বৃহস্পতিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

নামাযের মাঝে নারী পুরুষের ভিন্নতা......02 পর্ব

2য় পর্ব: সব মহলে সালাফীদের উগ্রতা * নামাযের মাঝে নারী পুরুষের ভিন্নতা

January 31, 2015 at 1:31am
2য় পর্ব
 সব মহলে সালাফীদের উগ্রতা * নামাযের মাঝে নারী পুরুষের ভিন্নতা



 দেখুন হাদীস  আসারের আলোকে নারী পুরুষের নামাযের মাঝে পার্থক্য 




  ✔ আজকের আলোচনা মহিলারা  জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ 

মিলিয়ে নামায আদায় করবে। (পুরুষদের বেতিক্রম)




❀ পুরুষেরা যেমন নামাযের মাঝে জড়সড় হয়ে নামায আদায় করেন না, অর্থাৎ এক অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গ পৃথক রাখে। কিন্তু এই বিধানটি মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। বরং মহিলারা  জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। দলীল-


السنن الكبرى للبيهقي (2/ 315)
3199 – حدثنا ابو مُطِيعٍ الْحَكَمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَلْخِيِّ، عَنْ عُمَرَ بْنِ ذَرٍّ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِذَا جَلَسَتِ الْمَرْأَةُ فِي الصَّلَاةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الْأُخْرَى، وَإِذَا سَجَدَتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِي فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا، وَإِنَّ اللهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ: يَا مَلَائِكَتِي أُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهَا "

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, মহিলারা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সিজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে; যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে (ফেরেশতাদের সম্বোধন করে) বলেন, ওহে আমার ফেরেশতারা! তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।’’ সুনানে কুবরা, বায়হাকী 2/223, অধ্যায় : সালাত, পরিচ্ছেদ : باب مَا يُسْتَحَبُّ لِلْمَرْأَةِ مِنْ تَرْكِ  التَّجَافِى فِى الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ. মহিলার জন্য রুকূ ও সিজদায় এক অঙ্গ অপর অঙ্গ থেকে পৃথক না রাখা মুস্তাহাব। হাদীসটি তারিখে আসবাহান এর 01/200 এবং কানযুল উম্মাল-7/549, হাদীস নং-20203 উল্লেখ রয়েছে।


 এই হাদীসটি হাসান তথা প্রমাণ যোগ্য। কারণ এই হাদীসটির সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।
এ ছাড়াও এর সমর্থনে  আরো কিছু হাদীস রয়েছে,পক্ষান্তরে এগুলোর সাথে বিরোধপূর্ণ
একটি হাদীস কোথাও পাওয়া যায় না।



সালাফীদের আপত্তি : তারা বলে উল্লেখিত হাদীসটি মাওজু। কেননা উল্লেখিত হাদীসের একজন বর্ণনাকারী আবু মাতি আল হাকিম বিন আব্দুল্লাহ আল বালখী  তাকে ইমাম আহমদ (রহ.) ও কতেক ইমাম যয়ীফ বলেছেন।


✏ আমাদের জবাব


 দেখুন ইমাম আহমদ (রহ.) ও কতেক ইমাম আবু মাতি আল হাকিম বিন আব্দুল্লাহ আল বালখীকে যয়ীফ বলেছেন, তাই বলে কি হাদীসটি মাওজু তথা জাল হাদীস হয়ে যাবে? না কখনোও না। (সবচেয়ে হাস্যকর ও মজার বিষয় হল এক সালাফী ভাই এর একটি পোষ্ট পড়তে ছিলাম, তখন দেখলাম সে রেগে গিয়ে  বললো, এই হাদীসটিকে ইমাম বায়হাকী জাল বলেছেন। দেখে আমার হাসি আসলো, যাক কিন্তু সে একথার কোন প্রমাণ দেয় নি, আল্লাহ রক্ষা করেছেন। কারণ ফেসবুক এর বিষয় সে ইচ্ছা করলে অন্য অন্য কারচুরির মত এখানেও কোন একটি কিতাবের রেফারেন্স দিয়ে দিতে পারতেন)। তাহলে হাদীসটি কি হবে?  

 আমরা প্রথমত উলুমে হাদীস এর একটি সুপ্রসিদ্ধ নিয়ম জানি আর তা হলো-কোন বর্ণনাকারীকে কোন ইমাম যয়ীফ বললেই তার সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি মাওজু হয় না।

✍ দ্বিতীয়ত আলোচনার বিষয় হলো আবু মাতি আল হাকিম বিন আব্দুল্লাহ আল বালখীকে নিয়ে আসলেই সে কি যয়ীফ?



না,আবু মাতি আল হাকিম বিন আব্দুল্লাহ আল বালখী যয়ীফ নন,

তার সম্পর্কে মুহাদ্দীসগণের  নন্দীত মন্তব্য



হাদীস ও জারহ তাদীল সাস্ত্রের বিখ্যাত ইমাম, ইমাম ওকাইলি (রহ.) বলেন- صالحا في الحديث অর্থাৎ তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে ন্যয়-নিষ্ঠাবান/গ্রহণযোগ্য। আর তার উক্তিটি সংকলন করেছেন, হাদীস এবং জারাহ তাদীল বিষয়ে সবচেয়ে বিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি। সহীহ বুখারীর নির্ভর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারী এর লিখক হাফেজুদ দুনিয়া আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) তার লিখিত কিতাব ‘লিসানুল মিজান’’-2/334 এর মাঝে। তাহলে প্রিয় পাঠক আপনিও ভাবুন এবং বলুন যে, আবু মাতি আল হাকিম বিন আব্দুল্লাহ আল বালখীকে কি যয়ীফ হিসেবে বিবেচিত করা হবে? না কখনও না।

বিখ্যাত ইমাম ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক যার নাম সকলই শুনেছেন, তিনি তাবয়ে তাবেয়ীনদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তার পরিচয়ের জন্য দুটি কথা বলি। তার জীবনী সম্পর্কে সুফিয়ান আস সাওরী বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক যদি তার একটি বছরের আমল আমাকে দান করতো তা হলো আমি আমার সমস্ত জীবনের আমল তাকে দিয়ে দিতাম। আল্লাহু আকবার ! আর তাছাড়াও ইমাম বুখারীসহ হাদীসের জগতে প্রায় সব ইমামদের উস্তাদ বা উস্তাদের উস্তাদ এবং বুখারীতে তার সূত্রে বর্ণিত অসংখ্য হাদীসও রয়েছে। তার থেকে  আবু মাতি আল হাকিম বিন আব্দুল্লাহ আল বালখী এর ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে যে- وكان ابن المبارك يعظمه ويجله لدينه وعلمه অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক আবু মাতি আল হাকিম বিন আব্দুল্লাহ আল বালখীকে তার দ্বীন এবং ইলমের কারণে অনেক সন্মান ও উচ্চ স্তরের মাঝে গণ্য করতেন। আর এই উক্তিটিও বর্ণিত হয়েছে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) রচিত গ্রন্থ ‘লিসানুল মিজান’’-2/334 এর মাঝে ।

বিখ্যাত ইমাম, ইমাম খলিলী (রহ.) মৃত-446 তার রচিত  ‘ইরশাদ’ নামক গ্রন্থে তার সম্পর্কে বলেন- وقال الخليلي في الإرشاد كان على قضاء بلخ وكان الحفاظ من أهل العراق وبلخ অর্থাৎ তিনি বালখ নামক স্থানের গবর্নর ছিলেন এবং ইরাক ও বলখ এর মাঝে হাফেজে হাদীসও ছিলেন। এই উক্তিটিও আল্লাহ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)তার লিখিত গ্রন্থ্ ‘লিসানুল মিজান’’-2/334 এর মাঝে উল্লেখ করেন। আরো দেখুন আল ইরশাদ ফি মারেফাতে উলামায়িল হাদীস লিল খলিলী-3/925।

হাদীস ও জারহ তাদীলের বিখ্যাত ইমাম হাফেয জাহাবী (রহ.) মৃত-748 তার রচিত  ‘‘আল ইবার ফি খবরীন মিন গুবার’ নামক গ্রন্থে আবু মাতি আল হাকিম বিন আব্দুল্লাহ আল বালখী সম্পর্কে ইমাম আবূ দাউদ (রহ.) এর মন্তব্য সংকলন করেন যে- قال أبو داود: وبلغنا أبا مطيع كان من كبار الآمرين بالمعروف والناهين عن المنكر.অর্থাৎ ইমাম আবূ দাউদ (রহ.) বলেন, আমাদের কাছে এখবর পেীঁছেছে যে, আবু মাতি সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধ এর বিষয়ে অনেক বড় ইমাম ছিলেন।(আচ্ছা প্রিয় পাঠক ইমাম আবূ দাউদ (রহ.) এর এই মন্তব্য শুনার পর কি আপনার মনে হয় যে, তিনি একটি যয়ীফ বা মাওজু হাদীস বর্ণনা করবেন। আল্লাহ আমাদেরকে মিথ্যাচার থেকে হেফাজত করুন)। আল ইবার ফি খবরীন মিন গুবার-1/285।‘লিসানুল মিজান’’-2/334 এর টীকায় ‘আল ফাওয়েদুল বাহিয়য়া’ থেকে সংগ্রহকৃত যা আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী (রহ.) এর লিখা, তিনি আরো বলেন, কিছু হাসেদীন উক্ত বর্ণনাকারী ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর ছাত্র হওয়ার কারণে তার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করে থাকে।


 উল্লেখ্য যে, তিনি ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) ও ইমাম শোবা, মালেক (রহ.) ইত্যাদিগণের ছাত্র। আর তার ছাত্র হলো বিখ্যাত হাদীস বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল আর মুসা ইবনে নাসর (রহ.) ইত্যাদি সুপ্রসিদ্ধ ইমামগণ।

❖ উল্লেখিত সকল উল্লেখযোগ্য ইমামদের মন্তব্যের পর কোন বর্ণনাকারীকে যয়ীফ বলা মুর্খতার নামান্তর। (আর সালাফী ভাইগণ তাদের স্বল্প জ্ঞানের কারণে এই সব প্রশংসিত মন্তব্য খুজে না পেলে কি আমাদের অপরাধ ???)

সময় সংক্ষিপ্ত তাই আমি তার জীবনী সম্পর্কে আর কিছু লিখলাম না। আর বুঝবান মানুষের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।  যদি বিস্তারিত  সংকলন করি তাহলে ইনশা-আল্লাহ একটি বড় গ্রন্থে পরিণত হবে। বিশেষ করে স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী সালাফী ভাইদের জন্য আমি আজ এতে কষ্ট করে এগুলো লিখলাম। যাতে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করেন। 

ইতি : মুফতী মো. ছানা উল্লাহ   চলবে ইনশা-আল্লাহ

প্রথম পর্বের লিংক- 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন