সব মহলে সালাফীদের উগ্রতা * নামাযের মাঝে নারী পুরুষের ভিন্নতা
সব মহলে সালাফীদের উগ্রতা * নামাযের মাঝে নারী পুরুষের ভিন্নতা
❀ বর্তমানে আমাদের কিছু সালাফী ভাইদেরকে দেখা যায়, যারা সব মহলে এ কথা বলছে যে, নারী পুরুষের নামাযের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। আর পাথক্য এর বিষয়ে যে সব হাদীসগুলো পেশ করা হয় সব হাদীসই না কি জাল আর যয়ীফ!! তাই আমি আমার ছোট একটি গবেষনা আপনাদের সামনে ব্যক্ত করছি, আসলে নারী পুরুষের নামাযের মাঝে কোন পার্থক্য আছে কি নেই?
✏ প্রথমত নামাযের মাঝে কি পার্থক্য আছে, তা বর্ণনা করার পূর্বে আমি উল্লেখ করবো শরীয়তের অন্য কোন বিধান এর মাঝেও কি নারী পুরুষের পার্থক্য আছে? না শুধু নামাযের মাঝে? অতএব প্রিয় পাঠক আপনি দেখুন শরীয়তের অন্য আহকামের মাঝেও নারী পুরুষের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। যেমন-
✪ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের উপরই হজ্জ ফরয। কিন্তু মহিলাদের জন্য পথ খরচ ছাড়াও হজ্জের সফরে স্বামী বা মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি শত। (অথচ মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে যার কাছে পথ খরচ আছে তাকে হজ্ব করার নিদেশ দিয়েছেন-{وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا} [آل عمران: 97] সূরা আল ইমরান-97।
✪ ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ অথচ মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায়ও মাথা ঢেকে রাখা ফরয।
মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-1668।
✪ ইহরাম খোলার সময় পুরুষ মাথা মুণ্ডাবে; কিন্তু মহিলাদের মাথা মুণ্ডানো নিষেধ।
✪ হজ্জ পালনের সময় পুরুষ উচ্চ আওয়াজে ‘তালবিয়া’ পাঠ করে; অথচ মহিলদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়া জরুরী।
✪ ইমাম ও খতীব পুরুষই হতে পারে। মহিলা ইমাম ও খতীব হতে পারে না।
✪ আযান শুধু পুরুষই দেয়; মহিলাকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েয নয়।
✪ ইকামত শুধু পুরুষই দেয়; মহিলা নয়।
✪ পুরুষের জন্য জামাআত সুন্নতে মুয়াক্কাদা; অথচ মহিলাকে মসজিদ ও জামাআতের পরিবর্তে ঘরের ভেতরে নামায পড়ার হুকুম করা হয়েছে।
✪ সতরের মাসয়ালায় পুরুষ ও মহিলার মাঝে পাথক্য রয়েছে।
✪ নামাযে সতর্ক করার মত কোন ঘটনা ঘটলে সতর্ক করার জন্য কিংবা অবহিত করার জন্য পুরুষকে তাসবীহ পড়ার হুকুম করা হয়েছে। অথচ মহিলাদের জন্য হুকুম হল ‘তাসফীক’ তথা হাত দ্বারা শব্দ করে অবহিত করা।
✪ জুমার নামায শুধু পুরুষের উপর ফরয, মহিলার উপর নয়।
✪ সবশেষ মারা যাওয়ার পরও পুরুষের তিন কাপড় আর নারীর পাঁচ কাপড়।
এই পর্যন্ত আমি এক ডজন মাসায়ালা উল্লেখ করলাম বুঝবান মানুষের জন্য নারী পুরুষের মাঝে শরয়ী দিক থেকে পার্থক্য হতে পারে এ কথা বুঝার জন্য এটাই যথেষ্ট।
✪✪ এখন দেখুন হাদীস ও আসারের আলোকে নারী
পুরুষের মাঝে নামাযের পার্থক্য ✪✪
✔আজকের আলোচনা শুধু তাকবীরে তাহরীমা নিয়ে।
❑ ❐ পুরুষেরা তাকবীরে তাহরীমার সময় কান পর্যন্ত হাত উঠাতে আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর। দলীল-
‘‘হযরত ওয়াইল ইবনে হুজুর (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) দরবারে হাজির হলাম, তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বললেন, হে ওয়াইল ইবনে হুজুর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর।’’ আল মুজামুল কাবীর, তাবারানী 22/19,
এই হাদীসটি হাসান তথা প্রমাণ যোগ্য। কারণ এই হাদীসটির সমর্থনে আরো কিছু সহীহ হাদীস রয়েছে, পক্ষান্তরে এগুলোর সাথে বিরোধপূর্ণ একটি হাদীসও কোথাও পাওয়া যায় না।
সালাফীদের আপত্তি : তারা বলে উল্লেখিত হাদীসটি মাওজু। কেননা হাফিজ নূর উদ্দীন আল হায়সামী (রহঃ) তার কিতাব ‘মাজমাউজ জাওয়ায়েদ এর মাঝে এই সনদ উল্লেখ করেছেন এবং বলছেন:-
"সারসংক্ষেপ : আমি উম্মে ইয়াহিয়াকে চিনিনা, আর বাকী বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত "।
(উল্লেখ্য যে, আমি আমার তাহকীক অনুসারে যা জানি এই মহিলা তাবেয়ীনদের পরবর্তী যুগের)
আমাদের জবাব
✏ দেখুন ইমাম হায়সামী (রহ.) উম্মে ইয়াহয়াকে চিনেন না, তাই বলে কি হাদীসটি মাওজু তথা জাল হাদীস হয়ে যাবে? না কখনোও না, তাহলে হাদীসটি কি হবে? আমরা সালাফীদের মহাগুরু শায়খ নাসীর উদ্দীন আলবানী এর কিতাব থেকে সাব্যস্ত করবো ইনশাআল্লাহ।
❖ দেখুন তিনি তার কিতাব ‘‘সিলসিলাতু আহাদীসিস যয়ীফা’’ এর মাঝে বলেন-
তিনি বলেন হাদীসটি ইমাম তাবরানী উল্লেখিত সনদে বর্ণনা করেছেন, আর তার মাঝে উম্মে ইয়াহিয়াকে আমি চিনিনা, আর বাকি সব বণনাকারীগণ নিবরযোগ্য। এছাড়াও আমাদের অনেক পূর্বসূরী থেকে এর বিপরীত আমলেরও বণনা রয়েছে যা আমি আমার কিতাব ‘সিফাতুস সালাহ এর শেষে আলোচনা করেছে। আর এই বিষয়ের সমথ্যক আরো অনেক সহীহ হাদীস পাওয়া যায় যে, রাসূল (সা.) কখনো কান পযন্ত হাত উঠাতেন আবার কখনো সিনা পযন্ত হাত উঠাতেন। তিনি বলেন এই সংক্রান্ত হাদীসগুলোকে আমি আমার লিখিত কিতাব ‘‘সিফাতুস সালাহ’’ এর মাঝে উল্লেখ করে বলেছি যে, এগুলো কোথায় আছে (বা কোন কোন মুহাদ্দীস সংকলন করেছেন)।
❖ মাশা আল্লাহ শায়খ আলবানী সাহেব এর অজান্তে অনেক তাহকীক মাযহাবে হানাফী এর সম্মত হয়ে যায়, যেমন আলবানী সাহেবের উক্ত তাহকীক দ্বারা আমরা যে উপরে বলেছি হাদীসটি হাসান তা সাব্যস্ত হলো, কেননা উলূমে হাদীসের প্রসিদ্ধ ও সর্ব সম্মতিক্রমে নিয়ম হলো- কোন যয়ীফ হাদীস এর সমর্থ্যন যদি কোন সহীহ হাদীস দ্বারা হয় তাহলে ঐ হাদীসটি হাসান হয়, অতএব আলবানী সাহেবের এই তাহকীকটিও আমাদের তাহকীকের সম্মত হয়েছে, আর হাদীসটি হাসান তথা প্রমাণ যোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। (আল্লাহ তায়ালা যেন শায়খ এর এই তাহকীকটিকে অন্য অন্য ভুল তাহকীকগুলোর কাফফারা বানিয়ে দেন)।
❖ এখন দেখুন তার কিতাব সিফাতুস সালাহ থেকে, (যার কথা তিনি একটু পূর্বেই বলেছেন) অর্থাৎ উল্লেখিত হাদীসের সমর্থ্যক সহীহ হাদীসটি-
তিনি বলেন আবূ দাউদ ও নাসায়ী ও বুখারী সহীহ সনদে উল্লেখ করেছেন, রাসূল (সা.) কাধ পর্যন্ত হাত উঠাতেন (যা মহিলাদের হাদীসটিকে সমর্থ্যন করে) আর ইমাম তিরমিযী ও আবূ দাউদ সহীহ সনদে আরো বলেন (রাসূল (সা.) কখনো) কান পযন্ত হাত উঠাতেন। (যা পুরুষদের হাদীসকে সমর্থন করে ‘সিফাতুস সালাহ-141।
❖ আলবানী সাহেবের আশ্চার্য কথা ❖
তিনি তার কিতাব ‘সিফাতুস সালাহ’ এর মাঝে বলেন, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতি এক। যে কথাটি রাসূল (সা.) এর যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন সহীহ হাদীস বা আল কোরআন দিয়ে প্রমাণিত নয়, এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর ইজমা বা একমত পোষন এর বিপরীতও বটে। যাই হোক প্রমাণ যদি থেকে থাকে আমি কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য চ্যালেঞ্জ করলাম।
❖ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
ইতি : মুফতী মো. ছানা উল্লাহ চলবেই ইনশাআল্লাহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন