মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৫

বিতর নামাযে কুনূতের জন্য তাকবীর এবং হস্তদ্বয় উত্তোলন করা ইত্যাদি বিষয়ের দলীল কি ?

বিতর নামাযে কুনূতের জন্য
তাকবীর এবং হস্তদ্বয় উত্তোলন করা ইত্যাদি বিষয়ের দলীল কি ?

 এই মাসয়ালার কতক বিষয় আলোচনাযোগ্য। 

 প্রথম : এ বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে যে, কুনূত শুধু বিতর নামাযে পড়া হবে, কিংবা ফজর নামাযেও পড়া হবে? আর তা রুকুর পূর্বে পড়া হবে কিংবা রুকুর পরে পড়া হবে? হানাফীগণের মতে দু’আয়ে কুনূত বিতর নামাযে সদাসর্বদা পড়তে হবে এবং তা রুকুর পূর্বে হবে। আর কুনূতে নাযিলাহ, যা ফজরের নামাযে বিশেষ বিপদের সময় পড়া হয় তা রুকুর পরে হবে। রসূলুল্লাহ (সা.) থেকে রুকুর পূর্বে এবং পরে কুনূত পড়া সম্বন্ধে যে সব, রিওয়ায়তসমূহ বর্ণিত হয়েছে, এর সত্যিকার সমম্বয় হানাফীগণের মতে এটাই।


যেমন সহীহ বুখারী শরীফের ১ম খণ্ডে ১৩৬ পৃষ্ঠার بَابُ القُنُوتِ قَبْلَ الرُّكُوعِ وَبَعْدَهُ  এর অধীনে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে : 
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الوَاحِدِ بْنُ زِيَادٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَاصِمٌ، قَالَ: سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ عَنِ القُنُوتِ، فَقَالَ: قَدْ كَانَ القُنُوتُ قُلْتُ: قَبْلَ الرُّكُوعِ أَوْ بَعْدَهُ؟ قَالَ: قَبْلَهُ، قَالَ: فَإِنَّ فُلاَنًا أَخْبَرَنِي عَنْكَ أَنَّكَ قُلْتَ بَعْدَ الرُّكُوعِ، فَقَالَ: «كَذَبَ إِنَّمَا قَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ الرُّكُوعِ شَهْرًا،
  অর্থাৎ ‘আসিম আহওয়াল (রহ.) বলেন যে, আমি হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি জবাবে বললেন, কুনূত পড়া হতো। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম রুকুর পূর্বে, না পরে? তিনি বললেন, রুকুর পূর্বে। আমি বললাম, অমুক ব্যক্তি আমাকে বলেছে যে, আপনি বলেছেন, রুকুর পরে কুনূত হয়। তিনি জবাবে বললেন, সে ভুল বলেছে। কেননা রসূলুল্লাহ (সা.) রুকুর পরে তো শুধু একমাস কুনূত পড়েছিলেন।’’

  আর হযরত আনাস (রা.) এর দ্বিতীয় রিওয়ায়তে আছে : 
 وَعَنْ أَنَسٍ «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَنَتَ حَتَّى مَاتَ وَأَبُو بَكْرٍ حَتَّى مَاتَ وَعُمَرُ حَتَّى مَاتَ». رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَرِجَالُهُ مُوَثَّقُونَ. مجمع الزوائد ص : 139 ج : 1)
  অর্থাৎ ‘‘রসূলুল্লাহ (সা.) ওফাত পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন এবং হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা.) ওফাত পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন এবং হযরত ওমর (রা.)ও আজীবন কুনূত পড়েছেন।’’

❏ প্রকাশ্য যে, উপরোক্ত রিওয়ায়তে কুনূত দ্বারা বিতর নামাযের কুনূত মর্ম। কেননা ফজরের কুনূত সদাসর্বদা পড়ার কোন প্রমাণ নেই। যেমন সহীহ বুখারী শরীফের উপরোল্লিখিত রিওয়ায়ত ব্যতীত অন্যান্য হাদীছসমূহে এর স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। এজন্যই মুসনাদে আহমদ এবং বাযযার এর রিওয়ায়তের এই শব্দ যে : 
وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: «مَا زَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يَقْنُتُ فِي الْفَجْرِ حَتَّى فَارَقَ الدُّنْيَا».
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَزَّارُ بِنَحْوِهِ، وَرِجَالُهُ مُوَثَّقُونَ.*
  অর্থাৎ ‘রসূলুল্লাহ (সা.) সদাসর্বদা ফজর নামাযে কুনূত পড়তে থাকেন, এমন কি তিনি দুনইয়া থেকে তশরীফ নিয়ে চলে গেছেন।’’
এই রেওয়ায়তে যদি فى الفجر (ফজরে) শব্দটি বর্ণনাকারীর ভুল না হয় তাহলে ইহা কুনূতে নাযিলাহ’ এর উপর প্রযোজ্য হবে। যাহোক বিভিন্ন হাদীছের পরিপ্রেক্ষিতে হানাফীগণের তাহকীক (নিশ্চয়তা প্রতিপাদন) এই যে, কুনূতে নাযিলাহ, যা ফজরের নামাযে (এবং কতক সময় অন্যান্য নামাযের মধ্যেও) পড়া হতো, তা রুকুর পরে হতো এবং তা কেবল বিশেষ বিপদ-মসীবতের সময়ে পড়া হতো। কিন্তু বিতর নামাযে দু’আয়ে কুনূত সদাসর্বদা পড়া হতো এবং তা রুকুর পূর্বে হতো। 

❖ দ্বিতীয় : যারা রুকুর পূর্বে কুনূত পড়ার কথা বলেন, তাদের নিকট কিরআত এবং কুনূতের মধ্যে পৃথক করার লক্ষ্যে কুনূতের জন্য তাকবীর বলা সুন্নত। ইমাম তহাভী (রহ.) বলেন : 
 وَأَمَّا التَّكْبِيرَةُ فِي الْقُنُوتِ فِي الْوِتْرِ , فَإِنَّهَا تَكْبِيرَةٌ زَائِدَةٌ فِي تِلْكَ الصَّلَاةِ , وَقَدْ أَجْمَعَ الَّذِينَ يَقْنُتُونَ قَبْلَ الرُّكُوعِ عَلَى الرَّفْعِ مَعَهَا* (طحاوى ص : 332 ج : 1)
❏ অর্থাৎ ‘কিন্তু বিতর নামাযে কুনূতের জন্য তাকবীর, এ নামাযে ইহা একটি অতিরিক্ত তাকবীর। আর যারা রুকূর পূর্বে তাকবীরের প্রবক্তা, তারা এ বিষয় সর্বসম্মত যে, এ তাকবীরের সময় হস্তদ্বয় উত্তোলনও করতে হবে।’’

❖ তৃতীয় : বিতর নামাযের কুনূত রুকুর পূর্বে হওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। 
(1)  عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُوتِرُ بِثَلَاثِ رَكَعَاتٍ، ...... وَيَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ،* (نسائى ص : 248 ج : 1)
❏ অর্থাৎ ‘হযরত উবাই বিন কা‘ব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ (সা.) তিন রাকআত বিতর পড়তেন.........আর রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন।’’

❏ ইবনে মাজাহ গ্রন্থের ৮৪ পৃষ্ঠায় রিওয়ায়তে আছে-
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، «كَانَ يُوتِرُ فَيَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ»*
❏ অর্থাৎ ‘রসূলুল্লাহ (সা.) বিতর নামাযে রুকুর পূর্বে কুনুত পড়তেন।’’

(2) عَن عبد الله بن مَسْعُود أَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم كَانَ يقنت فِي وتره قبل الرُّكُوع
                        (قال الدار قطنى وابان بن ابى عياش) وذكره ابن الجوزى فى "التحقيق" من جهة الخطيب وسكت عنه ـ الا ابه قال احاديثنا مقدمة ، كما فى نصب الراية ص : 124 ج : 2، وقال الترمذى فى العلل ص : 336 ج : 2، وقد روى غير واحد عن ابراهيم النخعى عن علقمة عن عبد الله بن مسعود ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يقنت فى وتره قبل الركوع) 
❏ অর্থাৎ ‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ (সা.) বিতর নামাযে রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন।’’

(3)  عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُوتِرُ بِثَلَاثِ رَكَعَاتٍ، وَيَجْعَلُ الْقُنُوتَ قَبْلَ الرُّكُوعِ، انْتَهَى. قَالَ الطَّبَرَانِيُّ: لَمْ يَرْوِهِ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، إلَّا سَعِيدُ بْنُ سَالِمٍ،، نصب الراية ـ 124 ، ج 2)
❏ অর্থাৎ ‘ হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সা.) বিতরের নামায তিন রাকআত পড়তেন এবং রুকুর পূর্বে দু’আয়ে কুনূত পড়তেন।’’

(4) عن عباس رضى الله عنهما قال بت عند النبى صلى الله عليه وسلم فقام من الليل فصلى ركعتين ، ثم قال فاوتر، فقرأ بفاتحة الكتب و"سبح اسم ربك الاعلى" ثم ركع وسجد ثم قام فقرأ بفاتحة الكتب و"قل يا ايها الكافرون" ثم ركع وسجد وقام فقرأ بفاتحة الكتب و "قل هو الله احد" ثم قنت ودعا قبل الركوع* (رواه الامام محمد فى كتاب الحجة ص : 201 ج : 1 واللفظ له رواه ابو نعيم فى الحلية كما فى نصب الراية ص : 124 ج : 2)
❏ অর্থাৎ ‘হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি রসূলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে একটি রাত্র অতিবাহিত করেছি। তখন তিনি (সা.) রাতে উঠে দু’ রাকআত নামায আদায় করলেন। অতঃপর উঠে বিতর পড়লেন। প্রথম রাকআতে সূরায়ে ফাতিহা তিলাওয়াত করার পর "سبح اسم ربك الاعلى" পড়লেন। অতঃপর রুকু এবং সাজদা করলেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতে সূরায়ে ফাতিহা এবং "قل يا ايها الكافرون"  পড়লেন। তারপর রুকু এবং সাজদা করলেন। আর তৃতীয় রাকআতে সূরায়ে ফাতিহা এবং "قل هو الله احد"  পড়লেন। তারপর দু’আয়ে কুনূত পড়ে রুকু করলেন।’’

(5) عن الاسود قال صحبت عمر بن الخطاب رضى الله عنه ستة اشهر فكان يقنت فى الوتر قبل الركوع* (كتاب الحجة ص : 201 ج : 1)
❏ অর্থাৎ ‘হযরত আসওয়াদ (রা.) বলেন যে, আমি ছয় মাস হযরত উমর বিন খাত্তাব (রা.) এর খিদমতে অবস্থান করেছি। তিনি বিতর নামাযে রুকুর পুর্বে কুনূত পড়তেন।’’

(6) عن الاسود ان عبد الله بن مسعود رضى الله عنه كان لايقنت فى شئ من الصلوة الا فى الوتر قبل الركوع* (ابن ابى شيبة ص : 302 ج : 2، كتاب الحجة للامام محمد ص : 201 ج : 1 مجمع الزوائد ص : 224 ج : 2)
❏ অর্থাৎ ‘হযরত আসওয়াদ (রা.) বলেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বিতর নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কুনূত পড়তেন না; শুধু বিতর নামাযে রুকুর পূর্বে দু’আয়ে কুনূত পড়তেন।’

(7) عن علقمة ان ابن مسعود واصحاب النبى صلى الله عليه وسلم ورضى الله عنهم كانوا يقنتون فى الوتر قبل الركوع* (ابن ابى شيبة ص : 302 ج : 2)
❏ অর্থাৎ ‘হযরত আলকামা (রহ.) বলেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) এবং নবী (সা.) এর সাহাবায়ে কিরাম (রা.) বিতর নামাযে রুকুর পূর্বে দু’আয়ে কুনূত পড়তেন।’’

❏ ইবনে আবী শায়বা (রহ.) বলেন, هذا الامر عندنا  (২য় খ- ৩০৬ পৃ.) অর্থাৎ আমাদের নিকট বিতর নামাযে রুকুর পূর্বে দু’আয়ে কুনূত পড়া সঠিক।’’

❖ চুতুর্থ : বিতরের কুনূতের সঙ্গে তাকবীর এবং হস্তদ্বয় উত্তোলনের যে সম্পর্ক রয়েছে সে সম্বন্ধে নিন্মলিখিত রিওয়ায়ত সমূহ বর্ণিত আছে : 

(1) عن عبد الله بن مسعود رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يقنت فى الوتر قبل الركوع قال ثم ارسلت امى ام عبد فباتت عند نسائه، فاخبرتنى انه قنت فى الوتر قبل الركوع* ( ابن ابى شيبة : ص : 302 ج : 2)
❏ অর্থাৎ ‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম (সা.) বিতর নামাযে রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন। হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন যে, অতঃপর আমি আমার আম্মা উম্মে আবদ (রা.) কে রসূলুল্লাহ (সা.) এর বাড়ীতে পাঠালাম যেন তিনি উম্মাহাতুল মু’মিনীন (রা.) এর কাছে রাত্রিযাপন করেন। অতঃপর তিনি আমাকে বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সা.) রুকুর পূর্বে কুনূত পড়েছেন।’’

ام عبد الله بن مسعود روى عنها ابنها عبد الله بن مسعود انها قالت رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت فى الوتر قبل الركوع ويعرف ايضا بها حديث ام ابن مسعود يرويه حفص بن سليمان عن ابان بن عياش عن ابراهم النخعى عن علقمة عن عبد الله قال ارسلت امى ليلة لتبيت عند النبى صلى الله عليه وسلم فتنظر كيف يوتر فباتت عند النبى صلى الله عليه وسلم فصلى ما شاء الله ان يصلى حتى اذا كان اخر الليل واراد الوتر قرأ (بسبح اسم ربك الاعلى) فى الركعة الاولى وقرأ فى الثانية (قل يا ايها الكافرون) ثم قعد ثم قام ولم يفصل بينهما بالسلام ثم قرأ (بقل هو الله احد الله الصمد لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا احد) حتى اذا فرغ كبر ثم قنت فدعا بماشاء الله يدعوه ثم كبر ورفع* (استيعاب ص  : 450-451 ج : 4 بر حاشية اصابه)
❏ অর্থাৎ ‘উম্মে আবদ তথা হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) এর মাতা (রা.), তার থেকে তার ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, তার আম্মা বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সা.) কে বিতর নামাযে রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তে দেখেছি। আর এ হাদীছটিই হাদীছে উম্মে ইবনে মাসউদ নামে প্রসিদ্ধ, যা হাফস বিন সুলায়মান (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি আবান বিন আয়্যাশ (রহ.) থেকে, তিনি ইব্রাহীম নাখয়ী (রহ.) থেকে, তিনি আলকামা (রা.) থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি আমার আম্মাকে রসূলুল্লাহ (সা.) এর মুবারক গৃহে রাত্রিযাপনের জন্য পাঠালাম, যেন তিনি রসূলুল্লাহ (সা.) এর বিতর নামায পড়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সা.) এর বাড়ীতে রাত অতিবাহিত করেন। রসূলুল্লাহ (সা.) রাতে আল্লাহ তা’আলার তাওফীক মুতাবিক নামায পড়েছেন। যখন রাতের শেষ ভাগ হলো তখন রসূলুল্লাহ (সা.) বিতর নামায পড়তে আরম্ভ করেন এবং প্রথম রাকআতে سبح اسم ربك الاعلى  পড়লেন, দ্বিতীয় রাকআতে قل يايها الكافرون  পড়েন। অতঃপর বসলেন এবং সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে তৃতীয় রাকআতে قل هو الله احد  সূরাটি শেষ পর্যন্ত পড়ে তাকবীর বলে দু’আয়ে কুনূত পড়লেন এবং আল্লাহ তাআলার তাওফীক মুতাবিক দু’আ করলেন। অতঃপর তাকবীর বলে রুকু করলেন।’’

(2) عن الاسود قال ان عبد الله رضى الله عنه كان يرفع يديه اذا قنت فى الوتر* (ابن ابى شيبة  ص: 27/28  ج : 2)
❏ অর্থাৎ ‘হযরত আসওয়াদ (রহ.) বলেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বিতরের কুনূতের জন্য হস্তদয় উত্তোলন করতেন।’’

(3) وفى جزء رفع اليدين انه كان يقرأ فى اخر ركعة من الوتر "قل هو الله احد" ثم رفع يديه، فيقنت قبل الركعة*
❏ অর্থাৎ ‘ ইমাম বুখারী (রহ.) ‘রিসালায়ে রফয়িল ইয়াদায়ন’ ২৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বিতর নামাযের শেষ রাকআতে ""قل هو الله احد  পড়তেন। অতঃপর হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন। তারপর রুকুর পূর্বে দুআয়ে কুনূত পড়তেন।’’

(4) عن ابى عثمان كان عمر رضى الله عنه يرفع يديه فى القنوت* (جزء رفع اليدين ص : 28)
❏ অর্থাৎ ‘আবূ উছমান (রহ.) বলেন যে, হযরত উমর (রা.) কুনূত পড়ার পূর্বে হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন।’’

(5) محمد قال اخبرنا ابو حنيفة عنهما عن حماد عن ابراهيم ان القنوت فى الوتر واجب فى شهر رمضان وغيره قبل الركوع ، واذا اردت ان تقنت فكبر واذا اردت ان تركع فكبر ايضا* (كتاب الاثار ص: 579 ج : 1، كتاب الحجة ص : 200 ج : 1)
❏ অর্থাৎ ‘ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) বলেন, আমাদেরকে হাদীছ জানান হযরত আবূ হানীফা (রহ.)। তিনি হযরত হাম্মাদ (রহ.) থেকে, তিনি হযরত ইব্রাহীম নাখয়ী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বিতর নামাযে রুকুর পূর্বে কুনূত পড়া ওয়াজিব। রমাযান মাসেও এবং অন্যান্য মাসেও। আর যখন কুনূত পড়ার ইচ্ছা কর তখন তাকবীর বল। আর যখন কুনূতের পরে রুকু কর তখনও তাকবীর বল।’’

❏ ‘কিতাবুল আছার’ গ্রন্থে উক্ত রিওয়াত নকল করা হয়েছে : 
قال محمد وبه نأخذ ويرفع يديه فى التكبيرة الاولى قبل القنوت كما يرفع يديه فى افتتاح الصلوة ثم يضعهما ويدعو ، وهو قول ابى حنيفة رضى الله عنه* (ص : 579 ج : 1)
❏ অর্থাৎ ‘ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) বলেন, উহারই মুতাবিক আমাদের আমল রয়েছে যে, কুনূতের পূর্বের তাকবীরে হস্তদ্বয় উত্তোলন করা যেমন নামাযের প্রারম্ভের তাকবীরে হস্তদ্বয় উত্তোলন করা হয়। অতঃপর হাত বেঁধে দু’আয়ে কুনূত পড়বে। ইহাই ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর অভিমত।’’
░▒▓█► দু’আয়ে কুনূতে হাত বাধা◄█▓▒

বিতরের কুনূতে যুক্তির ভিত্তিতে তিনটি আকৃতি বের করা সম্ভব। 
❏ এক- কুনূত পড়ার সময় হস্তদ্বয় উত্তোলন রাখা যেমন দু’আর সময় উত্তোলন করা হয়। 
❏ দুই- হাতদ্বয় ছেড়ে রাখা যেমন রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো অবস্থায় হাত ছেড়ে রাখা হয়। 
❏ তিন- হাতদ্বয় উত্তোলন করার পর উভয় হাত বেঁধে রাখা যেমন নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় রাখা হয়। 
প্রথম তরীকা হানাফীগণের মতে পছন্দনীয় নয়; কেননা শরীআত নামাযের মধ্যে যতগুলো দু’আ নির্ধারণ করেছে সেগুলোর কোথাও হাত উঠিয়ে দু’আ করার নির্দেশ দেয় নি। অথচ হাতদ্বয় উঠানো দু’আর আদবসমূহের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু নামাযের মধ্যে হাত উঠিয়ে দু’আ করার হুকুম নেই। এ কারণেই হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) একে বিদআত বলেন : 

عن ابن عمر رضى الله عنهما قال ارأيتم قيامكم عند فراغ الامام من السورة، هذا القنوت ، والله انه بدعة ، ما فعله رسول الله صلى الله عليه وسلم غير شهر ثم تركه ـ ارأيتم رفعكم فى الصلوة والله انه لبدعة ، مازاد رسول الله صلى الله عليه وسلم على هذا قط ـ فرفع يديه حيال منكبيه* ( رواه الطبرانى فى الكبير وفيه شهر بن حوشب ، ضعفه احمد و ابن معين وابو زرعة وابو حاتم والنسائى و وثقه ايوب وابن عدى ، مجمع الزوائد ص : 137 ، ج : 2)
❏ অর্থাৎ ‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, দেখো! তোমরা যে (ফজরের নামাযে) ইমাম কিরাআত তিলাওয়াত সমাপ্ত করার পর কুনূত পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে যাও; আল্লাহর কসম! ইহা বিদআত। রসূলুল্লাহ (সা.) তো এক মাসের অধিক ইহা করেন নি; বরং পরে তা ছেড়ে দিয়েছেন। দেখো! নামাযের মধ্যে যে তোমরা হাতদ্বয় উঠিয়ে দু’আয়ে কুনূত পড়, আল্লাহ তা’আলার কসম! ইহা বিদআত। রসূলুল্লাহ (সা.) তো কেবল কাঁধ পর্যন্ত হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন।’’

বাহ্যিক ভাবে এর মর্মার্থ ইহাই যে, কুনূতের জন্য হস্তদ্বয় উত্তোলন করা তো রসূলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রমাণিত আছে বটে, কিন্তু নামাযের অভ্যন্তরে সেইরূপ হাতদ্বয় উঠিয়ে দু’আ করা যেইরূপ নামাযের বাইরে দু’আর জন্য হাতদ্বয় উঠানো হয়ে থাকে, এর কোন প্রমাণ নেই। 

এখন রইল, দ্বিতীয় ও তৃতীয় আকৃতি। কুনূত যদি রুকুর পূর্বে পড়া হয় যেমন বিতর নামাযে পড়া হয়ে থাকে; তাহলে রুকুর পূর্বের অবস্থা যেহেতু কিয়াম তথা দণ্ডায়মান অবস্থায়, আর নামাযে দণ্ডায়মান অবস্থায় হাত বেঁধে রাখা সুন্নত সেহেতু বিতর নামাযে তা গ্রহণ করা হবে। আর কুনূতে নাযিলাহ যেহেতু রুকুর পরে কাওমা তথা দাঁড়ানো অবস্থায় পড়া হয় আর কাওমা অবস্থায় হাত বাঁধা সুন্নত নয়; বরং ছেড়ে রাখা সুন্নত সেহেতু কুনূতে নাযিলাহ হাত ছেড়ে রেখে পড়া হবে। এ কারণেই হানাফীগণের মতে বিতর নামাযের কুনূত নামাযের কিয়াম তথা দণ্ডায়মান অবস্থাকৃত আমলের মুতাবিক হাত বেঁধে পড়া হয়ে থাকে।

❐ বি. দ্র. :  সন্মানিত পাঠকগণ আপনারা এই ব্লগ এর প্রতি দৃষ্টি রাখুন, কেননা এ বিষয়ে আরো অনেকগুলো দলীল বা প্রমাণ অচিরেই সংযোজিত হবে। 

✔ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দলীলসহ আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন

✍ মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন