সোমবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৫

কুরআন তিলাওয়াত শেষে সাদাকাল্লাহুল আযীম বলা কি বিদ‘আহ !!!

প্রশ্ন : বর্তমানে আহলে হাদীসরা বিভিন্ন স্থানে প্রচার করতেছে যে, কোরআন তেলাওয়াত শেষ করার পর “সাদাকাল্লাহুল আযীম” বলা বেদআত। কারণ একথা হাদীসের মাঝে নেই। এখন আমাদের জানার বিষয় হলো আসলে এটি বিতআত কি না?

উত্তরঃ তাদের কথা ভুল। কোরআনুল কারীম তেলাওয়াত শেষে “সাদাকাল্লাহুল আযীম” (যার অর্থ হলো মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন) বলা যাবে এটি বেদআত নয়। তার প্রমাণ স্বরূপ আমরা মহান আল্লাহ বাণী দেখবো তিনি প্রবিত্র কোরআনে বলেন-

 قُلْ صَدَقَ اللَّهُ فَاتَّبِعُوا مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ [آل عمران: ৯৫



 অর্থাত আপনি বলুন, আল্লাহ সত্য বলেছেন, অত:পর ইব্রাহীম (আ.) এর সঠিক ধর্মের অনুসরণ করুন এবং তিনি মুশরীকদের অন্তভুক্ত ছিলেন না। (সূরা আল ইমরান আয়াত-৯৫)
* প্রিয় পাঠক উল্লিখিত আয়াতের মাঝে আমরা স্পষ্ট ভাবে পেয়েছি যে, “সাদাকাল্লাহুল আযীম” (মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন) এ কথাটুকু বলার নির্দেশ করেছেন, কিন্তু তা কখন ও কিভাবে কোন স্থানে তার কিছুই পবিত্র কোরআনে উল্লেখ নেই, অর্থাত যে কোন সময়ই বলা যেতে পারে। অতএব আমরা মহান প্রভুর বানী আল কোরআন পড়ার শেষে বলছি তাতে সমস্যা কিসের? আর বেতআতই বা কেন হবে?
আল্লাহ তায়ালা কোরআনের অন্য আয়াতের মাঝেও বলেছেন- {وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثًا } [النساء: ৮৭]
{ وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا} [النساء: ১২২] অর্থাত মহান আল্লাহর থেকে কে সত্য বলনেওয়ালা আছে? (সূরা নিসা, আয়াত-৮৭, ১২২)
...
...
এখন দেখুন সালাফীদের একটা ভ্রান্ত দলীল, আসলে তারা যে বুঝে না এ কথাও বুঝেন!!!
সহীহ বুখারীর বর্ণনা-৫০৫০ - صحيح البخاري (৬/ ১৯৬)

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَبِيدَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: قَالَ لِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:اقْرَأْ عَلَيَّ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، آقْرَأُ عَلَيْكَ، وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ، قَالَ:نَعَمْ فَقَرَأْتُ سُورَةَ النِّسَاءِ حَتَّى أَتَيْتُ إِلَى هَذِهِ الآيَةِ: {فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ، وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيدًا} [النساء: ৪১]، قَالَ:حَسْبُكَ الآنَ فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ، فَإِذَا عَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ

অর্থাত : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে রাসূল (সা.) বললেন, তুমি আমাকে কোরআন শুনাও, অত:পর আমি তাকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনাকে কোরআন শুনাব? অথচ আপনার উপরই কোরআন অবতরণ হয়েছে? রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ শুনাও, অত:পর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূরা নিসা পড়তে শুরু করলেন, পড়তে পড়তে যখন {فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ، وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيدًا}এই আয়াতে আসলেন তখন রাসূল (সা.) তাকে বললেন حَسْبُكَ (হাসবুকা) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি তখন রাসূল (সা.) এর দিকে তাকিয়ে দেখি তার চক্ষুদয় অস্রুশিক্ত হয়ে আছে। বুখারী-৬/১৯৬ হাদীস-৫০৫০

     প্রিয় পাঠকগণ! তারা বলে হাদীসের মাঝে শুধু حَسْبُكَ (হাসবুকা) শব্দ বলার কথা এসেছে তাই সাদাকাল্লাহুল আযিম (যার অর্থ হলো মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন) বলা যাবে না কারন এটা হাদীসে নেই।
     আমি তাদের এই আহমকির উত্তরে বলবো আপনারা নিজেই উল্লিখিত হাদীসের অর্থে দেখুন এখানে যে, حَسْبُكَ (হাসবুকা) এসেছে এই শব্দকি তেলাওয়াত কারী ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন? নাকি তেলাওয়াত শুননে ওয়ালা ব্যক্তি রাসূল (সা.) বলেছেন? নিশ্চয় আপনি দেখছেন ও বলবেন শুননে ওয়ালা ব্যক্তি রাসূল (সা.) বলেছেন। তাহলে আমরা সাদাকাল্লাহুল আযিম (যার অর্থ হলো মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন) যে ব্যক্তি তেলাওয়াত করছেন তাকে নিয়েই বলছি, যে ব্যক্তি শুনেছেন তাকে নিয়ে বলছি না। তাহলে তাদের এই প্রমাণ খালি মাঠে গোল দেয়ার মত হলো। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক রাস্তা অবলম্বন করার তাওফীক দান করুন আমীন।

এখন দেখুন হাদীসের মাঝে নেই কেন?

১। যে কথাটির নির্দেশ সরাসরী আল কোরআনের মাঝে রয়েছে তার নির্দেশ হাদীসের মাঝে না থাকলে সমস্যা কোথায়? হাদীসকি কোরআনের চেয়েও বড় শক্তিশালী প্রমাণ??? নিশ্চয় না, তাহলে হাদীসের মাঝে থাকাও আবশ্যক না।

২। এখন আপনি বলতে পারেন যে, কোরআনের মাঝে তো, আল্লাহ এভাবে বলেন নি যে, তোমরা তেলাওয়াত শেষ করে বল “সাদাকাল্লাহুল আযীম” (যার অর্থ হলো মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন)। তাহলে আপনি কোথা থেকে বললেন?
**আমি বলবো মহান আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনের মাঝে আল্লাহ সত্যি বলেছেন একথার সত্যায়নের আদেশ দিয়েছে। আর তার জন্য কোন স্থান নির্ধারন করেন নি। তাহলে আমরা বুঝতে পারি যে কোন সময় এ কথা বলা যাবে আর সব চেয়ে উপযোগী হলো কোরআন তেলাওয়াত করার শেষে, কারণ সবে মাত্র আমি সেই বানী পড়ে শেষ করলাম তাই।
     আর কোরআন হলো একটি মহান গ্রন্থ যার মাঝে শুধু নিয়মগুলো বলে দেয়া হয়, সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা সর্বস্থানে করা হয় না। কারণ ব্যাখ্যা করা হলে কোরআন ৩০ পারার স্থানে প্রায় ৩০০ পারা হতো, যেমন দেখুন, আল্লাহ কোরআনে বলেছেন- { ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ } [غافر: ৬০] তোমরা আমার কাছে দোয়া কর আমি তোমাদের দোয়ায় সাড়া দিবো। (সূরা গাফের-৬০) অতএব আপনি একেক সময় একেক দোয়া করছেন কখনো আপনার সন্তানের পরিক্ষায় পাশ করার জন্য, কখনো সম্পদ অর্জন করার জন্য, কখনো আপনার অন্য মুসলিম ভাই এর জন্য যেমন আব্দুল্লাহ এর সুস্থতার জন্য ইত্যাদি এখন আমি যদি বলি ভাই আপনি আব্দুল্লাহ এর সুস্থতার জন্য দোয়া করলেন এইটা বেদআত। কারণ কোরআন ও হাদীসে এধরনের কথা নেই!! একথা শুনে কি আপনার হাসি আসবে না? অবশ্যই, আর তার পাশাপাশি আপনি হাদীসে খুজেও পাচ্ছেন না এখন আপনি কি বলবেন? নিশ্চয় আপনি বলতে হবে মহান আল্লাহ দোয়ার জন্য আদেশ করেছেন অতএব আব্দুল্লাহ এর নাম বলতে হবে তা আবশ্যক নয়, হুবুহু বিষয়টা “সাদাকাল্লাহুল আযীম” এর ক্ষেত্রেও।
     তেমনি ভাবে আল কোরআন ও হাদীসের মাঝে জন্ম দাতা ব্যক্তিকে পিতা বলার আদেশ এসেছে, যেমন আপনাকে যদি আমি বলি আপনার পিতার নাম কি ? আপনি উত্তর একটি নাম বলবেন যেমন মতিউর রহমান মাদানী অথবা রাজ্জাক বিন ইউসুফ অথবা আলবানী অথবা ইবনে তাইমিয়া অথবা ইবনে কাইউম আল জাওযী ইত্যাদি এখন আমি যদি বলি এটা কোন হাদীসে আছে যে মাতিউর রহমান আল মাদানী আপনার পিতা? তখন আপনি কি বলবেন নিশ্চয় আমার সেই কথা যা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, সে আমার জন্ম দাতা তাই, কারণ এটা হলো নিয়ম যার ব্যাখ্যা আপনি নিজেই দিতে পারেন। হুবুহু বিষয়টা “সাদাকাল্লাহুল আযীম” এর ব্যাপারেও।

আল্লাহা তায়ালা আমাদেরকে সঠিক পথ অনুসরনের তাওফীক দান করুন। আমীন !
মুফতী মো. সানা উল্যাহ ১২/০১/২০১৫ ইং

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন