আমীর/শাসনকর্তা/নেতার সব নির্দেশ মানা যাবে কি?
❀(কোরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা)❀
❏ জীবনে চলার পথে দ্বীন ও দুনিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে, অনেককেই চলতে হয় আমীর বা নেতার অনুস্মরন করে। তার মাঝে আমীর বা নেতার সঠিক জ্ঞান না থাকার কারনে অনেক সময় নির্দেশ দিয়ে থাকে অনৈসলামি বিভিন্ন কাজের, যার অনুস্মরনে অনেকেই নিজ অজান্তে হয়ে উঠে পাপিষ্ঠ ব্যক্তি রূপে। অথচ পবিত্র কোরআন ও হাদীসের মাঝে আমীর বা নেতার শুধু সৎ নির্দেশের অনুস্মরন করার হুকুম দেয়া হয়েছে। যেমন
✏ মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন-
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ} [النساء: 59]
অর্থ : হে ঈমানদারগণ ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক (আমির) তাদের.....। (সূরা আন-নিসা-৫৯)।
✏ হাদীস এর মাঝে রাসূল (সা.) আমীরদের ন্যায় কাজে অনুস্মরন করার বিষয়ে বলেন-
✏ হাদীস এর মাঝে রাসূল (সা.) আমীরদের ন্যায় কাজে অনুস্মরন করার বিষয়ে বলেন-
سنن ابن ماجه (1/ 15)
42 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ بَشِيرِ بْنِ ذَكْوَانَ الدِّمَشْقِيُّ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْعَلَاءِ يَعْنِي ابْنَ زَبْرٍ قَالَ: حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ أَبِي الْمُطَاعِ، قَالَ: سَمِعْتُ الْعِرْبَاضَ بْنَ سَارِيَةَ، يَقُولُ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً، .......... فَقَالَ: «عَلَيْكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا،..........الخ
অর্থ : ইয়াহইয়া ইবনু আবীল মুতা বলেন, আমি ইরবাস ইবনে সারিয়া (রা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের মাঝে দণ্ডায়মান হলেন, অতঃপর আমাদেরকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নসীহত করলেন........এবং বললেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমির/নেতার কথা শুনো ও অনুস্মরন কর, যদিও সে একজন হাবশী গোলাম হয়........। ইবন মাজা-১/১৫, হাদীস-৪২। হাদীসটি সহীহ।
❀ ব্যাখ্যা : উপরে কোরআন ও সুন্নাহের মাঝে আমির/নেতার অনুস্মরনের কথা বলা হয়েছে, তা শুধু ন্যায় ও বৈধ কাজের মাঝে। কোন অবৈধ কাজের মাঝে অনুস্মরন করা যাবেনা। কেন যাবে না?
✏ দেখুন এ সংক্রান্ত একটি হাদীস-
❀ ব্যাখ্যা : উপরে কোরআন ও সুন্নাহের মাঝে আমির/নেতার অনুস্মরনের কথা বলা হয়েছে, তা শুধু ন্যায় ও বৈধ কাজের মাঝে। কোন অবৈধ কাজের মাঝে অনুস্মরন করা যাবেনা। কেন যাবে না?
✏ দেখুন এ সংক্রান্ত একটি হাদীস-
صحيح البخاري (9/ 88)
7257 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ زُبَيْدٍ، عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَيْدَةَ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ جَيْشًا، وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ رَجُلًا فَأَوْقَدَ نَارًا وَقَالَ: ادْخُلُوهَا، فَأَرَادُوا أَنْ يَدْخُلُوهَا، وَقَالَ آخَرُونَ: إِنَّمَا فَرَرْنَا مِنْهَا، فَذَكَرُوا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لِلَّذِينَ أَرَادُوا أَنْ يَدْخُلُوهَا: «لَوْ دَخَلُوهَا لَمْ يَزَالُوا فِيهَا إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ»، وَقَالَ لِلْآخَرِينَ: «لاَ طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةٍ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي المَعْرُوفِ»
অর্থ : হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি ক্ষুদ্র সেনাদল প্রেরণ করলেন এবং এক ব্যক্তিকে তাদের আমীর নিযুক্ত করে দিলেন। তিনি (আমীর) অগ্নিকুণ্ড প্রজ্বলিত করে বললেন, তোমরা এতে প্রবেশ কর। কতিপয় লোক (আমীরের আনুগত্যের মানসে) তাতে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল। এ সময় অন্যরা বলল, আমরা তো (ইসলাম গ্রহণ করে) আগুণ থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে চেয়েছি। পরে তারা এ ঘটনা নবী (সা.) এর নিকট ব্যক্ত করলেন। তখন তিনি যাঁরা আগুনে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন : যদি তারা তাতে প্রবেশ করত তাহলে কিয়ামত পর্যন্তই সেখানে থাকত। আর অন্যদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন : আল্লাহর নাফরমানীর কাজে কোনরূপ আনুগত্য নেই। আনুগত্য করতে হয় কেবলমাত্র বৈধ কাজে। সহীহ বুখারী-৯/৮৮, হাদীস-৭২৫৭।
❀ উল্লেখ্য যে, যেই সব নেতা বা আমির কর্মিদেরকে অবৈধ ও শয়তানী কাজের হুকুম দেয়, এবং তারাও অনুস্মরণ করে। তাদের আখেরাতে কি পরিণাম হবে সে সংক্রান্তে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে নেতা ও কর্মিদের আচরণ তুলে ধরেছেন।
✏ দেখুন যখন নেতাদেরকে বলা হবে তোমরা কেন তাদেরকে শয়তানী কাজের নির্দেশ দিয়েছ। এ সংক্রান্তে প্রশ্ন করা হলে তারা বলবে-
❀ উল্লেখ্য যে, যেই সব নেতা বা আমির কর্মিদেরকে অবৈধ ও শয়তানী কাজের হুকুম দেয়, এবং তারাও অনুস্মরণ করে। তাদের আখেরাতে কি পরিণাম হবে সে সংক্রান্তে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে নেতা ও কর্মিদের আচরণ তুলে ধরেছেন।
✏ দেখুন যখন নেতাদেরকে বলা হবে তোমরা কেন তাদেরকে শয়তানী কাজের নির্দেশ দিয়েছ। এ সংক্রান্তে প্রশ্ন করা হলে তারা বলবে-
إِلَّا أَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوا أَنْفُسَكُمْ [إبراهيم: 22]
অর্থ : তোমদের উপরতো আমাদের কোন ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু এতটুকু যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছি, (কোরআন হাদীস ও কোন মুমীনের উপমা বিহিন) অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছ। অতএব তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না এবং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর। সূরা ইব্রাহীম-২২।
✏ এখন দেখুন কর্মিদের কথাবার্তা, যখন তাদেরকে বলা হবে তোমরা কেন এ ধরনের অপকর্ম করেছো তখন তারা বলবে-
✏ এখন দেখুন কর্মিদের কথাবার্তা, যখন তাদেরকে বলা হবে তোমরা কেন এ ধরনের অপকর্ম করেছো তখন তারা বলবে-
{وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا} [الأحزاب: 67]
অর্থ : হে আমাদের পালকর্তা ! আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। (সূরা আল আহযাব-৬৭)।
✏ অতঃপর মহান আল্লাহ এই সব খারাপ নেতা ও কর্মি দু’জনেরই জাহান্নামের ফয়সালা করবেন।তখন তাদের আচরনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন-
✏ অতঃপর মহান আল্লাহ এই সব খারাপ নেতা ও কর্মি দু’জনেরই জাহান্নামের ফয়সালা করবেন।তখন তাদের আচরনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন-
{وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا رَبَّنَا أَرِنَا اللَّذَيْنِ أَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ أَقْدَامِنَا لِيَكُونَا مِنَ الْأَسْفَلِينَ (29) } [فصلت: 29]
অর্থ : আর যারা কুফুরী (অপকর্ম) কাজ করেছে, তারা বলবে হে আমাদের পালনকর্তা ! যেসব জ্বিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়। (সূরা হা-মীম সেজদাহ-২৯)।
✔ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমির এবং নেতাদের সঠিক বিধান অনুস্মরণ ও ভ্রান্ত আদেশ প্রত্যাহার করে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন