শুক্রবার, ২৯ মে, ২০১৫

৮ম পর্ব (শেষ পর্ব) : শবে বরাতের বাস্তবতা * সালাফীদের মাথা ব্যথা দলীল দ্বারা প্রমাণিত* কেন তারা মিথ্যায় রত?

৮ম পর্ব (শেষ পর্ব) : শবে বরাতের বাস্তবতা * সালাফীদের মাথা ব্যথা
দলীল দ্বারা প্রমাণিত* কেন তারা মিথ্যায় রত?
❖ এ পর্বে  আলোচনা হবে, যে সব কাজ শবে বরাতে নিষিদ্ধ, বেদআত ও এ রাত্র নিয়ে কিছু জাল হাদীসের সমাবেশ-


✏ ০১. শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায শরীয়তে নেই সব সময় যেভাবে নামায পড়া হয় সেভাবেই পড়বে অর্থাৎ দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় আদায় করবে এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়বে। এ বিষয়ে বিভিন্ন বই পুস্তিকায় বিভিন্ন ধরনের জাল হাদীস পাওয়া যায়। যেমন-

✏ الموضوعات لابن الجوزي (2/ 128)
وَأما طَرِيق ابْن عمر فأنبأنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدٍ الأَزَجِيُّ أَنْبَأَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ أَنْبَأَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَابَارٍ الْمُذَكِّرُ أَنْبَأَنَا أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ زيرك أَنبأَنَا أَبُو سهل عبيد الله بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زِيرَكَ أَنْبَأَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي زَكَرِيَّا الْفَقِيه حَدثنَا إِبْرَاهِيم ابْن مُحَمَّدٍ الدَّرَبَنْدِيُّ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ أَصْرَمَ الْمُزَنِيُّ حَدَّثَنَا أَبُو إِبْرَاهِيم الترجمانى حَدثنَا صَالح الشمامى عَن عبد الله بْنِ ضِرَارٍ عَنْ يَزِيدَ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ مُحَمَّدِ بْنِ مَرْوَانَ عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ قَرَأَ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ أَلْفَ مَرَّةٍ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ فِي مِائَةِ رَكْعَةٍ، لَمْ يَخْرُجْ مِنَ الدُّنْيَا
حَتَّى يَبَعَثَ اللَّهُ إِلَيْهِ فِي مَنَامِهِ مِائَةَ مَلَكٍ يُلَبُّونَ يُبَشِّرُونَهُ بِالْجَنَّةِ وَثَلاثُونَ يُؤَمِّنُونَهُ مِنَ النَّارِ وَثَلاثُونَ يَعْصِمُونَهُ مِنْ أَنْ يُخْطِئَ وَعِشْرُونَ يَكِيدُونَ مَنْ عَادَاهُ ".

✏ الموضوعات لابن الجوزي (2/ 128)
وَأما طَرِيق أَبِي جَعْفَر الباقر: أَنْبَأَنَا مُحَمَّدُ بْنُ نَاصِرٍ أَنْبَأَنَا أَبُو عَلِيِّ بْنُ الْبَنَّا أَنْبَأَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الْحُسَيْنُ بْنُ عُمَرَ الْعَلافُ حَدَّثَنَا أَبُو الْقَاسِمِ الْفَامِيُّ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ بُنْدَارٍ البَرْدَعِيُّ حَدَّثَنَا أَبُو يُوسُفَ يَعْقُوبُ بن عبد الرحمن حَدثنَا مُحَمَّد بن عبيد الله قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي يَقُولُ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَاصِمٍ عَنْ عَمْرِو بْنِ مِقْدَامٍ عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ قَرَأَ لَيْلَةَ النِّصْفِ من شعْبَان أَلْفَ مَرَّةٍ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ عَشْرَ مَرَّاتٍ، لَمْ يَمُتْ حَتَّى يَبْعَثَ اللَّهُ إِلَيْهِ مِائَةَ مَلَكٍ ثَلاثُونَ يُبَشِّرُونَهُ بِالْجَنَّةِ وَثَلاثُونَ يُؤَمِّنُونَهُ مِنَ النَّارِ وَثَلاثُونَ يُقَوِّمُونَهُ أَنْ يُخْطِئَ وَعَشْرُ أَمْلاكٍ يَكْتُبُونَ أَعْدَاهُ ".
هَذَا حَدِيث لَا نشك أَنَّهُ مَوْضُوع،

✏ الموضوعات لابن الجوزي (2/ 129)
صَلَاة ثَانِيَة أَنْبَأَنَا مُحَمَّدُ بْنُ نَاصِرٍ قَالَ أَنْبَأَنَا أَبُو عَلِيِّ بْنُ الْبَنَّا قَالَ أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَلِيٍّ الْكَاتِبُ قَالَ أَخْبَرَنَا أَبُو سَهْلٍ عَبْدُ الصَّمَدِ بْنُ مُحَمَّد الْعنطرِيُّ حَدَّثَنَا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ الْيُونَانِيُّ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عبد الله بْنُ دَاوُدَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حبهان حَدثنَا عمر بن عبد الرحيم حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ وَهْبِ بْنِ عَطِيَّةَ الدِّمَشْقِيُّ عَنْ بَقِيَّةَ بْنِ الْوَلِيدِ عَنْ لَيْثِ بْنِ أَبِي سُلَيْمٍ عَنِ الْقَعْقَاعِ بْنِ مِسْوَرٍ الشَّيْبَانِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " مَنْ صَلَّى لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً يَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ثَلاثِينَ مَرَّةً، لَمْ يَخْرُجْ حَتَّى يَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيَشْفَعُ فِي عَشَرَةٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ كُلُّهُمْ وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ ".
هَذَا مَوْضُوع أَيْضا وَفِيهِ جمَاعَة مَجْهُولُونَ وَقبل أَن يصل إِلَى بَقِيَّة وَلَيْث وهما ضعفاء فالبلاء مِمَّن قبلهم.

✏ الموضوعات لابن الجوزي (2/ 129)
صَلَاة ثَالِثَة أَنبأَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدٍ الأَزَجِيُّ قَالَ أَنْبَأَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ أَنْبَأَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ عَلِيُّ بْنُ الْحَسَنِ بْنِ مُحَمَّدٍ الْكَرْجِيُّ حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الْحُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ ابْن مُحَمَّدٍ الْخَطِيبُ أَنْبَأَنَا الْحَاكِمُ أَبُو الْقَاسِم عبد الله بن أَحْمد الحسكاني حَدَّثَنى أَبُو الْقَاسِمِ عَبْدُ الْخَالِقِ بْنُ عَلِيٍّ الْمُؤَذِّنُ حَدَّثَنَا أَبُو جَعْفَرٍ مُحَمَّدُ بْنُ بِسْطَامَ الْقُومَسِيُّ حَدَّثَنَا أَبُو جَعْفَرٍ أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ جَابِرٍ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ الْكَرِيمِ حَدَّثَنَا خَالِدٌ الْحِمْصِيُّ عَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي سَعِيدِ بْنِ كَثِيرٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُهَاجِرِ عَنِ الْحَكَمِ بْنِ عُتَيْبَةَ عَنْ إِبْرَاهِيمَ قَالَ قَالَ عَلِيُّ بن أبي طَالب رَضِي الله عَنْهُ: " رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ النِّصْف مِنْ شَعْبَانَ قَامَ فَصَلَّى أَرْبَعَ عَشْرَةَ رَكْعَةً ثُمَّ جَلَسَ بَعْدَ الْفَرَاغِ فَقَرَأَ بِأُمِّ الْقُرْآنِ أَرْبَعَ عشرَة مرّة وَقل هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ أَرْبَعَ عَشْرَةَ مرّة وَقل أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ أَرْبَعَ عَشْرَةَ مرّة وَقل أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ أَرْبَعَ عَشْرَةَ مرّة وَآيَة الْكُرْسِيّ مرّة وَلَقَد جَاءَكُم رَسُول الآيَةَ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ صَلاتِهِ سَأَلْتُ عَمَّا رَأَيْتُ مِنْ صَنِيعِهِ فَقَالَ: مَنْ صَنَعَ مِثْلَ الَّذِي رَأَيْتَ كَانَ لَهُ كَعِشْرِينَ حِجَّةً مَبْرُورَةً وَكَصِيَامِ عِشْرِينَ سَنَةً مَقْبُولَةً، فَإِنْ أَصْبَحَ فِي ذَلِكَ الْيَوْمِ صَائِمًا كَانَ كَصِيَامِ سِتِّينَ سَنَةٍ مَاضِيَةٍ وَسَنَةٍ مُسْتَقَبَلَةٍ ".
وَهَذَا مَوْضُوع أَيْضا وَإِسْنَاده مظلم وَكَانَ وَاضعه يكْتب من الْأَسْمَاء مَا وَقع لَهُ
وَيذكر قوما مَا يعْرفُونَ، وَفِي الْإِسْنَاد مُحَمَّد بْن مهَاجر قَالَ ابْنُ حَنْبَل: يضع الحَدِيث.

❀ সারসংক্ষেপ : এ রজনীতে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানূন অনুসারে নামায পড়া যেমন এত রাকাত হতে হবে, প্রতি রাকাতে সূরা ইখলাস, আয়তুল ‍কুরসী, ফাতেহা, ফালাক, নাস, সূরা তাওবার শেষ আয়াত এত এত বার পড়তে হবে, তাহলে জান্নাতে এমন এমন ব্যবস্থা হবে ও  মৃত্যুর পূর্বে এত এত জন ফেরেশতা তার সন্মানে এগিয়ে আসবে ইত্যাদি ইত্যাদি এগুলো জাল হাদীস ঠিক নয়। এ সম্পর্কে চারটি জাল হাদীস উপরে বর্ণনা করা হলে। (১) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এর হাদীস (২) জাফর আল বাকের (রা.) এর হাদীস (৩) আবূ হুরায়রা (রা.) এর হাদীস (৪) আলী ইবনে আবী তালেব (রা.) এর হাদীস। দেখুন আল মাওজুয়াত লি ইবনুল জাওযী-২/১২৮, ১২৯, আল লায়ালিল মাসনূয়া লিস সুয়ূতী-২/৪৯, তানযীহুশ শরীয়া লি ইবনু আররাক-২/৯২, আল আসরারুল মারফূয়া-৪১৪, আল আসারুল মারফূয়া লি আব্দুল হাই লখনবী-৭০, আল লুলুল মারসূস-১০৯ ইত্যাদি।

✏ ০২. আহ্বান ও ঘোষণা দিয়ে (এ রাতকে লক্ষ করে)  সকলেকে মসজিদের দিকে নিয়ে আশা-
বিশুদ্ধ মতানুসারে  এ রাত্রের আমলগুলো একাকী করণীয়। ফরয নামায তো অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না (তবে যদি কোনো আহ্বান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক মসজিদে এসে যায় তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না)। ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম- ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২১৯।

✏ ০৩. মসজিদ ও দোকানপাট আলোকসজ্জা করা :
এ রাতে বিভিন্ন বাসা-বাড়ী ও মসজিদ ব্যয়বহুল আলোকসজ্জা করা হয়। এটা বিধর্মী ও হিন্দুদের দেওয়ালী উৎসব হতে গৃহিত। এ ধরনের কর্মকান্ড কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে নাজায়েয। আর হাদীস শরীফে বলা হয়েছে-
سنن أبي داود (4/ 44)
4031 - حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ ثَابِتٍ، حَدَّثَنَا حَسَّانُ بْنُ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي مُنِيبٍ الْجُرَشِيِّ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ»
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে কোন জাতি বা দলের সাথে সমঞ্জস্যতা রক্ষা করে চলে সে সেই জাতিরই অন্তর্ভুক্ত। (নাউযুবিল্লাহ) আবূ দাউদ-৪/৪৪, হাদীস-৪০৩১, হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ।
   এ ব্যাপারে হযরত আলী ইবনে ইবরাহীম (রহ.) বলেন : এ রাতে অধিক আলোকসজ্জা করার বিষয়টি ‘‘বারামেকাহ’’ নামীয় একটি সম্প্রদায় থেকে আরম্ভ হয়েছে। এরা বাস্তবে অগ্নিপূজারী ছিল। ইসলাম গ্রহণের পর তারা এ প্রথাগুলো ইসলামে প্রবেশ করায়, যাতে তারা মুসলমানদের সাথে নামায পড়তে গিয়ে আগুনকে সেজদা করতে পারে। এরপর হিজরী অষ্টম শতাব্দীতে তাদের প্রকৃত হেদায়েত প্রাপ্ত ইমামগণ জোর চেষ্টা-তদবীর চালিয়ে মিশর ও শাম দেশ হতে এ প্রথা উঠিয়ে দেয়। খুৎবাতুল আহকাম লি থানভী (রহ.)-৯২, মা সাবাতা বিস সুন্নাহ-৩৬৩।

✏ ০৪. আতশবাজি করা : 
এ আতশবাজী শুধু গুনাহের কাজই নয়, বরং এর দুনিয়াবী কুফল আর আসারতাও আমাদের চোখের সামনে বিদ্যমান। যেমন (১) এতে নিজের সম্পদ অযথা ধ্বংস ও অপচয় হয়। তাছাড়াও একাজ দুনিয়াতেও ঘৃণিত হওয়ার পাশাপাশি সর্ব প্রকার ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কুরআনে কারীমে এ ধরনের লোককে শয়তানের ভাই বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (২) এর ফলে অনেক সময় নিজের সন্তান সন্ততি ও পাড়া প্রতিবেশীর জীবন হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়ে। (৩) শিশুদের হাতে এই আতশবাজীর জন্য টাকা পয়সা দেয়া হয়। এটা বাল্যকাল থেকেই তাদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতা ও নাফরমানীর শিক্ষা দেয় এবং অনর্থক রসমের প্রতি অভ্যস্ত করে তোলে (৪) শবে বরাতে বিধাতার রহমত প্রতিটি বান্দাহকে তাওবা ও ইস্তিগফারের প্রতি আহ্বান করে। ঠিক সে মুহূর্তে এসব গর্হিত কাজে লিপ্ত থাকা কি তার নি’আমতের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন নয়? (৫) এছাড়াও আলোকসজ্জা  ও আতশবাজী হল হিন্দু জাতির দিওয়ালী প্রথার একট প্রতিচ্ছবি মাত্র। একজন মু’মিনের ঈমানী চেতনা ও জযবা কখনই তা সমর্থন করতে পারে না। আস সারাহা-১০৪, ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম- ২/৬৩২; আলমাদখাল লি ইবনিল হাজ্ব ১/২৯৯ ও ১/৩০৬, ৩০৭; তানকীহুল হামীদিয়াহ ২/৩৫৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/২৮৯।


✏ ০৫. হালুয়া প্রথা : 
এই হালুয়ার প্রথা চালু করার মানসে কিছু মনগড়া রেওয়াতও (জাল হাদীস) বের করা হয়েছে। কেউ বলে, রাসূল (সা.) এর যখন দাঁত মোবারক শহীদ হয়েছিল তখন তিনি হালুয়া ভক্ষণ করে ছিলেন। শবে বরাতের হালুয়া তাই স্মরণে তৈরী করা হয়। কেউ বলে হযরত হামযা (রা.) এরই দিনে শাহাদাত বরণ করে ছিলেন। তাই তার ফাতেহা পালনের লক্ষ্যে হালুয়া বানানো হয়।
   প্রথমত : এ ধরণাটাই ভুল যে, হুজুর (সা.) এর দান্দান মোবারক এই দিনে শহীদ হয়েছে। দ্বিতীয়ত : এই ধরণাও ভুল যে হযরত হামযা (রা.) এই দিনে শাহাদাত বরণ করেছেন। কারণ উভয় ঘটনাই শাওয়ালে মাসে সংঘটিত হয়েছে। আর শবে বরাত আসে তার অনেক আগে শা’বান মাসে। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, ঐ দিনেই এ ঘটনাগুলো ঘটেছে তথাপিও শরীয়তের নির্দেশ ছাড়া কোন প্রকার স্মারক তৈরী করা ও তাকে দ্বীনের কাজ মনে করে আমল করা বেদআত ও অবৈধ। আস সারাহা-১০৫, ১০৪।

❀❖ এগুলো কিছু ভুল রেওয়াজ ‍উল্লেখ করা হলো যা পরিহার করা আবশ্যক। এছাড়াও আরো অনেক বেদআত ও ভুল রেওয়াজ রয়েছে, আমরা সকলেই এগুলো থেকে বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো ও কোথাও এধরনের রেওয়াজগুলো দেখলে তা প্রতিরোধের চেষ্টা করবো। মহান আল্লাহ আমাদেরকে বেদআত মুক্ত জীবন গঠন করার তাওফীক দান করুন। আমীন

 ░▒▓█► আটটি পর্ব মিলে আমরা এ রাত্র সম্পর্কে যা কিছু পেলাম  ◄█▓▒
(১) সহীহ, হাসান ও যয়ীফ হাদীস দ্বারা এ রাত্র প্রমাণিত। যা কোন ভাবেই অস্বীকার করা সম্ভব নয়
(২) শবে বরাতে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা
(৩) সূর্যাস্ত থেকে সকাল পর্যন্ত পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা
(৪) শবে বরাতে রাত জাগরণের নির্দেশ
(৫) শবে বরাতে রসূলের দীর্ঘ সিজদায় নফল নামায আদায় ( সালাতুত তাসবীহ ও পড়া যায় যা কোন সময় বা দিনের সাথে সম্পর্ক না)।
(৬) শবে বরাতেও যাদের ক্ষমা করা হয় না তাদের আলোচনা
(৭) শবে বরাতে দু'আ ও তওবার মাধ্যমে গুনাহের মার্জনা
(৮) মাহে শা'বান এবং শাবানের পঞ্চদশে রোযা রাখার গুরুত্ব
(৯) অগণিত মুসলমানকে ক্ষমা করা হয় এ রাতে
(১০) মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে এসে মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সামাধান নিয়ে ডাকা
(১১) দোয়া কবুল হওয়ার ঘোষনা
(১২) শবে বরাতে নবীজীর (সা.) কবরস্থান গমন :
(১৩) যে সব কাজ শবে বরাতে নিষিদ্ধ, বেদআত ও এ রাত্র নিয়ে কিছু জাল হাদীসের সমাবেশ। 

░▒▓█►এ রাতে যারা সময় দিয়ে আমল করতে ব্যর্থ তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা◄█▓
সহীহ মুসলিম শরীফের বর্ণনা-
صحيح مسلم (1/ 454)
260 - (656) حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا الْمُغِيرَةُ بْنُ سَلَمَةَ الْمَخْزُومِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ وَهُوَ ابْنُ زِيَادٍ، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ حَكِيمٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي عَمْرَةَ، قَالَ: دَخَلَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ الْمَسْجِدَ بَعْدَ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ، فَقَعَدَ وَحْدَهُ، فَقَعَدْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ، يَا ابْنَ أَخِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ، وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ»
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবী আমরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হযরত ওসমান ইবনে আফফান (রা.) মাগরীবের পর মসজিদে প্রবেশ করে একাকী বসে রইলেন। আমিও তার সাথে গিয়ে বসলাম। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, হে ভাতিজা! আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি জামাতের সহিত এশার নামায আদায় করলো সে যাতে করে অর্ধ রজনী নামায অবস্থায় অতিবাহিত করলো। যে ফজর নামায জামাতের সহিত আদায় করলো সে যাতে করে সম্পূর্ণ রজনী নামায অবস্থায় অতিবাহিত করলো। সহীহ মুসলিম-১/৪৫৪, হাদীস-৬৫৬।
অতএব অন্য কোন ইবাদত না করতে পারলেও আপনি উক্ত রজনীতে এশা ও ফজর নামায জামাতে পড়ার চেষ্টা করুন। ইনশআল্লাহ আপনি সম্পূর্ণ সাওয়াব পেয়ে যাবেন।

✔ মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাহকীক এর সহীত সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন

ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন