মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে যাররা পরিমান ঈমান নিয়ে কবরে যাবে তাকে দশ দুনিয়া সমান জান্নাত দান করা হবে’’

 ‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে যাররা পরিমান ঈমান নিয়ে কবরে যাবে তাকে দশ দুনিয়া সমান জান্নাত দান করা হবে’’ 
❖ প্রশ্ন : তাবলীগের সাথীগণ বলেন ‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে যাররা পরিমান ঈমান নিয়ে কবরে যাবে তাকে দশ দুনিয়া সমান জান্নাত দান করা হবে’’  এটি কি কোন হাদীস? না মুরুব্বীদের বানানো কথা? জানিয়ে বাধিত করবেন।
❖ জবাব : এটি সহীহ বুখারীসহ হাদীসের অসংখ্য কিতাবের রয়েছে। এটি মুরুব্বীদের বানাবো কোন কথা নয়। নিম্নে বিস্তারিত দেখুন-
এখানে দুটি বিষয় এক. যাররা পরিমান ঈমান থাকলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুই. দশ দুনিয়ার সমান জান্নাত প্রদান করা।



✏ ০১. দেখুন সহীহ বুখারী থেকে ‘যাররা পরিমান ঈমান থাকলে জান্নাতি হবে’ তার দলীল-
صحيح البخاري (1/ 17)
44 - حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: حَدَّثَنَا هِشَامٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ شَعِيرَةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ بُرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ  النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ» قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: قَالَ أَبَانُ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، حَدَّثَنَا أَنَسٌ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مِنْ إِيمَانٍ» مَكَانَ «مِنْ خَيْرٍ»
❏ অর্থ : হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণনা, নবী (সা.) ইরশাদ করেন : যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও নেকী (ঈমান) থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি যাররা (অণু) পরিমাণও নেকী (ঈমান) থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। (অর্থাৎ  জান্নাতি করা হবে)।
     ইমাম আব্দুল্লাহ বুখারী (রহ.) বলেন, আবান (রহ.).....কাতাদা (রহ.)......আনাস (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে নেকী (خَيْرٍ) এর স্থলে ‘ঈমান’ শব্দটি রিওয়ায়ত করেছেন। বুখারী-১/১৭, হদীস-৪৪।
✏ ০২. এখন দেখুন সহীহ বুখারী থেকে ‘দশ দুনিয়া পরিমান জান্নাত পাওয়ার’ দলীল-
صحيح البخاري (8/ 117)
6571 - حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَبِيدَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنِّي لَأَعْلَمُ آخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْهَا، وَآخِرَ أَهْلِ الجَنَّةِ دُخُولًا، رَجُلٌ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ كَبْوًا، فَيَقُولُ اللَّهُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأْتِيهَا، فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأْتِيهَا فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَإِنَّ لَكَ مِثْلَ الدُّنْيَا وَعَشَرَةَ أَمْثَالِهَا - أَوْ: إِنَّ لَكَ مِثْلَ عَشَرَةِ أَمْثَالِ الدُّنْيَا - فَيَقُولُ: تَسْخَرُ مِنِّي - أَوْ: تَضْحَكُ مِنِّي - وَأَنْتَ المَلِكُ " فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، وَكَانَ يَقُولُ: «ذَاكَ أَدْنَى أَهْلِ الجَنَّةِ مَنْزِلَةً»
❏ অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন : সর্বশেষ যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বের হবে এবং সর্ব শেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে তার সম্পর্কে আমি জানি। এক ব্যক্তি অধঃপতন অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের হবে। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন সে জান্নাতের কাছে আসলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই সে ফিরে এসে বলবে, হে প্রভু! জান্নাত তো ভরপুর দেখতে পেলাম। তখন আল্লাহ বললেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। কেননা জান্নাত তোমার জন্য পৃথিবীর সমতুল্য এবং তার দশগুণ। অথবা নবী (সা.) বলেছেন : পৃথিবীর দশ গুণ। তখন লোকটি বলবে, প্রভু! তুমি কি আমার সাথে বিদ্রূপ বা হাসি-ঠাট্রা করছ? (রাবী বলেন) আমি তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) কে এভাবে হাসতে দেখলাম যে তার দন্তরাজি প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল এবং বলা হচ্ছিল এটা জান্নাতীদের নিম্নতম মর্যাদা। বুখারী-৮/১১৭, হাদীস-৬৫৭১।
صحيح البخاري (9/ 147)
7511 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ إِسْرَائِيلَ ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَبِيدَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ آخِرَ أَهْلِ الجَنَّةِ دُخُولًا الجَنَّةَ، وَآخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنَ النَّارِ رَجُلٌ يَخْرُجُ حَبْوًا، فَيَقُولُ لَهُ رَبُّهُ: ادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَقُولُ: رَبِّ الجَنَّةُ مَلْأَى، فَيَقُولُ لَهُ ذَلِكَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، فَكُلُّ ذَلِكَ يُعِيدُ عَلَيْهِ الجَنَّةُ مَلْأَى، فَيَقُولُ: إِنَّ لَكَ مِثْلَ الدُّنْيَا عَشْرَ مِرَارٍ "
❏ অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : সর্বশেষে জান্নাতে প্রবেশকারী জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ পরিত্রাণ লাভকারী ব্যক্তিটি জাহান্নাম থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসবে। তার প্রতিপালক তাকে বলবেন, তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! জান্নাত তো পরিপূর্ণ! আল্লাহ এভাবে তাকে তিনবার বলবেন। প্রত্যেকবারই সে উত্তর দেবে, জান্নাত তো পরিপূর্ণ। পরিশেষে আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার জন্য রয়েছে এ পৃথিবীর সমতুল্য দশ গুণ। সহীহ বুখারী-৯/১৪৭, হাদীস-৭৫১১।

✏ মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন-
{مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَمَنْ جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ } [الأنعام: 160]
❏ অর্থ : যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ পাবে এবং যে একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। সূরা আল আনআম-১৬০।

❀ ব্যাখ্যা : সহীহ বুখারীর হাদীসগুলো থেকে আমরা স্পষ্ট যে, যাররা পরিমান ঈমান থাকলেও জান্নাতে যাবে, আর মহান আল্লাহ দুনিয়ার সমতুল্য দশ গুণ জান্নাত দান করবেন। তাহলে আমাদের কথিত আহলে হাদীস ভাইগণ নিজ মুর্খতা লুকিয়ে না রেখে জনসম্মুখে প্রকাশ করার প্রয়োজন ছিল কিসের?
‘‘আসলে মহান আল্লাহ যখন কাউকে বে-ইজ্জত করতে চান, তখন তাকে হক্ব এবং আহলে হক্বের পিছনে লাগিয়ে দেন’’।

 মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ফেৎনা সৃষ্টি না করে সঠিক দ্বীন বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন!

✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

1 টি মন্তব্য: