সোমবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ইসলামে তালি দেয়া বৈধ কি?



 ইসলামে তালি দেয়া বৈধ কি?

 

প্রশ্ন : ইসলামে তালি দেয়া বৈধ কি? এর বিস্তারিত বিধান জানালে ভালো হয়


ইতি মাও. মো. ওলী উল্লাহ

উত্তর : ইসলামে তালি দেয়া বৈধ কি না, তা নির্ভর করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপর, কেননা ক্ষেত্র বিশেষ তা বৈধ আর ক্ষেত্র বিষেশ তা বৈধ না আসুন তাহলে আমরা নিন্মে তা তিনটি ভাগে বিস্তারিত আলোচনা করি-


তালি দেয়া ইবাদত : আর তা শুধু মহিলাদের জন্য নামাযের মাঝে তা সহীহ বুখারীর বর্ণনার মাঝে এসেছে-
صحيح البخاري (1/ 137)

684 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ أَبِي حَازِمِ بْنِ دِينَارٍ، عَنْ سَهْلِ [ص:138] بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَهَبَ إِلَى بَنِي عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ لِيُصْلِحَ بَيْنَهُمْ، فَحَانَتِ الصَّلاَةُ، فَجَاءَ المُؤَذِّنُ إِلَى أَبِي بَكْرٍ، فَقَالَ: أَتُصَلِّي لِلنَّاسِ فَأُقِيمَ؟ قَالَ: نَعَمْ فَصَلَّى أَبُو بَكْرٍ، فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالنَّاسُ فِي الصَّلاَةِ، فَتَخَلَّصَ حَتَّى وَقَفَ فِي الصَّفِّ، فَصَفَّقَ النَّاسُ وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ لاَ يَلْتَفِتُ فِي صَلاَتِهِ، فَلَمَّا أَكْثَرَ النَّاسُ التَّصْفِيقَ التَفَتَ، فَرَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَشَارَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنِ امْكُثْ مَكَانَكَ»، فَرَفَعَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَدَيْهِ، فَحَمِدَ اللَّهَ عَلَى مَا أَمَرَهُ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ ذَلِكَ، ثُمَّ اسْتَأْخَرَ أَبُو بَكْرٍ حَتَّى اسْتَوَى فِي الصَّفِّ، وَتَقَدَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَصَلَّى، فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ: «يَا أَبَا بَكْرٍ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَثْبُتَ إِذْ أَمَرْتُكَ» فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: مَا كَانَ لِابْنِ أَبِي قُحَافَةَ أَنْ يُصَلِّيَ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا لِي رَأَيْتُكُمْ أَكْثَرْتُمُ التَّصْفِيقَ، مَنْ رَابَهُ شَيْءٌ فِي صَلاَتِهِ، فَلْيُسَبِّحْ فَإِنَّهُ إِذَا سَبَّحَ التُفِتَ إِلَيْهِ، وَإِنَّمَا التَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ» 


অর্থাৎ : হযরত সাহল ইবনে সা আসসায়ীদি (রা.) থেকে বর্ণিত নিশ্চয় রাসূল (সা.) বলেছেন............ «مَا لِي رَأَيْتُكُمْ أَكْثَرْتُمُ التَّصْفِيقَ، مَنْ رَابَهُ شَيْءٌ فِي صَلاَتِهِ، فَلْيُسَبِّحْ فَإِنَّهُ إِذَا سَبَّحَ التُفِتَ إِلَيْهِ، وَإِنَّمَا التَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ» তোমাদের কি হয়েছে? আমি নামাযের মাঝে তোমাদেরকে অধিক তালি দিতে দেখছি? (জেনে রাখ) নামাযের মাঝে যদি তোমাদের কোন সমস্যা সামনে আসে তাহলে তোমরা তাসবীহ পড় অথাৎ সুবহানাল্লাহ ইত্যাদি আর মহিলাগণ তালি দিবে (নামাযের মাঝে মহিলাদের তালির নিয়মটা হবে একটু ভিন্ন  আর তা হলো ডান হাতকে বাম হাতের পিঠের উপর মারবে বুখারী-1/137, হাদীস-684

তালি দেয়া বৈধ না, আর তা হলো যখন এবাদত মনে করে তালি দেয়া হয় অথবা ঠ্রাট্র হটকারীতা ইত্যাদি বশতঃ হয় কেননা এই প্রকারটি জাহেলী যুগ মুশরীকদের স্বভাব দেখুন, মহান আল্লাহ তায়ালা এই সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের মাঝে নিন্দা জানিয়ে বলেন-

{ وَمَا كَانَ صَلَاتُهُمْ عِنْدَ الْبَيْتِ إِلَّا مُكَاءً وَتَصْدِيَةً فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ } [الأنفال: 35]

অর্থাৎ কাবার নিকট তাদের নামায বলতে শিস দেয়া আর তালি বাজানো্ ছাড়া অন্য কোন কিছুই ছিল না অতএব, এবার নিজেদের কৃত কুফরীর আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর (সূরা আনফাল-35)

তালি দেয়া মাকরুহ, আর তা হলো উল্লেখিত প্রকারগুলো ব্যতীত কোন মাহফীল সামাবেশ ইত্যাদির মাঝে আনন্দ উৎসাহ প্রদান এর জন্য তালি দেয়া, কেননা তালি দেয়া মহিলাদের জন্য নির্ধারিত বলে উপরে প্রথম প্রকারের মাঝে উল্লেখ হয়েছে, আর রাসূল (সা.) পুরুষদেরকে মহিলাদের সদৃশ্য কাজ থেকে নিষেধ করেছেন দেখুন-
صحيح البخاري (7/ 159)

5885 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: «لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ»

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নিশ্চয় রাসূল (সা.) অভিশাপ দিয়েছেন, যেই পুরুষরা মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে মহিলারাও পুরুষদের সদৃশ্য অবলম্বন করে বুখারী-7/159, হাদীস-5885

এছাড়াও হাদীস এর মাঝে রাসূল (সা.) হযরত লুত (.) এর উম্মত ধ্বংশ হওয়ার কারণ স্বরূপ প্রায় দশটি বিষয়কে উল্লেখ করেন, তার মধ্য থেকে একটি হলো তালি, দেখুন-
تاريخ دمشق لابن عساكر (50/ 322)

عن الحسن قال قال رسول الله (صلى الله عليه وسلم) عشر خصال عملتها قوم لوط بها أهلكوا وتزيدها أمتي بخلة: إتيان الرجال بعضهم بعضا ورميهم بالجلاهق (2) والخذف ولعبهم بالحمام وضرب الدفوف وشرب الخمور وقص اللحية وطول الشارب والصفير والتصفيق ولباس الحرير وتزيدها أمتي بخلة إتيان النساء بعضهن بعضا

হাদীটির অর্থ লিখা হলো না, কারণ ফেজবুকে রয়েছে অনেক স্বল্প বয়সের ভাইও বোনেরা আর এর অর্থের মাঝে রয়েছে অনেক আপত্তিকর আচরন  

তারীখে দামেষ্ক-50/322, জামেউস সগীর, হাদীস নং-5433, মারাসিলে আবূ দাউদ-528, সিলসিলাতুয যয়ীফা, হাদীস নং-1233, 3711 আর হাদীসটি মুরসাল।

আর তিন নং প্রকারকে অনেক ওলাময়ে কেরাম হারাম বলেছেন, কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত হলো হারাম না, (যেমন সওদীআরবের প্রধান মুফতী . বিন বায সাওদীর বিখ্যাত আলেম ইবনে ওসাইমিনও বলেছেন।) আর হারাম না হওয়ার কারণ, রাসূল (সা.) নিজেও আনন্দ মহুর্তে তালি দিয়েছেন, দেখুন সহীহ মুসলিম এর বণনা-
صحيح مسلم (2/ 763)

23 - (1084) حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رُمْحٍ، أَخْبَرَنَا اللَّيْثُ، ح وحَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ - وَاللَّفْظُ لَهُ - حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اعْتَزَلَ نِسَاءَهُ شَهْرًا، فَخَرَجَ إِلَيْنَا فِي تِسْعٍ وَعِشْرِينَ، فَقُلْنَا: إِنَّمَا الْيَوْمُ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ، فَقَالَ: «إِنَّمَا الشَّهْرُ وَصَفَّقَ بِيَدَيْهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، وَحَبَسَ إِصْبَعًا وَاحِدَةً فِي الْآخِرَةِ»

অথ : হযরত জাবের (রা.) থেক বর্ণিত, তিনি বলেন একদা রাসূল (সা.) নিজ স্ত্রীদের থেকে এক মাসের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেনযখন 29 দিন অতিবাহিত হলো, তখন তিনি আমাদের মাঝে আগমন করেন, আমরা সকলেই বলতে লাগলাম আজ 29 দিন, তখন রাসূল (সা.) নিজ হাতে তিন বার তালি দিলেন আর বললেন হ্যাঁ, মাস অতিবাহিত হয়ে গেলো এবং নিজ আঙ্গুলগুলো একটি কে অন্যটির সাথে বন্ধিত্ব করেছেন মুসলিম-2/763, হাদীস-1083

আরো বিস্তারিত দেখুন-ফাতাওয়া আল-লাজনাতুদ দায়েমা-6/310, 19/122, 26/389, 26/390 ।
 
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাহকীক এর সহিত সঠিক দিন অনুসারে আমল করার তাওফীক দান করুন । আমীন

ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন