মঙ্গলবার, ২৬ মে, ২০১৫

৩য় পর্ব : শবে বরাতের বাস্তবতা * সালাফীদের মাথা ব্যথা দলীল দ্বারা প্রমাণিত* কেন তারা মিথ্যায় রত?

৩য় পর্ব : শবে বরাতের বাস্তবতা * সালাফীদের মাথা ব্যথা
দলীল দ্বারা প্রমাণিত* কেন তারা মিথ্যায় রত?
❖ উল্লেখ্য যে, বর্তমানে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তার মাঝে চলে আসছে অনেক যয়ীফ হাদীস (যা ফাযায়েলেল ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর আসার আর আমাদের আহলে হাদীস ভাইগণ দুটিকেই নিজ সুবিধে ব্যতীত মানতে আগ্রহী নন। তাই এই পর্বে আলোচনা হবে দুইটি বিষয় নিয়ে এক. সাহবাগণ আমাদের অনুসরণীয় কেন? দুই. যয়ীফ হাদীস নিয়ে আলোচনা।
░▒▓█►০১.সাহবাগণ আমাদের অনুসরণীয় কেন?◄█▓▒
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর অনুসৃত আদর্শ এবং তাদের উক্তি ও আমল ইলমে হাদীসের কিছু নিয়মনীতি ও শর্তসাপেক্ষে সমস্ত জমহুরে উম্মত, চার মাযহাবের ইমাম ও বিশেষজ্ঞ মুজতাহিদ ইমামগণের নিকট অনুসরণীয়, শরীয়তের যাবতীয় ক্ষেত্রে প্রমাণযোগ্য। মু‘জামু মুসতালাহুল হাদীস, ড. মুহাম্মদ জিয়া আযমী-৫০৭। যফরুল আমানী-৩৩২। আল আজবীব-২২৫।
এ ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো, সাহাবাগণের উক্তি ও আমলগুলো পবিত্র কুরআন ও রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হওয়া। সাহাবাগণের এমন উক্তি ও আমলগুলো শরীয়তের দলীল হিসেবে গ্রহণ করার পক্ষে পবিত্র কুরআন ও রাসূল (সা.) এর হাদীসে অসংখ্য দলীল প্রমাণ রয়েছে।



░▒▓█►নিন্মে অতি সংক্ষেপে মাত্র কয়েকটি উপস্থাপন করা হলো : 

আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন : 
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
‘‘আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মাঝে পুরাতন, এবং তাদের যারা অনুসরণ করবে আল্লাহ পাক সে সব লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। এবং তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন বেহেশত, যার নীচ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরদিন। এটাই হলো মহান সফলতা। সূরা তাওবা-১০০।
(ক) সাহাবগণের প্রতি আল্লাহপাক সন্তুষ্ট হয়েছেন। তাই তাদের ব্যাপারে যারা নাক গলায় তাদের শিক্ষা দেয়া উচিত।
(খ) যারা সাহাবাগণকে অনুসরণ করছে তাদের প্রতিও আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করেছেন। 
    তাই স্বভাবিকভাবেই বুঝা যায় যে, সাহাবাগণকে অনুসরণ করা ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ বৈধ। এমনকি তা হবে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টিযোগ্য নেক আমল।
        এ ধরনের অসংখ্য আয়াত রয়েছে। পরিসর সংকীর্ণ হওয়ার কারণে একটিমাত্র আয়াত উদাহরণ স্বরূপ পেশ করা হলো।
       এ ভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : 
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ  
‘‘তোমাদের উপর আমার সুন্নাত (তরীকা-হাদীস) এবং সত্যের আলোকবর্তিকা হিদায়াতপ্রাপ্ত আমার সাহাবীগণের সুন্নাত আঁকড়ে ধরা ওয়াজিব। তিরমিযী শরীফ, কিতাবুল ইলম-৫/৪৩, হাদীস-২৬৭৬।
✏ অপর হাদীসে তিনি বলেন : 
وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلَّا مِلَّةً وَاحِدَةً»، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي»
‘‘আমার উম্মত ৭৩টি দলে বিভক্ত হবে, কেবল একটি দল ব্যতীত অপরাপর সবাই দোযখী হবে। (এতদ শ্রবণে) সাহাবাগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! মুক্তি প্রাপ্ত এই দলটির পরিচয় কি? তদুত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যারা আমার এবং আমার সাহাবাদের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তিরমিযী-৫/৪৩, হাদীস-২৬৪১।
    ❏ উল্লেখ্য যে, প্রথমোক্ত হাদীসটিতে নবীজী (সা.) তার তরীক্বা বা আদর্শের সাথে সাথে সাহাবাদের তরীক্বাকেও আঁকাড়ে ধরতে নির্দেশ করেছেন। এ ভাবে দ্বিতীয় হাদীসে তিনি তার তরীক্বায় প্রতিষ্ঠিতদেরকে যেভাবে মুক্তিপ্রাপ্ত দলে গণ্য করেছেন, সাহাবাদের তরীকা বা আদর্শে প্রতিষ্ঠিতদেরকেও মুক্তিপ্রাপ্ত দল হিসেবে গণ্য করেছেন।
    তাই উল্লেখিত হাদীস দু’টি এবং এ ধরণের আরো অসংখ্য হাদীসের আলোকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, সাহাবাগণের তরীকা বা আদর্শ তথা তাদরে উক্তি ও আমল আমাদের জন্য অবশ্যই অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়।


▒▓█►এখন দেখুন সাহবায়ে কিরাম (রা.) সম্বন্ধে কথিত আহলে হাদীসদের আক্বীদা◄█▓
উপরোল্লিখিত সংক্ষিপ্ত আলোচনার আলোকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, রাসূল (সা.) এর সম্মানিত সাহাবীগণের মূল্যবান বাণী ও তাদের অনুসৃত আদর্শ আমাদের জন্য পাথেয় এবং অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। আর এটিই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সর্বসম্মত আক্বীদা। পক্ষান্তরে লা-মাযহাবী বা সালাফীদের আক্বীদা হলো যে, সাহাবাদের কোনো বাণী তাদের অনুসৃত আদর্শ অনুসরণযোগ্য এবং অনুকরণ করা ধর্মহীনতা ও অন্ধ বিশ্বাসের নামান্তর।

    তাদের উক্ত আক্বীদার প্রমাণ স্বরূপ ভারতবর্ষে লা-মাযহাবীদের প্রধান মুখপাত্র নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খানের নিজ গ্রন্থ থেকে কয়েকটি উক্তি নিন্মে প্রদত্ত হল-
قول الصحابى لاتقوم به حجة وفهم الصحابى ليس بحجة ـ 
‘‘সাহাবাগণের (রা.) কথা দলীল স্বরূপ পেশ করা যাবে না এবং তাদের বুঝ নির্ভরযোগ্য নয়।’’ আর রওজাতুন নাদীয়াহ-১/১৪১, ১/১৫৪।

অন্য গ্রন্থে আরও লিখেন-
وفعل الصحابى لايصلح حجة ـ 
এবং সাহাবাগণের আমল দলীল হওয়ার উপযোগী নয়। আততাজ আল-মুক্বাল্লিদ-১৯২।

❏ লা-মাযহাবীদের সর্বাধিনায়ক সাইয়্যেদ নযীর হুসাইন বলেন-
زیر کہ قول صحابی حجت نیست ۔
সাহাবীদের কথা প্রমাণযোগ্য নয়। ফাতাওয়ায়ে নজীরিয়া-১/১৪০।

❏ লা-মাযহাবীদের আক্বীদা সাহাবায়ে কেরামের (রা.) আদর্শ অনুসরণের ব্যাপারে অনীহার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের কতিপয় আলেম ভ্রষ্ট শিয়াদের পদাষ্ক অনুসরণ করে সাহাবাদেরকে ফাসেক্বও বলেছে। লা-মাযহাবীদের বিশেষ মুখপাত্র নবাব ওয়াহিদুযযামান তার রচিত গ্রন্থে লিখেন-
إن من الصحابة من هو فاسق كالوليد ومثله يقال فى حق معاوية وعمر ومغيرة وسمرة ـ
সাহাবাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক ফাসেক্বও ছিল, যেমন-ওয়ালিদ, তেমনি ভাবে মুয়াবিয়া, উমর, মুগীরা ও সামুরা (রা.) প্রমুখ সম্বন্ধেও অনুরূপ বলা যেতে পারে। (!)। নুযুলুল আবরার-২/৯৪।
প্রিয় পাঠক : এখন আপনি নিজেই তাদের বিষয়ে ভেবে দেখুন যে তারা কেমন সহীহ হাদীসের অনুস্বারী ও ঈমান ওয়ালা।
░▒▓█►০২. যয়ীফ হাদীস নিয়ে আলোচনা◄█▓▒
❁❀ দুর্বল হাদীসের উপর আমল
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমরা অন্ততঃ এতটুকু বুঝতে পারলাম যে, সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বর্ণিত অনেক হাদীসগুলো দুর্বল মাত্র। মাওযূ ও জাল হাদীস নয়। এখন প্রশ্ন  দাঁড়াচ্ছে যে, এ ধরনের য’ঈফ বা দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কিরুপ? এ সকল হাদীস দ্বারা ইস্তেহবাব তথা কোন আমল মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য হয় কি না?
      বিষয়টি নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মধ্য মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয়। কারো নিকট দুর্বল হাদীস দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয় আর কারো নিকট হয় না।
তাই যাদের মতে এ সব দুর্বল হাদীস দ্বারা কোন আমল মুস্তাহাব বলে পরিগণিত হতে পারে না। তাদের মতে শুধু এই হাদীসটির আলোকে শবে বরাতে বিনিদ্র থেকে নফল নামায পড়া, তওবা ইস্তেগফার করা, দুআ করা ও পরবর্তী দিনে রোযা রাখা ইত্যাদি আমলসমুহ মুস্তাহাব হওয়াও প্রমাণিত হয় না। তবে ভিন্ন একটি দৃষ্টিকোন থেকে এ দিনের রোজা তাদের নিকটও সুন্নত বা মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য হবে। 
কেননা প্রথমত: শাবান মাসের স্বতন্ত্র ফযীলত একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। দ্বিতীয়ত: প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার বিশেষ ফযীলতের কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। দিন তিনটিকে পরিভাষায় আইয়্যামে বীয বলা হয়। তাই এই দৃষ্টিকোন থেকে রোযাটি তাদের নিকটেও সুন্নত এবং মুস্তাহাব বলে গন্য হবে। যদিও তা ১৫ই শাবানের বিশেষ বৈশিষ্ট্যর কারণে নয়। তাই তাদের মতে রোযাটি এই নির্দিষ্ট নিয়ত ছাড়াই রেখে দেয়া চাই।
পক্ষান্তরে যে সকল আলেম দুর্বল হাদীসকেও কোন আমল মুস্তাহাব হওয়ার প্রমাণ হিসেবে কার্যকর মনে করেন তাদের মধ্য মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম নববী রহ. মুহাক্কিক ইবনুল হুমাম রহ. আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী আল-হাইতামী রহ., ইমাম আব্দুল হাই লক্ষোনভী রহ. ও শামছুদ্দিন আসসাখাভী রহ. অন্যতম। তাছাড়া উম্মতে মুসলিমাও অদ্যবধি এর উপর আমল করে আসছে।
সুতরাং তাদের মতে শবে বরাতের উল্লেখিত সকল আমলই সুন্নত কিংবা মুস্তাহাব। পরবর্তী দিনের রোযাটিকে আইয়্যামে বীযের পাশাপাশি ১৫ ই শাবানের রোযা হিসেবেও সুন্নত বলা হবে।

❖ ইমাম নববী রহ. এর ভাষ্য :
বিজ্ঞ মুহাদ্দীসিন ও ফকীহগণের অভিমত হল, ফাযায়েল ও উৎসাহব্যঞ্জক কিংবা ভীতি প্রদর্শনমুলক কার্যাবলীর ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা জায়েয বরং মুস্তাহাব। তবে শর্ত হলো হাদীসটি যেন মওযু না হয়। (কিতাবুল আযকার লিন্নববী, পৃ:৭)

❖ মুহাক্কিক ইবনুল হুমাম রহ. বলেন :
য’ঈফ বা দুর্বল হাদীস দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়, মওযু হাদীসের দ্বারা হয় না। (ফাতহুল ক্বাদীর, খন্ড : ১, পৃ:৪৬৭)

❖ আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী আল হাইতামী রহ. বলেন
উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, ফাযায়েলে আমালের ক্ষেত্রে দুর্বল বা য’ঈফ হাদীসের উপর আমল করা জায়েয। কারণ, যদি বাস্তবেই হাদীসটি সহীহ হয়ে থাকে তবে তো এর উপর আমল করত: হাদীসটির পরিপুর্ন হক্ব আদায় করা হলো। পক্ষান্তরে যদি ধরে নেয়া হয় যে, হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়, তবে তো এর উপর আমল করার ফলে না কোন হারামকে হালাল করা হল, না হালালকে হারাম করা হল, না অন্যের কোন হক্ব নষ্ট করা হল। (ফাতহুল মুবীন লি ইবনে হাজার আল মাক্কী আল হাইতামী, পৃ:৩২)

❖ ইমাম আব্দুল হাই লক্ষোবী রহ. লিখেন :
যখন কোন আমলের ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদীস পাওয়া যায় এবং তাতে হারাম কিংবা মাকরুহের সম্ভাবনা না থাকে তবে ঐ হাদীসের উপর আমল করা জায়েয ও মুস্তাহাব। কারণ আমলটির ব্যাপারে এতটুকু নিশ্চয়তা আছে যে, তা নিষিদ্ধ নয়। বরং তাতে সওয়াবের আশা করব। কেননা এ ধরনের হাদীস জায়েয ও মুস্তাহাব আমলের গন্ডিতে বেষ্টিত। (অর্থাৎ উভয়টির যে কোন একটি অবিশ্যাম্ভাবী)। তাই সওয়াবের আশায় তার উপর আমল করাই বুদ্ধিমানের কাজ। (আল আজভিবাতুল ফাযিলাহ লিল আসইলাতিল আশারাতিলকামিলাহ : ৫৭)

❖ মুস্তাহাব প্রমাণে য’ঈফ হাদীসের গ্রহণযোগ্যতার উদাহরণ 
প্রথম উদাহরণ : ফিকহ শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থে পরিলক্ষিত হয় যে, আযান ধীরে ধীরে এবং ইক্বামত অপেক্ষাকৃত একটু তাড়াতাড়ি বলা মুস্তাহাব। এই মাসআলার উপর দলীল হিসেবে পেশ করা হয় হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) এর হাদীস, যা তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে। অথচ হাদীসটি দুর্বল ও য’ঈফ।

❖ ইমাম তিরমিযী রহ. স্বয়ং বলেছেন :
আমরা এক মাত্র আব্দুল মুন’ইম নামক রাভীর (বর্ণনাকারী) মাধ্যমেই হাদীসটি পেয়েছি। আর তিনি ছিলেন একজন মাজহুল (অজ্ঞাত) হাদীস বর্ণনাকারী। এ ছাড়া ইমাম দারাকুত্বনী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসও আব্দুল মুন’ইমকে য’ঈফ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
দ্বিতীয় উদাহরণ : বিভিন্ন ফিকহ গ্রন্থে অযুতে ঘাড় মাসাহ করা মুস্তাহাব লিখা হয়েছে। এর স্বপক্ষে দলিল পেশ করা হয়েছে ত্বালহা ইবনে মাসরাফ রহ. এর বর্ণিত একখানা হাদীস, যা ইমাম আবু দাউদ রহ. সহ আরো অনেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি ত্বালহা তার পিতা হতে এবং তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেনে। ইমাম আবু দাউদ রহ. সহ আরো অনেকেই এই হাদীসটিকে য’ঈফ বলেছেন।
ত্বালহা ইবনে মাসরাফ এবং তার পিতা ও দাদা সম্পর্কে ইবনে কাত্বান রহ. বলেন : 
ত্বালহা তার পিতা ও দাদা অপ্রসিদ্ধ ও অপরিচিত। (আল আজভিবাতুল ফাযিলাহ এর প্রান্ত টিকা, পৃ:৪৪-৪৬)
ইমাম আবু হানীফা, তার অনুসারীগণ ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বাল রহ. এর মতামত এর ব্যাপারে খুবই স্পষ্ট। আহকাম তথা শরীয়তের কোন বিধান প্রমাণের ক্ষেত্রে তারা দুর্বল হাদীসকেও দলীল হিসেবে গ্রহণ করেন। এবং এ ধরনের হাদীসকে কিয়াসের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তবে শর্ত হলো কোন সহীহ হাদীসের সাথে এ হাদীসটি সংঘর্ষপুর্ন না হতে হবে। (তাওযীহুল আফকার, খন্ড:১, পৃ:১৯৭-২১৪)
         বিষয়টি অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত যে, কিয়াস দ্বারা যদি কোন আমলের মুস্তাহাব হওয়া প্রমাণিত হতে পারে তবে দুর্বল হাদীস দ্বারাতো আরো উত্তম রুপেই তা হওয়া উচিত। ফিকহ শাস্ত্রের প্রায় প্রতিটি গ্রন্থেই নামাযের সুন্নত অধ্যায়ে ইশার নামাযের পূর্বে চার রাকাত নামায সুন্নত বা মুস্তাহাব হওয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। অথচ এর স্বপক্ষে কোন দুর্বল হাদীসের সন্ধানও পাওয়া যায় না। প্রকৃত অর্থে যোহরের চার রাকাত সুন্নাতের উপর কিয়াস করেই এ চার রাকাতকে মুস্তাহাব বলা হয়ে থাকে। (আল মাসসৃত লিল ইমাম আসসারাখাসী, খন্ড : ১, পৃ:১৫৭)

        সুতরাং যদি কিয়াস দ্বারা কোন আমলের মুস্তাহাব হওয়া প্রমাণিত হতে পারে তবে য’ঈফ হাদীস দ্বারা তো উত্তমরুপে হওয়া উচিত। উপরন্ত হানাফি ও মালেকি মাযহাবে দুর্বল হাদীস কিয়াসের উপর অগ্রগণ্য।

এ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন

ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন