শনিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫

জাতীয় পতাকাকে স্যালুট বা সম্মান প্রদর্শন করা বৈধ কি?

জাতীয় পতাকাকে স্যালুট বা সম্মান প্রদর্শন করা বৈধ কি?

আসসালামু আলাইকুম,
নামঃ মোঃ আশিক
থানাঃ ঘাটাইল, জেলাঃ টাংগাইল।
মোবাইলঃ ০১৭৬৫-৪৭০ ২৭০

আমার প্রশ্নঃ
      জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে যে স্যালুট প্রদান করা হয় তা ইসলামের দৃষ্টিতে যায়েজ কিনা?
যায়েজ থাকলেও দলীল সহকারে আর না থাকলেও দলীল সহকারে উত্তর দিবেন আশা করি।

      আমাদের এলাকায় এক স্কুলের শিক্ষক, জাতীয় পতাকার সামনে সম্মান পদর্শনের জন্য পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে, পতাকার দিকে তাকিয়ে স্যালুট প্রদানে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির দিক বিবেচনা করে অস্বীকার করাতে তার চাকুরী নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তাই দয়া করে এর ইসলামি সমাধান আশা করছি। স্কুল কমিটি তার কাছে দলীল চেয়েছে।

الجواب باسم ملهم الصدق والصواب

সমাধানঃ জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে স্যালুট/ সম্মান প্রদর্শন করা বৈধ নয়, এটি একটি বিদ‘আত ও পরিত্যাক্ত কাজ।

الدلائل على ما قلنا


উল্লেখিত উত্তরের দলীল সমূহঃ

 فتاوى اللجنة الدائمة - ১ (১/ ২৩৫)

فتوى رقم (২১২৩) :

س: هل يجوز الوقوف تعظيما لأي سلام وطني أو علم وطني؟

ج: لا يجوز للمسلم القيام إعظاما لأي علم وطني أو سلام وطني، بل هو من البدع المنكرة التي لم تكن في عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم، ولا في عهد خلفائه الراشدين رضي الله عنهم، وهي منافية لكمال التوحيد الواجب وإخلاص التعظيم لله وحده، وذريعة إلى الشرك، وفيها مشابهة للكفار وتقليد لهم في عاداتهم القبيحة ومجاراة لهم في غلوهم في رؤسائهم ومراسيمهم، وقد نهى النبي صلى الله عليه وسلم عن مشابهتهم أو التشبه بهم.

وبالله التوفيق. وصلى الله على نبينا محمد، وآله وصحبه وسلم.

বিখ্যাত ফাতওয়ার কিতাব ‘‘ফাতাওয়া আল লাজনাতুত দায়েমা’’ এর এক নং খন্ড ২৩৫ নং পৃষ্ঠায় ২১২৩ নং ফাতাওয়ার মাঝে উল্লেখ রয়েছে যে, জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রর্দশন করা বৈধ কি না?
তার উত্তরে বলা হয়েছে, কোন মুসলমানের জন্য কোন জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শনের লক্ষে দাঁড়ানো বৈধ নয়। বরং তা বেদআত ও পরিত্যাক্ত, কেননা তা রাসূল (সা.) বা খোলাফায়ে রাশেদীন এর যুগে ছিল না, আর এটি ঈমান ও মহান আল্লাহকে সম্মান প্রদর্শনের বিপরীত এবং শিরক এর মাঝে জড়ানোর একটি মাধ্যমও বটে, এবং তাতে রয়েছে ইউরোপীয় কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য ও তাদের নিন্দনীয় চরিত্রের অনুসরন...... আর রাসূল (সা.) তাদের অনুসরণ থেকে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছেন।
صحيح البخاري (১/ ১৬৬)
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ
আর সহীহ বুখারীর মাঝে বর্ণিত রয়েছে, জাগতিক সম্মান একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য।
( যা আমরা প্রত্যেক নামাযের মাঝে পড়ে থাকি) [বুখারী-১/১৬৬ হাদীস নং-৮৩১]

আর যদি কারো সামনে সম্মানার্থে দাঁড়ানো হয় তাহলে শুধু মহান রাব্বুল আলামিনই এর উপযুক্ত দুনিয়ার কোন মানুষ বা কোন জিনিষ এর উপযুক্ত নয়। তাই তিনি মহা গ্রন্থ আল কুরআনে বলেন-

  يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ [المطففين: ৬]

যে দিন সমস্ত মানুষ মহা প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াতে হবে। (সূরা মুতাফফীফিন-০৬)
অতএব কোন মানুষ বা পতাকা ইত্যাদিকে এর অন্তভূক্ত করা শিরকের নামান্তর যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।


আর যদি কোন ব্যক্তি বলে থাকে যে, এটা আমাদের রাষ্টীয় নিয়ম। তাহলে আমি তার উত্তরে রাসূল (সা.) এর একটি সহীহ হাদীসের আলোকে বলবো-

مسند أحمد ت شاكر (২/ ৬৭)

১০৯৫  - [قال عبد الله بن أحمد]: حدثنا عُبيد الله بن عمر القواريري حدثنا ابن مهديَّ عن سفيان عن زُبَيْد عن سعد بن عُبيدة عن أبي عبد الرحمن السُّلَمي عن علي عن النبي - صلى الله عليه وسلم - قال: "لا طاعة لخلوق في معصية الله عز وجل".

কোন মানুষের আনুগত্য করতে গিয়ে আল্লাহর নাফরমানী করা যাবেনা।
[মুসনাদে আহমদ-২/৬৭ হাদীস নং-১০৯৫]
     তাহলে এ ধরনের নিয়ম কখনো গ্রহন করা হবে না। আর তা ছাড়াও এটি একটি নব আবিষ্কৃত বা বেদআতী কাজ। রাসূল (সা.) বলেন-

صحيح البخاري (৩/ ১৮৪)

২৬৯৭  - حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ القَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ


যে ইসলাম ধর্মের মাঝে কোন নব আবিষ্কৃত কাজকে অন্তর্ভুক্ত করে তা অবশ্যই প্রত্যাখানযোগ্য। সহীহ আল বুখারী-৩/১৮৪ হাদীস-২৬৯৭ ।
এই কাজটি যে বিদ‘আত এ সম্পর্কে সৌদি আরবের প্রধান মুফতী ও বিখ্যাত মুফতীগণ যেমন- শায়খ সালেহ আল-ফাওযান, আব্দুল আযীয বিন বায, নাসীর উদ্দীন আলবানী ইত্যদি মুফতীগণের বিস্তারিত ফাতাওয়া দেখুন-


والله اعلم بالصواب

      অতএব, মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক দ্বীন অনুসারে আমল করার তাওফীক দান করুন এবং এ সমস্ত বেদআত ও নব আবিষ্কৃত কার্যক্রম থেকে বাচাঁর তাওফীক দান করুন আমীন!

সমাধানে-

মুফতী মো. ছানা উল্যাহ
বাংলাদেশ ফেকাহ একডেমী, ঢাকা।
ই-মেইল...

ফেইসবুক দেখুন

১৭/০১/২০১৫

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন