমি মনে মনে সত্তর হাজার বার পড়ার একটি নেসাব ঐ যুবকের মায়ের নামে। বখশিশ করিয়া দিলাম। কিন্তু এক আল্লাহ ব্যাতিত আমার আমলের কথা আর কাহারো জানা ছিলনা। হঠাৎ যুবক বলিয়া উঠিল চাচা! আমার মা দোযখের আজাব হইতে নাজাত পাইয়াছে। কুরতবী (রা:) বলেন কেচ্ছা দ্বারা আমার দুইটি জ্ঞান হাসিল হইলো। প্রথমত সত্তর হাজার বার কালেমা পড়ার বরকত।
দ্বিতীয়ত যুবকের কাশফের সত্যতাও প্রমানিত হইল।
(ফাজায়েলে আমলের জিকির অধ্যায়! ৩৫৪পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)
এই ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারলাম:-শায়খ আবু কুরতবী সাহেব বলেন আমি শুনেছি, যে ব্যাক্তি সত্তর হাজার বার কালেমা পড়িবে বলে উল্লেখ্য আছে। তা কুরতবী সাহেব কোথা থেকে এমন কথা শুনেছেন তার উল্লেখ্য নেই। কোন হাদিসের কিতাবেই এমন কথা পাওয়া যায়না। তাহলে কুরতবী সাহেব এই আমলের কোথা পেলেন?
(তার মানে বানোয়াট) কাশফের মাধ্যমে জান্নাত জাহান্নাম দেখা,যা আল্লাহ গায়েবি(অদৃশ্য) করে করে রেখেছেন তার পর্যবেক্ষন করে নিজ মাকে জাহান্নামে দেখা এবং মাগফিরাত(ক্ষমা) দেখা এ গুলো সব ইলমে গায়েব অর্থাৎ অদৃশ্য জগতের কথা নয় কি? অথচ ঐ যুবক কাশফের মাধ্যমে জানতে পারলো।



আমাদের জবাব 
এখানে দুটি বিষয়


: প্রথমত 70 হাজার বার লা ইলাহা ইল্লাহ পড়লে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, একথাটি ইমাম আবূ ইয়াযীদ কুরতুবী (রহ.) কোথা থেকে পেয়েছেন?

: দুনিয়া থেকে জান্নাত জাহান্নাম দেখা সম্ভব কি না? চাই তা কাশফের মাধ্যমে হোক অথবা স্বপ্বের মাধ্যমে অথবা অন্য কোন ভাবে হোক।

আসুন এখন আমরা শুধু 70 হাজার বারের তাহকীক করবো এ বিষয়টি কোথা থেকে আসছে এবং এর সত্যতা কতটুকু? আর দ্বিতীয় বিষয়টি আমার অন্য পর্বে আসছে, ইনশাআল্লাহ
সত্তর হাজার বারের এই নিয়ম সর্ব প্রথম চালু করেছেন আল্লামা ইবনুল আরবী (রহ.)। দেখুন এর বাস্তবতা-


فيض القدير (6/ 188)

11380 - من قال: لا إله إِلاَّ الله نَفَعَتْهُ يَوْماً مِنْ دَهْرِهِ يُصِيبُهُ قَبْلَ ذلِكَ مَا أَصَابَهُ

(الْبَزَّار هَب) عَن أبي هريرة.

[حكم الألباني]

(صحيح) انظر حديث رقم: 6434 في صحيح الجامع

<فائدة> قال ابن عربي: أوصيك أن تحافظ على أن تشتري نفسك من الله بعتق رقبتك من النار بأن تقول لا إله إلا الله سبعين ألف مرة فإن الله يعتق رقبتك أو رقبة من تقولها عنه بها ورد به خبر نبوي


আল্লামা সুয়ূতী (রহ. মৃত-911) এর বিখ্যাত হাদীসের কিতাব ‘জামেউস সাগীর’ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফায়জুল কাদীর’ যা আল্লামা মানাবী (রহ. মৃত-1031) কতৃক রচিত। ঐ কিতাবের 11380 নং হাদীস-যে ব্যক্তি ইখলাছের সহীত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, এই কালিমা তার এমন এক দিন উপকারে আসবে, যা তার জিবনের পূর্ববর্তী সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। এই হাদীসটি মুসনাদের বাজ্জার এর-15/66 হাদীস নং-8292, ও আল মুজামুল আওসাত-6/273 হাদীদ নং-6396 এর মাঝেও উল্লেখ রয়েছে। আর হাদীসটি সম্পূণ সহীহ, যা আহলে হাদীসরাও অস্বীকার করতে পারবে না। কারণ উপরে আরবী রয়েছে, খুদ আলবানী (মৃত-1999) সাহেবও হাদীটিকে সহীহ বলেছেন।


অতঃপর হাদীসটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা মানাবী (রহ. মৃত-1031) বলেন-আল্লামা ইবনুল আরাবী (রহ. মৃত-638) বলেছেন যে, আমি তোমাদেরকে নসীহত করছি যে, তোমরা নিজ আত্মাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে নাও, সত্তর হাজার বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ার মাধ্যমে। কেননা যে ব্যক্তি সত্তর হাজার বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়বে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিবেন। এ কথাটি হাদীস এর মাঝেও এসেছে ।ফয়জুল কাদীর-6/188।
এখন দেখুন উক্ত কিতাবের মাঝে অন্য একটি ঘটনা-

وأخبرني أبو العباس القسطلاني بمصر أن العارف أبا الربيع المالقي كان على مائدة وقد ذكر هذا الذكر عليها صبي صغير من أهل الكشف فلما مد يده للطعام بكى فقيل: ما شأنك قال: هذه جهنم أراها وأمي فيها فقال المالقي في نفسه: اللهم إني قد جعلت هذه التهليلة عتق أمه من النار فضحك الصبي وقال: الحمد لله الذي خرجت أمي منها وما أدري سبب خروجها قال المالقي: فظهر لي صحة الحديث قال ابن عربي: وقد عملت أنا على ذلك ورأيت بركته


আল্লাম মানাবী (রহ. মৃত-1031) বলেন, আমাকে এই ঘটনা শুনিয়েছেন, আবূল আব্বাস আল কাসতালানী (রহ.) মিসরের মাঝে যে, আরেফ বিল্লাহ আবূ রবী আল মাকেলী একদা দস্তারখানার মাঝে ছিলেন, আর তার সাথে এক যুবক ছিল যার কাশফ এর বিষয়টি ছিল প্রসিদ্ধ। যখন এ যুবক খাওয়ার জন্য হাত অগ্রসর করলেন তখন কেঁদে উঠলেন, তাকে কান্না করার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে সে বললো, আমি জাহান্নাম দেখতে পাচ্ছি তাতে আমার মা রয়েছেন। অতঃপর মালেক (রহ.) মনে মনে বললেন আমার যে সত্তর হাজার বারের নেসাব পড়া আছে আমি তা তার মায়ের জন্য দান করে দিলাম, যাতে করে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। অতঃপর ঐ যুবক হেসে দিলো এবং বললো সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি আমার মাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেছেন, আর তাকে মুক্তি দেয়ার কারণ কি তা আমি জানি না? এই গঠনার পর আল্লামা মালেক (রহ.) বলেন আমার কাছে দিপ্রহরের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, এই হাদীসটি সহীহ, আর আল্লামা ইবনুল আরাবী (রহ. মৃত-638) বলেন, হাদীসটি সহীহ এবং এ আমল বরকত পূর্ন তা আমি ভালো ভাবে জানি। ফাতহুল কাদীর-6/188।

আল্লামা ইবনুল আরাবী (রহ. ‍মৃত-638) এর উল্লেখিত উক্তিটিকে হাদীস বলে আরো উল্লেখ করেছেন-

منح الجليل شرح مختصر خليل (7/ 499) وَكَذَا التَّهْلِيلُ الَّذِي اعْتَادَ النَّاسُ يَنْبَغِي عَمَلُهُ وَالِاعْتِمَادُ عَلَى فَضْلِ اللَّهِ تَعَالَى. ابْنُ الْعَرَبِيِّ أُوصِيك بِالْمُحَافَظَةِ عَلَى شِرَاءِ نَفْسِك مِنْ اللَّهِ تَعَالَى بِأَنْ تَقُولَ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ سَبْعِينَ أَلْفًا، فَإِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَعْتِقُك وَيَعْتِقُ مَنْ تَقُولُهَا عَنْهُ مِنْ النَّارِ وَرَدَ بِهِ خَبَرٌ نَبَوِيٌّ
মিনহুল জালীল শারহু মুখতাসারুল খলীল-7/499।
এখন দেখূন ইমাম আবূ জায়েদ কুরতুবী (রহ.) গঠনা যা ফাযায়েলে আমলে এসেছে তা কি বানানো না অন্য কোন কিতাবে আছে? হ্যা অন্য কিতাবেও হুবহু এই ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।যেমন-
إرشاد العباد إلى سبيل الرشاد
{ زين الدين المليبارى }
وحكى أيضاً فيه عن الشيخ أبي زيد القرطبي قال: سمعت في بعض الآثار أن من قال: لا اله إلا الله سبعين ألف مرة كانت له فداء من النار، فعملت على ذلك رجاء بركة الوعد فعملت منها لأهلي وعملت منها أعمالاً ادخرتها لنفسي وكان إذ ذاك يبيت معنا شاب يقال إنه يكاشف في بعض الأوقات بالجنة والنار، وكانت الجماعة ترى له فضلاً على صغر سنه، وكان في قلبي منه شيء، فاتفق أن استدعانا بعض الإخوان إلى منزله، فنحن نتناول الطعام والشاب معنا إذ صاح صيحة منكرة، واجتمع في نفسه وهو يقول: يا عم هذه أمي في النار، وهو يصيح بصياح عظيم لا يشك من سمعه أنه عن أمر، فلما رأيت ما به من الانزعاج قلت في نفسي اليوم أجرب صدقه فألهمني الله السبعين ألفاً، ولم يطلع على ذلك أحد إلا الله، فقلت في نفسي: الأثر حق، والذين رووه صادقون: اللهم إن السبعين ألفاً فداء هذه المرأة أمّ هذا الشاب، فما استتمت الخاطر في نفسي إلا أن قال: يا عمّ ها هي أخرجت الحمد لله.

رقم الجزء: 1 رقم الصفحة: 5


শায়েখ আবু কুরতবী (রহ.)বলেন, আমি শুনিয়াছি যে ব্যক্তি সত্তর হাজার বার কালেমা পড়িবে সে দোযখ হইতে নাজাত পাইবে। ইহা শুনিয়া আমি নিজের জন্য সত্তর হাজার বার ও আমার স্ত্রীর জন্য সত্তর হাজার বার এবং এই রুপে এই কালেমা কয়েক নেছাব আদায় করিয়া পরকালের ধন সংগ্রহ করি।
আমাদের নিকটেই একজন যুবক কাশফওয়ালা বলে খ্যাত লাভ করেছে। সে নাকি বেহেস্ত দোযখ দেখতে পেত। আমি তাকে সন্দেহ করলাম। এক সময় ঐ যুবক আমার সাথে আহার করতে বসে হঠাৎ চিৎকার মেরে উঠল ও বললো, আমার মা দোযখে জ্বলতেছে।তার অবস্থা আমি দেখতে পাচ্ছি। যুবকের অস্থিরতা দেখে কুরতবী (রহ.)বলেন, আমি মনে মনে সত্তর হাজার বার পড়ার একটি নেসাব ঐ যুবকের মায়ের নামে বখশিশ করে দিলাম।কিন্তু এক আল্লাহ ব্যাতিত আমার আমলের কথা আর কারো জানা ছিলনা।হঠাৎ যুবক বলে উঠিল চাচা! আমার মা দোযখের আজাব হতে নাজাত পেয়েছে। ইরশাদুল ওব্বাদ ইলা সাবিলির রাসাদ-01/05 আল্লামা জাইনুদ্দীন আল মিলয়াবারী কতৃক রচীত।

এই ঘটনাটি আরো রয়েছে-
❐  [قرة العين بفتاوى علماء الحرمين]
المؤلف: الشيخ حسين إبرهيم المغربي مفتي المالكية بمكة
[مسألة]
في الباجوري على الجوهرة أخرج البزار عن أنس بن مالك مرفوعًا من تلا {قل هو الله أحد} مائة ألف مرة فقد اشترى نفسه من الله، ونادى مناد من قبل الله تعالى في سماواته وفي أرضه ألا إن فلانا عتيق الله، فمن له قبله تباعة فليأخذها من الله عز وجل. اهـ. وفي الإرشاد والتطريز في فضل ذكر الله، وتلاوة كتاب الله العزيز عن أبي زيد القرطبي أنه قال: سمعت في بعض الآثار أن من قال: لا إله إلا الله سبعين ألف مرة كانت له فداء من النار. اهـ
কুররাতুল আইন বি ফাতওয়ায়ে ওলামায়িল হারামাইন, শায়খ হুসাইন ইব্রাহীক কতৃক রচিত।

সত্তর হাজার বার এই কালেমা পড়লে আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এ বিষয়ে আরো বর্ণিত আছে যে-
تحفة المحتاج في شرح المنهاج - (24 / 429)
أَيْ كَالتَّهْلِيلِ سَبْعِينَ أَلْفَ مَرَّةٍ الْمَشْهُورُ بِالْعَتَاقَةِ الصُّغْرَى
সত্তর হাজার বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়লে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তোহফাতুল মুহতাজ শারহুল মিনহাজ-24/429।
আল্লামা মুকরী (রহ.)‘নাফহুত তীব মিন গুসনীল উন্নুদুলীসির রাতিব’এর 2/55 নং পৃষ্ঠায় আল্লামা ইবন হাজর আসকালানী (রহ.) এর মতামত উল্লেখ করে বলেন যে, এটি হাদীস নন। (কিন্তু আমল করা যাবে কি না এ বিষয়ে কোন উক্তি উল্লেখ করা হয় নি)
বারিকাতু মাহমুদীয়া শারহু তারিকাতু মুহাম্মাদীয়া-2/459।
মালফুজাতে আহমদ রেজা খান’ এর 78 নং পৃষ্ঠায়ও এ ঘটনাটি উল্লেখ রয়েছে।


এত সময়ের উদ্বৃতিগুলোর সারসংক্ষেপ !
উল্লেখিত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, আল্লামা যাকারীয়া সাহেব (রহ.) ইমাম কুরতুবীর যে উল্লেখিত ঘটনাটি ফাযায়েলে আমলে নিয়ে এসেছেন তা তার মনগড়া কোন রচিত বিষয় নয়। রবং আরো অনেকগুলো গ্রহণযোগ্য কিতাবে এ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, আর সত্তর হাজারের এই আমল মূলত প্রমাণ মিলে আল্লামা ইবনুল আরাবী (রহ.) থেকে। যা ‍উল্লেখিত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে।
সালাফীদের কারচুপি আর আমাদের মুচকি হাসি


প্রিয় পাঠক বৃন্দ আল্লামা জাকারিয়া সাহেব ‍উল্লেখিত ঘটনাটি উল্লেখ করার কারণে যদি অপরাধী হয়ে থাকেন, তাহলে আমরা এখন দেখবো এ ধরনের অপরাদের কাজ সালাফীদের শায়খগণ কোথায় কোথায় করেছেন???
তাই নিম্নে তাদের কিছু কিতাব ও তার উদ্ধৃতিগুলো দেখি-

01 : আহলে হাদীস বা সালাফীদের বিখ্যাত ইমাম নবাব সিদ্দীক হাসান খান (মৃত-1890) তার লিখিত গ্রন্থ ‘‘কিতাবুত তাবিজাত’’ (অথ তাবিজের কিতাব, দেখুন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আলেমগণ কোরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত কোন কোন দোয়া থেকে ঝাডফুক করলে শিরক হয় আর সালাফীগণ তাবিজের কিতাব লিখলেও ঈমানদার হয় ???) এর 140 নং পৃষ্ঠায় লিখেন-

براے نجات از نار : صوفياء نى كہاں كے جوكوئی کلمہ طیبہ لا الہ الا اللہ ستر ہزار بار پڑہیگا وہ آگ دوزخ سے آزاد ہو جائیگا اس نے اپنے جان کو گویا نار سے خرید کرلیا ذكره ابن العربى ويافعى الخ


অর্থাৎ : জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় : সুফিগণ বলেছেন, যে ব্যক্তি সত্তর হাজার বার কালেমায়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়বে, সে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত হয়ে যাবে, যাতে করে সে জাহান্নাম থেকে নিজ আত্তাকে ক্রয় করে নিয়ে নিলো, যা আল্লাম ইয়াফেয়ী ও ইবনুল আরাবী ইত্যাদিগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে।
❷ আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) তার ‘মাজমুয়ায়ে ফাতওয়া’এর 24/323 নং পৃষ্ঠায়  লিখেন-
مجموع الفتاوى (24/ 323)
وَسُئِلَ: عَمَّنْ " هَلَّلَ سَبْعِينَ أَلْفَ مَرَّةٍ وَأَهْدَاهُ لِلْمَيِّتِ يَكُونُ بَرَاءَةً لِلْمَيِّتِ مِنْ النَّارِ " حَدِيثٌ صَحِيحٌ؟ أَمْ لَا؟ وَإِذَا هَلَّلَ الْإِنْسَانُ وَأَهْدَاهُ إلَى الْمَيِّتِ يَصِلُ إلَيْهِ ثَوَابُهُ أَمْ لَا؟ .
فَأَجَابَ: إذَا هَلَّلَ الْإِنْسَانُ هَكَذَا: سَبْعُونَ أَلْفًا أَوْ أَقَلَّ أَوْ أَكْثَرَ. وَأُهْدِيَتْ إلَيْهِ نَفَعَهُ اللَّهُ بِذَلِكَ وَلَيْسَ هَذَا حَدِيثًا صَحِيحًا وَلَا ضَعِيفًا. وَاَللَّهُ أَعْلَمُ
আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির জন্য সত্তর হাজার বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়লে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পায় । এ কথাটা কি কোন সহীহ হাদীস? আর তাছাড়াও যদি এ ভাবে মৃত ব্যক্তিদের লক্ষে পড়া হয় তাদের কোন উপকার হবে?
তিনি উত্তরে বললেন-এখানে সত্তর হাজার বার অথবা তার চেয়ে কমও বেশ পড়ার দ্বারা মৃত ব্যক্তির উপকার হবে, কিন্তু একথা কোন হাদীসে নেই, আল্লাহই ভালো জানেন।
আচ্ছা প্রিয় পাঠকগণ সালাফী ভাইগণ আল্লামা জাকারিয়া সাবেহ (রহ.) এই ঘটনাটি উল্লেখ করলেন কেন? তাই ফাযায়েলে আমলের মাঝে শিরকী কথা চলে এসেছে, আর তিনি তাদের নিকট অপরাধী হয়ে গিয়েছেন। তাহলে এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি আসলে তারা যে সব ঈমামদের কথা ব্যতিত একটু নড়চড় করে না তাদের কিতাবের মাঝেও এ ঘটনা উল্লেখ রয়েছে । অথচ তারা কোন মহলে তাদের শায়খদের এই বাণীগুলো সৃতি স্বরূপও উল্লেখ করেন না, আর কি ভাবেই বা উল্লেখ করবেন। যদি সত্যি কথা উল্লেখ করেন তাহলে তাদের এবং ইহুদীদের মাঝে তাহরীফ ইত্যাদির যেই মিল আছে, তা নষ্ট হয়ে জ্বল-পোড়া দিতে গিয়ে কপাল পোড়ার ন্যায় হবে।
❁❀❖ সব চেয়ে মজার বিষয় হলো, এই ঘটনাটির মূল হলেন, আল্লামা ইবনুল আরাবী (রহ.)। অতএব আমাদের জানার বিষয় হলো ইবনুল আরাবী (রহ.)ও কি সালাফী ছিলেন?? যদি তিনি সালাফী হয়ে থাকেন তাহলে বুঝা গেলো ইতিহাসের শুরু থেকে নিয়ে এই সত্তর হাজারের ঘটনা সালাফীগণই আবিস্কার করেছেন, আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উপর তোহমত দিচ্ছেন।
সালাফীদের মত অনুসারে আল্লামা ইবনুল আরবী (রহ.)ও সালাফী ছিলেন 
 আহলে হাদীস বা সালাফীদের বিখ্যাত ইমাম নবাব সিদ্দীক হাসান খান ‘আততাজুল মুকাল্লাল’ এর 176 নং পৃষ্ঠায় ইবনুল আরাবী (রহ.) সম্পর্কে লিখেন-
وكان من اتباع السنة وترك التقليد وايصال الاجتهاد
 অর্থাৎ আল্লামা ইবনুল আরাবী (রহ.) সুন্নাত এর অনুসারী ছিলেন, এবং তাকলীদ বা মাজহাবকে প্রতাখ্যান করেছেন, এবং তিনি ইজতিহাদের অনুসারি ছিলেন । (অর্থাৎ তিনিও গায়রে মুকাল্লেদ ছিলেন)।

সালাফীদের বড় ইমাম আল্লাহ ওহিদুজ জামান তার লিখিত গ্রন্থ ‘হাদিয়াতুল মাহদী’ এর 51 নং পৃষ্ঠায়  একটি আলোচনার বিষয়ে আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা,  ইবনুল কায়্যুয়ুম আল জাওজী ও তাফতাযানীকে খেতাব করে  লিখেন- 

ولو نظروا فى الفتوحات لعرفوا ان شيح رحمه الله من اهل الحديث اصولا وفروعا ومن اشد الرادين على ارباب التقليد
অর্থাৎ যদি আমরা (আল্লামা ইবনুল আরাবী (রহ.) এর লিখিত গ্রন্থ) ফুতুহাতুল মাক্কিয়া এর মাঝে দৃষ্টিপাত করি, তাহলে আমরা বুঝতে পারি যে, শায়খ (রহ.) প্রত্যেকটি নিয়ম এবং খুটিনাটি বিষয়েও আহলে হাদীস ছিলেন এবং মাজহাব অনুসারীদেরকে অধিক প্রত্যাখানকারী ছিলেন।
সন্মানিত পাঠক উপরে উল্লেখিত আহলে হাদীসদের দুটি কিতাবের উদ্বৃতি থেকে আমরা স্পষ্ট ভাবে বুঝেছি যে, তাদের মত অনুসারে আল্লামা ইবনুল আরাবী (রহ.) আহলে হাদীস বা সালাফী ছিলেন। তাহলে তারা কেন জাকারিয়া সাহেব ও ফাযায়েলে আমল নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করেন।


✪✿ আর তা ছাড়াও ইবনুল আরাবী (রহ.) তার লিখিত কিতাব ‘আলফুতুহাতুল মাক্কিয়া’’ যা 09 খন্ড রচিত  তাতে হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন। আর যাকারীয়া সাহেব (রহ.) হাদীস বলেন নি। শুধু ঘটনা স্বরুপ উল্লেখ করেছেন। অতএব তাতে সমস্যা কোথায়, হ্যা যদি আপনারা বলেন, না। এ ধরনের কথা তিনি উল্লেখ করবেন কেন? তাহলে আমি বলবো সালাফীদের বড় বড় আলেমরাও এই ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন তাহলে তারা কি অপরাধী নন?? অতত্রব এখানে তাদের যে জবাব আমাদেরও সেই জবাব।

শেষ কথা এই আমলটি করা যাবে কি?
 প্রথমে আমাদের জানা প্রয়োজন যে, মৃত ব্যক্তির জন্য জীবত মানুষ দোয়া করলে কি কোন উপকার হয়? তার উত্তরে আমি বলবো হ্যা অবশ্যই হয়। কারণ হাদীসের মাঝে আছে-


صحيح مسلم (3/ 1255)
14 - (1631) حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، وَقُتَيْبَةُ يَعْنِي ابْنَ سَعِيدٍ، وَابْنُ حُجْرٍ، قَالُوا: حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ هُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ، عَنِ الْعَلَاءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ "
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বণিত নিশ্চয় রাসূল (সা.) বলেন, যখন মানুষ মারা যায় তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তিনটি ব্যতিত (1) সাদাকায়ে জারিয়া (02) তার ঐ শিক্ষা যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় (03) কেন সন্তানাদী যারা তার জন্য দোয়া করে থাকে। মুসলিম-03/1255, হাদীস-1631।

আচ্ছা আমরা উল্লেখিত হাদীস থেকে জানতে পারলাম যে, মৃত ব্যক্তিকে লক্ষ করে কোন আমল করলে তা তার উপকার হয় থাকে, যা উপরে আমি আল্লাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) এর ফাতওয়াও উল্লেখ করেছি।
✪✿ আর কালিমায়ে তাইয়্যাব, যা একবার পড়ার দ্বারা রাসূর (সা.) জাহান্নাম থেকে মুক্তির বাণী শুনায়েছেন অতএব সত্তর হাজার বার পড়লে কি জাহান্নাম থেকে মুক্তি মিলবে না??? হ্যা অবশ্যই দেখুন-

فيض القدير (6/ 188)
11380 - من قال: لا إله إِلاَّ الله نَفَعَتْهُ يَوْماً مِنْ دَهْرِهِ يُصِيبُهُ قَبْلَ ذلِكَ مَا أَصَابَهُ
(الْبَزَّار هَب) عَن أبي هريرة.
[حكم الألباني]
(صحيح) انظر حديث رقم: 6434 في صحيح الجامع
<فائدة> قال ابن عربي: أوصيك أن تحافظ على أن تشتري نفسك من الله بعتق رقبتك من النار بأن تقول لا إله إلا الله سبعين ألف مرة فإن الله يعتق رقبتك أو رقبة من تقولها عنه بها ورد به خبر نبوي

আল্লামা সুয়ূতী (রহ. মৃত-911) এর বিখ্যাত হাদীসের কিতাব ‘জামেউস সাগীর’ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফায়জুল কাদীর’ যা আল্লামা মানাভী (রহ. মৃত-1031) কতৃক রচিত। ঐ কিতাবের 11380 নং হাদীস-যে ব্যক্তি ইখলাছের সহীত লা ইলাহা ইল্লাহ বলে, এই কালিমা তার এমন এক দিন উপকারে আসবে, যা তার জিবনের পুর্ববতি সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। এই হাদীসটি মুসনাদের বাজ্জার এর-15/66 হাদীস নং-8292, ও আল মুজামুল আওসাত-6/273 হাদীদ নং-6396 এর মাঝেও উল্লেখ রয়েছে। আর হাদীসটি সম্পূণ সহীহ, যা আহলে হাদীসরাও অস্বীকার করতে পারবে না কারণ উপরে আরবী রয়েছে, খুদ আলবনী (মৃত-1999) সাহেবও হাদীটিকে সহীহ বলেছেন।
صحيح البخاري (1/ 37)
 «مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ [ص:38] مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ»
সহীহ বুখারী শরীফ এর বর্ণনা, যে ব্যক্তি অন্তর থেকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূরলুল্লাহ এর সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ তার উপর জাহান্নামকে হারাম করে দিবেন। বুখারী হাদীস নং-128।

এ ছাড়া্ও আরো অসংখ্য হাদীস থেকে এ কথা প্রমাণিত। আর তাছাড়াও সত্তর এর সংখ্যার একটি বরকত রয়েছে যা আমি কোরআন হাদীস ইত্যাদির থেকে হিসাব করে দেখলাম প্রায় সত্তরটি বিষয়ের অধিক জিনিসের জন্য সত্তর হাজার শব্দটি ব্যবহার হয়েছে, যেমন দেখুন-
تفسير الطبري - جامع البيان ت شاكر (23/ 115)
حدثنا ابن بشار، قال: ثنا عبد الرحمن، قال: ثنا سفيان، عن أبي إسحاق، عن عمرو بن ميمون (وَظِلٍّ مَمْدُودٍ) قال: مسيرة سبعين ألفَ سنة
আল কোরআনের আয়াত (وَظِلٍّ مَمْدُودٍ) অথাৎ জান্নাত বাসিরা থাকবে দির্ঘ ছায়ার মাঝে। এই ছায়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আমর ইবনে মায়মূন বলেন, তা হবে সত্তর হাজার বছরের ন্যায়। ইত্যাদি তাফসীরে তাবারী-23/115।
 :لوامع الأنوار البهية (2/ 291)
قَالَ بَعْضُ الْعُلَمَاءِ: مُعْجِزَاتُ نَبِيِّنَا كَثِيرَةٌ لَا تَنْحَصِرُ، وَفِي كَلَامِ بَعْضِهِمْ أَنَّهُ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أُعْطِي ثَلَاثَ آلَافِ مُعْجِزَةٍ يَعْنِي غَيْرَ الْقُرْآنِ فَإِنَّ فِيهِ سِتِّينَ أَوْ سَبْعِينَ أَلْفَ مُعْجِزَةٍ تَقْرِيبًا
আলেমগন বলেন, আমাদের নবী (সা.) এর মুজেযা এত বেশী যা গণনা করে শেষ করা যাবে না।.... আর রাসূর (সা.) থেকে কোরআন ব্যতিত 70 হাজার মুজেযা বাস্তবায়ন হয়েছে। লাওয়ামেউল আনওয়ারুল বাহ্যিয়া-2/291।
আর বুঝবান মানুষের জন্য এতটুকু তাহকীক যথেষ্ট, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক দ্বীন ‍বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন

মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন