রবিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

আকীকার ক্ষেত্রে ছেলে হলে দুইটি বকরী আর মেয়ে হলে একটি কেন?


আকীকার ক্ষেত্রে ছেলে হলে দুইটি বকরী আর মেয়ে হলে একটি কেন?

 নাস্তিক নিমূলে আহলে হকের অবদান

প্রশ্ন : এক ...... আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, ইসলামে ছেলে জন্ম হলে দুইটি বকরী, আর মেয়ে হলে একটি বকরী দিয়ে আকীকা করতে হয়, তাহলে ইসলাম কি মেয়ে জন্ম নিয়ে অসন্তুষ্ট? না হয় ইসলামের এই বিধানটির মাঝে হেকমত বা রহস্য কি?


জবাব : নাইসলাম মেয়ে জন্ম নিলে কখনো অসন্তুষ্ট নয় এবং এর মাঝে মহান আল্লাহ তায়ালার যথেষ্ট হেকমত রয়েছে যা নিন্মে আলোচনা করা হলো

আকিকা হলো মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ইসলামের একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিধান আর মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কেরআনের মাঝে বলেন-
- لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ
 মহান আল্লাহ তায়ালার কৃতকর্ম সম্পর্কে কারো জিজ্ঞাসা করাঅধিকার নেই, কেননা সমস্ত মানুষই মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট জিজ্ঞাসিত (সূরা আম্বিয়া-23) 
অতএব আকীকার এই বিধানটির পিছনে কোন হেকমত বা যুক্তি না থাকলেও কারো পক্ষে এই বিধান  নিয়ে  প্রশ্ন করার কোন অধিকার নেই। যা মহান আল্লাহ উল্লেখিত বাণী থেকে স্পষ্ট।


ইসলাম মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে অসন্তুষ্ট নয়, বরং যারা অসন্তষ্ট হয় মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের নিন্দা জ্ঞাপন করে বলেন-
  وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ (58) يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ  
যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখ কাল হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট থাকে তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে না, তাকে মাটির নীচে পুঁতে ফেলবে শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবিই নিকৃষ্ট (সূরা নাহল-58-59)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উক্ত আয়াতে মেয়ে সন্তানের জন্মের আলোচনা করতে গিয়ে بُشِّرَ শব্দ তথা সুসংবাদ বলে ব্যক্ত করেছেন, আর যারা মেয়ে সন্তান জন্ম গ্রহনে বোঝা মনে করে তাদের নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। তাহলে প্রিয় পাঠক আপনিই বলুন ইসলাম কেন মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে অসন্তুষ্ট হবে?

অনত্র মহান আল্লাহ তায়ালা সন্তান-সন্ততি তার মহান দান বা অনুগ্রহের আলোচনা করতে গিয়ে সর্ব প্রথম কন্যা সন্তান এর আলোচনা নিয়ে এসেছেন-
 ❀  يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ (49) أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ 
 যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র-সন্তান দান করেন, অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র কন্যা উভয়ই (হিজড়া) এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন নিশ্চয় তিনি সবজ্ঞ, ক্ষমতাশীল (সূরা আশ শূরা-49)  
প্রবিত্র কোরআনে উক্ত আয়াতের মাঝেও মহান আল্লাহ তার অনুগ্রহ ও দানের আলোচনা করতে গিয়ে মেয়েদের আলোচনা অগ্রে বা প্রথমে নিয়ে এসেছেন, যার দ্বারা একথা সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা গেলো যে, ইসলাম কখনো মেয়ে সন্তান হলে অসন্তুষ্ট নয়

কোন জ্ঞানবান মানুষ যদি নিরবে বসে এ বিষয়টি চিন্তা করে দেখে, তাহলে তার কাছে দ্বিপ্রহরের ন্যায় স্পষ্ট হবে যে, কতিপয় মানুষ মেয়ে সন্তানের জন্ম গ্রহনে আজাব ও ভারি মনে করেতাই মহান আল্লাহ মেয়েদের ক্ষেত্রে সহজ করে একটি বকরীর বিধান রেখেছেন, যাতে তারা ভারি মনে না করে। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহর কত বড় হেকমত! (দেখুন নাস্তিক্য বাদি লোকগুলো একটি পজেটিব বিষয়কে কি করে নেকেটিব ভাবে উপস্থাপনা করলো) আল্লাহ যাদেরকে সঠিক জ্ঞান দান করেনে নি তারাই একমাত্র ইসলামের বিধান নিয়ে আপত্তি করতে পারে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক ইসলামি বুঝ দান করুন। আমীন 
 
আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো, শরয়ী বিধান অনুসারে বাবার সম্পদ থেকে ছেলে সন্তান মেয়ে সন্তানের দিগুন সম্পত্তির মালিক হয়, মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট ভাবে বলছেন-
  لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ
  ছেলেদের জন্য রয়েছে মেয়েদের দিগুন সম্পদ (সূরা নিসা-11)  
তাই মহান আল্লাহ তাদের হকের প্রতি লক্ষ্য করে বিধানও করেছেন, ছেলের জন্য মেয়ের দিগুন অর্থাৎ দুটি ছাগল দিয়ে আকিকা করবে আর মেয়ের জন্য একটি দিয়ে। আল্লাহর কত সুন্দর বিধান, সুবহানাল্লাহ!

সহীহ বুখারী শরীফের নির্ভর যোগ্য ব্যাখ্যাবিদ আল্লমা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ও আল্লাম ইবনে কায়্যুক আল জাওযী (রহ.) বলেন, আসলে আকীকার ক্ষেত্রে এই নিয়মের কারণ হলো মহান আল্লাহ তায়ালা প্রবিত্র কোরআনে বলেন-
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ 
অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা কিছু বিধান এর ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে দু’জাতির মধ্য থেকে কতককে কতকের উপর প্রধান্য দিয়েছেন। (সূরা নিসা-34)।

আর এই প্রাধান্য রয়েছে অনেকগুলো বিষয়ের মাঝে তার মধ্য থেকে যে বিষয়গুলোর মাঝে ছেলে মেয়ের অধ্যেক এর বিধান রয়েছে, যা নিন্মে উল্লেখ করা হলো-

01। আকীকা ছেলের জন্য দুটি বকরী আর মেয়র জন্য একটি। প্রমাণ-
سنن الترمذي ت شاكر (4/ 98)

1516 - حَدَّثَنَا الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الخَلَّالُ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ: أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي يَزِيدَ، عَنْ سِبَاعِ بْنِ ثَابِتٍ، أَنَّ مُحَمَّدَ بْنَ ثَابِتِ بْنِ سِبَاعٍ، أَخْبَرَهُ، أَنَّ أُمَّ كُرْزٍ أَخْبَرَتْهُ، أَنَّهَا سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ العَقِيقَةِ، فَقَالَ: «عَنِ الغُلَامِ شَاتَانِ، وَعَنِ الأُنْثَى وَاحِدَةٌ، وَلَا يَضُرُّكُمْ ذُكْرَانًا كُنَّ أَمْ إِنَاثًا»: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ

[حكم الألباني] : صحيح

সার সংক্ষেপ :  উম্মে কুরজ (রা.) রাসূল (সা.) কে আকীকা সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, তখন তিনি উত্তরে বললেন ছেলের পক্ষ থেকে দুটি বকরী আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি। তিরিমিযী-4/98, হাদীস-1516, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী ও সহীহ বলেছেন, তাহলে আহলে হাদীস ভাইদেরও মতানৈক্য করার অধিকার বাকি থাকলো না। আর এই হাদীসটি আরো অসংখ্য কিতাবে রয়েছে। প্রশিদ্ধতার কারণে আর কোন কিতাবের উদ্ধৃতি উল্লেখ করালাম না।

02। মিরাস বা উত্তরাধিকারী সম্পদের মাঝে যা উপরে উল্লেখ করেছি
لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ  
 ছেলেদের জন্য রয়েছে মেয়েদের দিগুন সম্পদ (সূরা নিসা-11)

03। দিয়াহ তথা হত্যাকারীর উপর ধার্যকৃত ক্ষতিপূরণ/রক্তমূল্য এর ক্ষেত্রেও মেয়ে ছেলের অর্ধেক দিবে। প্রমাণ-

السنن الكبرى للبيهقي (8/ 166)
16305 - أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، أنبأ أَبُو الطِّيبِ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الشَّعِيرِيُّ، ثنا مِحْمَشُ بْنُ عِصَامٍ، ثنا حَفْصُ بْنُ عَبْدِ اللهِ، حَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ طَهْمَانَ، عَنْ بَكْرِ بْنِ خُنَيْسٍ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ نُسَيٍّ، عَنِ ابْنِ غَنْمٍ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " دِيَةُ الْمَرْأَةِ عَلَى النِّصْفِ مِنْ دِيَةِ الرَّجُلِ "


হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূল(সা.)বলেছেন দিয়াহ এর ক্ষেত্রে মেয়ে ছেলের অর্ধেক দিবে। বায়হাকী-8/166, হাদীস-16305 এই হাদীসটি বিভিন্ন সনদ রয়েছে, এবং এর সমর্থনে আরো অনেক হাদীস আছে, তাই হাদীসটি হাসান।

04। সাক্ষির ক্ষেত্রেও মেয়েরা ছেলেদের অর্ধেক অর্থাৎ দুইজন মেয়ের সাক্ষি একজন পুরুষের সমতুল্য। প্রমাণ-

صحيح مسلم (1/ 86)

132 - (79) حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رُمْحِ بْنِ الْمُهَاجِرِ الْمِصْرِيُّ، أَخْبَرَنَا اللَّيْثُ، عَنِ ابْنِ الْهَادِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ، تَصَدَّقْنَ وَأَكْثِرْنَ الِاسْتِغْفَارَ، فَإِنِّي رَأَيْتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ» فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ جَزْلَةٌ: وَمَا لَنَا يَا رَسُولَ اللهِ أَكْثَرُ أَهْلِ النَّارِ؟ قَالَ: «تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ، وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ، وَمَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَغْلَبَ لِذِي لُبٍّ مِنْكُنَّ» قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا نُقْصَانُ الْعَقْلِ وَالدِّينِ؟ قَالَ: " أَمَّا نُقْصَانُ الْعَقْلِ: فَشَهَادَةُ امْرَأَتَيْنِ تَعْدِلُ شَهَادَةَ رَجُلٍ فَهَذَا نُقْصَانُ الْعَقْلِ، وَتَمْكُثُ اللَّيَالِيَ مَا تُصَلِّي، وَتُفْطِرُ فِي رَمَضَانَ فَهَذَا نُقْصَانُ الدِّينِ " وَحَدَّثَنِيهِ أَبُو الطَّاهِرِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ بَكْرِ بْنِ مُضَرَ، عَنِ ابْنِ الْهَادِ بِهَذَا الْإِسْنَادِ مِثْلَهُ،


সার সংক্ষেপ : فَشَهَادَةُ امْرَأَتَيْنِ تَعْدِلُ شَهَادَةَ رَجُلٍ দুইজন মহিলার  সাক্ষি একজন পুরুষের সমতুল্য । সহীহ মুসলিম-1/86, হাদীস-79 ।

05। গোলাম আজাদ বা মুক্ত করা ক্ষেত্রেও। দেখুন প্রমাণ-
سنن الترمذي ت شاكر (4/ 117)

1547 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى قَالَ: حَدَّثَنَا عِمْرَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، وَهُوَ أَخُو سُفْيَانَ بْنِ عُيَيْنَةَ، عَنْ حُصَيْنٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ أَبِي الجَعْدِ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، وَغَيْرِهِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَيُّمَا امْرِئٍ مُسْلِمٍ، أَعْتَقَ امْرَأً مُسْلِمًا، كَانَ فَكَاكَهُ مِنَ النَّارِ، يُجْزِي كُلُّ عُضْوٍ مِنْهُ عُضْوًا مِنْهُ، وَأَيُّمَا امْرِئٍ مُسْلِمٍ، أَعْتَقَ امْرَأَتَيْنِ مُسْلِمَتَيْنِ، [ص:118] كَانَتَا فَكَاكَهُ مِنَ النَّارِ، يُجْزِي كُلُّ عُضْوٍ مِنْهُمَا عُضْوًا مِنْهُ، وَأَيُّمَا امْرَأَةٍ مُسْلِمَةٍ، أَعْتَقَتْ امْرَأَةً مُسْلِمَةً، كَانَتْ فَكَاكَهَا مِنَ النَّارِ، يُجْزِي كُلُّ عُضْوٍ مِنْهَا عُضْوًا مِنْهَا»: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الوَجْهِ: وَفِي الحَدِيثِ مَا يَدُلُّ عَلَى أَنَّ عِتْقَ الذُّكُورِ لِلرِّجَالِ أَفْضَلُ مِنْ عِتْقِ الإِنَاثِ لِقَوْلِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَعْتَقَ امْرَأً مُسْلِمًا كَانَ فَكَاكَهُ مِنَ النَّارِ، يُجْزِي كُلُّ عُضْوٍ مِنْهُ عُضْوًا مِنْهُ». الْحَدِيثُ صَحَّ فِي طُرُقِهِ
[حكم الألباني] : صحيح
 

সার সংক্ষেপ : হযরত আবূ ওমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন, কোন একজন পুরুষ গোলাম আজাদ বা মুক্ত করে দিলে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন, আর দুইজন মেয়ে মুসলিম কৃতদাস আজাদ বা মুক্ত করলেও আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিবেন। (দেখুন এক পুরুষ কৃত দাসের মাঝে যে ফযীলত দুই নারী কৃত দাস মিলে সেই ফযীলত) । তিরমিযী-4/117 হাদীস-1547, হাদীসটি সহীহ ।

❁❀ এছাড়াও আরো অনেকগুলো বিষয় রয়েছে যেমন নামায আদায়ের মাঝেও। সময় সংক্ষিপ্ত তাই বিস্তারিত উল্লেখ না করে মাত্র পাঁচটি উদাহরণ পেশ করলাম। দেখুন ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজার-10/12, তোহফাতুল মাওদূদ লি ইবনে কায়্যুম-53-54, যাদুল মায়াদ লি ইবনে কায়্যুম-2/331 ।

এখন দেখুন, ইসলামে মেয়েদের পক্ষ হতে একটি বকরী আকীকা করা হয়। তাই ইসলামের বিধান নিয়ে প্রশ্ন জাগছে তাহলে আসুন আমরা ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মগুলো দেখি-
مسند البزار = البحر الزخار (15/ 319)
8857- حَدَّثنا مُحَمد بن مَعْمَر، قَال: حَدَّثنا أَبُو عَاصِم، قال: أَخْبَرنا أَبُو حفص الشاعر قال: حدثني أبي، عَن الأَعرَج، عَن أبي هُرَيرة، قَالَ: قَالَ رَسُول اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم: إن اليهود تعق عن الغلام كبشا، ولاَ تعق عن الجارية،
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.)বলেন, নিশ্চয় ইহুদীগণ ছেলে সন্তানের পক্ষ হতে একটি বকরী আকীকা করে আর মেয়েদের পক্ষ হতে কোন আকীকাই করে না। মুসনাদের বাজ্জার-15/319, হাদীসটি আরো বিভিন্ন সনদ রয়েছে, কিন্তু হাদীসটি গরীব । আল্লামা হায়সামী (রহ.) সহ কয়েক ডজন মুহাদ্দীসগণ এই হাদীসটিকে নিজ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, তার মাঝে শায়খ আলবানী সাহেবও বাদ জাননি। 
   প্রিয় পাঠক দেখুন উক্ত হাদীস দ্বারা আমরা স্পষ্ট যে, ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মে মেয়ে হলে আকীকাই করা হয় না। তাহলে ইসলাম মেয়েদের জন্য আকীকার বিধান রেখে কি মেয়েদের কে খাটো করেছে না কি সন্মানি? নিশ্চয় সন্মানী। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন 

আরেকটি বিষয় হলো আকিকা একটি সুন্নাত আমল। যা ইসলাম সন্তান জন্ম নেয়ার সপ্তম দিনে করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর না করলে কোন সমস্যাও নেই  তাহলে কেন একটি সুন্নাত নিয়ে এত বাড়াবড়ি? দেথুন একথাটির প্রমাণ-
صحيح البخاري (7/ 84)

5471 - حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ: «مَعَ الغُلاَمِ عَقِيقَةٌ» وَقَالَ حَجَّاجٌ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، أَخْبَرَنَا أَيُّوبُ، وَقَتَادَةُ، وَهِشَامٌ، وَحَبِيبٌ، عَنْ ابْنِ سِيرِينَ، عَنْ سَلْمَانَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ غَيْرُ وَاحِدٍ، عَنْ عَاصِمٍ، وَهِشَامٍ، عَنْ حَفْصَةَ بِنْتِ سِيرِينَ، عَنِ الرَّبَابِ، عَنْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ الضَّبِّيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَرَوَاهُ يَزِيدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ ابْنِ سِيرِينَ، عَنْ سَلْمَانَ قَوْلَهُ، وَقَالَ أَصْبَغُ: أَخْبَرَنِي ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ حَازِمٍ، عَنْ أَيُّوبَ السَّخْتِيَانِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، حَدَّثَنَا سَلْمَانُ بْنُ عَامِرٍ الضَّبِّيُّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ [ص:85] يَقُولُ: «مَعَ الغُلاَمِ عَقِيقَةٌ، فَأَهْرِيقُوا عَنْهُ دَمًا، وَأَمِيطُوا عَنْهُ الأَذَى»

হযরত আমের আদদবী (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.) থেকে শুনেছি তোমরা সন্তানের পক্ষ হতে আকীকা কর এবং তার থেকে কষ্ট দায়ক বস্তু সরিয় নাও। (অর্থাৎ আকীকা করার দ্বারা দুনিয়াবী মুসিবতগুলো সরে যায়, একথাটিও সহীহ হাদীসে রয়েছে) বুখারী-07/84 হাদীস-5471 । (আর মাথাও মুন্ডন করে দিতে হবে)।
سنن الترمذي ت شاكر (4/ 101)

1522 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ قَالَ: أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ الحَسَنِ، عَنْ سَمُرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الغُلَامُ مُرْتَهَنٌ بِعَقِيقَتِهِ يُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ السَّابِعِ، وَيُسَمَّى، وَيُحْلَقُ رَأْسُهُ» حَدَّثَنَا الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الخَلَّالُ قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ قَالَ: أَخْبَرَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الحَسَنِ، عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوَهُ.: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَالعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ العِلْمِ يَسْتَحِبُّونَ أَنْ يُذْبَحَ عَنِ الغُلَامِ العَقِيقَةُ يَوْمَ السَّابِعِ، فَإِنْ لَمْ يَتَهَيَّأْ يَوْمَ السَّابِعِ فَيَوْمَ الرَّابِعَ عَشَرَ، فَإِنْ لَمْ يَتَهَيَّأْ عُقَّ عَنْهُ يَوْمَ حَادٍ وَعِشْرِينَ، وَقَالُوا: لَا يُجْزِئُ فِي العَقِيقَةِ مِنَ الشَّاةِ إِلَّا مَا يُجْزِئُ فِي الأُضْحِيَّةِ

[حكم الألباني] : صحيح
 আর এই হাদীসের মাঝে সপ্তম দিন অথবা 14 দিনের দিন অথবা 21 দিনের দিন করার বিধান এসেছে । এই হাদীসটিও সহীহ। তিরমিযী-4/101 হাদীস-1522

 সব সমস্যার নিরসন
যদি কোন বাবা ছেলের পক্ষ হতে দুটি বকরী দিতে সক্ষম না হন, বরং মেয়েদের ন্যায় একটি বকরি দ্বারা আকীকা করে তাহলেও আদায় হয়ে যাবে। তাহলে বলুন ইসলামের বিধান এর উপর কি কোন আপত্তি রইলো? নিশ্চয় না, হ্যা উপরে উল্লেখিত হাদীসগুলো অনুসারে অর্থাৎ মেয়ের পক্ষ থেকে একটি আর ছেলের পক্ষ থেকে দুইটি তাহলে আপত্তি থাকে, আর আমাদের উত্তরও রয়েছে।

  ছেলের পক্ষ থেকে একটি বকরী দিলেও হবে তার দলীল-

سنن أبي داود (3/ 107)
2841 - حَدَّثَنَا أَبُو مَعْمَرٍ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَقَّ عَنِ الْحَسَنِ، وَالْحُسَيْنِ كَبْشًا كَبْشًا»
[حكم الألباني] : صحيح
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল (সা.) হাসান এবং হোসাই (রা.) এর পক্ষ থেকে একটি করে দুম্বা/বকরী আকীকা করেছেন।আবূ দাঊদ-03/107 হাদীস-2841, হাদীসটি সহীহ আলো অসংখ্য হাদীসের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।

এখানে আমার ক্ষুদ্র একটি গবেষনা পেশ করলাম। আল হামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক ইসলাম বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন!

ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন