শনিবার, ২ মে, ২০১৫

ইসলামের প্রথম থেকেই ছিল ইহুদীদের বিভ্রান্তকর তথ্য

ইসলামের প্রথম থেকেই ছিল ইহুদীদের বিভ্রান্তকর তথ্য
( টেরা ও হিজড়া সন্তান জন্ম হওয়ার কারণ কি? )
বর্তমান সারা বিশ্বে চলছে ইহুদী, নাসারা ও খ্রীষ্টানদের মুসলিম বিরোধী চত্রুান্ত ও বিভ্রান্তকর তথ্য, যার সূচনা সবে মাত্র নয় বরং বহুযুগ পূর্বে থেকেই। যেমন-
 ❖ সন্তান টেরা জন্ম হয় কেন? এই সম্পর্ক রসূল সা. এর যুগে ইহুদীদের ভুল তথ্য-
صحيح البخاري (6/ 29)
4528 - حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ ابْنِ المُنْكَدِرِ، سَمِعْتُ جَابِرًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: " كَانَتِ اليَهُودُ تَقُولُ: إِذَا جَامَعَهَا مِنْ وَرَائِهَا جَاءَ الوَلَدُ أَحْوَلَ، فَنَزَلَتْ: {نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ} [البقرة: 223] "
❏ অর্থ : হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীরা বলত যে, যদি কেউ স্ত্রীর পেছন দিক থেকে (যৌনাঙ্গে) সহবাস করে, তাহলে সন্তান টেরা চোখের হয়। তখন (তাদের এ ধারণা ভুল প্রমাণের লক্ষে)  {نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ} (অর্থ তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র। তোমরা যে ভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।) (সূরা বাকারা-১২৩) এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। বুখারী-৬/২৯, হাদীস-৪৫২৮।


❖ কিন্তু পবিত্র কোরআনের মানুষ সৃষ্টি বিষয়ে মহান আল্লাহর বাণী দেখলে বুঝা যায় যে, মানুষ টেরা, অন্ধ, হিজড়া ইত্যাদি রূপে জন্ম নেয়া এগুলো সব আল্লাহর ইচ্ছা। দেখুন আল্লাহ বাণী-
{ وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ (12) ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ (13) ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ} [المؤمنون: 12 - 14] 
অর্থ : আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে এক নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়! (সূরা আল মু’মিনুন-১২-১৪)।

✏ হাদীসের ব্যাখ্যা : আল্লাহ তায়ালার বাণী : فَاْتُوْا حَرْثَكُمْ اَنّٰى شِئْتُمْ এ اَنّٰى شِئْتُمْ-এর তাফসীরের মধ্যে অনেকগুলো মতভেদ রয়েছে যে, এর প্রকৃত অর্থ কী? জমহূরের নিকট اَنّٰى  শব্দটি کیف অর্থে। অর্থাৎ کیف شئتم যেভাবে চাও তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সঙ্গম কর। চাই বসে পারো, চাই চিৎ করে, শোয়ায়ে, কাৎ করে। অর্থাৎ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে কর, এর মধ্যে কোনো প্রকারের বাধ্যবাধকতা নেই। বিস্তারিত জানার জন্যে ‘আদাবুল মুবাশারাত’ নামক পুস্তিকাটি অধ্যয়নযোগ্য। 
কিন্তু একটি কথার প্রতি সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, স্ত্রীদেরকে এখানে ক্ষেত বলা হয়েছে, তাই ক্ষেতের মধ্যে বীজ এমনভাবে ফেলতে হবে; যাতে ফসল হয়। সেটি হলো মেয়েলোকের যোনিপথ; যাতে বীর্য প্রবেশ করলে সন্তান (ফসল) জন্ম লাভ করার আশা থাকে; কিন্তু এর দ্বারা স্ত্রীর বায়ুপথ দিয়ে সঙ্গম করার বৈধতা বের হয় না; বরং এটি গুনাহের কাজের সাথে সাথে বীর্যের অপচয়ও বটে। অগ্রবর্তী আয়াত وَ قَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ দ্বারাও এটিই বুঝা যায়। আর তার দ্বারা নেক সন্তান আশা করা উদ্দেশ্য। আর এ থেকে মেয়েলোকের বা পুরুষের বায়ুপথ দ্বারা খায়েশ পূর্ণ করা অবৈধ প্রমাণিত হয়। 
وَاتَّقُوا اللّٰهَ! দ্বারা তা থেকে বাঁচা উদ্দেশ্য। অনুরূপ নিজ স্ত্রীর সাথে হায়েয অবস্থায় মেলামেশা করা থেকেও বেঁচে থাকা উদ্দেশ্য যে, এ সকল ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা উচিত যে, এগুলো সীমালঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত।
আলোচ্য মাসয়ালায় ইমাম মালেক এবং ইমাম শাফেয়ী এর নিজ নিজ মত থেকে প্রত্যাবর্তন প্রমাণ হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার প্রমুখ থেকেও বিভিন্ন প্রকারের উক্তি বর্ণিত হয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় ‘আন্না’ শব্দটি ‘হাইসুর’ অর্থে এসেছে। অর্থাৎ যেখানে ইচ্ছা কর। আর কোনো কোনো বর্ণনায় ‘আন্না’ শব্দটি ‘মাতা’ অর্থে এসেছে। অর্থাৎ যখন ইচ্ছা কর, তখনই তুমি স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করতে পারবে। এ সমস্ত আলোচনা, পর্যালোচনার পর সারকথা এই যে, চার ইমাম এবং জমহূরে উলামায়ে কিরাম ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আলেমগণ এ কথার ওপর একমত হয়েছেন যে, আপন বিবির বায়ুপথে সঙ্গম করা হারাম। 
হযরত ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি নিজ স্ত্রীর বায়ুপথে সঙ্গম করে আল্লাহ তায়ালা তার দিকে রহমতের দৃষ্টি করবেন না। বিস্তারিত জানার জন্যে ‘ফাতহুল বারী’, লামে’ আবওয়াব অধ্যয়নযোগ্য।

❁❀ চক্ষু সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফযীলত সকলেরই জেনে রাখা আবশ্যক-
صحيح البخاري (7/ 116)
5653 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، قَالَ: حَدَّثَنِي ابْنُ الهَادِ، عَنْ عَمْرٍو، مَوْلَى المُطَّلِبِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " إِنَّ اللَّهَ قَالَ: إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدِي بِحَبِيبَتَيْهِ فَصَبَرَ، عَوَّضْتُهُ مِنْهُمَا الجَنَّةَ " يُرِيدُ: عَيْنَيْهِ، تَابَعَهُ أَشْعَثُ بْنُ جَابِرٍ، وَأَبُو ظِلاَلٍ هِلاَلٌ، عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ : হযরত আনাস ইবনে মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ বলেছেন, আমি যদি আমার কোনো বান্দাকে তার অতি প্রিয় দুটি জিনিসের ব্যাপারে পরীক্ষায় ফেলি, আর সে তার ওপর ধৈর্য ধারণ করে, তাহলে আমি তাকে সে দুটির বিনিময়ে দান করবো জান্নাত। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, দুটি প্রিয় জিনিস বলে তার উদ্দেশ্য হল সে ব্যক্তির চক্ষুদ্বয়। অনুরূপ বর্ণনা করেছেন আশআস ইবনে জাবির ও আবূ যিলাল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর সূত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। সহীহ বুখারী-৭/১১৬, হাদীস-৫৬৫৩।

❁ অন্যত্র হিজড়া সন্তান জন্মের বিষয় নিয়েও পাওয়া যায় একটি অনাস্থাশীল বর্ণনা, আলোচিত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এখানে তা উল্লেখ করে দেয়া হলো-

الكامل في ضعفاء الرجال (9/ 58)
وَرَوَى يَحْيى بْنُ أَيُّوبَ، عَن عُبَيد اللَّهِ بْنِ زُحَرَ بِهَذَا الإِسْنَادِ نُسْخَةَ أَحَادِيثَ صَالِحَةً رَوَاهَا عنه بن أَبِي مَرْيَمَ، وَابْنُ عُفَيْرٍ وَغَيْرُهُمَا. حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ بْنِ الفرج الغافقي، حَدَّثَنا أَحْمَدُ بْنُ عَبد الرَّحْمَنِ بْنِ وَهْبٍ، حَدَّثَنا عَمِّي، حَدَّثني يَحْيى بْن أيوب، عنِ ابْن جُرَيج، عَن عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وسَلَّم قَال: الْمُؤْنِثُونَ أَوْلادُ الْجِنِّ قِيلَ لابْنِ عَبَّاسٍ يَا أَبَا الْفَضْلِ كَيْفَ ذَلِكَ قَالَ نَهَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَنْ يَأْتِيَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ وَهِيَ حَائِضٌ فَإِذَا أَتَاهَا سَبَقَهُ الشَّيْطَانُ إليها فحملت منه فاتت بالتونث.
❐ অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "হিজড়ারা জ্বীনদের সন্তান"। কোন এক ব্যক্তি আব্বাস (রাঃ) কে প্রশ্ন করেছিলেন, "এটা কেমন করে হতে পারে?" জবাবে তিনি বলেছিলেন “আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) নিষেধ করেছেন যে, মানুষ যেন তার স্ত্রীর মাসিক স্রাব চলাকালীন যৌন সংগম না করেসুতরাং কোন মহিলার সঙ্গে তার ঋতুস্রাব চলাকালে যৌন সঙ্গম করা হলে, সেই সময় শয়তান তার আগে থাকেঅর্থাৎ শয়তান ওই পুরুষের আগে থেকে যৌন সংগম করতে থাকে এবং সেই শয়তান দ্বারা ওই মহিলা গর্ববতী হয় ও হিজড়া সন্তান প্রসব করে। (মানুষ ও জ্বীন এর যৌথ মিলনজাত সন্তানকে ইসলামে বলা হয় “খুন্নাস”)। (অর্থাৎমহিলাটি ওই পুরুষ ও শয়তান এর মাধ্যমে গর্ববতী হয় ও হিজড়া সন্তান প্রসব করে)। আল কামেল ফি যুয়াফায়ীর রিজাল-৯/৫৮।

✏ হাদীস ও জারাহ তাদীল শাস্ত্রের বিখ্যাত ইমামগণ যেমন ইবনুল আদী ইবনুল কিসরানী ইবনুল কাত্তান হাফেজ যাহাবী (রহ.) সহ ইত্যাদি ইমামগণ উক্ত বর্ণনাটিকে منكر ও غير محفوظة অর্থাৎ এটি অস্বীকৃত ও হাদীসের ভাষ্য নয় বলে মন্তব্য করেছে, আর এধরনের অনাস্থাশীল হওয়ার একটি কারণ হলো সূত্রের মাঝে ইয়াহয়া ইবনে আইয়ুব নামক বর্ণনাকারী)। আল কামেল ফি যুয়াফায়ীর রিজাল-৯/৫৮, জাখিরাতুল হুফফাজ-৪/২৪৪৬, আহকামুন নজর-৩৪৪, মিযানুল ইতেদাল-৪/৩৬৩।

✔ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইহুদীদের ষড়যন্ত্র ও বিভ্রান্তকর তথ্য থেকে বেঁচে থেকে, সঠিক তথ্য জানার তাওফীক দান করুন। আমীন!

✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন