বৃহস্পতিবার, ২৮ মে, ২০১৫

৬ষ্ঠ পর্ব : শবে বরাতের বাস্তবতা * সালাফীদের মাথা ব্যথা দলীল দ্বারা প্রমাণিত* কেন তারা মিথ্যায় রত?

৬ষ্ঠ পর্ব : শবে বরাতের বাস্তবতা * সালাফীদের মাথা ব্যথা
দলীল দ্বারা প্রমাণিত* কেন তারা মিথ্যায় রত?
✏ ০৮. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) এর হাদীস-(উক্ত রজনীতে দু'আ ফেরত দেয়া হয় না)
مصنف عبد الرزاق الصنعاني (4/ 317)
7927 - قَالَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ: وَأَخْبَرَنِي مَنْ، سَمِعَ الْبَيْلَمَانِيَّ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: " خَمْسُ لَيَالٍ لَا تُرَدُّ فِيهِنَّ الدُّعَاءَ: لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ، وَأَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ، وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، وَلَيْلَتَيِ الْعِيدَيْنِ "
❏ অর্থ : আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতগুলোতে দু'আ ফেরত দেয়া হয় না। জুমআর রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের পনের তারিখ এর রাত এবং দু'ঈদের রাত। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৪/৩১৭, হাদীস-৭৯২৭, শুয়াবুল ঈমান-৫/২৮৮, হাদীস-৩৪৪০।
░▒▓█►হাদীসটির মান : 
হাদীসটি যয়ীফ (حديث ضعيف) আর ফাযায়েলের ক্ষেত্রে এধরনের হাদীস গ্রহণযোগ্য।

░▒▓█►রাবী পর্যালোচনা :
হাফিয আব্দুর রাজ্জাক উক্ত হাদীসটি একজন অজ্ঞাত উস্তাদ থেকে তিনি ইবনুল বীলমানী থেকে আর তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন।
১। তাঁর সরাসরি উস্তাদ অজ্ঞাত, অপরিচিত।
২। মুহাম্মদ ইবনু আবদির রহমান আল বীলমানী।
তাঁর সম্পর্কে ইমাম দারাকুতনী বলেন : তিনি একজন দুর্বল রাবী।
হাফিয যাহাবী বলেন : মুহাদ্দিসগণ তাঁকে যঈফ বলেছেন।
হাফিয ইবনু হাজার বলেন : তিনি সপ্তম স্তরের একজন যঈফ রাবী। ( দেখুনঃ تقريب التهذيب খ-২, পৃ-১০৩ )
৩। আব্দুর রহমান আল বীলমানী।
তার সম্পর্কে ইমাম দারাকুতনী বলেন :ضعيف لاتقوم به حجة তিনি একজন দুর্বল রাবী। তাঁর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা যাবে না। (ফাযায়েলের ক্ষেত্রে আমল করা যাবে) ( তাক্বরীবুত তাহযীবঃ খ-১, পৃ-৫৬৩ )
ইমাম আবু হাতিম বলেন : তিনি " لين " অনির্ভরযোগ্য রাবী।
হাফিয ইবনু হাজার বলেন : তিনি তৃতীয় স্তরের একজন দুর্বল রাবী।
সুতরাং সনদের দিক দিয়ে হাদীসটি দুর্বল হলেও ফাযায়েলের ক্ষেত্রে এরূপ হাদীস গ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই।

❀❖উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনাটি আরো একটি বর্ণনা দ্বারা মজবুত বা শক্তিশালী হয়ে উঠে আর তা হলো ইমাম শাফী (রহ.) তার রচিত ‘‘কিতাবুল উম্ম’’ এর মাঝে বলেন-
الأم للشافعي (1/ 264)
(قَالَ الشَّافِعِيُّ) : وَبَلَغَنَا أَنَّهُ كَانَ يُقَالُ: إنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِي خَمْسِ لَيَالٍ فِي لَيْلَةِ الْجُمُعَةِ، وَلَيْلَةِ الْأَضْحَى، وَلَيْلَةِ الْفِطْرِ، وَأَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ، وَلَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ`` (قَالَ الشَّافِعِيُّ) : وَأَنَا أَسْتَحِبُّ كُلَّ مَا حُكِيَتْ فِي هَذِهِ اللَّيَالِيِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَكُونَ فَرْضًا.
অর্থ : হযরত ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন : আমাদের কাছে হাদীস পৌঁছেছে যে, পাঁচটি রাতে দু’আ (বেশী বেশী) কবুল করা হয়। (১) জুমআর রাত (২) ঈদুল আযহার রাত (৩) ঈদুল ফিতরের রাত (৪) রজব মাসের প্রথম রাত এবং (৫) শা’বানের ১৫তম রাত তথা শবে বরাত।
          এই বর্ণনার পর ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন : এসব রাতে দুআ কবুল হওয়া সংক্রান্ত যা কিছু উল্লেখ করা হলো তার সবগুলোই আমি মুস্তাহাব মনে করি। ফরয নয়। কিতাবুল ‍উম্ম-১/২৬৪, আস সুনাসুল কুবরা-৩/৩১৯, মা’রিফাতুস সুনানি ওয়াল আসার-৫/১১৮-১১৯ হাদীস-৭০২৮-৭০৩১।

✏ এছাড়াও উক্ত পাঁচ রজনী সম্পর্কে হযরত মু‘য়ায ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য একটি হাদীসেও এসেছে-
الترغيب والترهيب للمنذري (2/ 98)
وَرُوِيَ عَن معَاذ بن جبل رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من أَحْيَا اللَّيَالِي الْخمس وَجَبت لَهُ الْجنَّة لَيْلَة التَّرويَة وَلَيْلَة عَرَفَة وَلَيْلَة النَّحْر وَلَيْلَة الْفطر وَلَيْلَة النّصْف من شعْبَان
رَوَاهُ الْأَصْبَهَانِيّ
❐ অর্থ : হযরত মু’য়ায ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। এক, তারাবিয়ার রাত (জিলহজ্জ মাসের আট তারিখের রাত) । দুই. আরাফার রাত। তিন. জিলহজ্জ মাসের দশ তারিখ তথা কুরবানীর ঈদের রাত। চার. ঈদুল ফিতরের রাত। পাঁচ. শা’বান মাসের মধ্য রাত তথা বরাতের রাত। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব-২/৯৮, ইলাউস সুনান-৭/৩৫-৩৬, আসফাহানীও তার গ্রন্থে রচনা করেছন। উক্ত হাদীসটিও যয়ীফ যা ফাযায়েলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য।

░▒▓█►ছয়টি পর্ব মিলে আমরা এ রাত্র সম্পর্কে যা কিছু পেলাম  ◄█▓▒
(১) সহীহ, হাসান ও যয়ীফ হাদীস দ্বারা এ রাত্র প্রমাণিত। যা কোন ভাবেই অস্বীকার করা সম্ভব নয়
(২) শবে বরাতে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা
(৩) সূর্যাস্ত থেকে সকাল পর্যন্ত পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা
(৪) শবে বরাতে রাত জাগরণের নির্দেশ
(৫) শবে বরাতে রসূলের দীর্ঘ সিজদায় নফল নামায আদায় ( সালাতুত তাসবীহ ও পড়া যায় যা কোন সময় বা দিনের সাথে সম্পর্ক না)।
(৬) শবে বরাতেও যাদের ক্ষমা করা হয় না তাদের আলোচনা
(৭) শবে বরাতে দু'আ ও তওবার মাধ্যমে গুনাহের মার্জনা
(৮) মাহে শা'বান এবং শাবানের পঞ্চদশে রোযা রাখার গুরুত্ব
(৯) অগণিত মুসলমানকে ক্ষমা করা হয় এ রাতে
(১০) মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে এসে মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সামাধান নিয়ে ডাকা
(১১) দোয়া কবুল হওয়ার ঘোষনা
(১২) শবে বরাতে নবীজীর (সা.) কবরস্থান গমন :

❁❀কবরস্থানে গমণ প্রসঙ্গে আয়শা (রা.) এর হাদীসের  ব্যাখ্যা :
হযরত শাইখুল হিন্দ আল্লামা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী (রহ.) কর্তৃক একটি অতি মূল্যবান ফিকহী উসূল বর্ণিত আছে যা নিম্নরূপ :
" মূলকথা হলো রসূল (সা.) এর কৃতকর্ম দুই ধরণের হয়ে থাকে।
১। যা রসূল (সা.) রীতিমত করতেন বা অধিকপরিমাণে করতেন অথবা তা পালনকরার নির্দেশ দিয়েছেন
২। কিছু কাজ আছে যা রসূল (সা.) হঠাৎ কখনো কখনো করেছেন বলে প্রমাণিত, কিন্তু নিয়মিত বিরামহীন করেন নি বা অন্যদেরকে তা পালন করার প্রতি উৎসাহিত করার প্রমাণ নেই। কাজেই এ দুই প্রকারের প্রত্যেকটিকে তার যথাযথ স্থানেই রাখা বাঞ্চনীয়।
প্রথম প্রকারের উপর গুরুত্ব সহকারে নিয়মিত পালন করা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারের আমলকে যথাস্থানে রাখার উপায় হলো মাঝে-মধ্যে তা করে নেয়া যেমন রসূল (সা.) করেছিলেন। এটাকে নিয়মিত রুটিন বানিয়ে নেয়া উচিত নয়। "
উক্ত নীতিমালার আলোকে হযরতুল আল্লাম মুফতী তাকী উছমানী (দা. বা.) বলেন যে, শাইখুল হিন্দের উপরোক্ত নীতিমালাকে আমার সম্মানিত পিতা হযরত মুফতী শফী (রহ.) বহু মাসআলার মধ্যে বাস্তবায়ন করেছেন। 
তার মধ্যে একটি হলো, শবে বরাতে কবর যিয়ারত। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়শা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সা.) বাকীতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করেছেন, তাই সাধারণতঃ ধারণা করা হয় প্রত্যেক শবে বরাতে কবরস্থান যিয়ারত সুন্নাত। কিন্তু আমার পিতার বক্তব্য ছিল যে, প্রতি শবে বরাতে নিয়মিত কবরস্থানে ছুটে যাওয়া সুন্নাত নয়। যদিও জায়েয। তবে মাঝে মধ্যে কোন কোন শবে বরাতে কবর যিয়ারতে চলে যাওয়া এটা সুন্নাতের পর্যায়ভুক্ত। কেননা রসূল (সা.) তাঁর জীবনে একবারই কবর যিয়ারতে গিয়েছিলেন শবে বরাতে, (নিয়মিত) যাওয়া রসূল (সা.) ও কোন সাহাবী থেকে প্রমাণিত নয়। এটাই উল্লেখিত হাদীসে আয়শার সঠিক ব্যাখ্যা বলে মনে হয়।

✪✿ বি. দ্র. এই পর্যন্ত অল্প কয়েকটি হাদীস নিয়ে আলোচনা করা হলো। এছাড়াও এ বিষয়ে আরো অনেক হাদীস রয়েছে সময় সংক্ষিপ্ততার কারণে উল্লেখ করা হয় নি কিন্তু আমার পোষ্টগুলো পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ তাতে সমস্ত হাদীসগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। 
এই মর্মে আরো দুটি পর্ব বাকী রয়েছে সব মিলিয়ে আট পর্বে শেষ করা হবে। তার মধ্য থেকে এক পর্বে আলোচনা হবে কোন কোন ইমাম এ রাত্র ও তার ফাযায়েলের প্রবক্তা (বিষেশ ভাবে আহলে হাদীস/সালাফী ভাইদের ইমামদের কথাও উল্লেখ করা হবে। আর অন্য পর্বে থাকবে শবে বরাতে যে সব কুপ্রথা ও বাঞ্চনীয় কাজ রয়েছে সেগুলো বিষয়ে।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন

✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন