হানাফী মাযহাব অনুসারে সাজদায়ে সাহু এর তরীকা নিয়ে সালাফীদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ
একটি জরুরী কাজে গতকাল এক বিখ্যাত দারুল ইফতায় যাওয়া হয়। অতঃপর কথাবার্তার এক পর্যায়ে এক ছাত্র আমাকে একটি লিপলেট দিয়ে বললো, কথিত আহলে হাদীস ভাইরা এখানে আমাদের সাজদায়ে সাহু এর পদ্ধতিকে ‘প্রচলিত ভুল প্রদ্ধতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে, এবং এর পক্ষে কোন দলীল নেই বলে চ্যালেঞ্জ করেছে।
তাই আমি তাদের এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে, তাদেরকে প্রমাণ করে দিতে চাই যে, আমাদের কোন দলীল আছে কি না? আর এটি ভুল পদ্ধতি না কি সঠিক পদ্ধতি?
❖প্রশ্ন : সাজদায়ে সাহু এর যা ব্যাপক প্রচলন তা হচ্ছে ডান দিকে এক সালাম ফিরিয়ে দুটো সাজদা করা, ইহা কোন দলীলের পরিপ্রেক্ষিতে? অথচ মুত্তাফাক আলাইহি এর হাদীছসমুহ থেকে স্পষ্ট পাওয়া যায় যে, রসুলুল্লাহ সা. নামাযের মধ্যে ভুল হলে পরে সাজদায়ে সাহু করছেন যখন নামায শেষ স্তরে পৌঁছাতো অর্থাৎ সালাম ফিরানোর সময় হলে তিনি দুটো সাজদা করে নিতেন। এখন জিজ্ঞাসার বিষয় হচ্ছে যে, (তাশাহুদের পর) এক সালাম ফিরিয়ে অতঃপর পুনরায় তাশাহহুদ এবং দরুদ পড়ার প্রমান কি?
❖ জবাব : এ ব্যাপারে কতিপয় বিষয় লক্ষ্যনীয়।
✏ প্রথম : সাজদা সাহু সম্বন্ধে মুত্তাফাক আলাইহি রিওয়ায়তসমুহ কেবল সালামের পুর্বে সাজদায়ে সাহু করার বিষয়েই নয় বরং এই পরম্পরায় কতক হাদীছ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি সা. সাজদায়ে সাহু সালামের পুর্বে করেছেন। (যেমন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুহায়না রা. এর হাদীছে আছে, যা সিহাহ সিত্তাহ এর মধ্যে আছে এবং প্রশ্ন পত্রে এরই বরাত দেয়া হয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুহায়না রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ সা. যুহরের নামাযের তাশাহুদ পাঠ ব্যতীত তৃতীয় রাকআতের জন্য দাড়িয়ে গেলেন এবং নামায পুর্ন করে সালামের পুর্বে সাজদায়ে সাহু করেন। (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা, সহীহ মুসলিম ১ম খন্ড, ২১১ পৃ:, আবু দাউদ ১ম খন্ড, ১৪৮ পৃ:, নাসায়ী ১ম খন্ড, ১৮১ ও ১৮৬ পৃ:, তিরমিযী ১ম খন্ড, ৫১ পৃ: এবং ইবন মাজা ৮৫ পৃ)
❏ দ্বিতীয় প্রকার সে সকল হাদীছ যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রসুলুল্লাহ সা. সালামের পর সাজদা সাহু করেছেন। যেমন :
১। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা রসুলুল্লাহ সা. যুহরের নামায পাঁচ রাকআত পড়লেন। আরয করা হলো যে, নামায কি বর্ধিত করা হয়েছে? ইরশাদ করলেন, কি ব্যাপার? আরয কর হলো আপনি পাঁচ রাকআত পড়েছেন। তখন তিনি সালামের পর দুটো সাহু সাজদা করেন। (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড, ১৬৩ পৃ:, সহীহ মুসলিম ১ম খন্ড ২১৩ পৃ:, নাসায়ী ১ম খন্ড ১৮৫ পৃ:, আবু দাউদ ১ম খন্ড ১৪৬ পৃ: তিরমিযী ১ম খন্ড ৫২ পৃ: ইবন মাজা ৮৫ পৃ:)
২। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ সা. আসরের নামাযে দু রাকআত আদায়ের পরই সালাম ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর রসুলুল্লাহ সা. ছুটে যাওয়া অবশিষ্ট নামায পুর্ন করলেন। অতঃপর বসে সালামের পর দুটি সাজদা করলেন। (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড ১৬৪ পৃ:, সহীহ মুসলিম ১ম খন্ড ২১৩ পৃ:, আবু দাউদ ১ম খন্ড ১৪৪ পৃ:, নাসায়ী ১ম খন্ড ১৮২ পৃ:, তিরমিযী ১ম খন্ড ৫২ পৃ:, ইবন মাজা ৮৬ পৃ:)
৩। হযরত মুগীরা বিন শুবা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নামায পড়ালেন, কিন্তু দুরাকাআতের পর তাশাহহুদ না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন নামায পুর্ন করলেন তখন দুসাজদা করেন এবং নামায থেকে ফারিগ হয়ে বললেন আমি রসুলুল্লাহ সা. কে এরুপভাবে করতে দেখেছি। (আবু দাউদ ১ম খন্ড ১৪৮ পৃ:, তিরমিযী ১ম খন্ড ৪৮ পৃ:, ইবন আবী শায়বা ২য় খন্ড ৩৬ পৃ:)
৪। হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ সা. ভুল করে দুরাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে ফেললেন অতঃপর আরো দুরাকআত পড়লেন। তারপর সালাম ফিরিয়ে সাজদায়ে সাহু করলেন। (ইবন মাজা ৮৬ পৃ:)
❏ তৃতীয় প্রকার সেই সকল হাদীছ যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রসুলুল্লাহ সা. দুটি সালাম করেন, একটি সাজদায়ে সাহু এর পুর্বে এবং দ্বিতীয় টি পরে।
যেমন :
১। হযরত ইমরান বিন হুসায়ন রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ সা. তিন রাকআতরে পর সালাম ফিরিয়ে ফেললেন। অতঃপর তিনি আরো এক রাকআত পড়লেন। তারপর সালাম ফিরিয়ে দুটি সাজদা করেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন। (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড ২১৪ পৃ:, আবু দাউদ ১ম খন্ড ১৪৬ পৃ:, নাসায়ী ১ম খন্ড ১৯৫ পৃ:, ইবন মাজাহ ৮৬ পৃ:, ইবন আবী শায়বা ২য় খন্ড ২৭ পৃ:)
২। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ সা. যুহর কিংবা আসর নামাযে দুরাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে ফেললেন। অতঃপর আরো দু রাকআত পড়লেন এবং সালাম ফিরানোর পর সাজদায়ে সাহু করেন, অতঃপর সালাম ফিরালেন। (ইবন মাজাহ ৮৬ পৃ:)
৩। হযরত মুগীরা বিন শুবা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি দুরাকআতের পর না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন নামায পুর্ন হলো তখন সালাম ফিরিয়ে সাজদা সাহু করেন। অতঃপর সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করলেন এবং বললেন যে, রসুলুল্লাহ সা. এইরুপ করেছিলেন। (তিরমিযী ১ম খন্ড ৪৮ পৃষ্ঠা এবং তিনি বলেন, আর এ হাদীছ হাসান সহীহ ইবন আবী শায়বা ১ম খন্ড ৩৪ পৃষ্ঠা)
৪। হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্নিত আছে যে, রসুলুল্লাহ ভুল করে দুরাকআতের পর সালাম ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর আরো দু রাকআত পড়ে সালাম ফিরালেন। অতঃপর সাজদা সাহু করে সালাম ফিরালেন (ইবন আবী শায়বা ১ম খন্ড ৩৮ পৃষ্ঠা)
৫। তহাভী ২৫৬ পৃষ্ঠায় মুসনাদে আহমদ ১ম খণ্ডের ৪২৯ পৃষ্ঠায়, সুনানে বায়হাকী ১ম খণ্ডের ৩৪৫ পৃষ্ঠায় হযরত আবু উবায়দা রা. এর রিওয়ায়তে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এর মওকুফ হাদীছ আছে :
فانه يسلم ثم يسجد سجدتى السهو ثم يسلم* (حاشية نصب الراية ص : ১৭২ ج : ২)
সাজদায়ে সাহু করার তরীকা এই যে, সালাম ফিরানোর পর সাজদায়ে সাহু করবে, অতঃপর পুনরায় সালাম ফিরাবে।
✏ দ্বিতীয় : উক্ত বিরোধোক্তি হাদীছসমুহের মধ্যকার সম্বন্বয় কিংবা প্রধান্য দেয়ার মাসয়ালায় আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীনের মতানৈক্য রয়েছে। কেননা ইমাম তিরমিযী রহ. এই মাসয়ালায় পাঁচটি অভিমত নকল করেছেন :
১। ইমাম শাফেয়ী রহ. সালামের পুর্বে সাজদায়ে সাহু দেয়ার প্রবক্তা।
২। ইমাম মালিক রহ. বলেন যে, সাজদায়ে সাহু নামাযের মধ্যে অতিরিক্ত কিছু করার কারণে যদি হয়, তাহলে সালামের পরে হবে আর যদি নামাযের মধ্যে ঘাটতি হয়ে যাওয়ার কারনে হয়, তাহলে সালামের পুর্বে হবে।
৩। ইমাম আহমদ রহ. বলেন যে, রসুলুল্লাহ সা. থেকে সাজদায়ে সাহু করার যে সকল পদ্ধতি বর্ণিত আছে সে মুতাবিক আমল করা হবে। যেমন
ক। যদি ভুলে প্রথম বৈঠক ছুটে যায়, তাহলে সাজদায়ে সাহু সালামের পুর্বে হবে। যেমন : হযরত ইবন বুহায়না রা. এর হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
খ। যদি যুহর নামায কেউ পাঁচ রাকআত পড়ে নেয়, তাহলে সাজদায়ে সাহু সালামের পর হবে। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এর হাদীছ রয়েছে।
গ। যদি যুহর কিংবা আসর নামায দুরাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেয়া তাহলে সাজদায়ে সাহু সালামের পরে হবে। যেমন হযরত আবু হুরায়রা রা. এবং হযরত মুগীরা রা. এর হাদীছ রয়েছে।
ঘ। আর যে সব পদ্ধতির মধ্যে রসুলুল্লাহ সা. থেকে কোন হুকুম বর্ণিত হয়নি সে সকল পদ্ধতিতে সাজাদয়ে সাহু সালামের পুর্বে হবে।
৪। ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়াইহ রহ. এর অভিমত ইমাম আহমদ রহ. এর অনুরুপ। তবে সর্বশেষ আকৃতি (ঘ) এর মধ্যে তাদের মতপার্থক্য হয়েছে। ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়াই রহ. বলেন , যে সব আকৃতির মধ্যে রসুলুল্লাহ সা. থেকে কোন হুকুম বর্ণিত হয়নি সে সব স্থলে বৃদ্ধির আকৃতিতে সাজদায়ে সাহু সালামের পর এবং ঘাটতির আকৃতিতে সালামের পূর্বে হবে।
৫। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ. এবং কতক আহলে কুফার মতে প্রত্যেক আকৃতিতে সাজদায়ে সাহু সালামের পরে হবে। ইহাই ইমাম আবু হানীফা রহ. এর অভিমত।
✏তৃতীয়: মাযাহিবে আরবাআ (চারটি মাযহাব) এই বিষয়ে একমত যে, সাজদায়ে সাহু সালামের পুর্বে এবং সালামের পরে উভয়ভাবে জায়েয। তবে মতভেদ শুধু উত্তম ও অনুত্তম হওয়ার বিষয়ে। কেননা হিদায় কিতাবে আছে :
وهذا الخلاف فى الاولوية*
অর্থাৎ এই মতপার্থক্য কেবল উত্তম হওয়ার মধ্যে।
ইমাম নবভী রহ. শরহে মুসলিম ১ম খন্ডের ২১০ পৃষ্ঠায় লিখেন :
ولا خلاف بين هولاء المختلفين وغيرهم من العلماء انه لو سجد قبل السلام او بعده للزيادة وللنقص ، انه يجزيه، ولايفسد صلوته وانما اختلافهم فى الافضل ، والله اعلم*
অর্থাৎ মতভেদকারী ইমামগন এবং অন্যান্য উলামায়ে কিরামের মধ্যে এই বিষয়ে কোন মতভেদ নেই , যে যদি কেউ সাজদায়ে সাহু সালামের পুর্বে কিংবা সালামের পরে করে নেয়, চাই নামাযে বৃদ্ধির আকৃতিতে হোক কিংবা হ্রাসের আকৃতিতে হোক, তাহলে উভয় আকৃতিতেই সাজদায়ে সাহু সহীহ হবে। মতভেদ তো কেবল এই বিষয়ে যে, কোন আকৃতিতে তা উত্তম। আল্লাহ তাআলা সর্বজ্ঞ।
✏ চতুর্থ : আয়িম্মায়ে আহনাফ সালামের পর সাজদা সাহু করার তরীকাকে কতক কারনে প্রধান্য দিয়েছেন।
❏ প্রথমত : এই পদ্ধতির মাঝে রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত সকল তরীকার উপর একসাথে আমল হয় এবং সব ধরনের হাদীসগুলো পরস্পর মতানৈক্য সৃষ্টি করারও কোন সুযোগ নেই বরং যে হাদীস এর মাঝে দুটি সালামের বর্ণনা এসেছে তার প্রতিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
❏ দ্বিতীয় কারণ এই যে, রসুলুল্লাহ সা. এর ইরশাদ ও আমল দ্বারা এ তরীকারই প্রধান্য অনুভুত হয়। কেননা অধিকাংশ মুত্তাফাক আলাইহ হাদীছসমুহ এই বিষয়বস্তু রয়েছে যে, রসুলুল্লাহ সা. সালামের পর সাজদায়ে সাহু করেছেন। আর এ সম্বন্ধে রসুলুল্লাহ সা. এর ইরশাদ সমুহ নিন্মে প্রদত্ত হলো:
১। সহীহ বুখারী ১ম খণ্ডের ৫৮ পৃষ্ঠায় আবু দাউদ ১ম খণ্ড ১৪৬ পৃষ্ঠায়, নাসায়ী ১ম খণ্ড ১৮৪ পৃষ্ঠায় হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এর রিওয়ায়ত রয়েছে যে, রসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-
اذا شك احدكم فى صلوته فليتحر الصواب، فليتم عليه ، ثم ليسلم ثم ليسجد سجدتين ـ
অর্থাৎ যদি তোমাদের মধ্যে থেকে কারো স্বীয় নামাযে সন্দেহ হয়ে যায়, তাহলে গভীর চিন্তা করে সঠীক দিকটা গ্রহন কর সে মুতাবিক স্বীয় নামাযে পুর্ন করবে। অতঃপর সালাম ফিরিয়ে সাজদায়ে সাহুর দুটো সাজদা করবে।
২। আবু দাউদ ১ম খণ্ডের ১৪৯ পৃষ্ঠায় ইবন মাজাহ ৮৭ পৃষ্ঠায় মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ২য় খণ্ড ৩৩ পৃষ্ঠায় মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালিসী ১৩৪ পৃষ্ঠায় এবং মুসনাদে ইমাম আহমদ ৫ম খণ্ডের ২৮০ পৃষ্ঠায় হযরত ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-
لكل سهو سجدتان بعد السلام*
অর্থাৎ প্রত্যেক ভুলের জন্য সালামের পর দুটি সাজদা রয়েছে।
৩। আবু দাউদ ১ম খন্ড ১৪৮ পৃষ্ঠায় হযরত আব্দুল্লাহ বিন জাফর রা. থেকে বর্ণিত আছে , যে রসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন :
من شك فى صلوته فليسجد سجدتين بعد ما يسلم*
অর্থাৎ যে কোন ব্যক্তির নিজ নামাযে সন্দেহ হয়ে যায়, তার জন্য বাঞ্ছনীয় যে, সালামের পর দুটি সাজদা করে নেয়া।
তৃতীয় কারণ এই যে, রসুলুল্লাহ সা. এর পরে আকাবিরে সাহাবায়ে কিরাম রা. এবং তাবেঈন রহ. এর আমলও এই মুতাবিক ছিল। যেমন ইমাম তহাভী রহ. সহীহ সনদসমুহে হযরত উমর রা. হযরত সাদ বিন আবী ওক্কাস রা. হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে হযরত মুগীরা বিন শু’বা রা. হযরত আনাস বিন মালিক রহ. এবং হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহ. এর আছার নকল করেছেন যে, তারা সালামের পরে সাজদায়ে সাহু করতেন।
ইমাম আবু দাউদ রহ. হযরত মুগীরা বিন শু’বা রা. এর হাদীছ নকল করে পরে বলেছেন :
وفعل سعد بن ابى وقاص مثل ما فعل المغيرة وعمران بن حصين والضحاك بن قيس ومعاوية بن ابى سفيان ابن عباس ، وافتى بذالك عمر بن عبد العزيز*
অর্থাৎ যেভাবে হযরত মুগীরা রা. করেছেন সেভাবে হযরত সাদ বিন আবী ওক্কাস, ইমরান বিন হুসায়ন, যাহহাক বিন কায়স, মুআবিয়া বিন আবী সুফিয়ান এবং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. করেছেন। আর উমর বিন আবদিল আযীয রহ. এর উপরই ফাতওয়া দিয়েছেন।
ইমাম হাযিমী রহ. স্বীয় কিতাবুন নাসিখ ওয়াল মানসুখ গ্রন্থে সাহাবায়ে কিরাম রা. এর মধ্যে হযরত আলী হযরত সাদ বিন আবী ওক্কাস এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র রা. এবং তাবেঈন রহ. এর মধ্যে থেকে হযরত হাসান বসরী, ইব্রাহীম নাখয়ী, আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা রহ. এর মুবারক নামসমুহ উল্লেখ করেছেন। (নসবুর রায়াহ ২য় খন্ড ১৭০ পৃ:)
✏ পঞ্চম : যেহেতু সাজদায়ে সাহু নামাযের সঙ্গে সম্পর্কিত সেহেতু হানাফী ইমামগনের মতে নামায সমাপ্ত করার জন্য সাজদায়ে সাহুর পরে পুনরায় তাশাহুদ পড়ে ছালাম ফিরানো জরুরী। এ সম্পর্কে নিন্মে উদ্ধৃত হাদীছসসমুহ বর্ণিত হয়েছে :
১। পুর্বে সহীহ বুখারী ১ম খণ্ডের ৫৮ পৃষ্ঠায় ও অন্যান্য কিতাবের বরাতে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এর হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে রসুলুল্লাহ সা. পরে সাজদায়ে সাহু করার হুকুম দিয়েছেন। ইমাম তহাভী রহ. স্বীয় শরহে মা আনিল আছার গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২৫২ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীছের মধ্যে সহীহ সনদসহ রসুলুল্লাহ সা. এর এই ইরশাদ নকল করেছেন :
ثم ليسلم ، ثم ليسجد سجدتى السهو ويتشهد ويسلم*
অর্থাৎ অতঃপর সালাম ফিরাবে। তারপর সাজদায়ে সাহুর দুটি সাজদা করবে, এরপর তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরাবে।
২। আবু দাউদ ১ম খণ্ডের ১৪৯ পৃষ্ঠায় এবং তিরমিযীর ১ম খণ্ডের ৫২ পৃষ্ঠায় হযরত ইমরান বিন হুসায়ন রা. থেকে রিওয়ায়ত করেছেন যে,
ان النبى صلى الله عليه وسلم صلى بهم فسها ، فسجد سجدتين ثم تشهد ثم سلم*
অর্থাৎ রসুলুল্লাহ সা. সাহাবাগনকে নিয়ে নামায পড়ালেন, এতে তার ভুল হয়ে গেল। তখন তিনি সাজদায়ে সাহু করলেন। অতঃপর তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরালেন।
পুর্বে হযরত ইমরান রা. এর হাদীছ সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে দুবার সালাম ফিরানোর বিষয়টি উল্লেখ ছিল। হযতর ইমরান রা. এর উক্ত রিওয়ায়তদ্বয়কে সম্বন্বয় করল প্রতীয়মান হয় যে, রসুলুল্লাহ সা. তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়েছেন। অতঃপর সাজদায়ে সাহু করেছেন, অতঃপর তাশাহহুদ পড়েছেন এবং পরে সর্বশেষ সালাম ফিরিয়েছেন।
৩। আবু দাউদ ১ম খণ্ডের ১৪৭ পৃষ্ঠায় আবু উবায়দাহ রা. থেকে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এর হাদীছে বর্নিত আছে যে, রসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন :
اذا كنت فى صلوة فشككت فى ثلاث او اربع واكبر ظنك على اربع تشهدت ثم سجدت سجدتين وانت جالس قبل ان تسلم ، ثم تشهدت ايضا ثم تسلم
অর্থাৎ যদি নামাযের মধ্যে তোমার সন্দেহ হয় যে, তিন রাকআত পড়ছো কিংবা চার রাকআত? আর তোমার প্রবল ধারণা চার রাকআত এর প্রতি হয়, তাহলে তাশাহহুদের পরে সাজদায়ে সাহু করে নাও এমন অবস্থায় যে, তুমি সালামের পুর্বে শেষ বৈঠক এ বসে আছো। অতঃপর দ্বিতীয়বার তাশাহুদ পড়। তারপর সালাম ফেরাও।
ইমাম আবু দাউদ রহ. এই হাদীছকে নকল করে বলেন যে, অনেক হযরত (যাদের নাম তিনি উল্লেখ করেছেন) এ হাদীছকে মরফু হিসাবে নকল করেননি।
৪। মুসান্নাফা ইবন আবী শায়বা ২য় খন্ডের ৩১ পৃষ্ঠায় আবু উবায়দাহ (হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এর ছেলে) এবং ইব্রাহীম নাখয়ী রহ. এর রিওয়ায়তে থেকে হযতর আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এর ইরশাদ নকল করেছেন যে, সাজদায়ে সাহুর পরে তাশাহহুদ রয়েছে।
✔ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ফেৎনা সৃষ্টি না করে সঠিক দ্বীন বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন!
❐ বি. দ্র. : সন্মানিত পাঠকগণ আপনারা এই বগ্ল এর প্রতি দৃষ্টি রাখুন, কেননা এ বিষয়ে আরো অনেকগুলো দলীল বা প্রমাণ অচিরেই সংযোজিত হবে।
❐ বি. দ্র. : সন্মানিত পাঠকগণ আপনারা এই বগ্ল এর প্রতি দৃষ্টি রাখুন, কেননা এ বিষয়ে আরো অনেকগুলো দলীল বা প্রমাণ অচিরেই সংযোজিত হবে।
✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন