সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৫

ঊরু সতর এর দলীল

 ঊরু সতর এর দলীল
❖ প্রশ্ন :  পুরুষদের নাভি থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত সতর বলা হয়। এর জন্য কোন হাদীছসমূহ দ্বারা দলীল পেশ করা হয়ে থাকে? অথচ সহীহ বুখারী শরীফে হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) (খায়বর জিহাদে) স্বীয় ঊরু মুবারক উম্মুক্ত করেছিলেন। হযরত যায়দ বিন ছাবিত (রা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় মনোনীত পয়গম্বরের প্রতি (কুরআন মজীদ) নাযিল করেন এমতবস্থায় যে, আমি আশংকা করছিলাম যে, হয়ত বা আমার ঊরু ভেঙ্গে যাবে। ইমাম বুখারী (রহ.) প্রমাণ পেশ করেছেন যে, যদি ঊরু সতর হতো তাহলে তিনি (সা.) হযরত যায়দ (রা.) এর ঊরুর উপর নিজের ঊরু রাখতেন না। সহীহ বুখারী শরীফে হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে রিওয়ায়ত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) খায়বারে জিহাদ করেছেন। আমরা ফজরের নামায অন্ধকারে খায়বারের নিকটবর্তী কোন এক স্থানে পৌঁছে আদায় করেছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) সাওয়ার হলেন। আর আমি হযরত আবূ তালহা (রা.) এর পশ্চাতে একই সাওয়ারীর উপর উপবিষ্ট ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) খায়বারের অলি-গলিতে স্বীয় বাহন দৌঁড়ালেন এবং দৌঁড়ের কারণে আমার হাঁটু রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ঊরুর সঙ্গে স্পর্শ করতো। অতঃপর তিনি (সা.) স্বীয় ঊরু থেকে লুঙ্গি সরিয়ে নিলেন। (ঊরু উম্মুক্ত করে নিলেন) এমনকি তার শুভ্রতা (এবং উজ্জল্য) দেখা যাচ্ছিল।

জবাব-: এখানে কতক বিষয় লক্ষনীয়।


✏  প্রথম : অসংখ্য হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত যে, ঊরু সতরের অন্তর্ভূক্ত।

(১) عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم وَإِذَا زَوَّجَ أَحَدُكُمْ عَبْدَهُ أَمَتَهُ أَوْ أَجِيرَهُ فَلَا يَنْظُرْ إِلَى مَا دُونَ السُّرَّةِ وَفَوْقَ الرُّكْبَةِ , فَإِنَّ مَا تَحْتَ السُّرَّةِ إِلَى الرُّكْبَةِ مِنَ الْعَوْرَةِ (دار قطنى ص : ৮৫ ج : ১، واللفظ له و ابو داؤد ص : ৭১ كسند احمد ص : ১৭৮ ج : ২، ولفظه فان ما اسفل من سرته الى ركبته عورة)

❐ অর্থাৎ ‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আল-আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের মধ্য থেকে কেউ স্বীয় দাসীকে স্বীয় গোলাম কিংবা চাকরের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়, তাহলে নাভির নীচ থেকে হাঁটুর উপরের অংশ দেখবে না। কেননা নাভির নীচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ সতর।’’

(২) عَنْ زُرْعَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ جَرْهَدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ جَرْهَدٌ هَذَا 
مِنْ أَصْحَابِ الصُّفَّةِ قَالَ: جَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَنَا وَفَخِذِي مُنْكَشِفَةٌ فَقَالَ: أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الْفَخِذَ عَوْرَةٌ (ابو داؤد ص : ৫৫৭ ج : ১، سنن دارمى ص : ১৯২ ج : ২، عبد الرزاق ص : ২৭ ج : ১، صحيح بخارى تعليقا ص : ৫৩ ج : ১ ، ترمذى ص : ১০৩ ج : ২)
❐  অর্থাৎ ‘‘হযরত যুরআ বিন আবদির রহমান বিন জুরহাদ (রা.) স্বীয় পিতা (আব্দুর রহমান) থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত জুরহাদ (রা.) যিনি আসহাবে সুফফার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের পার্শ্বে বসলেন, আর আমার ঊরু তখন উম্মুক্ত ছিল। রসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, নিজ সতর ঢেকে রাখো, তুমি কি জান না যে, ঊরু সতর।’’

(৩) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما ان النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال : الفَخِذُ عَوْرَةٌ (بخارى تعليقا ص : ৫৩ ج : ১، ترمذى ص : ১০৩ ج : ২)
❐  অর্থৎ ‘‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ঊরু সতর।’’

(৪) عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الانصارى رضى الله عنه قال قَالَ: رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اسفل السرة فَوْقَ الرُّكْبَتَيْنِ مِنْ الْعَوْرَةِ، * (نصب الراية ص : ২৯৭ ج : ১ مغنى ابن قدامة ص : ৫৭৮ ج : ১)
❐  অর্থাৎ ‘‘হযরত আবূ আয়্যূব আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, নাভির নীচ এবং হাঁটুর উপরের অংশ সতর।’’

(৫) عن على رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال لاتبرز فخذك ولا تنظر الى فخذ حيى ولا ميت * (ابو داؤد ص : ৪৪৮ ج : ১، وسكت عليه فى باب ستر الميت عند غسله من كتاب الجنائز ثم اخرجه فى كتاب الحمام باب النهى عن التعرى ص : ৫৫৭ ج : ২، وقال هذا الحديث فيه نكارة)
অর্থাৎ ‘‘হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, নিজের ঊরু খুলবে না আর না কোন জীবিত কিংবা মৃত ব্যক্তির ঊরুর দিকে দেখবে।’’

(৬) عن محمد بن (عبد الله بن) جحش رضى الله عنه قال مر النبى صلى الله عليه وسلم وانا معه على معمر وفخذاه مكشوفتان، فقال يا معمر غط عليك فخذيك قال الفخذ عورة*
(ذكره البخارى ص : ৫৩ ج : ১، تعليقا وقال الحافظ ن وصله احمد والمصنف فى التاريخ والحاكم فى المستدرك كلهم من طريق اسماعيل بن جعفر عن العلاء بن عبد الرحمن عن ابى كثيرمولى محمد بن جحش عنه جماعة ، لكن لم اجد فيه تصريحا بتعديل، وقد وقع لى حديث محمد بن جحش عنه ، رجاله رجال الصحيح غير ابن كثير ، فقد روى مسلسلا بالمحمدين من ابتدائه الى انتهائه ، وامليته فى الاربعين المتباينة ، (فتح البارى ص : ৪০৩ ج : ১)
অর্থৎ ‘হযরত মুহাম্মদ বিন আবদিল্লাহ বিন জাহাশ (রা.) বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে ছিলাম, মা’মার (রা.) এর ঊরুদ্বয় খুলা ছিল। তখন তিনি (সা.) ইরশাদ করেন, হে মা’মার! তোমার ঊরুদ্বয় ঢেকে রাখ। কেননা ঊরু হলো সতর।’’

(৭) قال الحفاظ ومعمر المشار اليه هو معمر بن عبد الله بن فضلة القرشى العدوى وقد اخرجه ابن قانع هذا الحديث من طريقه ايضا* (فتح البارى ص : ৪০৩ ج : ১)
অর্থাৎ ‘হাফিয ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, হযরত মা’মার (রা.), যার আলোচনা উপরোক্ত হাদীছে এসেছে, তিনি হচ্ছেন মা’মার বিন আবদিল্লহ বিন ফযলাহ আল-কারশী আল-আদভী। ইবনে কানি’ (রহ.) এ হাদীছকে স্বয়ং তার থেকেও রিওয়ায়ত করেছেন। ’’

(৮) عن على رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الركبة من العورة* (اخرجه الدار قطنى وسنده ضعيف كما فى نصب الراية ص : ২৯৭ ج : ১)
অর্থাৎ ‘হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, হাঁটু সতরের অন্তর্ভূক্ত। ’’

দ্বিতীয় : উক্ত হাদীছসমূহের মধ্য থেকে কতক সহীহ, কতক হাসান এবং মাকবূল আর কতক যঈফ। কিন্তু একই বিষয় বস্তু যখন বিভিন্ন হাদীছে বিভিন্ন সাহাবায়ে কিরাম (রা.) থেকে বর্ণিত হয় তখন উহা সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ-সংশয় থাকে না। ইহাই কারণ যে, ফিকহের চার ইমাম এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অধিকাংশ উম্মত ঊরুদ্বয়কে সতরের মধ্যে গণ্য করেন।

 যেমন ইবনে কুদামা হাম্বলী (রহ.) ‘আলমুগনী’ গ্রন্থে লিখেছেন : 

والصالح فى المذهب انها (اى العورة) من الرجل ما بين السرة والركبة نص عليه احمد فى رواية جماعة وهو قول مالك والشافعى وابى حنيفة واكثر الفقهاء

অর্থাৎ ‘আমাদের মাযহাবে উত্তম রিওয়ায়ত হলো এই যে, পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর মধ্যবর্তী অংশটুকু সতর। এক জামাআত বিশেষজ্ঞ নকল করেন যে, ইমাম আহমদ (রহ.) থেকে শরীআতের অকাট্য প্রমাণ দ্বারা প্রামাণিত বলেন। আর এটাই ইমাম মালেক (রহ.), ইমাম শাফেয়ী (রহ.), ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এবং অধিকাংশ ফকীহগণের অভিমত।’’

ইবনে কুদামা (রহ.) ইমাম আহমদ (রহ.) এর দু’-টো রিওয়ায়ত উল্লেখ করেছেন এবং তিনি صالح فى المذهب উক্ত রিওয়ায়তকেই বলেছেন, যা জমহুরের মুতাবিক রয়েছে। অনুরূপ ইমাম মালেক (রহ.) থেকেও দু’-টো রিওয়ায়ত আছে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য রিওয়ায়ত উহাই যা জমহুরের মুতাবিক রয়েছে।

তৃতীয় : প্রশ্নে যে হাদীছের বরাত দেয়া হয়েছে উহা সহীহ, এতে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু এখানে কতক উসূল তথা মূলনীতির প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। 

  এক এই যে, যখন কোন বস্তু এক হাদীছ থেকে হারাম হওয়া প্রমাণিত হয় আর অপর হাদীছে তা মুবাহ বলে বুঝা যায়, তাহলে আহলে ইলমগণের মতে হারাম হওয়ার দিকই প্রাধান্য হবে। আর এ উসূল তথা মুলনীতিটি স্বয়ং ইরশাদে নবী (সা.) দ্বারাও প্রমাণিত।

وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشبهاب استبرَأَ لدِينهِ وعِرْضِهِ ومَنْ وقَعَ فِي الشبُّهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يَرْتَعَ فِيهِ الحديث (متفق عليه كما فى المشكوة ص : ২৪১)

অর্থাৎ ‘হযরত নু’মান বিন বাশীর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : হালালও স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। তবে হালাল ও হারামের মাঝে কিছু বিষয় আছে সন্দেহপূর্ণ। যা সম্পর্কে অনেক মানুষই অবহিত নয়। কাজেই যে ব্যক্তি সন্দেহ থেকে বেঁচে থাকে সে স্বীয় দ্বীন ও ঈমানকে সংরক্ষণ করে রাখলো। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে জড়িত হলো, সে হারামে লিপ্ত হয়ে গেল। যেমন কোন রাখাল তার জন্তু-জানোয়ারকে নিষিদ্ধ চারণভুমির আশপাশে চরাতে থাকলো তখন খুবই সম্ভাবনা থাকে যে, উক্ত নিষিদ্ধ চারণভূমিতে ঢুকে যাবে (ফলে শাস্তির উপযুক্ত হবে)।’’ আল হাদীছ

উক্ত উসূল তথা মূলনীতিকে সম্মুখে রেখে লক্ষ্য করলে প্রত্যক্ষ করা যায় যে, যে সব হাদীছ দ্বারা ঊরু সতর হওয়া প্রমাণিত হয় উহা প্রাধান্য হবে, সে সব রিওয়ায়তের উপর, যা থেকে এর বিপরীত ধারণার উদ্ভব হয়। সম্ভবতঃ ইমাম বুখারী (রহ.)ও حديث انس اسند وحديث جرهد احوط (ص : ৫৩ ج : ১) (হযরত আনাস (রা.) এর হাদীছ সনদের দিক দিয়ে প্রাধান্য এবং জারহাদের হাদীছে সাবধানতার দিক থেকে অবলম্বনযোগ্য) বলে উক্ত মূলনীতির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। 

দ্বিতীয় মূলনীতি এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ইরশাদ ও কর্মে যদি বাহ্যিকভাবে বিরোধ পূর্ণ দেখা যায়, তাহলে ইরশাদের প্রাধান্য হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ইরশাদসমূহ সকল উম্মতের জন্য ব্যাপক কানূন এবং তার কর্মসমূহে তার ব্যক্তিগত বিশেষত্ব কিংবা উযর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু বিভিন্ন হাদীছ শরীফে তিনি ঊরুকে সতর বলে ইরশাদ করেছেন, যা উম্মতের জন্য শরয়ী হুকুম; সেহেতু এর মুকাবালায় স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কর্ম দ্বারা দলীল পেশ করা সহীহ হবে না। 

তৃতীয় মুলনীতি এই যে, যদি শরীআত প্রবর্তক (রাসূল (সা.) এর ইরশাদকৃত কোন মূলনীতি ও কানূনের সঙ্গে কোন বিশেষ ঘটনার আংশিক বাহ্যিকভাবে বিরোধ হয় তাহলে বর্ণিত মূলনীতি ও কায়দায়ে কুল্লিয়াকে প্রাধান্য দেয়া হবে এবং বিশেষ ঘটনার কোন তাবীল তথা সামঞ্জস্যমূলক ব্যাখ্যা করা হবে। 
এই রূপ করা যাবে না যে, উক্ত বিশেষ ঘটনাকে উসূল এবং কানূন বানিয়ে শরীআত প্রবর্তক (রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ইরশাদকৃত উসূল ও কানূনকে সংশোধন করে নেবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি মূলনীতি ব্যাপকরূপে ইরশাদ করেছেন যে, الفخذ عورة (ঊরু সতর)। 
কাজেই এই উলূল তথা মূলনীতিকে মুহকাম’ তথা সুরক্ষিত রাখা হবে এবং হযরত আনাস (রা.) এর মধ্যে যে একটি বিশেষ ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে উহার কোন সামঞ্জস্য অর্থ গ্রহণ করা হবে। 
উদাহরণতঃ এর একটি অর্থ এই হতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইচ্ছাকৃত ঊরুর কাপড় সরাননি; বরং কাপড় উঠানোর সময় ঘটনাক্রমে ঊরু খুলে গিয়ে থাকবে। কেননা সহীহ মুসলিম এবং মুসনাদে আহমদ গ্রন্থের রিওয়ায়ত فانحسر শব্দটি রয়েছে অর্থাৎ ঊরু খুলে গেছে। 
আর এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, ঊরু সতর হওয়ার শরয়ী হুকুম উক্ত সময়ের পরে অবতীর্ণ হয়েছে।
ঊরু সতর হওয়ার বিষয়টি যেহেতু স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ইরশাদসমূহ দ্বারা প্রমাণিত, আর কোন বিশেষ স্থলে ঊরু খুলে যাওয়ার রিওয়ায়ত হচ্ছে রাবীর নিজ বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ইরশাদ নয়; সেহেতু রাবীর কোন আংশিক ঘটনা সম্পর্কে বর্ণিত বিওয়ায়তের উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ইরশাদ প্রাধান্য হবে।

চতুর্থ : ফিকহের চার ইমাম এবং অধিকাংশ ফকীহগণ একমত যে, ঊরু সতর। তবে হানাফীগণ হাঁটুকেও সতরের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেন। কেননা হযরত আলী (রা.) এর হদীছে (যদিও তা যঈফ সনদে বর্ণিত) হাঁটুকে সতর বলা হয়েছে। অধিকন্তু হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) এর হাদীছ الى ركبة (হাঁটু পর্যন্ত)-এর শব্দ থেকেও এর সাদৃশ্য মিলে। এ কারণেই হানাফীগণের মতে হাঁটুদ্বয় সতরের মধ্যে গণ্য করার বিষয়টি সাবধানতার চাহিদা বটে। এতদসত্ত্বেও হানাফী ইমামগণ বিভিন্ন রিওয়ায়ত সমূহের পরিপ্রেক্ষিতে সতরের তিনটি স্তর সাব্যস্ত করেছেন। 
❐ যেমন হিদায়া গ্রন্থের كتاب الكراهية فصل فى الوطء الخ এর মধ্যে রয়েছে যে, 

وحكم العورة فى الركبة اخف منه فى الفخذ اخف منه فى السوأة حتى ان كاشف الركبة عليه برفق وكاشف الفخذ يعنف عليه وكاشف السوأة يودب ان لج*

অর্থাৎ ‘হাঁটুর মধ্যে সতরের হুকুম ঊরুর তুলনায় শিথিল এবং ঊরুর মধ্যে সতরের হুকুম অন্যান্য গোপনীয় অঙ্গের তুলনায় শিথিল। কাজেই যদি কেউ হাঁটু উম্মুক্ত করে, তাহলে তাকে নম্রতার সঙ্গে বাধা দেবে। (আর যদি সে পুনরায় করতে থাকে তাহলে নীরবতা অবলম্বন করবে।) আর যদি কোন ব্যক্তি ঊরু উম্মুক্ত করে, তাহলে তাকে কঠোরভাবে বাধা দেয়া হবে। (কিন্তু যদি সে বারবার করতে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করবে না।) আর যদি কেউ গোপন অঙ্গ খুলে এবং তাকে বুঝালে বিরত না থাকে, তাহলে তাকে শাস্তি দেয়া হবে।

এ থেকে হানাফী ইমামগণের বিচক্ষণতা প্রকাশ পেয়ে যায় যে, একদিকে তো রসূলুল্লাহ (সা.) এর সত্তার সঙ্গে তাদের গভীর প্রেম ও ভালবাসার নিদর্শন এই যে, রসূলুল্লাহ (সা.) এর কোন ইরশাদ চাই যঈফ সনদে বর্ণিত হোক না কেন, তা অর্থহীন ছেড়ে দিতে রাজী নন। আর অপরদিকে তাদের হাকীকত তথা মূলতত্ত্ব পরিচয়ে এবং মর্যাদা জ্ঞানের অবস্থা হলো এই যে, রসূলুল্লাহ (সা.) থেকে যে বস্তু যে স্তরের বর্ণিত হয়েছে, তারা সে বস্তুকে সে মর্যাদাই দিয়ে থাকেন।

বাস্তব কথা হচ্ছে এই যে, নবী (সা.) এর হাদীছ সমূহের সমন্বয় সাধন এবং এর স্তর বিন্যাসের যে কাজ হানাফী ইমামগণ আঞ্জাম দিয়েছেন তা তুলনাহীন। কুরআন ও সুন্নতের সাগরের এই ডুবুরীর নাম تفقه فى الدين (দ্বীন বিশেষজ্ঞ)। যার সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলতেন : 

من اراد الفقه فهو عيال على ابى حنيفة رحمه الله

❐ অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি গভীর জ্ঞান অর্জনের ইচ্ছা রাখে সে ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর মুখাপেক্ষী।’’


❐ বি. দ্র. :  সন্মানিত পাঠকগণ আপনারা এই ব্লগ এর প্রতি দৃষ্টি রাখুন, কেননা এ বিষয়ে আরো অনেকগুলো দলীল বা প্রমাণ অচিরেই সংযোজিত হবে। 

✔ মহান আল্লাহ আমাদেরকে প্রত্যেকটি বিষয় দলীলসহ আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন


✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন