খুতবা চলাকালীন সময়ে তাহইয়াতুল মসজিদ, কথা বলা ইত্যাদি নিষেধের দলীল
১ম পর্ব
❖ প্রশ্ন -: আমাদের এখানে খুতবা সম্পর্কিত আহকামে বলা হয়ে থাকে যে, যখন ইমাম খুতবা পাঠের জন্য মিম্বরে বসেন, তখন নামায পড়া যাবে না আর না কোন কথা, এমনকি মুখদ্বারা অন্য কাউকে বারণ করাও নিষেধ, বরং দু’আ, দরূদও জিহ্বা না নাড়িয়ে মনে মনে পড়ে নিতে হবে। অথচ হাদীছসমূহের বরাতে এ বিষয়টি প্রমাণ করা হয় যে, যদি কেউ এমন অবস্থায় মসজিদে উপস্থিত হয় যে, ইমাম খুতবা পড়ছেন, তাহলে সে হালকাভাবে দু’ রাকআত পড়ে বসে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। আর এ সম্বন্ধে সহীহ মুসলিম, ইবনে মাজাহ, এবং আবূ দাউদ শরীফের বরাতে সুলায়ক গাতফানী (রা.) এর ঘটনা নকল করা হয় যে, যখন তিনি খুতাব দেয়াকালীন সময়ে মসজিদে আসেন এবং দু’ রাকআত নামায আদায় না করে বসে গেলেন তখন রসূলুল্লাহ (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কি দু’ আকআত নামায পড়ে বসেছো? এর নেতিবাচক জবাবে তিনি ইরশাদ করলেন উঠ, এবং দু’ রাকআত আদায় করে বস। অতঃপর লোকদেরকে সম্বোধন করে তিনি ইরশাদ করলেন, যে কেউ এমন সময়ে মসজিদে উপস্থিত হয়, সে যেন হালকাবাবে দু’ রাকআত পড়ে বসে।
❏ অধিকন্তু এর বিস্তারিত আলোচনায় বলা হয় যে, মারওয়ান বিন হাকামের শাসনামলে এই শাহী নির্দেশ ছিল যে, বাদশা খুতবা পড়ার সময় কেউ যেন দু’ রাকআত নামায না পড়ে। আর কারণ বলা হয়েছে, এ দ্বারা বাদশাহের অবমাননা করা হয়। কিন্তু হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) বাদশা খুতবা পাঠের সময়েই সমজিদে উপস্থিত হতেন এবং দু’ রাকআত আদায় করতেন। তার নামায জোরপূর্বক ভেঙ্গে দেয়ার পরওয়াও তিনি করতেন না। বাদশাহের কানূন রক্ষার জন্য সুন্নতে রসূল (সা.) পরিত্যাগ করা যায় না; বরং একটি সুন্নত রক্ষার জন্য বাদশাহী সমুদয় কানূন পায়ের নীচে ফেলে ধূলিসাৎ করা যেতে পারে। এ ঘটনা প্রমাণের জন্য তিরমিযী শরীফের বরাত দেয়া হয়ে থাকে। আর খুতবা পাঠকালে আগত ব্যক্তি দু’ রাকআত না পড়াকে মারওয়ানী বিদআত বলা হয়। আর মারওয়ান সম্বন্ধে বলা হয় যে, তিনি ঈদের খুতবাকে নামাযের পূর্বে প্রচলন করে ছিলেন।
❏ উপরোল্লিখিত আলোচনা সামনে রেখে হাদীছের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের উপায় কি হবে? আমাদের এখানে তো খুতবা পাঠকালে অন্যান্য কাজ যেমন নিষেধ তেমনি নামায পড়াকেও নিষেধ করা হয়। আর উপরোক্ত ঘটনায় দেখা যাচ্ছে যে, নামাযের হুকুম দেয়া হয়েছে। উক্ত হাদীছের আলোকে নামায পড়ার অনুমতি আমাদের রয়েছে কি না? যদি অনুমিত না থাকে, তাহলে আমাদের দলীল এবং উক্ত হাদীছের জবাব কি হবে? উক্ত হাদীছ শরীফে যে দু’ রাকআত নামাযের উল্লেখ রয়েছে, তা দ্বারা তো তাহইয়াতুল মসজিদ বলে বুঝা যায়, যা সম্ভবতঃ ওয়াজিবের মর্যাদা রাখে না; বরং এখানে গুরুত্ব দেয়ার কারণে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলে অনুভূত হয়। যদি তাহইয়াতুল মসজিদ (উক্ত দু’ রাকআত) এর পদ মর্যাদা সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে চার রাকআত কাবলাল জুমুআ, যা সুন্নতে মুয়াক্কাদা (তা খুতাব চলাকালীন সময়ে পড়া) এর অনুমতি থাকা বাঞ্ছনীয়। এ প্রসঙ্গে অপর একটি প্রশ্ন মনে উদয় হয় যে, যে ব্যক্তি হুবহু খুতবা পাঠকালে উপস্থিত হয় তার ওযূও করার প্রয়োজন হতে পারে। সে ওযূ করার কারণে ছাওয়াব নষ্ট হবে কি না?
❖ জবাব- : হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন, জমহুরে সাহাবায়ে কিরাম (রা.) এবং তাবেঈনে ইযাম (রহ.) এর মতে খুতবা পাঠকালে নামায ও কথা উভয়ই নিষিদ্ধ। ইমাম আযম আবূ হানীফ (রহ.) ইমাম মালেক (রহ.) এবং অধিকাংশ ফুকাহায়ে উম্মত ইহারই প্রবক্তা। আর কুরআন ও সুন্নতের আলোকে এই তরীকাই প্রাধান্য ও সঠিক। এর বিপরীত কতক সাহাবায়ে কিরাম (রা.) ও তাবেঈনে ইযাম (রহ.) খুতবা পাঠকালেও তাহইয়াতুল মসজিদ পড়ার প্রবক্তা ছিলেন। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) এবং পরবর্তী অধিকাংশ মুহাদ্দিছীন (রহ.) এর এ তরীকাকেই গ্রহণ করেছেন। তা সত্ত্বেও এ সকল হযরাতের অভিমতেও তাহইয়াতুল মসজিদ পড়া ইসতিহসান কিংবা জায়েযা হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে এই যে, খুতবার যেন শেষ পর্যায়ে না হয়। তাহইয়াতুল মসজিদ আদায়ে মশগুল হওয়া অবস্থায় যদি জামাআত আরম্ভ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে এ অবস্থায় তাদের মতেও তাহইয়াতুল মসজিদ আদায়ে মশগুল হওয়া নিষিদ্ধ।
❏যে সকল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ খুতবা পাঠকালে তাহইয়াতুল মসজিদ পড়া জায়েয কিংবা ইসতিহসান হওয়ার প্রবক্তা তাদের দলীল হলো হযরত সুলায়ক গাতফানী (রা.) এর হাদীছ, যা প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সম্বন্ধে আলোচনা করার পূর্বে সমীচীন হবে যে, জমহুরে উম্মত যে তরীকা গ্রহণ করেছেন যে, খুতবা পাঠকালে সালাত ও কালাম নিষিদ্ধ। এর দলীলসমূহ আলোচনা করা । আর তা হচ্ছে :
✏ কুরআনে করীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ* (سورة الاعراف ـ ২০৪)
❏ শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, এ আয়াত নামায এবং খুতবা সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন তিনি তার ফাতওয়ায় লিখেছেন :
‘‘আর সালাফি সালিহীন (রহ.) থেকে খুবই খ্যাতির সঙ্গে বর্ণিত হয়ে এসেছে যে, এই আয়াত قرأة فى الصلوة (নামাযে কিরআত পাঠ) সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। আর কতক বিশেষজ্ঞের অভিমত হচ্ছে ইহা খুতবা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আর ইমাম আহমদ (রহ.) ইহার উপর ইজমা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন যে, এই আয়াত নামায ও খুতবা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।’’
(প্রাচীন প্রকাশ ১ম খণ্ড ১৪৩ পৃ., নতুন ২৩ খণ্ড ২৬৯পৃ.)
❏ অন্যত্র লিখেন :
‘‘ইমাম আহমদ (রহ.) এই বিষয়ে উম্মতের ইজাম নকল করেন যে, এই আয়াত নামায ও খুতবা সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে।’’ (প্রথম খণ্ড ৪১২পৃ., ২৩ খণ্ড ৩১২ পৃ.)
❏ সুতরাং উপরোক্ত আয়াতখানা যখন নামায ও খুতবা উভয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর ইমাম আহমদ (রহ.) ইহার উপর উম্মতের ইজমা নকল করেছেন তখন কুরআনের অকট্য দলীল نص قطعى দ্বারা খুতবা শ্রবণ করা এবং এর জন্য নীরব থাকা ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। আর সে সব সমুদয় কথা কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা শ্রবণ ও নীরবের বিপরীত হয়। এর তাৎপর্য হলো এই যে, খুতবা যেহেতু কুরআনী আয়াত দ্বারা হয় সেহেতু সম্পূর্ণ খুতবাকে الذكر (যিকর) বলে তা শ্রবণ করা ওয়াজিব করা হয়েছে। অপর দিকে খতীবের পদমর্যাদা যেহেতু আল্লাহ তায়লার প্রতিনিধির ন্যায় হয় যিনি মানুষকে আল্লাহ তাআলার আহকাম শুনাচ্ছেন সেহেতু শ্রুতাদেরকে সদা কান লাগিয়ে রাখার হুকুম দিয়ে প্রত্যেক এমন চলচ্ছক্তিকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে, যা খুতবা শ্রবণে প্রতিবন্ধকাতার সৃষ্টি করে। আর যে ব্যক্তি এ স্থলে শ্রবণ উপযোগিতার বিপরীত চলচ্ছক্তি করে সে নির্বোধ কর্ম সম্পাদনকারী এবং তার জুমুআর নামাযে উপস্থিতি বাতিল, অর্থহীন এবং ছাওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
কেননা খুতবার মধ্যে দ্বিমুখী আমল হয়। খতীব সাহেবের পক্ষ থেকে আল্লাহ তাআলার আহকাম শুনানো এবং শ্রুতাদের পক্ষ থেকে শ্রবণ করা এবং নীরব থাকা। সুতরাং উপস্থিত লোকদের থেকে যে ব্যক্তি খুতবা শ্রবণ করার ফরয দায়িত্ব থেকে আবাধ্যতা করে সে যেন খতীব এবং খুতবার অবমাননা করছে যে, খতীব তাকে আল্লাহ তায়ালার আহকাম শুনাচ্ছেন, কিন্তু শুনতে আগ্রহী নয়; বরং সে অন্য কোন অনোপযোগী কর্মে লিপ্ত রয়েছে।
সম্ভবতঃ এর ভিত্তিতেই হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) এর হাদীছে এ প্রকারের ব্যক্তিকে গাধার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। (মিশকাত-১ম খণ্ড ১২৩ পৃ.)
কেননা খুতবার মধ্যে দ্বিমুখী আমল হয়। খতীব সাহেবের পক্ষ থেকে আল্লাহ তাআলার আহকাম শুনানো এবং শ্রুতাদের পক্ষ থেকে শ্রবণ করা এবং নীরব থাকা। সুতরাং উপস্থিত লোকদের থেকে যে ব্যক্তি খুতবা শ্রবণ করার ফরয দায়িত্ব থেকে আবাধ্যতা করে সে যেন খতীব এবং খুতবার অবমাননা করছে যে, খতীব তাকে আল্লাহ তায়ালার আহকাম শুনাচ্ছেন, কিন্তু শুনতে আগ্রহী নয়; বরং সে অন্য কোন অনোপযোগী কর্মে লিপ্ত রয়েছে।
সম্ভবতঃ এর ভিত্তিতেই হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) এর হাদীছে এ প্রকারের ব্যক্তিকে গাধার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। (মিশকাত-১ম খণ্ড ১২৩ পৃ.)
এ থেকে প্রতীয়মান হয়ে যায় যে, জুমুআর খুতবার পদমর্যাদা শুধু ওয়ায নসীহত নয়, বরং এতে নামাযেরও একটি শান বিদ্যমান রয়েছে। সম্ভবতঃ এই হিকমতের বিবেচনায়ই খুতবাকে জুমুআ সহীহ হওয়ার জন্য একটি শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খুব সম্ভব এ কারণেই কতক সালাফি সালিহীন (রহ.) ইহা বুঝেছেন যে, যে ব্যক্তির জুমুআর খুতবা ছুটে যায়, তার জুমুআর নামাযই হবে না; বরং তাকে যুহর নামাযের চার রাকআত পড়তে হবে।
✏ কেননা হযরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে,
✏ কেননা হযরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে,
الخطبة موضع الركعتين من فاتته الخطبة صلى اربعا* (مصنف عبد الرزاق ص ২৩৭ ج : ৪، ابن ابى شيبة ص : ১২৮ ج : ২)
অর্থাৎ ‘জুমুআর খুতবা দু’ রাকআতের স্থলাভিষিক্ত, যে ব্যক্তির খুতবা ছুটে যায় সে যেন চার রাকআত পড়ে নেয়।’’
✏ আর হযরত তাউস (রহ.) মুজাহিদ (রহ.) হযরত আতা (তাবেঈ) (রহ.) থেকে নকল করেন
فمن لم يدرك الخطبة صلى اربعا* (عبد الرزاق ص : ২৩৮ ، ابن ابى شيبة ص : ১২৮)
অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি খুতবা পায়নি সে চার রাকআত পড়বে।’’
যদিও জমহুরে উম্মতের মতে সে ব্যক্তির জুমুআর দু’ রাকআতই পড়তে হবে। কিন্তু উক্ত আছার থেকে জুমুআর খুতবার গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়।
সার কথা উপরোল্লিখিত আয়াত শরীফে জুমুআর খুতবা শ্রবণ করাকে ফরয করে দেয়া হয়েছে। কাজেই খুতবা পাঠকালে সালাত, কালাম, যা শ্রবণের প্রতিবন্ধক হয়, তা উক্ত আয়াতে করীমার আলোকে নিষিদ্ধ হবে।
░▒▓█►নবী (সা.) এর হাদীছ সমূহ◄█▓▒░
উপরোক্ত বিষয়টিই রসূলুল্লাহ (সা.) এর মুতাওয়াতির হাদীছ শরীফ সমূহে বর্ণিত হয়েছে।
✏ ১। হযরত সালমান ফারসী (রা.) এর রিওয়ায়তে রসূলুল্লাহ (সা.) এর এই ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে :
لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ، ثُمَّ يَخْرُجُ فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ، إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجُمُعَةِ الأُخْرَى (صحيح يخارى ص : ১২১ ج : ১، ص : ১২৪ ج : ১)
অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করবে এবং উত্তমভাবে পবিত্রতা লাভ করবে। তৈল লাগাবে এবং ঘরের মধ্যে সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করবে, অতঃপর জুমুআর জন্য বের হয়ে পড়েব, অতঃপর মসজিদে যেয়ে দু’জনের মধ্য থেকে কাউকে উঠিয়ে না বসে কিংবা মসজিদে উপস্থিত হয়ে না বসে আল্লাহ তাআলার তাওফীক মুতাবিক নামায পড়ে নেয়, অতঃপর যখন ইমাম খুতবা আরম্ভ করে তখন নীরব থাকে, তাহলে এ রকম ব্যক্তির দু’জুমুআর মধ্যবর্তী যাবতীয় (সগীরা) গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’’
✏ ২। সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) এর হাদীছ বিন্মোক্ত শব্দসমূহে বর্ণিত হয়েছে।
فصلى ما قدر له ثم انصت حتى يفرغ من خطبته* ( ص : ২৮৩ ج : ১)
অর্থাৎ ‘যে পরিমাণ নামায আদায় করা তার ভাগ্যে ছিল সে পরিমাণ নামায পড়ে। অতঃপর নীরব রইল যতক্ষণ না ইমাম খুতবা থেকে অবসর হন। .........শেষ পর্যন্ত।
✏ ৩। হযরত আবূ আয়্যূব আনসারী (রা.) থেকে উক্ত বিষয়বস্তুর হাদীছ এ শব্দসমূহে বর্ণিত আছে :
ثم خرج الى المسجد فيركع ان بدا له ـ ولم يؤذ احدا ثم انصت حتى يصلى* (رواه احمد والطبرانى فى الكبر ورجاله ثقات مجمع الزوائد ص : ১৭১ ج : ২)
অর্থাৎ ‘অতঃপর সে মসজিদের দিকে বের হল। অতঃপর নামায পড়তে রইল। যতক্ষণ তার মনে চেয়েছে এবং কাউকেও কষ্ট দেয়নি। অতঃপর জুমুআর নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত নিশ্চুপ রইল।’’
✏ ৪। হযরত আবূ দারদা (রা.) এর হাদীছে রয়েছে :
وركع ما قضى له ثم انتظر حتى ينصرف الامام* (رواه احمد و الطبرانى فى الكبر عن حرب بن قيس عن ابى الدرداء ، وحرب لم يسمع من ابى الدراء زوائد ص : ১৭১ ج : ২)
অর্থাৎ ‘আর যে পরিমাণ নামায পড়া তার ভাগ্যে ছিল তা পড়ল। অতঃপর ইমাম নামায শেষ করা পর্যন্ত নীরব রইল।
✏ ৫। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) এবং আবূ হুরায়রা (রা.) এর হাদীছে আছে :
ثم صلى ما كتب الله له ثم انصت اذا خرج الامام* (ابوداود ص : ৫০ ج : ১، واللفظ له طحاوى ص : ১৮০ ج : ১)
অর্থাৎ‘অতঃপর সে নামায পড়ল যা আল্লাহ তাআলা তাকে তাওফীক দিয়েছেন। অতঃপর ইমাম যখন খুতবা পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে গেল তখন সে নীরব রইল।’’
উপরোক্ত হাদীছসমূহের মধ্যে দু’টো বিষয় গভীরভাবে লক্ষণীয়।
❏ এক, এই যে, রসূলুল্লাহ (সা.) নামায পড়ার সময়সীমা খুতবা আরম্ভ করার পূর্ব পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যার মর্মার্থ হলো এই যে, যে ব্যক্তি খুতবা আরম্ভ হওয়ার পর নামায পড়বে সে রসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্ধারিত সীমা লংঘন করলো।
❏ এক, এই যে, রসূলুল্লাহ (সা.) নামায পড়ার সময়সীমা খুতবা আরম্ভ করার পূর্ব পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যার মর্মার্থ হলো এই যে, যে ব্যক্তি খুতবা আরম্ভ হওয়ার পর নামায পড়বে সে রসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্ধারিত সীমা লংঘন করলো।
❏ দুই, এই যে, উল্লেখিত হাদীছসমূহে রসূলুল্লাহ (সা.) নামায এবং নীরব থাকাকে পরস্পর বিপরীতমূখী বলে উল্লেখ করেছেন। খুতবার পূর্বে নামায এবং খুতবা চলাকালীন সময়ে নিশ্চুপ থাকা যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, খুতবা চলাকালীন সময়ে নামায পড়া নীরবের পরিপন্থী হয়। যেহেতু খুতবা পাঠকালে নীরব থাকা ওয়াজিব সেহেতু নামায এবং কালাম উভয়ই নিষিদ্ধ হবে।’’
✏ ৬। সিহাহ সিত্তাহ’ এর মধ্যে হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে প্রসিদ্ধ হাদীছ বর্ণিত আছে, যাতে রসূলুল্লাহ (সা.) প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ মুহুর্তে আগমনকারীদের মর্যাদা ক্রমানুসারে বর্ণনা করে বলেছেন :
فاذا خرج الامام طووا صحفهم ويستمعون الذكر * (صحيح بخارى ص : ১২৭ ج : ১ صحيح مسلم ص : ২৮৩ ج : ১ )
অর্থাৎ ‘যখন ইমাম খুতবার জন্য দণ্ডায়মান হন তখন ফিরিশতাগণ তাদের লেখার খাতা বন্ধ করে রেখে দেন এবং যিকর শুনতে ব্যস্ত হয়ে যান।’’
এ বিষয়বস্তুর হাদীছ হযরত আবূ উমাম (রা.) থেকেও বর্ণিত আছে। যার শব্দসমূহ নিন্মরূপ।
حتى اذا خرج الامام رفعت الصحف* (رواه احمد الطبرانى فى الكبر نحوه ورجل احرتقات مجمع زوائد ص : ১৭৭ ج : ২)
অর্থাৎ ‘এমন কি যখন ইমাম খুতবা পাঠের জন্য বের হয়ে আসেন, তখন সহীফাসমূহ উঠিয়ে নেয়া হয়।’’
✏ ৭। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকেও এ বিষয়ের হাদীছ বর্ণিত আছে :
فاذا اذن المؤذنون وجلس الامام على المنبر طويت الصحف ودخلوا المسجد يستمعون الذكر* (رواه احمد ورجاله ثقات ، زوائد ص : ১৭৭ ج : ২)
অর্থাৎ ‘অতঃপর যখন মুয়াযযিনগণের আযান আরম্ভ হয়ে যায় এবং ইমাম মিম্বরে বসে যান তখন সহীফাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ফিরিশতাগণ মসজিদে এসে যিকর শুনতে থাকেন।’’
ইমাম বের হয়ে আসার পর ফিরিশতাগণ আমলনামা বন্ধ করে যিকর শ্রবণে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া, এই বিষয়ের দলীল যে, খুতবা চলাকালীন সময়ে যিকর শ্রবণ ব্যতীত যাবতীয় কাজকর্ম বন্ধ রাখার সময়। এ সময় মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ ব্যতীত অন্য কোন নেক আমল করার অবকাশ নেই। নামাযও নয় আর না কোন কথা বলার অবকাশ রয়েছে। আর এই বিষয়বস্তুটি বিভিন্ন হাদীছে স্পষ্ট ভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন :
✏ ৮। মুসনাদে আহমদ ৫ম খণ্ডের ৭৫ পৃষ্ঠায় হযরত নবীশাহুযালী (রা.) রিওয়ায়তে রসূলুল্লাহ (সা.) এর এই ইরশাদ বর্ণিত আছে :
ان المسلم اذا اغتسل يوم الجمعة ثم اقبل الى المسجد ، ولا يوذى احدا فان لم يجد الامام خرج صلى ما بدا له وان وجد الامام قد خرج جلس فاستمع وانصت حتى يقضى الامام جمعته وكلامه الخ* (رواه احمد ورجاله رجال الصحيح خلا شيخ احمد وهو ثقة ـ زوائد ص : ১৭১ ج : ২)
অর্থাৎ ‘যখন কোন মুসলমান জুমুআর দিন গোসল করে মসজিদে রওয়ানা হয় এবং কাউকে কষ্ট দেয় না, অতঃপর দেখতে পায় যে, ইমাম এখনো বের হয়নি, তখন সে যত রাকআত নামায পড়ার ইচ্ছা করে তত রাকআত পড়ে নিবে। আর যদি ইমাম বের হয়ে এসে যায় তাহলে বসে শ্রবণ করতে থাকবে এবং নীরব থাকবে যতক্ষণ না ইমাম খুতবা ও নামায সমাপ্ত করবেন .......শেষ পর্যন্ত।
✏ ৯। ইমাম তাবরানী (রহ.) মু’জামি’ কবীর’ গ্রন্থে হযরত ইবনে উমর (রা.) এর বিওয়ায়তে রসূলুল্লাহ (সা.) এর নিন্ম লিখিত ইরশাদ নকল করেছেন।
واذا دخل احدكم المسجد والامام على المنبر فلا صلوة ولا كلام حتى يفرغ الامام* (وفيه ايوب بن نهيك ، وهو متروك ضعفه جماعة ، وذكر ابن حبان فى الثقات وقال يخطئ ) زوائد ص : ১৮৪ ج : ২)
অর্থাৎ ‘যখন তোমাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করে যখন ইমাম মিম্বরের উপর রয়েছেন, তাহলে নামায ও কথা বন্ধ রাখবে যতক্ষণ না ইমাম অবসর হবেন।’’
উপরোক্ত রিওয়ায়তের একজন রাবী যদিও বিতর্কিত, তবে আল্লামা হায়ছমী (রহ.) ইবনে হিব্বান (রহ.) থেকে তার নির্ভরযোগ্যতাও নকল করেছেন। কিন্তু উপরোক্ত রিওয়ায়তে হুবহু সেই বিষয়বস্তুই বিদ্যমান, যা কুরআন মজীদ ও সহীহ হাদীছসমূহে পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে।
এতদ্ব্যতীত বিভিন্ন মুতাওয়াতির হাদীছসমূহে এই বিষয়বস্তুটি বর্ণিত হয়েছে যে, খুতবা চলাকালীন সময়ে কথা বলার অনুমতি নেই। এমন কি যে, কোন ব্যক্তি খুতবা চলাকালীন সময়ে অন্য কোন ব্যক্তিকে নিশ্চুপ করানোর উদ্দেশ্যে انصت (চুপ কর) কিংবা صه (নিশ্চুপ থাক) শব্দটি বলবে তার জুমুআও নষ্ট হয়ে যাবে। অথচ সামর্থ্য অনুযায়ী امر بالمعروف (সৎ কাজের আদেশ) করা ওয়াজিব। কাজেই খুতবার সময় যখন এমন একটি ওয়াজিব কাজ করা নিষেধ, যা শ্রবণ ও নীরবতার ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে তাইয়াতুল মসজিদ যেমন মুস্তাহাব আমল আরো স্পষ্টভাবে নাজায়েয হবে। তাছাড়া এই তাতইয়াতুল মসজিদ নামাযটি চুপ’ শব্দটি বলা থেকে অধিক استماع (শ্রবণ) এর অন্তরায় হয়। এর উদাহরণ এইরূপ যে, কুরআন মজীদে পিতামাতাকে اف বলতে নিষেধ করা হয়েছে। এ থেকে শরীয়আত বিশেষজ্ঞগণ ইহা বুঝেছেন যে, যখন পিতামাতাকে اف বলা জায়েয নয় তখন মারধর করা যা পাপের দিকে দিয়ে اف বলার চেয়েও মারাত্মক অপরাধ তা অধিকতরভাবে নাজায়েয হবে। ঠিক অনুরূপ যখন রসূলুল্লাহ (সা.) খুতবা পাঠকালে صه (নিশ্চুপ থাক) বলার অনুমতি দেননি; বরং এ দু’বর্ণের শব্দকেও অর্থহীন এবং জুমুআ নষ্টকারী বলে ইরশাদ করেছেন, তাহলে নামায, যা উহা থেকেও অধিকতর শ্রবণের অন্তরায় হয়, তা আরো কঠোরতর না জায়েয হবে।
░▒▓█►সালাফি সালিহীনের আমল◄█▓▒░
কুরআন ও হাদীছ শরীফের অকাট্য দলীলের পর এ মাসয়ালায় হযরাতে সাহাবায়ে কিরাম (রা.) ও তাবেঈন (রহ.) এর আ’মলের প্রতি লক্ষ্য করা হোক :
❁ ১। মুয়াত্তা ইমাম মালেক (রহ.) এর মধ্যে ইমাম যুহরী (রহ.) এর রিওয়ায়তে হযরত ছা’লাব বিন আবী মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে :
أَنَّهُمْ كَانُوا فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، يُصَلُّونَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، حَتَّى يَخْرُجَ عُمَرُ بْنِ الْخَطَّابِ، فَإِذَا خَرَجَ عُمَرُبْنِ الْخَطَّابِ، وَجَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ، وَأَذَّنَ الْمُؤَذِّنُ، جَلَسْنَا نَتَحَدَّثُ، حتى إذاسَكَتَ الْمُؤَذِّنُ وَقَامَ عُمَرُ سكتنا، فَلَمْ يَتَكَلَّمْ مِنَّا أَحَدٌ.قَالَ مَالِكٌ: قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: خُرُوجُ الإِمَامِ يَقْطَعُ الصَّلاَةَ، وَكَلاَمُهُ يَقْطَعُ الْكَلاَمَ.
অর্থাৎ ‘হযরত উমর (রা.) এর যুগে লোকেরা জুমুআর দিন নামায আদায় করতে থাকতেন যতক্ষণ না হযরত উমর (রা.) তাশরীফ আনতেন। অতঃপর যখন হযরত উমর (রা.) তশরীফ এনে মিম্বরে বসে যেতেন এবং মুয়াযযিন আযান দিতেন। রাবী ছা’লাবা (রা.) বলেন, তখন আমরা বসে বসে পরস্পর কথাবর্তা বলতাম। অতঃপর যখন মুয়াযযিন আযান শেষ করতেন এবং হযরত উমর (রা.) খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন তখন আমরা নিশ্চুপ হয়ে যেতাম। অতঃপর আমাদের মধ্যে থেকে কেউ কথা বলতেন না। ইবনে শিহাব যুহরী (রহ.) বলেন, সুতরাং ইমাম বের হয়ে আসার কারণে নামায বন্ধ হতো এবং ইমামের খুতবার কারণে মানুষের পরস্পরের মধ্যকার কথাবার্তা বন্ধ হতো।’’
মুসান্নাফ ইবনে শায়বা এর মধ্যে হযরত ছা’লাবা বিন আবী মালেক (রা.) এর বিওয়ায়ত এ শব্দসমূহে বর্ণিত আছে :
ادركت عمر وعثمان فكان الامام اذا خرج يوم الجمعة تركنا الصلوة*
অর্থাৎ ‘আমি হযরত উমর (রা.) এবং হযরত উছমান (রা.) এর যুগ পেয়েছি। সুতরাং জুমুআর দিন যখন ইমাম খুতবা দেয়ার জন্য বের হতেন তখন আমরা নামায আদায় করা ছেড়ে দিতাম।’’
❁ ২। নসবুর রায়াহ’ গ্রন্থের (২য় খণ্ডের ২০৪ পৃষ্ঠার) মধ্যে মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই (রহ.) থেকে হযরত সায়িব বিন ইয়াযিদ (রা.) এর বাণী নকল করেন :
كنا يصلى فى زمن عمر يوم الجمعة فاذا خرج عمر وجلس على المنبر قطعنا الصلوة ، وكنا نتحدث ويحدثونا وربما نسأل الرجل الذى يليه عن سوقه ومعاشه فاذا سكت المؤذن خطب ولم يتكلم احد حتى يفرغ من خطبته*
অর্থাৎ ‘হযরত উমর (রা.) এর খিলাফত যুগে আমরা জুমুআর দিন নামায আদায় করতে থাকতাম। অতঃপর যখন হযরত উমর (রা.) এসে মিম্বরে আসন গ্রহণ করতেন তখন আমরা নামায বন্ধ করে দিতাম। আর আমরা পরস্পর কথাবার্তা বলতাম এবং কখনো এক ব্যক্তি নিজ পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে বাজার ও জীবিকার হালঅবস্থা সমন্ধে জিজ্ঞাসা করে নিত। অতঃপর যখন মুয়াযযিন আযান শেষ করতেন এবং হযরত উমর (রা.) খুতবা আরম্ভ করতেন তখন তার খুতবা দেয়া সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কেউ কথা বলতো না।’’
হাফিয (রহ.) দিরায়াহ’ গ্রন্থে বলেন যে, উহার সনদ উত্তম।’’ (হাশিয়ায়ে নুসবুর রায়াহ ২য় খ- ২০৩ পৃ.)
❁ ৩। মুয়াত্তা গ্রন্থে হযরত উছমান (রা.) থেকে নকল করেন যে, তিনি সাধারণতঃ স্বীয় খুতবায় বলতেন :
واذا قام الامام فاستمعوا و انصتوا فان للمنصت الذى لايسمع من الخطبة مثل ما للسامع المنصت * (موطا امام محمد ص : ১৩৮)
অর্থাৎ ‘যখন ইমাম খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে যান তখন তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর এবং নিশ্চুপ থাক; কেননা নিশ্চুপ হয়ে যদিও সে খুতবা না শুনে, তার জন্যও সেই ব্যক্তির সমপরিমাণ ছাওয়াব রয়েছে যে ব্যক্তি নীরব থেকে খুতবা শ্রবণ করে।’’
❁ ৪। মুসান্নাফে আব্দুর রযযাক’ গ্রন্থে হযরত আলী (রা.) এর বাণী নকল করেছেন যে, জুমুআর মধ্যে তিন প্রকারের লোক অংশ গ্রহণ করে। এক, সেই ব্যক্তি যে, ধীরতা, গাম্ভীর্যতা এবং নীরবতার সঙ্গে জুমুআর হাজির হয়। এ তো এমন ব্যক্তি যার এক জুমুআ থেকে অপর জুমুআ পর্যন্ত কৃত সকল (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (রাবী বলেন যে, আমার ধারণা যে, তিনি ইহাও বলেছিলেন যে) আরো তিন দিন অতিরিক্ত। দুই, সেই ব্যক্তি যে জুমুআর নামাযে শরীক হয়ে لغو ( বেহুদা) কর্মে লিপ্ত হয়, তার প্রাপ্য অংশ তো কেবল উক্ত لغو (অনর্থকই)। (অর্থাৎ নেকী বরবাদ হয়ে গুনাহ ভাগ্যে জুটবে)। তিন-
ورجل صلى بعد خروج الامام فليست بسنة ـ ان شاء اعطاه وان شاء منعه*
অর্থাৎ ‘সেই ব্যক্তি যে ইমাম খুতবা দেয়ার লক্ষ্যে দাড়িয়ে যাওয়ার পর নামায পড়ে। তার এ নামায সুন্নত মুতাবিক হয়নি। ফলে আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে ছাওয়াব দিবেন এবং তিনি ইচ্ছা করলে নাও দিতে পারেন।’’
❁ ৫। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, জুমুআর খুতবা পাঠকালে মানুষ কি নামায পড়তে পারে? তিনি জবাবে বললেন, যদি সবাই পড়তে থাকে তাহলেও কি তা সঠিক হবে? (বরাত ঐ-২৪৫ পৃ.)
❁ ৬। হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি ইমাম আসার পূর্বে নামায পড়তেন। ইমাম আসার সময় হলেই তিনি নামায পড়া বন্ধ করে দিতেন; বরং বসে যেতেন। (রাবত ঐ-২১০ পৃ.)
❁ ৭। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা গ্রন্থে হযরত আলী, হযরত ইবনে উমর এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে নকল করেন :
انهم كانوا يكرهون الصلوة والكلام بعد خروج الامام* (ص : ১১১ ج :২)
অর্থাৎ ‘তাদের সবার মতে ইমাম খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর নামায ও কথাবার্তা উভয়ই মাকরূহ।’’
❁ ৮। ইমাম তহাভী (রহ.) হযরত উকবা বিন আমির (রা.) এর বাণী নকল করেছেন যে,
الصلوة و الامام على المنبر معصية* (طحاوى ص : ১৮১ ج : ১)
অর্থাৎ ‘ইমাম মিম্বরের উপর থাকাকালীন সময়ে নামায পড়া গুনাহ।’’
❁ ৯। হযরত ছা’লাবা বিন আবী মালিক (রা.) এর বাণী নকল করেন :
جلوس الامام على المنبر يقطع الصلوة وكلامه يقطع الكلام* (حواله مذكورة)
অর্থাৎ ‘ইমাম মিম্বরের উপর বসা, নামায বন্ধ করে দেয় এবং তার কালাম (খুতবা পাঠ) করা অন্যদের কথাবার্তাকে বন্ধ করে দেয়।’’ (বারাত ঐ)
❁ ১০। মাআরিফুস সুনান’ গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডের ৩৬৮ পৃষ্ঠায় কাযী আয়্যায (রহ.) এর বরাতে নকল করেন যে, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা.) খুতবা পাঠকালে নামায পড়তে নিষেধ করতেন।’’
❁ ১১। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক’ গ্রন্থে সায়্যিদুত তাবেঈন হযরত সাঈদ বিন মুসায়্যাব (রা.) এর বাণী নকল করেন :
خروج الامام يقطع الصلوة وكلامه يقطع الكلام* (عبد الرزاق ص : ২০৮ ج : ২)
অর্থাৎ ‘‘ইমাম খুতবার জন্য প্রস্তুত হওয়া নামায বন্ধ করে দেয় এবং তার কালাম (খুতবা) অন্যদের কালাম (কথাবার্তা) বন্ধ করে দেয়।
❁ ১২। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩য় খণ্ডের ২৪৫ পৃষ্ঠায় এবং ইবনে আবী শায়বা ২য় খণ্ডের ১১১ পৃষ্ঠায় কাযী শুরায়হ (রহ.) থেকে নকল করেন যে, তিনি খুতবা চলাকালীন সময়ে নামায পড়ার প্রবক্তা ছিলেন না।
❁ ১৩। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩য় খণ্ডের ২৪৫-২৪৬ পৃষ্ঠায় হযরত কাতাদাহ (রহ.) এবং হযরত আতা (রহ.) থেকে উপরোক্ত অভিমতই নকল করেছেন।
❁ ১৪। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা গ্রন্থে ইবনে সীরীন (রহ.) উরওয়া বিন যুবায়র (রহ.) এবং ইমাম যুহরী (রহ.) থেকেও খুতবার সময় নামায ও কথাবার্তার নিষেধাজ্ঞার অভিমত নকল করা হয়েছে।
১ম পর্ব সমাপ্ত করা হলো।
চলবেই ইনশাআল্লাহ
❐ বি. দ্র. : সন্মানিত পাঠকগণ আপনারা এই ব্লগ এর প্রতি দৃষ্টি রাখুন, কেননা এ বিষয়ে আরো অনেকগুলো দলীল বা প্রমাণ অচিরেই সংযোজিত হবে।
✔ মহান আল্লাহ আমাদেরকে প্রত্যেকটি বিষয় দলীলসহ আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন