ইহকালের ফেৎনা ছাড়িয়ে পরকালে এখন সালাফীগণ !
❖ প্রশ্ন : আমাদের কতক আহলে হাদীস ভাই বলে থাকেন, প্রচলিত নিয়ম অনুসারে ‘‘মৃত ব্যক্তিকে কবরে রেখে যখন মাটি দেয়া হয়, তখন সাধারণ ভাবে তিন ধাপে মাটি দেয়া হয় ও পবিত্র কোরআনের {مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى} [طه: 55] সূরা ত্বহা এর ৫৫ নং আয়াতটি পড়া হয়’’ এ আমলটির নাকি কোন ভিত্তি নেই? আহলে হাদীস ভাইদের মহাগুরু শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী তার রচিত কিতাব ‘আহকামুল জানায়েয’’ এর ১৫৩ নং পৃষ্ঠায়ও উক্ত আমলটির ভিত্তি নেই বলে উল্লেখ করেছেন। এখন জানার বিষয় হলো আসলে কি এর কোন ভিত্তি আছে কি নেই ?
❖ জবাব : উক্ত আমলটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং এর সম্পূর্ণ ভিত্তি রয়েছে। নিন্মে বিস্তারিত আলোচনা দেখুন।
#এখানে দুটি বিষয় আলোচনাযোগ্য (১) তিন ধাপে মাটি দেয়া (২) মাটি দেয়ার (ফাযায়েলের প্রতি লক্ষ রেখে) সময়ে সূরা ত্বহার ৫৫ নং আয়াত مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى পড়া।
✏ ০১ : তিনধাপে মাটি দেয়ার দলীল-
سنن ابن ماجه (1/ 499)
1565 - حَدَّثَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ الْوَلِيدِ الدِّمَشْقِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ صَالِحٍ قَالَ: حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ كُلْثُومٍ قَالَ: حَدَّثَنَا الْأَوْزَاعِيُّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، «صَلَّى عَلَى جِنَازَةٍ، ثُمَّ أَتَى قَبْرَ الْمَيِّتِ، فَحَثَى عَلَيْهِ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ ثَلَاثًا»
__________
[حكم الألباني]
صحيح
قال الشيخ الألباني: صحيح
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এক ব্যক্তির জানাযা পড়ালেন, অতঃপর তার কবরে এসে তার মাথার দিক থেকে দিন বার মাটি দিলেন। ইবনে মাজা-১/৪৯৯, হাদীস-১৫৬৫।
উক্ত হাদীস থেকে আমরা স্পষ্ট যে, তিন ধাপে মাটি দেয়ার দলীল হাদীস থেকে প্রমাণিত।
❀ হাদীসটির মান :
জরাহ ও তাদীলের বিখ্যাত ইমাম ও সহীহ বুখরীর বিখ্যাত ব্যাখ্যাবিদ আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) উক্ত হাদীসকে তার লিখিত কিতাব ‘তালখিসুল হাবীর’’ এর ২/২৬৪ এর মাঝে সহীহ বলেছেন। এবং সহীহ মুসলিম এর বিশিষ্ট ব্যাখ্যাবিদ আল্লামা নববী (রহ.) উক্ত হাদীসটিকে ‘‘আল মাজমু’’ এর ৫/২৯৩ এর মাঝে হাদীসটির সনদ অনেক উত্তম বলে মন্তব্য করেছেন। আর শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী নিজেই উক্ত হাদীসকে তার রচিত কিতাব ‘ইরওয়ায়ুল গলীল’’ এর ৭৫১ নং পৃষ্ঠা ও ইবনে মাজার উক্ত হাদীস এর তাখরীজ এর মাঝেও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সারকথা হলো, হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ ও আমলযোগ্য।
░▒▓█► উক্ত হাদীস এর সমর্থ্যনে ‘‘মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক’’ এর ৩/৫০১ এর মাঝে بَابُ حَثْيِ التُّرَابِ নামে একটি অনুচ্ছেদও রয়েছে, তার মাঝে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও হযরত আলী (রা.) ও বিখ্যাত তাবেয়ী যুহুরী (রহ.) এর আমল সংকলন করা হয়েছে, যার দ্বারা উক্ত হাদীসটি আরো শক্তিশালী হয়ে গেলো।
مصنف عبد الرزاق الصنعاني (3/ 501)
بَابُ حَثْيِ التُّرَابِ
6478 - عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ قَالَ: «كَانَ الْمُهَاجِرُونَ يَلْحَدُونَ لِمَوْتَاهُمْ، وَيَنْصِبُونَ اللَّبِنَ عَلَى اللَّحْدِ نَصْبًا، ثُمَّ يَحْثُونَ عَلَيْهِمُ التُّرَابَ» وَبِهِ نَأْخُذُ
6479 - عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ زَيْدِ بْنِ جُدْعَانَ: أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ، لَمَّا دَفَنَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ حَثَى عَلَيْهِ التُّرَابَ، ثُمَّ قَالَ: «هَكَذَا يُدْفَنُ الْعِلْمُ»، قَالَ عَلِيُّ بْنُ زَيْدٍ فَحَدَّثْتُ بِهِ عَلِيَّ بْنَ الْحُسَيْنِ فَقَالَ: وَابْنُ عَبَّاسٍ وَاللَّهِ قَدْ دُفِنَ بِهِ عِلْمٌ كَثِيرٌ
6480 - عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ مَالِكِ بْنِ مِغْوَلٍ، عَنْ عُمَيْرِ بْنِ سَعْدٍ، أَنَّ عَلِيًّا «حَثَى عَلَى يَزِيدَ بْنِ الْمُكَفَّفِ» قَالَ: «هُوَ أَوْ غَيْرُهُ ثَلَاثًا»
✏ ২ : মাটি দেয়ার (ফাযায়েলের প্রতি লক্ষ রেখে) সময়ে সূরা ত্বহার ৫৫ নং আয়াত مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى পড়ান দলীল-
مسند أحمد مخرجا (36/ 524)
22187 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ إِسْحَاقَ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ يَعْنِي ابْنَ الْمُبَارَكِ، أَخْبَرَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ زَحْرٍ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ يَزِيدَ، عَنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: لَمَّا وُضِعَتْ أُمُّ كُلْثُومٍ ابْنَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقَبْرِ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " {مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ، وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى} الخ
অর্থ : হযরত আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূল (সা.) এর কন্যা উম্মে কুলসুম (রা.) কে কবরে রাখা হয়েছিলো, তখন রাসূল (সা.) مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى সূরা তাহা এর ৫৫ নং আয়াটি পড়েন। মুসনাদে আহমদ-৩৬/৫২৪, হাদীস-২২১৬৭, মুসতাদরাকে হাকেম-২/৪১১, হাদীস-৩৪৩৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী-৩/৫৭৪, হাদীস-৬৭২৬, মারেফাতুস সাহাবা লি আবূ নূয়াইম-৬/৩২০০, হাদীস-৭৩৫৯ ইত্যাদি কয়েক ডজন কিতাবে উক্ত হাদীস উল্লেখ রয়েছে।
❀ হাদীসটির মান :
উক্ত হাদীসটি যয়ীফ [আর নির্ভরযোগ্য ইমামদের মত অনুসারে ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস অনুপাতে আমল করা যায়, তাছাড়া এখানে সরাসরি রাসূল (সা.) এর প্যাকটিক্যাল আমল] কেননা এই হাদীস, সনদ বা সূত্রের মাঝে ‘উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহর’’, ‘‘আলী ইবনে ইয়াযিদ ইবনে জাদআন’’ ও ‘কাসেম’’ যয়ীফ হওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন মুহাদ্দেসগণ জরাহ বা ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য পেশ করেছেন।
░▒▓█► সহীহ মুসলিম এর বিখ্যাত ব্যাখ্যাবিদ ও জারাহ তাদীলের বিখ্যাত ইমাম আল্লামা নববী (রহ.) উক্ত হাদীসটি তার রচিত কিতাব ‘আল মাজমু’ ৫/২৯৩ এর মাঝে নিন্ম পদ্ধতীতে উল্লেখ করেন-
المجموع شرح المهذب (5/ 293)
يُسْتَحَبُّ أَنْ يَقُولَ في الحثية الاولي (منها خلقناكم) وفى الثانية (وفيها نعيدكم) وفى الثالثة (منها نخرجكم تارة أخرى) وَقَدْ يُسْتَدَلُّ لَهُ بِحَدِيثِ أَبِي أُمَامَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ " لَمَّا وُضِعَتْ أُمُّ كُلْثُومٍ بِنْتِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقَبْرِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نخركم تارة أخرى " رَوَاهُ الْإِمَامُ أَحْمَدُ مِنْ رِوَايَةِ عُبَيْدِ اللَّهِ بن زَحْرٍ عن على بن يزيد ابن جدعان عن القاسم وثلاثتهم ضعفاء لكن يستأنس بأحاديث الفضائل وان كان ضَعِيفَةَ الْإِسْنَادِ وَيُعْمَلُ بِهَا فِي التَّرْغِيبِ وَالتَّرْهِيبِ وَهَذَا مِنْهَا وَاَللَّهُ أَعْلَمُ
অর্থ : আর (মৃত ব্যক্তিকে মাটি দেয়ার সময়) মুস্তাহাব হলো, প্রথম বারে (منها خلقناكم) পড়বে, আর দ্বিতীয় বারে (وفيها نعيدكم) পড়বে, তৃতীয় বারে (منها نخرجكم تارة أخرى) পড়বে। যার পক্ষে দলীল স্বরূপ হযরত আবূ উমামা (রা.) এর হাদীসটি পেশ করা হয় যে, যখন রাসূল (সা.) এর কন্যা উম্মে কুলসুম (রা.) কে কবরে রাখা হয়েছিলো। তখন রাসূল (সা.) مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى সূরা ত্বহা এর ৫৫ নং আয়াটি পড়েন। যা মুসনাদে আহমদ এর মাঝে উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহর তিনি আলী ইবনে ইয়াযিদ ইবনে জাদআন তিনি কাসেম থেকে এই সূত্রে বর্ণনা করেছেন, আর তারা তিনজনই যয়ীফ বা দুর্বল বর্ণনাকারী। কিন্তু এখানে আলোচনা হলো ফাযায়েলের হাদীস নিয়ে, তাই যয়ীফ হওয়া সত্ত্বেও তারগীব ও তারহীব (উৎসাহ ও ভিতিসঞ্চারের ক্ষেত্রে) আমল করা যায়। وَاَللَّهُ أَعْلَمُ
░▒▓█► সার কথা : উক্ত আলোচনা থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দাবী ও দলীল সঠিক ও কথিত আহলে হাদীস/সালাফী ভাইদের দাবী সম্পূর্ণ ভুল বলে প্রমাণিত হলো।
░▒▓█► উল্লেখ যে, উক্ত আমলগুলো কবরে রাখার পরের বিষয়, কিন্তু কবরে রাখার সময় بسم الله، وعلى مِلّة رسول الله" উক্ত দোয়াটি পড়া হবে। দলীল-
مسند أحمد ت شاكر (4/ 409)
4812 - حدثنا يزيد أخبرنا هَمّام بن يحيى عن قَتادة عن أبي الصِّدِّيق، هو الناجي، عن ابن عمر عن النبي -صلي الله عليه وسلم - صلى الله عليه وسلم - قال: "إذا وضعتم موتاكم في القبر فقولوا: بسم الله، وعلى مِلّة رسول الله"، - صلى الله عليه وسلم -.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন তোমরা মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখ তখন ‘‘بسم الله، وعلى مِلّة رسول الله’’ পড়। মুসনাদে আহমদ-৪/৪০৯, হাদীস-৪৮১২, তিরমিযী-২/৩৫৫, হাদীস-১০৪৬। হাদীসটি সহীহ। শায়খ নাসীর উদ্দীন আলবানীও উক্ত হাদীসকে সহীহ বলেছেন।
✔ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ফেৎনা সৃষ্টি না করে সঠিক দ্বীন বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন
❐ বি. দ্র. : সন্মানিত পাঠকগণ আপনারা এই বগ্ল এর প্রতি দৃষ্টি রাখুন, কেননা এ বিষয়ে আরো অনেকগুলো দলীল বা প্রমাণ অচিরেই সংযোজিত হবে।
❐ বি. দ্র. : সন্মানিত পাঠকগণ আপনারা এই বগ্ল এর প্রতি দৃষ্টি রাখুন, কেননা এ বিষয়ে আরো অনেকগুলো দলীল বা প্রমাণ অচিরেই সংযোজিত হবে।
✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন