রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৫

আযান ও ইকামতের বাক্য নিয়ে মতানৈক্যের সমাধান

 আযান ও ইকামতের বাক্য নিয়ে মতানৈক্যের সমাধান
❖ প্রশ্ন : মুত্তাফাক আলাইহ এর হাদীছ শরীফে আযানের বাক্যগুলো জোড় জোড় এবং ইকামতের বাক্যগুলো বেজোড় পাঠ করার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে; কিংবা এইরুপ যে, যদি আযান তারজী অর্থাৎ আযানের যুগ্ম শব্দদ্বয়ের প্রথমটি নিন্ম এবং অপরটির উচ্চস্বরে পাঠ করা এর সঙ্গে দেয়া হয় তাহলে ইকামত জোড় জোড় বলা হবে। কাজেই প্রশ্ন হয় যে, আযান এবং ইকামত উভয়ই জোড় জোড় বলা হয়ে থাকে কোন দলীলের ভিত্তিতে ? হাদীছের কিতাবের বরাত দিয়ে স্পষ্টরুপে বর্ণনা দিন। এতদসঙ্গে তাও বর্ণনা করুন যে, শুদ্ধতার দিক দিয়ে কোন ধরনের আযান ও ইকামত উত্তম?

❖ জবাব : এ আলোচনায় কতক বিষয় আলোচনাযোগ্য।


░▒▓█►১। প্রশ্নপত্রে যেই মুত্তাফাক আলাইহি হাদীছের উল্লেখ রয়েছে তা হযরত আনাস রা. এর রিওয়ায়ত :
عن انس رضى الله عنه قال ذكروا النار والناقوس ، فذكروا اليهود و النصارى ، فامر بلال ان يشفع الاذان وان يوتر الاقامة ، قال اسماعيل فذكروا لايوب فقال الا الاقامة ـ (متفق عليه ، مشكوة ص : ৬৩)
অর্থাৎ হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন যে, সাহাবায়ে কিরাম রা. নামাযের ঘোষণা তথা আযানের জন্য অগ্নি জ্বালানো এবং ঘন্টা বাজানোর আলোচনা করলেন। তখন কেহ একে ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের প্রথা বলে উল্লেখ করলেন। অতঃপর হযরত বিলাল রা. কে হুকুম দেয়া হলো যে, আযান জোড়া জোড়া বলবে এবং ইকামত বে জোড় করে দেবে। ইসমাঈল বলেন, আমি এ হাদীছকে আয়ুবের নিকট উল্লেখ করি,তখন তিনি বললেন, তবে ইকামত।

░▒▓█►২। হযরত আনাস রা. এর উপরোক্ত রিওয়ায়ত শরীআতে আযান প্রবর্তকের প্রারম্ভিক ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ ঘটনার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এই যে, যখন রসুলুল্লাহ সা. মদীনা তাইয়াবায় তাশরীফ নিলেন তখন পরামর্শ হলো যে, নামায অনুষ্ঠানের সংবাদ প্রচারের জন্য কোন একটি তরীকা গ্রহন করা হোক। সে মতে কতক হযরত এই পরামর্শ দিলেন যে, খৃষ্টানদের ন্যায় ঘন্টা বাজানো হোক, কতক হযরত বললেন, ইয়াহুদের ন্যায় তুরী ডঙ্কা বাজানো হোক, আর কতক হযরত পরামর্শ দিলেন যে, কোন এক উচু স্থানে অগ্নি জালানো হোক। কিন্তু রসুলুল্লাহ সা. তন্মধ্যে কোনটিই পছন্দ করেননি। কেননা এসব বস্তুগুলো ক্রমানুসারে খৃষ্টান ইয়াহুদী এবং অগ্নিপুজকদের বিশেষ চিহ্ন ছিল। পরিশেষে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, উচ্চস্বরবিশিষ্ট কোন ব্যক্তিকে এলাকার অলি গলিতে পাঠানো হোক। তিনি الصلوة جامعة বলে ঘোষনা করে দিবেন। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ বিন আবদে রাব্বিহী রা. কে স্বপ্নযোগে একজন ফিরিশতা আযান ও ইকামত শিক্ষা দিলেন। তিনি রুসুলুল্লাহ সা. এর দরবারে এ স্বপ্নের কথা উল্লেখ করলেন। তিনি ইরশাদ করলেন যে, এটা সত্য স্বপ্ন। কাজেই তুমি এই বাক্যগুলো বিলাল রা. কে বলে দাও, সে আযান দেবে। কেননা তার গলার স্বর খুবই উচ্চ। ইহার পুরোপুরি ঘটনা হাদীছ শরীফসমুহে বর্ণিত হয়েছে। এর দিকেই হযরত আনাস রা.এর রিওয়ায়তের মধ্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

░▒▓█► ৩। এখন লক্ষণীয় বিষয় এই যে, ফিরিশতার শিক্ষা দেয়া আযান ও ইকামত যা অনূযায়ী আযান ও ইমাত বলার জন্য হযরত বিলাল রা. কে হুকুম দেয়া হয়েছিল। তা কিরুপ ছিল? এ বিষয়ে তো সকল রিওয়ায়ত সম্মত রয়েছে যে, ফিরিশতার শিক্ষা দেয়া আযানের বাক্যসমুহ পনেরটি ছিল। তবে ইকামতের ব্যাপারে বাহ্যিক রিওয়ায়তসমুহে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কেননা আবু দাউদ শরীফে باب كيف الاذان এর মধ্যে উভয় প্রকারের রিওয়ায়তসমুহ একত্রিত করা হয়েছে।
(ক) মুহাম্মদ বিন ইসহাক রহ. এর রিওয়ায়তের মধ্যে স্বয়ং স্বপ্নদর্শক হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ রা. থেকে আযানের বাক্যসমুহ পনের এবং ইকামতের বাক্যসমুহ এগারটি নকল করা হয়েছে। (৭১/৭২ পৃ:) ইমাম তিরমিযি রহ. হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ রা.এর এই হাদীছকে সংক্ষিপ্তভাবে নকল করে বলেন:
এই হাদীছ ইব্রাহীম বিন সাদ রহ. মুহাম্মদ ইসহাক রহ. এর রিওয়ায়ত থেকে পুর্নাঙ্গ এবং তা থেকে বিস্তারিত নকল করেছেন। আর তাতে আযানের বাক্যসমুহ দু’ দু’বার এবং ইকামত এক একবার উল্লেখ রয়েছে। (২৭ পৃ:)
(খ) কিন্তু আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা রহ. এর রিওয়ায়তে রয়েছে:

فقام على المسجد فاذن ثم قعد قعدة ثم قام مثلها الا انه يقول قد قامت الصلوة (ابو داؤد ج : ১ ص : ৭৪)

অর্থাৎ সে ফিরিশতা মসজিদের উপর দন্ডায়মান হলেন, অতঃপর তিনি আযান দিলেন। অতঃপর তিনি সামান্য সময় বসলেন। তারপর (পুনরায়) দন্ডায়মান হলেন এবং আযানের অনুরুপ শব্দগুলো বললেন। তবে তিনি এতে قد قامت الصلوة (নামায প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে) বাক্যটি সংযোজন করে বললেন। (সুনানে আবী দাউদ ১ম খন্ড, ৭৪ পৃ:)
এক রিওয়ায়তে আযানের বাক্যগুলো পৃথক পৃথক উল্লেখ করে এরুপ বলেছেন:

ثم امهل هنية ثم قام فقال مثلها الا انه قال زاد بعد حى على الفلاح ـ قد قامت الصلوة ، قد قامت الصلوة ( ص : ৭৫)

অর্থাৎ অতঃপর তিনি সামান্য সময় বসলেন। তারপর (পুনরায়) দাঁড়িয়ে সেইরুপ বাক্যগুলোই বললেন। কিন্তু حى على الفلاح  এরপর قد قامت الصلوة দু’বার সংযোজন করে বললেন। (৭৫ পৃ:)
এক রিওয়ায়তে হযরত আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা রহ. স্বপ্নদর্শক হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ রা. থেকে নকল করেন:
قال كان اذان رسول الله صلى الله عليه وسلم شفعا فى الاذان والاقامة (ترمذى ج : ১ ص : ২৭)
অর্থাৎ তিনি বলেন যে, রসুলুল্লাহ সা. এর আযানের বাক্যগুলো আযান ও ইকামতে দু’ দু’বার ছিল। (তিরমিযী ১ম খন্ড, ২৭ পৃ:)
ইবন আবী শায়বা রহ. এর রিওয়ায়তের মধ্যে রয়েছে যে, আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা রহ. বলেন :
حدثنا اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم ان عبد الله بن زيد الانصارى جاء الى النبى صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله ! رأيت فى المنام كأن رجلا قام وعليه بردان اخضران ـ فقام على حائط فاذن مثنى مثنى واقام مثنى مثنى (ج : ১ ص : ২০৩)
অর্থাৎ আমাদের নিকট মুহাম্মাদ সা. এর সাহাবাগণ রা. বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আল আনসারী রা. রসুলুল্লাহ সা. এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন ইয়া রসুলুল্লাহ সা. আমি স্বপ্নে প্রত্যক্ষ করেছি যে, যেন এক ব্যক্তি দন্ডায়মান হলেন, যিনি দুটো সবুজ রঙের চাদর পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর তিনি দেয়ালের উপর দাঁড়িয়ে আযানের বাক্যগুলো দু’ দু’বার বলছেন এবং ইকামতের বাক্যগুলোও দু’ দু’বার বলছেন।

নসবুর রায়া গ্রন্থের (১ম খন্ডের ২৬৭ পৃ:) এর মধ্যে উপরোক্ত রিওয়ায়তকে নকল করে হাফিয ইবন দাকীকুল ইদ রহ. থেকে নকল করেছেন :
وهذا رجال الصحيح ـ ومتصل على مذهب الجماعة فى عدالته الصحابة وان جهالة اسماءهم لاتضر ـ
          অর্থাৎ আর এই রিওয়ায়তের সনদের সকল রাবী হচ্ছেন সহীহ রিওয়ায়তের রাবী। আর মুহাদ্দিছীনের অভিমত অনুযায়ী ইহার সনদ মুত্তাসিল। কেননা, সকল সাহাবায়ে কিরাম (রা.) হলেন আদিল। কাজেই তাদের নাম অজানা থাকলেও ক্ষতির কোন কারণই নেই।’’
আর নসবুর রায়া গ্রন্থের হাশিয়ায় মহাল্লা বিন হাযম (রহ.) (৩য় খণ্ডের ১৫৮ পৃষ্ঠা) থেকে নকল করেছেন :
وهذا اسناد فى غاية الصحة من اسناد الكوفيين ـ
অর্থাৎ আর এই সনদ হচ্ছে কুফাবাসীদের সনদসমুহের মধ্যে থেকে অতীব সহীহ সনদ।

░▒▓█►৪। এই (আযান ওইকামত সম্পর্কিত) রিওয়ায়তসমুহের প্রথম রিওয়ায়তটি আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা রহ. حدثنا اصحابنا বলেছেন, দ্বিতীয় রিওয়ায়তটিতে عن معاذ بن جبل তৃতীয় রিওয়ায়তটিতে عن عبد الله بن زيد الانصارى এবং চতুর্থ রিওয়ায়তটিতে حدثنا اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم বলেছেন।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় রিওয়ায়তদ্বয়ের ব্যাপারে মুহাদ্দিছীন রহ. এই প্রশ্ন করেছেন যে, আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা রহ. হযরত মু’আয বিন জবালে রা. এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আল আনসারী রা. এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়নি বলে তাদরে থেকে রিওয়ায়ত শ্রবনের সুযোগ হয়নি। কাজেই এই রিওয়ায়তদ্বয় মুনকাতি হয়। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এই যে, হযরত আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা রহ. অধিকাংশ হযরাতে সাহাবায়ে কিরাম রা. থেকে সরাসরি মুতাওয়াতির রুপে হাদীছ শ্রবন করেছেন। এ কারনেই তিনি সাহাবী কিরাম রা. এর মধ্যে থেকে কারো নাম উল্লেখপুর্বক তার থেকে রিওয়ায়ত করতেন না বরং কখনো حدثنا اصحابنا. বলেছেন আর কখনো حدثنا اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم বলে থাকেন।
যাইহোক যেহেতু এ ঘটনা হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আল আনসারী রা. এর সঙ্গে সম্পর্কশীল সেহেতু তিনি কখনো ইরসাল রুপে অর্থাৎ মধ্যস্থ রাবীগনের নাম উল্লেখ না করে সরাসরি তার দিকে সম্বন্ধ করে বর্ণনা করে দিতেন। আর যেহেতু এতে হযরত মুআয বিন জাবাল রা. এর ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে সেহেতু কোনা কোন সময় ইরসালরুপে তার দিকেও সম্বন্ধ করে বর্ণনা করেছেন। কাজেই তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আনসারী রা. এবং হযরত মুআয বিন জাবাল রা. থেকে যদিও সরাসরি হাদীছ গ্রহন করেননি, তাসত্ত্বেও যেহেতু তিনি কোন তাবেঈ রহ. থেকে নয় বরং কেবল সাহাবায়ে কিরাম রা. এর মধ্যস্থতায় ই হাদীছ নকল করেছেন সেহেতু তার ইরসাল কোনরুপ ক্ষতিকর নয়।

░▒▓█►৫। উক্ত রিওয়াতসমুহে ইকামমতের বাক্যগুলো সম্পর্কে বাহিকভাবে পার্থক্য মনে হয়, কিন্তু ঘটনার দিক দিয়ে তাতে কোন পার্থক্য নেই বরং ইকামতের বাক্যগুলো ঠিক উহাই, যা আযানের বাক্যসমুহ ছিল। কিন্তু এতে قد قامت الصلوة এর সংযোজন ছিল। যেমন, বিভিন্ন রিওয়ায়তসমুহে র্বণনা হয়েছে। সুতরাং যেসব রিওয়ায়তে এ ঘটনার উল্লেখ করে ইকামতের বাক্যসমুহ এককভাবে উল্লেখ করা হয়ছে তা সংক্ষিপ্ততার উপর প্রয়োগ হবে অর্থাৎ তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত বলে বুঝতে হবে।

░▒▓█►৬। হযরত বিলাল রা. এর আযান ও ইকামত যেহেতু ফিরিশতা কর্তৃক শিক্ষা দেয়া আযান ও ইকামত মুতাবিক ছিল সেহেতু তার আযান তারজী বিহীন পনের বাক্য সম্বলিত ছিল। আর ইকামত
قد قامت الصلوة قد قامت الصلوة
বাক্যদ্বয়সহ সর্বমোট সতেরটি বাক্য সম্বলিত ছিল। যেমন ইতিপুর্বে হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আনসারী রা. এর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। আর মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক রহ. (১ম খন্ডের, ৪৬২ পৃ:) এর মধ্যে হযরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ তাবেই রহ. থেকে রিওয়ায়ত  আছে :
ان بلالا كان يثنى الاذان ويثنى الاقامة (نصب الراية ص : ২৬৯ ج : ১)
অর্থাৎ হযরত বিলাল রা. আযান ও ইকামতের বাক্যসমুহ দু’ দু’বার করে বলতেন। (নসবুর রায়া ১ম খন্ড, ২৬৯ পৃ:)
আর সুনানে দারা কুতনী গ্রন্থে রিওয়ায়ত আছে :
ان بلالا كان يؤذن للنبى صلى الله عليه وسلم مثنى مثنى ويقيم مثنى مثنى (حواله مذكور)
অর্থাৎ হযরত বিলাল রা. রসুলুল্লাহ সা. এর সামনে আযান ও ইকামতের বাক্যসমুহ দু’ দু’বার করে বলতেন। (উপরোক্ত বরাত)
উল্লিখিত রিওয়ায়তের একজন রাবী হযরত যিয়াদ বিন আবদিল্লাহ আল বুকায়ী রহ. সম্বন্ধে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। কিন্তু আমাদের এতটুকুই যথেষ্ট যে, তিনি সহীহায়ন (তথা বুখারী ও মুসলিম) এর রাবী ছিলেন। হাফিয নুরুদ্দীন রহ. উক্ত হাদীছ কে তাবরানী এর মুজামে আওসাত এবং কবীর এর বরাতে নকল করে লিখেছেন ورجاله ثقات আর উহার সকল রাবী ছিকাহ তথা নির্ভযোগ্য। (মাজামাউয যাওয়ায়িদ ১ম খন্ড ৩৩০ পৃ:)

░▒▓█►৭। আর রসুলুল্লাহ সা. হযরত আবু মাহযুরা রা. কেও ইকামতের সতেরটি বাক্যর শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন:
علمنى رسول الله صلى الله عليه وسلم الاذان تسع عشرة كلمة والاقامة سبع عشرة كلمة (ابو داود ج : ১ ص : ৭৩ ، نسائى ج : ১ ص : ১০৩ ، ترمذى ج : ১ ص : ২৭ ، ابن ماجه ص : ৫২).
অর্থাৎ হযরত আবু মাহযুরা রা. বলেন, আমাকে রসুলুল্লাহ সা. স্বয়ং আযানের উনিশটি বাক্য এবং ইকামতের সতেরটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, হযরত আবু মাহযুরা রা. এর আযানের মধ্যে তারজী হওয়া কেবল তারই বৈশিষ্ট ছিল। নতুবা ফতহে মক্কার পরও হযরত বিলাল রা. এর আযান তারজী বিহীন ছিল।

░▒▓█►৮। ইকামত যেহেতু বস্তুতভাবে সতের বাক্যবিশিষ্ট শরীআত সম্মতভাবে নির্ধারিত হয়েছে এবং মদীনায় হযরত বিলাল রা. এবং মক্কায় হযরত আবু মাহযুরা রা. সতের বাক্যবিশিষ্ট ইকামত ই বলতেন সেহেতু একে আসল সুন্নত বলে গন্য করা হবে। আর ইকামতকে এক একবার বলার বিষয়টি জায়েজ বর্ণনার উপর প্রয়োগ করা হবে। অথবা যে সকল রিওয়ায়তের আযানকে জোড়া জোড়া এবং ইকামতকে এক একবার হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে, সে সকল রিওয়ায়তের মর্ম এই নেয়া হবে যে, আযানের বাক্রসমুহ পৃথক পৃথক বলা হবে এবং ইকামতের বাক্যসমুহ দু দুবার মিলিয়ে বলা হবে।
আর প্রশ্নপত্রে যে ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে যে, যদি আযান তারজী এর সঙ্গে দেয়া হয়, তাহলে ইকামত জোড় জোড় বলা হবে। এ অভিমতটি শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারীগনের মধ্যে থেকে ইমাম ইবন খুযায়মা রহ. পেশ করেছিলেন। কিন্তু একে স্বয়ং শাফেয়ী মতাবলম্বীগনই গ্রহন করেননি। সুতরাং অন্যান্য হযরত একে গ্রহন করার তো কোন প্রশ্নই আসে না। এ জন্যই হাদীছ ও আছারসমুহের দৃষ্টিতে ইহাই প্রাধ্যান্য হয় যে, আযানের বাক্যসমুহ তারজী বিহীন পনের এবং ইকামতের বাক্যসমুহ قد قامت الصلوة দুবার সংযোজনসমহ সতেরটি হয়। যেমন, ইমাম তহাভী রহ. স্বীয় শরহে মাআনিল আছার গ্রন্থে নকল করেছেন যে, হযরত সালমা বিন আকওয়া রা. এবং রসুলুল্লাহ সা. এর খাদিম ছাওবান রা. উভয়ই আযান ও ইকামত দু দুবার বলতেন। আর হযরত মুজাহিদ তাবেঈ রহ. থেকে নকল করেছেন যে, ইকামতের বাক্যসমুহ এক একবার বলা এমন বস্তু, যা আমীরগন আবিস্কার করেছেন।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ১ম খন্ড ৪৬৩ পৃ:, আমানিল আহবার শরওহে মাআনিল আছার ২য় খন্ড ২২৫ পৃ:)
আমানিল আহবার শরহে মাআনিল আছার (২য় খন্ড ২২৫ পৃ:) এর মধ্যে মুসান্নাফা ইবন আবী শায়বা রহ. এর বরাতে নকল করেছেন:
. ان عليا رضى الله عنه كان يقول الاذان مثنى والاقامة واتى على موذن يقيم مرة مرة فقال الا جعلتها مثنى * لا امك لك
অর্থাৎ হযরত আলী রা. বলতেন যে, আযানের বাক্যসমুহ দু দুবার হয়ে থাকে এবং ইকামতেরও। আর তিনি একদা একজন মুয়াযযিন এর নিকট আসলেন, যিনি ইকামতের বাক্যগুলো এক একবার বলতেন। তখন হযরত আলী রা. বললেন: তুমি ইকামতের বাক্যগুলো দু দুবার বলছো না কেন? তোমার মা না হোক।
আর বায়হাকী খিলাফিয়াত এর বরাতে নকল করেছেন যে, হযরত ইব্রাহীম নাখয়ী রহ. বলতেন যে, যে ব্যক্তি ইকামতকে সর্বপ্রথম হ্রাস করেছেন তিনি হলেন হযরত মুআবিয়া রা.।

░▒▓█►৯। আযান ও ইকামত এর বাক্যসমুহের সংখ্যা সম্পর্কে যে মতানৈক্য রয়েছে তা প্রাধান্য এবং অপ্রাধান্যর মতানৈক্য। ইমাম আবু হানীফা রহ. ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ. আহলে কুফা এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. হাদীছ ও আছারসমুহের ভিত্তিতে আযানের পনের এবং  ইকামতের সতের বাক্যকে প্রাধ্যান্য দেন। এ সকল হযরাতের নিকট আযানে তারজী এবং ইকামতে এক একবার ও জায়েয আছে।
والله اعلم بالصواب

✔ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ফেৎনা সৃষ্টি না করে সঠিক দ্বীন বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন

❐ বি. দ্র. :  সন্মানিত পাঠকগণ আপনারা এই বগ্ল এর প্রতি দৃষ্টি রাখুন, কেননা এ বিষয়ে আরো অনেকগুলো দলীল বা প্রমাণ অচিরেই সংযোজিত হবে। 

 ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন