হানাফী মাযহাব অনুসারে ফজরের সুন্নাত সংক্রান্ত বিধান এর কোন দলীল আছে কি?
❁ প্রশ্ন : জামাআতে নামায অনুষ্ঠানের জন্য ইকামত হয়ে গেলে নিকটবর্তী স্থলে অন্য কোন নামায হয় না, তাহলে ফজরের সুন্নত নামায কেন তখনও পড়া হয় যখন ফরয নামায আরম্ভ হয়? হাদীছের দৃষ্টিতে তো নামায হয়নি? আর মসজিদের কোন কোণে পড়ে নেয়ার সময় কি ইমামের কিরাআতের স্বর তার কানে পৌঁছে পরস্পর আঘাত করবে না?
❀ জবাব : এ মাসয়ালায় দু’ দিক থেকে বিরোধ, যে কারণে কোন এক দিক গ্রহণ করলেই আপত্তি উঠে। একটি হলো এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) অসংখ্য হাদীছ শরীফে ফজরের সুন্নতের প্রতি অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এ কারণেই উম্মতের সর্বসম্মত মতে ফরয ও বিতর নামাযের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফজরের সুন্নত নামায।
দ্বিতীয় এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাযের জামাআতে শরীক হওয়ারও অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। কাজেই এখন যদি কোন ব্যক্তি এমন সময়ে মসজিদে উপস্থিত হয় যে তখন জামাআত দাঁড়িয়ে গিয়েছে অথচ সে ফজরের সুন্নত নামায পড়েনি। যদি সে ফজরের সুন্নতকে পরিত্যাগ করে তাহলে সে সব হাদীছের বিপরীত করা অপরিহার্য হয়, যে সব হাদীছ শরীফের ফজরের সুন্নতের প্রতি তাকীদ করার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
আর যদি ফজরের সুন্নত আদায় করার মধ্যে ব্যস্ত হয়, তাহলে জামাআতে নামায আদায় তাকীদ সম্পর্কিত হাদীছ সমূহের বিপরীত করা অত্যাবশ্যক হয়।
হানাফী ইমামগণ উভয় দিকের গুরুত্বকে সম্মুখে রেখে মধ্যম একটি ফায়সালা করেছেন যে, যদি সে ব্যক্তির ফজরের অন্ততঃ এক রাকআত পাওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস থাকে, তাহলে উভয় দিকের হাদীছের উপর আমল করবে।
প্রথমে মসজিদের এক পাশ্বে সুন্নত আদায় করে নিবে, এরপরে জামাআতে শরীক হয়ে যাবে। আর যদি এ ধারণা হয় যে, ফজরের সুন্নত আদায় করতে গেলে আমাআত শেষ হয়ে যাবে, তাহলে জামাআতে শরীক হয়ে যাবে এবং সুন্নত নামায সূর্য উদয়ের পরে পড়বে।
(কেননা ফজরের নামাযের পর সূর্য উদয় পর্যন্ত সময়ে নফল নামায পড়তে মুতাওয়াতির হাদীছ শরীফসমূহে নিষেধ এসেছে। সালাফি সালিহীনের আমলও এ সম্বন্ধে বিভিন্ন রয়েছে।)
░▒▓█►হানাফীগণের সমর্থনে নিন্মলিখিত আছারে সাহাবায়ে কিরাম (রা.) রয়েছে◄█▓▒░
(1) مصنف
عبد الرزاق الصنعاني (2/ 444)
4021 - عَنْ
أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي مُوسَى قَالَ: «جَاءَنَا ابْنُ مَسْعُودٍ
وَالْإِمَامُ يُصَلِّي الْفَجْرَ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ إِلَى سَارِيَةٍ، وَلَمْ يَكُنْ
صَلَّى رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ» عَبْدُ الرَّزَّاقِ،
✏ অর্থাৎ ‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবী মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) আমাদের নিকট এমন সময় আসলেন যখন ইমাম নামায পড়াচ্ছিলেন। তখন তিনি স্তম্ভের পিছনে দু’ রাকআত নামায পড়লেন। কেননা তিনি ফজরের সুন্নত নামায পূর্বে পড়েন নি।’’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-2/444, হাদীস-4021)
(2) مصنف
ابن أبي شيبة (2/ 57)
6415
-
حَدَّثَنَا ابْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ مُطَرِّفٍ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ حَارِثَةَ
بْنِ مُضَرِّبٍ، «أَنَّ ابْنَ مَسْعُودٍ، وَأَبَا مُوسَى، خَرَجَا مِنْ عِنْدِ سَعِيدِ
بْنِ الْعَاصِي فَأُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَرَكَعَ ابْنُ مَسْعُودٍ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ
دَخَلَ مَعَ الْقَوْمِ فِي الصَّلَاةِ، وَأَمَّا أَبُو مُوسَى فَدَخَلَ فِي الصَّفِّ»
✏ অর্থাৎ ‘হযরত হারিছা বিন মুযাররাব (রহ.) বলেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) এবং আবূ মূসা আশআরী (রা.) উভয়ই হযরত সাঈদ বিন আস (রা.) এর নিকট থেকে বের হয়ে আসলেন , এমতাবস্থায় যে, জামাআত দাঁড়িয়ে গিয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) দু’ রাকআত (ফজরের সুন্নত ) নামায আদায় করে জামাআতে শামিল হলেন। আর হযরত আবূ মূসা আশআরী (রা.) এসেই জামাআতে শামিল হয়ে গেলেন।’’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-2/57, হাদীস-6415)
(3) مصنف
عبد الرزاق الصنعاني (2/ 443)
4020
-
عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ مُوسَى قَالَ: بَلَغَنَا،
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: «نَعَمْ وَاللَّهِ، لَئِنْ دَخَلْتُ
وَالنَّاسُ فِي الصَّلَاةِ لَأَعْمِدَنَّ إِلَى سَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي الْمَسْجِدِ،
ثُمَّ لَأَرْكَعَنَّهُمَا ثُمَّ لَأُكْمِلَنَّهُمَا، ثُمَّ لَا أَعْجَلُ عَنْ إِكْمَالِهِمَا،
ثُمَّ أَمْشِي إِلَى النَّاسِ فَأُصَلِّي مَعَ النَّاسِ الصُّبْحَ»
✏ অর্থাৎ ‘‘হযরত আবূ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন যে, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! আমি যদি এমন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করি যে সময় মানুষ জামাআতে দাঁড়িয়ে গিয়েছে তখন আমি মসজিদের স্তম্ভসমূহের কোন এক স্তম্ভের পশ্চাতে গিয়ে ফজরের দু’ রাকআত সুন্নত নামায কামিল তরীকায় আদায় করবো এবং এতে তাড়াহুড়া করবো না। অতঃপর অন্যান্য লোকদের সঙ্গে নামাযের জামআতে শরীক হবো।’’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-2/443, হাদীস-4020)
(4) مصنف
ابن أبي شيبة (2/ 57)
6421
-
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ أَبِي مَالِكٍ، عَنْ أَبِي
عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ: «إِنِّي لَأَجِيءُ إِلَى الْقَوْمِ
وَهُمْ صُفُوفٌ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ فَأُصَلِّي الرَّكْعَتَيْنِ، ثُمَّ أَنْضَمُّ
إِلَيْهِمْ»
✏ অর্থাৎ ‘হযরত আবূ দারদা (রা.) বলেন যে, আমি মানুষের কাছে এমন সময়ও যেয়ে থাকি যখন তারা ফজরের নামাযের কাতার বেঁধে দাড়িয়ে যায়, তখন আমি ফজরের দু’ রাকআত সুন্নত নামায পড়ে জামাআতে শরীক হই।’’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-2/57, হাদীস-6421)
(5) مصنف
ابن أبي شيبة (2/ 56)
عن
ابن عمر رضى الله عنهما انه كان يدخل فى الصلوة تارة واخرى يصليها فى جانب المسجد*
✏ অর্থাৎ ‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) কোন সময় এসেই জামাআতে শামিল হয়ে যেতেন আর কোন সময় মসজিদের এক কোণে সুন্নত পড়ে নিতেন।’’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-2/56)
(6) مصنف ابن أبي شيبة (2/ 56)
6412
-
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ: أنا حُصَيْنٌ، وَابْنُ
عَوْنٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ مَسْرُوقٍ «أَنَّهُ دَخَلَ الْمَسْجِدَ وَالْقَوْمُ
فِي صَلَاةِ الْغَدَاةِ وَلَمْ يَكُنْ صَلَّى الرَّكْعَتَيْنِ، فَصَلَّاهُمَا فِي نَاحِيَةٍ،
ثُمَّ دَخَلَ مَعَ الْقَوْمِ فِي صَلَاتِهِمْ».
✏ অর্থাৎ ‘হযরত শা’বী (রহ.) বলেন যে, হযরত মাসরুক (রহ.) এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করলেন যখন মানুষ প্রভাতের (ফজরের) নামাযের জামাআতে ছিলো। তিনি ফজরের সুন্নত নামায পড়েননি বলে মসজিদের এক কোণে সুন্নত নামায পড়ে জামাআতে শরীক হলেন।’’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-2/56, হাদীস-6412)
(7) مصنف
عبد الرزاق الصنعاني (2/ 445)
4025
-
عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ، عَنِ الْحَسَنِ قَالَ: «إِذَا دَخَلْتَ الْمَسْجِدَ وَالْإِمَامُ
فِي الصَّلَاةِ، وَلَمْ تَكُنْ رَكَعْتَ رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ، فَصَلِّهِمَا ثُمَّ
ادْخَلْ مَعَ الْإِمَامِ»،
✏ অর্থাৎ ‘হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন যে, তুমি যদি মসজিদে এমন সময় প্রবেশ কর যখন ইমাম জামাআতে নামায রত রয়েছেন। অথচ তুমি ফজরের সুন্নত নামায পড়নি, তাহলে প্রথমে দু’ রাকআত সুন্নত নামায পড়ে ইমামের সঙ্গে শরীক হও।’’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-2/445, হাদীস-4025)
(8) مصنف
عبد الرزاق الصنعاني (2/ 443)
4017
-
عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، دَخَلَ الْمَسْجِدَ
وَالْقَوْمُ فِي الصَّلَاةِ، وَلَمْ يَكُنْ صَلَّى رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ، فَدَخَلَ
مَعَ الْقَوْمِ فِي صَلَاتِهِمْ، ثُمَّ قَعَدَ، حَتَّى إِذَا أَشْرَقَتْ لَهُ الشَّمْسُ
قَضَاهَا قَالَ: «وَكَانَ إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ وَهُوَ فِي الطُّرُقِ صَلَّاهُمَا
فِي الطَّرِيقِ».
✏ অর্থাৎ ‘হযরত নাফি’ (রহ.) বলেন যে, হযরত ইবনে উমর (রা.) মসজিদে প্রবেশ করলেন, যখন জামাআত দাঁড়িয়ে ছিল। আর তিনি ফজরের সুন্নত না পড়ে জামাআতে শামিল হয়ে গেলেন। অতঃপর যখন পূর্ণভাবে সূর্য উদয় হলো তখন তিনি সুন্নতের কাযা পড়ে নিলেন। রাবী হযরত নাফি’ (রহ.) বলেন যে, হযরত ইবনে উমর (রা.) এর এই আমল ছিল যে, যদি রাস্তায় ইকামত হয়ে যেতো তাহলে
তিনি রাস্তায়ই সুন্নত পড়ে নিতেন।’’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-2/443, হাদীস-4017)
❐ উপরোক্ত আছার (তথা সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর বাণী ও আমলসমূহ) দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, হানাফী ইমামগণ সেই তরীকা গ্রহণ করেছেন যা হযরত উমর (রা.) এর যুগে সাহাবায়ে কিরাম (রা.) এর আমল ছিল। আর যা ফকীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.), হাকীমুল উম্মত হযরত আবূ দারদা (রা.) এবং শায়খুল মদীনা হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) গ্রহন করেছেন। প্রকাশ্য যে, এ সকল সম্মানিত বিশেজ্ঞ বুযুর্গ ব্যক্তিবর্গ রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্র ইরশাদসমূহ থেকে অনবহিত ছিলেন না।
❐ বি. দ্র. : সন্মানিত পাঠকগণ আপনারা এই ব্লগ এর প্রতি দৃষ্টি রাখুন, কেননা এ বিষয়ে আরো অনেকগুলো দলীল বা প্রমাণ অচিরেই সংযোজিত হবে।
✔ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দলীল সহকারে দ্বীন বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন
✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন